নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিক্ষক, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। ফেসবুকে যুক্ত হোনঃ www.facebook.com/dev.d.nipun

...নিপুণ কথন...

সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।

...নিপুণ কথন... › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধারাবাহিক উপন্যাসঃ নির্জনতার সমুদ্রে অবগাহন- ৬

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:০৮

(৬)
বাম হাতে চোখ ফেললো শ্রাবণ। সন্ধে ছয়টা। একটু পরেই গন্তব্যে পৌঁছে যাবে ওরা। বাসের ভেতর চোখ ঘুরালো সে। বেশিরভাগ যাত্রীই তন্দ্রালু অবস্থায়। মাঝে মাঝে দু-একজন সিগ্রেট ফুকছে। শ্রাবণ মাঝারি ধরণের একটা হাই তুলে আলস্য তাড়ালো। হেলপার এক থাপ্পড়ে থামিয়ে দিলাও বাসটা। যাত্রীসাধারণ প্রচন্ড ঝাকুনি খেলো। এতে কারো কারো বিরক্তি জন্মালো। দু-একজনের মাথা ঠেকলো সামনের সিটে। চকিতভাবে জেগে উঠলো কেউ কেউ। নয়নও জাগলো- কী হলো শ্রাবণ?

-হয়তো জ্যাম লেগেছে।

-আমরা কি এসে গেছি?

-হয়তো তাই। শুষ্ককণ্ঠে জবাব দেয় শ্রাবণ।

নয়ন বাইরের দিকে তাকালো। অসংখ্য লোক। সবাই অচেনা। অদূরেই দেখা গেলো সারিবদ্ধ দূরপাল্লার বাস। এলোমেলো চুলে আঙুল চালিয়ে বিন্যস্ত করে নয়ন। ওর চোখদুটো লালবর্ণ ধারণ করেছে। হয়তো গভীর নিদ্রায় নিমগ্ন হয়ে পড়েছিলো ও। দুপুরে কিছু খাওয়া হয়নি। ক্ষুধা এ মুহূর্তে যেন তাকে শাসাচ্ছে।

এরই মাঝে বাসটা টার্মিনালে ঢুকে পড়ে। অন্যান্য বাস থেকে নামা যাত্রীরা যার যার লক্ষে ছুটছে। টার্মিনাল থেকে দু-চারটি বাস ছাড়ি-ছাড়ি করছে। দালাল-কলারদের ডাকাডাকি তুঙ্গে উঠেছে। টানাহেঁচড়া চলছে যাত্রীদের নিয়ে। এসব দেখতে দেখতে শ্রাবণদের বাস যাত্রীশূণ্য হয়ে যায়।

মালামালসহ ওরাও বাস থেকে নেমে পড়ে। এ মুহূর্তে শ্রাবণ নয়নের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে- তপন বাগচীর ছড়াটা তোর মনে আছে? ঐ যে- ‘টার্মিনালে’?

বলেই শ্রাবণ ছড়াটা আওড়াতে আওড়াতে পা চালায়-

বাস যোগে কেউ ছাড়তে ঢাকা
টার্মিনালে গেলে
যাত্রী নিয়ে দালালরা সব
মজার খেলা খেলে।

একহাত ধরে ‘সোহাগ’, ‘জাকের’
একহাত ‘মধুমতি’
‘চন্দ্রা’ এবং ‘দ্রুতি’র ঠেলায়
যাত্রী হারায় গতি।

‘বিলাস’, ‘পলাশ’, ‘আল-মদিনা’
পিছন থেকে গুঁতোয়
‘সাউদিয়া’ কি বসে থাকে?
ডাকে নানান ছুঁতোয়।

‘সুবর্ণ’ আর ‘সোহেল’ দেখি
লাগেজ ধরে টানে
‘সূর্যমুখি’ দৌড়ে এসে
কুমন্ত্র দেয় কানে।

ধাক্কাধাক্কির যুদ্ধ শেষে
চড়বে বাসে যেই
দেখবে টিকিট আছে ঠিকই
আসন খালি নেই!

বাস টার্মিনালের অদূরেই মোহাম্মদপুর। গাঁও-গেরামে এটা পায়ে হাঁটার পথ। কিন্তু এ যে ঢাকা, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। রাজা-বাদশাদের বাস এখানে। তার ওপর অচেনা শহর, অলি-গলি। বাধ্য হয়েই ওরা একটা অটোরিকশার দিকে এগয়। ঠিকানা জানিয়ে চালককে প্রস্তাব দিতেই চালক বললো- আমার বাড়িও ঐখানে, যামু না মানে?

-ভাড়া কত?

-তিরিশ টাকা দিবেন।

-কম না?

-বেশি চাই নাই, আমি ঐদিকেই যামু। তাই সাফ-সাফ কইছি। গেলে উইঠা পড়েন।

লোকটি যখন ঐ এলাকার, তাহলে কনফিডেন্স টাওয়ারে পৌঁছা ওর মাধ্যমেই সহজ হবে- ভেবে শ্রাবণরা দেরি না করে উঠে বসে সিটে।

শ্রাবণের খালা নাজমা বেগম প্রস্তুত হয়ে বসে আছেন দোতলার বারান্দায়। শ্রাবণ আগেই চিঠিতে জানিয়েছে ওদের আসবার কথা। খালু অফিসে। একা একা সময় কাটে না বলে প্রতিদিনের মতো পাশের বাসার ঐশীকে নিয়ে নানা কথায় এপাশ-ওপাশ করছেন তিনি। সহসা রিকশা থামতে দেখে নাজমা বেগম উৎসুক নয়নে সেদিকে তাকান। গল্পে ছেদ পড়ে। ঐশী প্রশ্ন ছোড়ে- কী দেখছো কাকীমা?

নাজমা বেগম হেসে উত্তর দেন- দেখলাম ছেলেটা এলো কিনা।

ঐশী লাজনম্র কণ্ঠে বললো- কোন ছেলেটা কাকীমা?

-কেনো, তুই শুনিসনি? আমার বোনের ছেলে। ও এখন থেকে আমার বাসাতেই থাকবে।

-কেনো? থাকবে কেন?--- মানে, কী করবে এখানে? ঐশী লজ্জিত বোধ করে নিজের কথায়।

নাজমা বেগম স্মিতহাস্যে সহজ উত্তর দেন- ও এখানে থেকে ভার্সিটিতে পড়বে।

-কী নাম ওর? ভালো ছাত্র বুঝি?

-ভালো ছাত্র তো বটেই। নাম ওর শ্রাবণ।

ঐশী তৃপ্তির হাসি হেসে বলে- ভালোই হবে, একজন সঙ্গী হলো।

-হ্যাঁ, সেজন্যই ওকে আনা। এবয়সে আর একা একা ভালো লাগে না। তাছাড়া—

-কী? তাছাড়া কী? ঐশী সন্দেহাকুল হয়।

-তোকে যখন-তখন আমার কাছে ডেকে পাঠাই, তোর মান না-জানি কী বিরক্তটাই হন—

-এখন থেকে তাহলে আমাকে আর ডাকবেন না?

-কেনো? ডাকবো না কেনো? সময়-সুযোগমতো ডাকবো। তুইও সময়-সুযোগ করে আসবি।

নাজমা বেগম ঐশীর পিঠে হাত বুলাতে থাকে। পরম তৃপ্তিতে চোখ বুজে আসে ওর। হঠাত সামনের দিকে চোখ পড়তেই শ্রাবণের উপর চোখ পড়ে নাজমা বেগমের। অটোরিকশা থেকে নেমে ভাড়া মেটাচ্ছে ওরা।
তিনি তাড়াতাড়ি নিচে গিয়ে গেট খুলে দেন। ঐশী কাকীমার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। আর মনে-মনে ভাবে দুজনার মধ্যে কে শ্রাবণ। শ্রাবণ হাসতে হাসতে এগোয়। নাজমা বেগম স্নেহকাতর কণ্ঠে বলেন- ক্যামন আছিস বাবা? সেই কখন থেকে তোদের অপেক্ষায় বসে আছি!

-জি, ভালো। আপনার শরীর ভালো? খালু ক্যামন আছেন?

শ্রাবণ খালাকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে।

নাজমা বেগম আশীর্বাদ করেন- বেঁচে থাকো, বাবা।

এরপর নয়নও সালাম করে। একই আশীর্বাদ ওর ওপরও বর্ষিত হয়। নাজমা বেগম ভেতরের উদ্দেশে ওদের আহবান জানায়- এসো তোমরা। আয় ঐশী।

দোতলার উদ্দেশে নাজমা বেগমের পিছু নেয় ওরা। ওদের পেছনে ঐশী। ওদের থাকবার ঘরের দরজার সামনে এসে নাজমা বেগম দাঁড়িয়ে পড়েন। বলেন- যাও বাবা। তোমরা এখানেই থাকবে।

ভেতরে ঢুকে নয়নকে পরিচয় করিয়ে দেয় শ্রাবণ- খালা, ও আমার বন্ধু নয়ন। আমাদের গ্রামেরই ছেলে। কদিন আমার সাথে থেকে ও হোস্টেলে উঠবে।

-ঠিক আছে। যতদিন খুশি এখানে থাকবে। নে, পোশাক ছেড়ে হাত-পা ধুয়ে কিছু মুখে দে।

ঐশী ততক্ষণ চৌকাঠে ঠেস দিয়ে দরজায় দাঁড়ানো ছিলো। এরই মধ্যে বার কয়েক চোখ ফেলেছে শ্রাবণ নামের আগন্তুকের দিকে। আর ওজন মেপেছে। একবার শ্রাবণের চোখে ওর চোখ পড়তেই চোখ মেরেছে ঐশী। ভড়কে গেছে শ্রাবণের মন। মনে মনে হেসেছে ঐশী, আর বলেছে- শালা খ্যাত!
(চলবে)

উপন্যাসঃ নির্জনতার সমুদ্রে অবগাহন
লেখকঃ বাবু ফরিদী।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.