নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।
(৮)
সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারের সন্তান ঐশী। মা-বাবা ও ছোট এক ভাই নিয়ে ওদের সংসার। বাবা বিদ্যুৎ বিভাগের প্রোকৌশলী। খালার তিনতলা বাড়ির একটি ফ্লাটে ভাড়া থাকে ওরা। গাঁয়ের বাড়ি রাজশাহীর পুঠিয়াতে। ঐশী এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। পড়াশুনার ফাঁকে খালাকে সঙ্গ দিতো মাঝে মাঝে। এখন প্রায় প্রতিদিনই আসে এ বাড়িতে। উদ্দেশ্য ভিন্ন। খালাকে লুকিয়ে শ্রাবণের নৈকট্য লাভের প্রচেষ্টা ওর অভিনব। খালার ফাইফরমায়েশ মতো এটা-ওটা এঘর-ওঘর করা থেকে শ্রাবণের প্রয়োজনীয় এটা-ওটাও এগিয়ে দেয় ঐশী। ফাঁকফোকরে কথা হয় সামান্য।
শ্রাবণ জড়ই থেকে যায়। পাছে খালা কিছু টের পেয়ে যান! সহজেই সুযোগ হাতছাড়া করতে নারাজ শ্রাবণ। কথায় বলে, গাই বাছুর পিরীত থাকলে আঁধার রাতেও দুধ দেয়। এমন পরিস্থিতির অপেক্ষায় থাকে ও।
নাজমা খালা ঐশীর চালচলনে কিছুটা বিব্রত বোধ করলেও, মুখে কোনরূপ প্রকাশ ঘটে না তাঁর। মেয়েমানুষ মেয়েমানুষের মন বোঝে। তাঁর বিশ্বাস, শ্রাবণ পাড়াগাঁয়ের ছেলে—ঐশীর সঙ্গে ভাব হতে ওর সময় লাগবে। ততদিনে শ্রাবণ নিজের অবস্থান সম্পর্কে সচেতনও হয়ে যাবে।
আর ঐশী ছেলেমানুষ। এ বয়সে ওরকম একটু-আধটু সবাই করে। নাজমা বেগম নিজেকে দিয়েই বিষয়টি ভাবে। বড় হলে জ্ঞানবুদ্ধি পাকলে এমনিতেই সব ঠিক হয়ে যাবে। একদিন ঐশী কী এক কথায় খালার সামনেই টিপ্পনী কেটে বসলো! খালা বিষয়টিকে হালকা করার জন্য বললেন- ও গাঁয়ের ছেলে। এভাবে বললে ও লজ্জা পায় না? দেখিস না, তোকে দেখে ও ক্যামন জড়সড় হয়ে থাকে? একজন লোককে বাজাতে হলে তার সঙ্গে সহজভাবে মিশতে হয়, বুঝতে হয়।
-তা তো বুঝলাম। কিন্তু এ ছেলেটি ক্যামন মিনমিনে দেখেছেন? একটু চালু নাহলে ভার্সিটিতে পড়বে কী করে?
-দ্যাখ মা, চালু হয়ে কেউ শহর বা ভার্সিটিতে আসে না। এসেই বরং চালু হয়ে যায়। দেখবি ও ঠিক ঠিক চালু হয়ে যাবে।
-শুনেছি উনি ভালো ছাত্রো। ভেবেছিলাম পরীক্ষার পড়াশুনার ফাঁকে ওনাকে দিয়ে একটু দেখিয়ে নেবো, কিন্তু উনি তো আমার সঙ্গে কথাই বলেন না!
-ক্যানো? তোর তো মাস্টার আছে দু-তিনটে!
-থাকলে কী হবে? সবদিন তো আর আসে না!
-পড়তে গিয়ে মাঝেমধ্যে ঠেকে যাই। তখন তখনই না বুঝলে পরে আর হয়ে ওঠে না। আর হলেও অনেক পিছনে পড়ে যাই।
-তা বেশ তো, টুকটাক নাহয় দেখাবি ওকে। তাই বলে ছেলেটিকে ঠাট্টা-মশোকরার পাত্র বানালে তো হবে না। শিক্ষকের সমকক্ষ জ্ঞান করতে হবে।
-ঠিক আছে কাকীমা। আমার ভুল হয়ে গেছে।
-হ্যাঁ মা, ভুল অল্পেই শুধরে নেয়া ভালো। বস, আমি শ্রাবণকে বলে দিচ্ছি।
নাজমা বেগম শ্রাবণকে তলব করলেন- শ্রাবণ, এদিকে একটু আয় তো বাবা!
শ্রাবণ অল্প সময়ের ব্যবধানে নাজমা বেগমের সামনে এসে দাঁড়ায়- কিছু বলবেন খালা?
-হ্যাঁ, ও আমার মেয়ের মতো। এবার এসএসসির ছাত্রী। যখন যেটা বুঝতে চায়, ওকে একটু বুঝিয়ে দিস। এতে তোরও চর্চা হবে, আর ওরও উপকার হবে। তাছাড়া এখানে গৃহশিক্ষকের যা ক্রাইসিস—একটু ভালো করতে পারলে দেখবি মাসে হাতখরচা করে বাড়িতেও টাকা-পয়সা পাঠাতে পারবি মাকে।
-ঠিক আছে খালা।
শ্রাবণ নিজের ঘরে চলে যায় । একঢিলে দুই পাখি মারার মতো- না চাইতেই বৃষ্টি হলো যেন! এতে ওর ঐশীর সঙ্গে বন্ধুত্বটাও হলো, পাশাপাশি দু-একটা টিউশনির অনুমতি খালা উপযাজক হয়েই দিলেন। আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে শ্রাবণ। বালিশে মুখ গুঁজে, স্বপ্নবিলাসের অনেকগুলো ভিডিও ওর মগজে চালু হয়ে যায় যেন!
(চলবে)
উপন্যাসঃ নির্জনতার সমুদ্রে অবগাহন,
লেখকঃ কবি বাবু ফরিদী।
©somewhere in net ltd.