নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিক্ষক, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। ফেসবুকে যুক্ত হোনঃ www.facebook.com/dev.d.nipun

...নিপুণ কথন...

সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।

...নিপুণ কথন... › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধারাবাহিক উপন্যাস: নির্জনতার সমুদ্রে অবগাহন-৯

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:২৪

(৯)
ঐশী আজকাল সুযোগ পেলেই শ্রাবণের ঘরে চলে আসে। সকাল-বিকেল বিভেদ নেই। পাঠ্যবইয়ের সমস্যার সাথে, বান্ধবিদের সমস্যা, নিজেদের পারিবারিক সমস্যা নিয়েও কথা হয় ওদের। মাসিমার সঙ্গটা অনেকটা উপলক্ষে গিয়ে দাঁড়ায়। মাঝেমধ্যে বাসায় নিয়ে এটা-ওটা খাওয়ায় ওকে, আবার বাইরেও বেরোয় দুজন একসাথে। বলা যায় ঐশীর পরিবারে শ্রাবণ এখন ঘরের ছেলের মতো। তাই নাজমা খালাও ওদের চলাফেরা নিয়ে তেমন একটা মাথা ঘামান না।

এদিকে শ্রাবণের ভার্সিটিতে ভর্তির কাজও শেষ। ঐশীর পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া থেকেই ওদের ঘনিষ্ঠতা বেড়ে যায়। ঐশীর মন এখন শুধু বইয়ের পাতায় নিবিষ্ট। যেখানে শ্রাবণের মতো শিক্ষক ওর পাশে, পড়ায় কি মন না বসে পারে? শ্রাবণও ঠিক ছাত্রী-শিক্ষক সম্পর্কের ভেতর কারো সংশয় জন্মাতে দেয় না। এতেই সে ঐশীর মা-বাবার কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে। নাজমা বেগমের কাছে শ্রাবণের প্রশংসায় পঞ্চমুখ তারা। নাজমা বেগম এতে পুলকিত অনুভব করেন।

নিজের ঘরে বসে অনেক চিন্তার মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলে শ্রাবণ। ঈদ প্রায় এসে গেলো। কদিনের জন্য একটু বাড়ি যাওয়া দরকার। নয়নটা হোস্টেলে উঠেছে মাস কয়েক। একটা খবর দেয়া দরকার।

হঠাৎ করেই কলির কথা মনে পড়ে যায় শ্রাবণের। প্রথম প্রথম কদিন ওর কথা মনে হলেও পরে আর মনে হয়নি। চিঠিপত্রও লেখেনি। চিঠি লেখায় আলস্য। মায়ের কাছে দু-একটা হঠাৎ লেখা হয়। তাছাড়া চিঠি লেখার সময়ই বা কোথায়? এখন কেন জানি কলির জন্য অস্থিরতা অনুভব করছে শ্রাবণ।

ঐশী সাজগোজ করে এলো শ্রাবণের সামনে- কী ভাবছেন অমন করে?

-না, মানে... শ্রাবণ আমতা আমতা করে। ওর চোখদুটো ঐশীর ফ্রেমে আটকে যায়। ভেসে ওঠে কলির অবয়ব। ঐশীর চোখে অচেনা ঠেকে শ্রাবণকে। শহুরে লালিত্য মুছে মুহূর্তেই গেঁয়ো ভূত বনে যায় শ্রাবণ, ঐশীর কাছে। ঐশী সন্দিগ্ধ প্রশ্ন ছোঁড়ে- অমন করে কী দেখছেন?

শ্রাবণ নিজেকে সামলে নেয়- ক্যানো, তোমাকে!

-আমার লজ্জা করে না বুঝি?

শ্রাবণ মুচকি হেসে ম্যানেজ করে ঐশীকে- তুমি সুন্দর।

ঐশী শ্রাবণের কথায় শামুকের মতো গুটিয়ে ফেলে নিজেকে। তৃপ্তিও অনুভব করে। ভাবে, শ্রাবণ এতদিন তাহলে মুগ্ধ হয়েছে ওর রূপে! এই যে ভ্রু-কামানো, চুলছাঁটা—সুন্দর মুখ আরও সুন্দর করবার জন্য কাঁচা হলুদ, মসুরের ডাল বাটা মাখা—সবই যেন ওর সার্থক বলে মনে হচ্ছে আজ। আর ও ক্যামন প্রেমিক চোখে তাকালো! মুখ ফুটে বললো- ‘তুমি সুন্দর’!

শ্রাবণ নিশ্চয়ই ঐশীর রূপ-যৌবনে দুর্বল হয়ে পড়েছে। মনে মনে হয়তো এতক্ষণ ওর ধ্যানই করছিলো। ছাত্রী-শিক্ষক সম্পর্কের কারণে এতোদিন যা মুখ ফুটে বলতে পারেনি, আজ তা বলতে গিয়েই প্রথমটায় শ্রাবণকে গেঁয়ো ভূত মনে হয়েছিলো। প্রেমে পড়লে মানুষের বুঝি এমনই হয়! ঐশীরও এখন ক্যামন জানি লজ্জাভারাক্রান্ত ঠেকছে। অবনত হয়ে আসছে শরীর। প্রাণচাঞ্চল্য যেন হারিয়ে যাচ্ছে।

শ্রাবণ ঐশীর চোখে চোখ রাখে। ঐশী দু-দুবার ওর চোখে চোখ রাখতে গিয়ে লজ্জায় পলক ফেলে নতমুখী হয়। শ্রাবণ ওকে স্বাভাবিক হতে সাহায্য করে- কোথাও যাচ্ছো বুঝি?

-হ্যাঁ। ঐশী যেন এমনই এক প্রশ্নের অপেক্ষায় ছিলো। তাই স্বাভাবিক হলো এবার। বললো- চলুন না, বেড়িয়ে আসি!

শ্রাবণ অপলক চোখে তাকিয়ে থাকে ঐশীর দিকে।

-আর দেখতে হবে না। এবার উঠুন তো!

শ্রাবণ কিছু বলে না। ওঠেও না।

আপনি তো আচ্ছা লোক মশাই! উঠুন তো! ঐশী শ্রাবণের হাত ধরে টান দিয়ে আবদার-আহ্লাদের দূরে বলে- উঠুন না প্লিজ!

শ্রাবণ চোখে ভাঁজ খেলে স্মিতহাস্য উঠে দাঁড়ায়।

ঐশী তাড়া দেয়- এবার চলুন।

-কোথায়?

ঐশী শ্রাবণের খুব কাছে এসে চোখে চোখ রেখে বলে, যেখানে যেতে মন চায়—যত দূরে যেতে ইচ্ছে করে, সেখানেই নিয়ে যাবো।

-লেখাপড়ার যে বারোটা বাজবে!

-বাজবে না। বরং আপনার মতো শিক্ষক পেয়ে আমি অনেক-অনেক ভালো রেজাল্ট উপহার দিতে যাচ্ছি। ধরুন, আজ একটু রিল্যাক্স করবো।

-তোমার মাকে বলেছো?

হ্যা-অ্যা-অ্যা... মাকে বলেছি।

-বেশ তো, চলো। কোথায় নিয়ে যেতে চাও?
(চলবে)

উপন্যাসঃ নির্জনতার সমুদ্রে অবগাহন,

লেখকঃ কবি বাবু ফরিদী।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.