নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।
(১৩)
শ্রাবণের মন স্মৃতির গ্রিলের ফাঁকে উঁকি দেয়। টিএসসি এলাকার সাথে অন্য একটি এলাকার সাযুজ্য হাতড়ায়।
ও তখন অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র—
খালাতো ভাই জসীমের সাথে এসেছিলো শহরে। কোরবানির হাটে ক্ষেতের পিঁয়াজ বিক্রি করতে এসেছিলো ওরা। খাজনা বাদে হাতে পেলো চারশো টাকার মতো। শহরের সংযোগকারী পুলটি ছিলো ভাঙা। ওপার বাজারে যেতে সহায় ছিলো বাঁশের চওড়া সাঁকো। হাজার হাজার মানুষ পঞ্চাশ পয়সার বিনিমিয়ে সাঁকো পার হয়ে ওপারে যেত। জসীম শ্রাবণকে নিয়ে সাঁকো ঘাটের দিকে অগ্রসর হতেই, বাঁহাতের খুপরি ঘরগুলোর আড়াল থেকে একটি ষোল-সতেরো বছরের মেয়ে পাঞ্জাবিঅলা গানের সুরে জসীমের পাঞ্জাবির কোনা ধরে টান মেরে গলিপথে ছালার আড়ালে লুকালো। জসীম দাঁড়িয়ে পড়লো। ওর হাতে ছিলো জলন্ত সিগারেট। তা দেখে অন্য একটি মেয়ে পর্দার আড়াল থেকে গলা বাড়িয়ে বললো- দুলাভাই, আগুনটা দিয়ে যান—
জসীম গলিপথে ঢুকলো ছালার পর্দা ভেদ করে। শ্রাবণ কিছু সময় দাঁড়িয়ে রইলো জসীমের অপেক্ষায়। দেরি হচ্ছে দেখে একসময় পর্দা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো জসীমের খোঁজে। ভেতরে দেখলো জোড়ায় জোড়ায় নারী-পুরুষ ঠিক এই টিএসসি এলাকার মতো মেতে আছে। তাদের ঢলাঢলি-মাতামাতির ভাবটা ছিলো অন্যরকম, মেয়েদের মুখেও সিগারেট ছিলো সেখানে। সাজ ছিলো উগ্র। চেহারা বেশিরভাগেরই বিশ্রী। নানা বয়সের নারী-পুরুষ ছিলো সেখানে। বর্ষীয়ানরা স্বামী-স্ত্রীর মতো নিবিড়। সোমত্তরা যেন প্রেমিক-প্রেমিকার মতো, অনেকটা এখানকার মতো। পরে জেনেছে, ওটা ছিলো নিষিদ্ধ পল্লী।
জসীম যখন ফিরলো, তখন ওর দেহ ঘর্মাক্ত। চোখেমুখে ভীতি আর উৎকণ্ঠার ছাপ। সেদিন জসীমের হাট করা হয়নি। বাড়ি ফেরার ভাড়ার টাকা তালুকদারের দোকান থেকে চেয়ে নিতে হয়েছিলো।
ঐশীর চোখে কিন্তু ধরা পড়ে অন্যকিছু। পাশের বাঁশঝাড়টির আড়ালে মুখোমুখি বসে একজোড়া প্রেমিক-প্রেমিকা। দূরের লাইটপোস্টের অস্পষ্ট আলোয় লক্ষ্য করলো, খুব কাছাকছি বসে ওরা পরস্পরকে ‘অ্যানালাইজ’ করছে। পরস্পরকে করছে আবিষ্কার। ঐশীর শরীর অবশ হয়ে আসে। এরই মধ্যে কফির পাত্র হাতে দুটি যুবক এসে দাঁড়ায় মাঝখানে। ঐশীর দৃষ্টি ঘোরে অন্যদিকে।
ওর মনেও শ্রাবণকে আবিষ্কারের এবং নিজেকে উজাড় করে দেয়ার নেশা জাগে। শ্রাবণের বুকের মাঝে মাথা গুঁজে মজা সুপারির মতো রসসিক্ত অবস্থায় কুই কুই করে।
শ্রাবণ এতক্ষণে মুখ খুলে- কাল আমাকে বাড়ি যেতে হবে।
-না, তা হয়না।
-কী বলছো তুমি? ঈদের মধ্যে বাড়ি যাবো না!
-এখানে করলে হয়না? আমিও আনন্দ করতাম।
-ঈদটা সবাই গাঁয়ের বাড়িতেই কাটায়।
-না, তুমি কাকিমার সাথে এখানেই ঈদ করবে।
-‘তুমি’? শ্রাবণ ঐশীর কাঁধে ঝাঁকুনি দেয়।
-হ্যাঁ, ‘তুমি’। আর ‘আপনি’ নয়। ওটা দূরের সম্বোধন।
-আমরা কি খুব কাছে এসে গেছি নাকি?
-তুমি বোঝ না?
-আমিতো তোমার মাস্টার!
-তাতে কী? মাস্টারদেরই তো প্রেমে ঝামেলা কম। প্রথমে মাস্টারি, তারপর ড্যাব ড্যাব করে তাকানো, তারপর লাভার—ব্যাস! গুরুজনদের কেউ বুঝতেই পারেনা কিছু!
-তুমি যা-ই বলো, কাল আমাকে বাড়ি যেতেই হবে।
-আবারো বাড়ি! তুমি যে কী—
-তুমি বুঝতে পারছো না। আমার বাবা-মা-ভাই-বোনেরা সব অপেক্ষা করবে। এতদিন হলো ঢাকায় এসেছি। তাছাড়া—
-তাছাড়া কী? বাড়িতে আমার চাইতেও ভালো কেউ—
-জ্বি? শ্রাবণ যেন চমকে ওঠে।
ঐশী শ্রাবণের চমকানো ভাব লক্ষ্য করে নীরবতার আশ্রয় নেয়। মনে সন্দেহের বীজ বপন হয়। তাহলে কি এ মুহূর্তে ও অন্য কারো কথা ভাবছে, যার জন্য ওকে ঈদে বাড়ি যেতেই হবে? মনে মনে ঈর্ষাকাতর হয়ে ওঠে ঐশী। ভাবনাও বাড়ে। হঠাৎ করে কেমন করে সে এত অল্প সময়েই শ্রাবণকে এত কাছের মানুষ হিসেবে বেছে নিলো? শ্রাবণ তো সিরিয়াসলি কিছু নিচ্ছে না! বরং ঐশী নিজেই গায়ে পড়ে ওকে ত্যক্তবিরক্ত করেছে।
ভাবনায় পড়ে যায় ঐশী। আস্তে আস্তে ওর মাথাটা শ্রাবণের বুক থেকে সরিয়ে নেয়। তারপর উদাস দৃষ্টি মেলে শ্রাবণের দিকে তাকায়। অস্পষ্ট আলোয় ওর মুখের আসল রহস্য পরখ করতে ব্যার্থ হয়।
শ্রাবণ ঐশীর মুখটা দুই হাতের তালুতে ধরে আবারও ওকে বুকের মধ্যে চেপে ধরে মাথার সাথে চোয়াল ঘষে আদর জানায়।
ঐশী কাতরকণ্ঠে বলে- শ্রাবণ, তোমাকে দেবার মতো কি কিছুই আমার কাছে নেই?
-হ্যাঁ, আছে। দেবে?
-নাও!
-তবে দাও!
(চলবে)
উপন্যাসঃ নির্জনতার সমুদ্রে অবগাহন
লেখকঃ বাবু ফরিদী।
©somewhere in net ltd.