নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।
পলিশ করা সামান্য এক নুড়িপাথর কেমন করে বিশ্বের সবচেয়ে দামি বস্তুতে পরিণত হয়? দুটি শব্দে এর ব্যাখ্যা দেওয়া যায়—একাধিপত্য এবং প্রচারণা।
মাত্র দুই শতাব্দী আগেও হীরা নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামাত না মানুষ। তখন হীরা নামের বস্তুটি আসলেই দুর্লভ ছিল। রাজপরিবারের সদস্যরাই মূলত অলংকার হিসেবে এই বস্তু পরতেন এবং এর মালিক হতেন। এরপর ১৮৭০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিপুল পরিমাণ হীরার সন্ধান পান খনিশ্রমিকেরা। জমে ওঠে হীরার বাজার। হীরা যে শুধু সাধারণ এক বস্তু হয়ে ওঠে, এমনটি নয়। বরং তুলনামূলকভাবে সস্তা হয়ে ওঠে হীরা। কিন্তু এ অবস্থা খুব বেশি দিন স্থায়ী হয় না। সেসিল রোডস নামের এক ব্যক্তি হীরার খনির শেয়ার কিনতে শুরু করেন। মাত্র ১৮ বছরেই দক্ষিণ আফ্রিকার হীরা সরবরাহের পুরোটাতেই তাঁর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
সেসিল রোডসের নাম কখনো না শুনলেও আপনি নিশ্চয়ই ‘ডি বিয়ারস’-এর নাম শুনেছেন। এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা সেসিল রোডস। কয়েক দশকের পরিচর্যায় রোডস তাঁর প্রতিষ্ঠানটিকে প্রথমে একটি বাণিজ্য-জোটে পরিণত করেন। পরবর্তী সময়ে যা বাজারের অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের পরাজিত করে একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। এর মাধ্যমেই হীরার উৎপাদন পুরোপুরি স্থিতিশীল হয়।
কিন্তু তারপরই হঠাৎ করে হীরা এবং অলংকারের প্রতি সাধারণ মার্কিন নাগরিকদের আগ্রহ কমতে শুরু করে। বাজারে লাগে মন্দা। ১৯৩৯ সালের এক সমীক্ষায় দেখা যায়, সে সময়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসা কনেদের এক-তৃতীয়াংশই কোনো ধরনের আংটিবদল ছাড়াই বিয়ে সম্পন্ন করতেন। ডি বিয়ারস তখন এমন এক অবস্থায় পড়ে গেল, যখন প্রয়োজনের অধিক জোগান থাকা সত্ত্বেও চাহিদা ছিল কম। কাজেই নতুন ধরনের এক পদ্ধতির অবতারণা করতে হলো। প্রতিষ্ঠানটি বিজ্ঞাপনী সংস্থা এন ডব্লিউ আয়ার বরাবর এক চিঠি পাঠাল। জানতে চাইল ‘ভিন্ন ধরনের প্রচারণা’ করে হীরার বিক্রি বাড়ানো সম্ভব কি না। সংস্থাটি ক্রেতাদের ওপর এক জরিপ চালিয়ে দেখল, বেশির ভাগ মানুষই হীরাকে এক হাস্যকর বিলাসিতা হিসেবে দেখে। এ থেকে তারা বুঝতে পারে, ক্রেতার মানিব্যাগের দখল নিতে হলে আগে দরকার তাদের হৃদয়ে দখল স্থাপন।
এরপর তারা যা করল, তাকে বলা যায় আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে সফল বিজ্ঞাপনী প্রচারাভিযান। তারকাদের এবং সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে হীরা ধার হিসেবে দেওয়া শুরু করে ডি বিয়ারস। সংবাদমাধ্যম দখলে রাখতে প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের সংবাদপত্র এবং ম্যাগাজিনের কলামে বড় বড় করে তাদের পণ্যের কথা ছাপতে থাকে। ১৯৪৮ সালে লিপিকার ফ্রান্সেস গেরেটি মাত্র চার লাইনে হীরাকে ব্যাখ্যা করে লেখেন, ‘অনন্তকালের জন্য হীরা’। এই চার লাইন যেমন ছিল স্বর্গীয় ভালোবাসার রূপক, তেমনি ছিল এক নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগ। তাতেই কেল্লাফতে। হু হু করে বাড়তে লাগল হীরার আংটির বিক্রি।
বিজ্ঞাপনী সংস্থা এন ডব্লিউ আয়ার ১৯৫১ সালে তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, ‘জহুরিরা আমাদের জানিয়েছেন, হীরার আংটি ছাড়া একটি মেয়ে কখনই বাগদত্তা হতে পারে না।’ ১৯৬৮ সাল নাগাদ ৮০ শতাংশ আমেরিকান কনে হীরার আংটি পরতে শুরু করেন। কিন্তু এতেও সন্তুষ্ট হতে পারেনি ডি বিয়ারস। তাই প্রচারাভিযান চলছিলই।
১৯৮০ সালে এন ডব্লিউ আয়ার নতুন এক বিজ্ঞাপন প্রচার শুরু করল। যাতে বলা হয়, ‘মাত্র দুই মাসের বেতন কি অবিনশ্বর কিছুর জন্য অতি সামান্য দাম নয়?’ হীরার আংটির মতোই নতুন এই বিজ্ঞাপন হবু বরদেরও হীরার পেছনে অর্থ বিনিয়োগে উৎসাহিত করে। মাসিক পত্রিকা অ্যাটল্যান্টিক-এর ১৯৮২ সালের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তখন থেকেই হীরার দাম তরতর করে বাড়তে থাকে।
দেব দুলাল গুহ,
সূত্র: মেন্টালফ্লস
২| ২২ শে জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৫:২৭
আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: তথ্যসমৃদ্ধ লেখাটি পড়ে হীরার আরেক পিঠ দেখতে পেলাম। ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৭
আমি ইহতিব বলেছেন: যে পাথর পরে কাউকে বলে বোঝাতে হয় যে সেটি হীরার এমন পাথরের প্রতি আসক্তি বা আগ্রহ কখনোই হয়নি। দাম বাড়ার ইতিহাস জেনে ভালো লাগলো।