নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।
জন্মগ্রহণের পর মানব শিশু কান্না করে কেন? (১) মায়ের সঙ্গে ১০ মাস ১০ দিনের নাড়ির সম্পর্ক ছিন্ন হবার বেদনায়, (২) বাবা-মা ও সমাজের চোখে অবাঞ্ছিত হয়ে জন্ম নেওয়ার হতাশা থেকে (মেয়ে শিশু), (৩) বড় হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে পরিবারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিতে হবে এই দুশ্চিন্তা থেকে! (ছেলে শিশু)
জন্ম নিয়েই নিশ্চয়ই শিশুর মাথায় এসব ভাবনা আসে না। তবে হাস্যকর মনে হলেও বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে ২ ও ৩ নম্বর কারণকে একেবারে অবহেলা করা চলে না। একটি মেয়ে অধিকাংশ বাবা-মায়ের কাছেই এখনও অবাঞ্ছিত, অনাকাংখিত। ছেলে জন্ম নিলে সে সংসারের হাল ধরবে, আর মেয়েকে অনেক খরচ করে বিয়ে দিতে হবে—এই চিন্তা এই আধুনিক যুগেও মানুষ করে। মেয়েকে এখানে সম্পদ বলে ভাবা হয় না। পবিত্র ধর্মগুলোতেও নাকি নারীকে পুরুষের চেয়ে কম মর্যাদা দেওয়ার কথা বলা আছে। ইসলাম ধর্মমতে বিবি হাওয়ার জন্ম হয় প্রথম সৃষ্ট মানব আদমের বুকের পাঁজরের হাড় থেকে। সেদিন এক মুরুব্বি এই গল্প শুনিয়ে বললেন, পাঁজরের হাড় বাঁকা হয়, আর এজন্যই মেয়েরাও স্বভাবে বাঁকা এবং পুরুষের চেয়ে কমজোর। একথা বলেই মুরুব্বি একগাল হেসে নিলেন। আবার একই ধর্মমতে কম হলেও মেয়েরা বাবার সম্পত্তির ভাগ পায়। কিন্তু দেখুন এই দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মাঝে বাবার সম্পত্তির ভাগ শুধু ছেলেরা পায়, মেয়েরা পায় না। তাদেরকে শুধু বিয়ের সময় সোনা-দানা এটা-ওটা দেয়া হয়। যদিও হিন্দু ধর্মে নারীকে মায়ের আসনে বসিয়ে পূজা করা হয়।
আমরা ভুলে যাই মেয়েরাও এখন পুরুষদের সাথে সমানে সমানে এগিয়ে চলেছে। বর্তমানে ফোর্বস ম্যাগাজিন প্রকাশিত বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধরদের তালিকায় রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন ও যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরেই আছেন জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মারকেল, যিনি একজন নারী এবং ২০০৫ সাল থেকে জার্মানির সর্বোচ্চ এই আসনে আছেন। আমাদের দেশের সরকারপ্রধান, জাতীয় সংসদের স্পীকার, বিরোধী দলীয় নেত্রী, অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির প্রধান একজন করে নারী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো এই দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান ও প্রবীণ নেতাদের একজন। এভাবে বিসিএস থেকে শুরু করে প্রাইভেট জব, সামরিক-বেসামরিক সকল পেশায়, সাংবাদিকতার মতো ঝুকিময় পেশায় ভালো করে তাকালেই চোখে পড়ে মেয়েদের জয়জয়কার। রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থার প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর এমন সফলতার উদাহরণ ঢের দেওয়া যাবে। সবচেয়ে বড় কথা, শুধুমাত্র মেয়ে জাতিই মা হতে পারেন, সন্তান জন্ম দেওয়ার কষ্ট ভোগ করার সৌভাগ্য স্রষ্টা শুধু তাঁদেরকেই দিয়েছেন।
তবুও দিনকে দিন সমাজে মেয়েদের হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। মেয়েরা ইচ্ছামতো সেজে পছন্দের পোষাক পড়ে রাস্তায় বের হতে পারছে না। শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে সকলের কুনজর থেকে বাঁচতে তখন নারী কাপুরুষের মতো আশ্রয় নিচ্ছে পর্দার অন্তরালে, সঙ্গীত সাধনা আবৃত্তিচর্চার মতো মননশীলতার বিকাশ থেকে পিছিয়ে আসছে।দিনকে দিন যেন আবার আমরা ফিরে যাচ্ছি সেই বেগম রোকেয়ার ‘অবরোধবাসিনী’র যুগে! এই দেশে, যে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ ছিল, সেই দেশে? ভাবতেও কষ্ট হয় ইদানিং। আজকাল সবাই যেন শেকল ভাঙ্গার গান গাইতে ভুলে গিয়ে স্বেচ্ছায় শেকলে জড়িয়ে নিচ্ছে নিজেকে!
একদিন বেগম রোকেয়া পেরেছিলেন, আগামীর রোকেয়ারাও পারবে। সবার আগে বেরিয়ে আসতে হবে পরিবারের বাঁধা ডিঙ্গিয়ে, তারপর সমাজ, রাষ্ট্র। মেয়ে তুমি সুন্দর তাই তোমার দিকে একটি ছেলে তাকাবেই। এটা জীনগত। তোমাকেই খুঁজে নিতে হবে সেই দৃষ্টিতে কী আছে—প্রশংসা ও সম্মান, নাকি অবজ্ঞা ও কুনজর। এতে তোমার কোনো দোষ নেই। তুমি লাখে কোটিতে বীর সন্তানের জন্ম দিয়েছো, তুমি ভয় পেলে চলবে কেন?
নারী দিবসে এই পৃথিবীর সকল সংগ্রামী ও প্রগতিশীল নারীর প্রতি রইল আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। আপনারাই পেরেছেন এবং আপনারাই পারবেন। শুভকামনা।
+ দেব দুলাল গুহ (দেবু ফরিদী)
©somewhere in net ltd.