নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।
বেসরকারি কলেজের কিছু সম্মানিত সহকর্মী জাতীয়করণ ও ক্যাডারে #আত্তীকরণকে একসাথে মিলিয়ে ফেলছেন। ক্যাডার সার্ভিস সংক্রান্ত বিধি সম্পর্কে না জেনেই ভুল ভাল তথ্য দিয়ে অন্য সহকর্মীদের বিভ্রান্ত করছেন। রাজনীতি বা সস্তা জনপ্রিয়তা পাবার আশায় বা অন্য কোন কারণ থাকতে পারে , আমি সেদিকে যেতে চাই না। বেসরকারি কলেজের হাজার হাজার সহকর্মী জাতীয়করণ নিয়ে উদ্বেগ উকন্ঠায় দিন কাটালেও কিছু শিক্ষক নেতার ভুল সিদ্ধান্তে জাতীয়করনের কাজও বিলম্বিত হচ্ছে। শুধুমাত্র জাতীয়করণ চাইলে হয়তো এতদিন আপনাদের কাঙ্খিত জিও হযে যেতে পারতো্। অথচ কিছু অতি উৎসাহী সহকর্মীর যেনতেন ভাবে ক্যাডার কর্মকর্তা হবার ইচ্ছায় পুরো প্রক্রিযা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে আছে।
নিজেদের দোষ ঢাকতে ক্রমাগত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দোষ দিয়ে নিজেদের দূর্লবতা ঢাকতে চেষ্টা করছেন। বিষয়টি বেসরকারি কলেজের সকল শিক্ষকের জানার প্রয়োজন আছে বৈকি?
বিসিএস ক্যাডার নিয়োগের প্রক্রিয়া ছাড়া অন্য কোন প্রক্রিয়ায় ক্যাডারভুক্ত করণ সকল ক্যাডার সার্ভিসের অমর্যাদা। মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তর সমূহে যারা কাজ করছেন তারাও কোন না কোন ক্যাডারের কর্মকর্তা। সুতরাং তারা ক্যাডার সার্ভিসের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে কাজ করবেন এটা ভাবাই বোকামী।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ কিম্বা আপনাদেরকে সরকারি চাকুরীতে আত্তীকরনের বিরোধী নয়, আপনাদেরকে ক্যাডার সার্ভিস ভুক্ত করনের বিরোধী। সরকারি চাকুরীতে আত্তীকরণ আর ক্যাডার সার্ভিসে আত্তীকরণে এক নয়।
কেন জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষকদের ক্যাডার সার্ভিসে আত্তীকরণ করা যায় না সেটা জেনে নিন।
বাংলাদেশকে উন্নত ও শিক্ষিত জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরবার জন্যে বর্তমান সরকারের শিক্ষা ব্যাবস্থাকে জাতীকরনের সিদ্ধান্ত কে স্বাগত জানাই, গর্ববোধ করি।সরকারে এই সিদ্ধান্ত কার্যকরী হলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে বলে বিশ্বাস করি। বাঙ্গালী জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু সরকার তৎকালীন সময়ে ভাবলেন, সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত যুদ্ধবিদ্ধস্থ দেশে একটি সুস্থ ও সুন্দর প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলতে সিভিল সার্ভিসকে এমনভাবে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন যাতে তার মধ্যে বিশ্বমানের সক্ষমতার সৃষ্টি হয় যার মাধ্যমে তারা দক্ষতার সঙ্গে দ্রুত সরকারি নীতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে স্বাধীন ও স্বার্বভৌমভাবে নব প্রতিষ্ঠিত দেশের চাহিদা সম্পূর্ণভাবে পূরণ করতে পারে। এ জন্য The Services (Reorganization and Conditions) Ordinance, 1975 নামে ১৯৭৫ সালে XXII নং অধ্যাদেশ জারি করেন। পরবর্তীতে এটি পার্লামেন্টে উত্থাপন করেন এবং The Services (Reorganization and Conditions) Act, 1975 নামে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে পাস হয়। এ আইনের ৪ নং অনুচ্ছেদ বলে ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়ে ১৯৮০ সালে তৎকালীন সরকার ১৪টি ক্যাডার সৃষ্টি করে The Bangladesh Civil Services (Reorganization) Order, 1980 জারি করেন। সংশোধনীর মাধ্যমে ক্যাডার সংখ্যা ৩০ এ উন্নীত করা হয়। একটি ক্যাডারের ধরণ, পদের ধরণ ও পদ সংখ্যা নির্দিষ্ট করার জন্য প্রত্যেকটি ক্যাডারের জন্য একটি করে ক্যাডার কম্পোজিশন রুল প্রনয়ণ করে ০১/০৯/১৯৮০ তারিখেই তা জারি করা হয়। এর মধ্যে বিসিএস সাধারণ শিক্ষার জন্য প্রযোজ্য রুলটি হলো The Bangladesh Civil Service (Education : General Education) Composition and Cadre Rules, 1980 । ক্যাডারে বা ক্যাডার পদে জনবল নিয়োগের স্বীকৃত নিয়মিত উপায় ২টি হলোঃ ১.সরাসরি নিয়োগ ও ২. পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ।
১৯৮১ সালে বিসিএস ক্যাডার পদে নিয়মিত নিয়োগের জন্য সরকার The Bangladesh Civil Service Recruitment rules, 1981 এটি সব ক্যাডারের জন্যই সমভাবে প্রযোজ্য্ । এই রুলসেও নিয়োগের ধরণ বলা হয়েছে ২টি ১। সরাসরি নিয়োগ(ধারা ৪)২। পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ(ধারা ৫)।
**জনবল নিয়োগের কাজটি করে দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান The Bangladesh Public Service Commission (পিএসসি)। বিসিএস ক্যাডারে সরাসরি নিয়োগের জন্য প্রার্থী বাছাইয়ের একমাত্র বৈধ উপায় হলো বিসিএস পরীক্ষা এবং যেটি নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার জন্য ১১/০৫/১৯৮২ তারিখে BCS (Age, qualification & Examination for direct recruitment) Rules, 1982 নামে সরকার কর্তৃক একটি পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষা বিধিমালা প্রণীত হয়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তা নিযোগের জন্য বিধি মোতাবেক প্রিলিমিনারী, লিখিত, মনস্ত্বাত্ত্বিক, মৌখিক ও স্বাস্থ্যপরীক্ষা যোগ্য বিবেচিত হলে নিয়োগের জহন্য সুপারিশ করে।
লক্ষ্য করুন,
প্রথমতঃ ক্যাডার কম্পোজিশন রুলস ১৯৮০ ধারা ৬ এ নিয়োগের ধরণ বলা হয়েছে ২টি ১।সরাসরি নিয়োগ ২। পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ। আবার ক্যাডার রিক্রুটমেন্ট রুলস ১৯৮১ তে নিয়োগের ধরণ বলা হয়েছে ২টি ১। সরাসরি নিয়োগ(ধারা ৪) ২। পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ(ধারা ৫)। আত্তীকরনের কোন সুযোগ নেই।
দ্বিতীয়তঃ ১৯৮১ সালে জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষকদের জন্য একটি বিধি তৈরী করা হয যেটা Teachers and Non Teaching Stuff of Nationalised Colleges Absorption Rulls, 1981 নামে পরিচিত। এই বিধিতেও জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষকদের ক্যাডার ভূক্ত করার কোন সুযোগ নেই। তাদেরকে কলেজ জাতীয়করনের তারিখ হতে চাকুরী গনণায় সিনিয়রিটির বিষয় উল্লেখ আছে সেটাও তাদের মধ্যে।
তৃতীয়তঃ ১৯৯৮ সালে জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষকদের জন্য Teachers and Non Teaching Stuff of Nationalised Colleges Absorption Rulls, 1981 বাতিল করে স্বপদে আত্তীকরণ বিধিমালা ১৯৯৮ প্রনয়ণ করা হয়।এই বিধিতেও জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষকদের তারা অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষ/ যিনি যে পদেই থাকবেন সে পদে আত্তীকরন করা হয় কিন্তু ক্যাডার ভূক্ত করার কোন সুযোগ নেই।
চতুর্থতঃ ২০০০ সালে জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষকদের জন্য জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষক অশিক্ষক কর্মচারী আত্তীকরণ বিধিমালা ২০০০ নামে একটি বিধি প্রনয়ণ করা হয়। ক্যাডার কম্পোজিশন রুলস ১৯৮০ ও ক্যাডার রিক্রুটমেন্ট রুলস ১৯৮১এর বিরোধী ।
সরকারি চাকুরীতে আত্তীকরণ আর ক্যাডার সার্ভিসে আত্তীকরণ এক বিষয় নয়। আমরা প্রতিষ্ঠান জাতীকরনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই । প্রতিষ্ঠান জাতীকরণের পর জনবল সরকারি চাকুরীতে আত্তীকরণ হতে পারে। মানবিক কারণে তাদের অর্থিক সুযোগ সুবিধা দেয়া যেতে পারে।তবে ক্যাডার রিক্রুটমেন্ট রুলস ১৯৮১ মোতাবেক পিএসির মাধ্যমে নির্ধারিত প্রক্রিয়া সম্পন্ন ব্যতীত ক্যাডার ভূক্তির কোন সুযোগ নেই। সরকারি কর্মকমিশনের মাধ্যমে ক্যাডার সার্ভিসে নিয়োগ প্রাপ্তির সুনির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি বিদ্যমান। ক্যাডার সার্ভিসে নিয়োগের জন্য সরকারি কর্মকমিশনের অধীনে লক্ষ লক্ষ প্রার্থীর মধ্য হতে প্রিলিমিনারী, লিখিত, মনস্তাত্ত্বিক, মৌখিক,স্বাস্থ্যগত ও নিরাপত্তাগত যাচাই বাছাইয়েরে পর প্রকৃত মেধাবীদের কে ক্যাডারে নিযোগের জন্য সুপারিশ করা হয়। কিন্তু বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের নিযোগ প্রক্রিয়া এসব অনুসরণ করেনা ।তারাও আমাদের মতো বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য সাংবিধানিকভাবে অধিকারী ছিলেন। বেশিরভাগই বিসিএস পরীক্ষা দেবার যোগ্যতা হয়নি। যারা বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছেন তারা অংশগ্রহণ করে অনুর্ত্তীর্ণ হয়েছেন অথবা প্রিলিমিনারীতেই বাদ পড়েছেন অথবা চূড়ান্তভাবে ক্যাডারে নিয়োগপ্রপ্তির জন্য অযোগ্য বিবেচিত হয়েছেন। শেষতক যেনতেন প্রক্রিয়ায় একটি বেসরকারি কলেজে শিক্ষক তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করে রেখেছেন। সরকরের জাতীয়করণের সিদ্ধান্তের সুযোগে তারা রাতারাতি ক্যাডার কর্মকর্তা হতে চাচ্ছেন। মেধার যথাযথ মূল্যায়ণ না করে ভিন্নপথে ক্যাডার ভুক্তির এই পথ এখনই বন্ধ করা না গেলে প্রকৃত মেধাবীদেরকে শিক্ষা ক্যাডার হতে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করবে। ফলে দেশের মান সম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করনের প্রচেষ্টা মুখ থুবড়ে পরতে পারে।
যেহেতু ক্যাডার রিক্রুটমেন্ট রুলস, ক্যাডার কম্পোজিশন রুলস অনুযায়ী ক্যাডারে আত্তীকরণের কোন সুযোগ নেই। ক্যাডার সার্ভিসের অন্য কোন ক্যাডারে এভাবে ক্যাডার ভুক্ত করনের কোন নজির নেই । যেত নেত ভাবে এ ধরনের ক্যাডার ভূক্তি শুধু শিক্ষা ক্যাডার নয় গোটা ক্যাডার সার্ভিসের অমর্যাদা। আর এই প্রক্রিয়ায় ক্যাডারভুক্ত করনই শিক্ষা বিভাগে অস্বস্তির মূল কারণ।
সুতরাং ক্যাডার বৈষম্য দূরীকরণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক নির্দেশনা, অনুশাসন ও শিক্ষানীতি ২০১০ এর আলোকে কলেজ জাতীয়করণ প্রক্রিয়ায় সংশ্লিস্ট কলেজ শিক্ষকদের কে ক্যাডার বহির্ভূত রেখে তাদের নিয়োগ,পদায়ন প্রদান্নতির জন্য আলাদা সার্ভিস করাই এ সমস্যার একমাত্র সমাধানের।
লিখেছেন: শওকত হোসেন।
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:৩৩
রাজীব নুর বলেছেন: দরিদ্র দেশ গুলোতে বৈষম্য বেশি হয়।