নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।
এক বড় ভাইকে আমি চিনি, যিনি শুধু বিসিএস ক্যাডার হবেন বলে প্রাইভেট চাকরি ছেড়ে সারাদিন সায়েন্স লাইব্রেরিতে পড়তেন। অল্প বয়সেই বিয়েও করে ফেলেছিলেন, বাচ্চা আছে। সেই বউ-বাচ্চাকে গ্রামে রেখে হল ছেড়ে উঠেছিলেন মেসে। অনেক কষ্টে চলতেন। বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে, চাকরি হচ্ছে না। ওয়ালটন কোম্পানির সামান্য বেতনের চাকরির জন্য তিনি এই ছোটভাইয়ের পিছে অনেক ঘুরেছেন। আমার খুব খারাপ লেগেছে, তাঁকে চাকরিটি দিতে পারিনি, বয়স আর রেজাল্টের বিবেচনায় হয়নি। চাকরিটা না দিতে পারার ব্যার্থতায় আমি নিজেই কেঁদেছিলাম সেদিন। আমি বলতাম, দেইখেন ভাই আপনার এই ৩৬তমতেই হবে। আজ অশ্রসজল চোখে ভাইয়ের খুশির সংবাদটি পেলাম। একদম শেষ বয়সে এসে তিনি আজ বিসিএস ক্যাডার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।
.
এক বান্ধবিকে চিনতাম, আমারই ছোটবেলার বন্ধু। বাবা নেই, পড়ালেখা শেষে হল ছেড়ে কিছুদিন বোনের বাসায় ছিলো। তারপর নীলক্ষেতের কর্মচারীদের বাসায় পেয়িং গেস্ট থাকতো। আমি তখন প্রথম সারির পত্রিকার সাংবাদিক। সেই সুবাদেই বান্ধবি একদিন সব লজ্জার মাথা খেয়ে আমার কাছে একটি চাকরি চেয়ে বসে। আমি ওকে আর ক'টা দিন ধৈর্য ধরে বিসিএসটা দেখার পরামর্শ দেই। কারণ হিসেবে বলেছিলাম অন্য চাকরি করলে বিসিএসের প্রস্তুতি নেওয়া খুব কঠিন। আমি নিজেই সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। সেই মেয়েটি আমার সাথেই ক্যাডার হয়েছে পছন্দেরটাতেই।এমনকি পোস্টিং খোদ ঢাকাতেই, যা আমারও হয়নি।
.
হলে উঠে দেখেছি হল রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এক দাদা। চাকরিতে আবেদনের বয়স শেষ প্রায়, তবুও হলে থাকতে হয়, দিনরাত এক করে পড়তেন হলের লাইব্রেরিতে। কত অপমান নিরবে সয়েছেন ছোটভাইদের! বাড়িতে বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তার কথা তো বোঝাই যায়। প্রায় শেষ বয়সে এসে তিনিও আজ ক্যাডার হয়েছেন। পরিশ্রম কখনও বৃথা যায় না।
.
আবার একটা রেখে আরেক ক্যাডারে গিয়েছেন এমনও অনেকে আছেন। গত বিসিএসে আমি যে ক্যাডারে সারাদেশের মধ্যে চতুর্থ হয়েছি, সেই ক্যাডারে প্রথম এবার প্রশাসনে পেয়েছেন। আমি নিশ্চিত আজ এমন অনেকেরই জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন। আনন্দটা কারো কারো এত বেশি যে তারা নিশ্চয়ই সুখের কান্নাও কাঁদছেন।
.
সারাদিন লাইব্রেরিতে কাটিয়ে রাতে হলে ফিরে ৩০ টাকায় রাতের খাবার সেরে, অথবা একেবারেই না খেয়ে থেকে যে ছেলেটি সিঙ্গেল বেডে ছোটভাইয়ের সাথে ডাবলিং করে কোনমতে একটা ঘুম দিয়ে আবার ভোরে উঠে দৌড়ে গেছে লাইব্রেরিতে সিরিয়াল ধরতে, সেই ছেলেটির জন্য এই জয় হিমালয় জয়ের সমান। এবার তার একটা নিশ্চিত জীবন হলো। এবার সে সংসারের হাল ধরতে পারবে, প্রেয়সীকে ঘরে তোলার সাহস করবে হেলায়। যে মেয়েটি বাবা-মায়ের থেকে সময় নিয়েছিলো এতদিন ক্যাডার হওয়ার আগে বিয়ের পিঁড়িতে বসবে না বলে, আজ তার মহাআনন্দের দিন। আমিও এদেরই একজন। আমার বুকটা আনন্দে ভরে ওঠে এমন মানুষদের সাফল্য দেখলে। এদের সবাইকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাই। সিভিল সার্ভিসে স্বাগতম! বাকি পথটুকু পেরোতে পারলেই আপনারা দেশের প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হবেন।
.
ওহ, বলতে ভুলেছিলাম। গতকাল যে ছেলেটির কথা শেয়ার করেছিলাম, সঞ্জিত রায়, মনে আছে, যে টাকার অভাবে সলিমুল্লাহ মেডিক্যালে চান্স পেয়েও পড়তে পারবে কিনা নিশ্চিত ছিলো না? আমি খবরটি ফেসবুকে শেয়ার করার পর সে এত মানুষের কাছ থেকে সাহায্যের আশ্বাস পেয়েছে আর এত কল পেয়েছে, যে আজ সারাদিন তার মোবাইল নাম্বারটা অফ পেয়েছি। বেচারা আনন্দের আতিশয্যে বিরক্ত! নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক বড় বড় লোক আমার কাছে সাহায্যের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন, যাদের মাঝে প্রকৌশলী, সায়েন্টিস্ট, কর কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ডাক্তার, এমনকি পুলিশের একটা ইউনিটের প্রধান বড় ভাইও আছেন। আমি সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। ছেলেটিকে আমি ব্যাক্তিগতভাবে চিনি না, স্বার্থ নেই কোনো, কিন্তু তবুও এভাবে কারো উপকার করতে পারলে আমার খুব ভালো লাগে। আমি নিশ্চিত, এভাবে সমাজের সংগ্রামীদের তুলে আনতে হবে, মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে, এই মানুষগুলোই একদিন দেশটাকে বদলে দেবে। এরাই সোনার বাংলাদেশ গড়বে। আমি স্বপ্ন দেখি, আমি আশাবাদী মানুষ, আশায় বাঁচি।
দেব দুলাল গুহ / দেবু ফরিদী
২| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ২:৩২
ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: পরিশ্রম আর অদম্য ইচ্ছা থাকলে সুফল আসবেই।
৩| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ২:৪৬
বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: এত কষ্টের বিনিময়ে সরকারী চাকুরি। এরপর যেন দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর কর্মকর্তা না হয় সেই কামনা করি...
৪| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ২:৫৭
কালীদাস বলেছেন:
অসম্ভব ভালো লিখেছেন। এক কথায় অনবদ্য।
বহুদিন পরে একটা ভালো লেখা পড়লাম। রবীন্দ্র পরবর্তী যুগে এধরনের লেখা আর আগে আসে নি। অনবদ্য...অসাধারণ...
পড়তে পড়তে চোখে পানি এসে গেল। শুধু যে প্রাসঙ্গিক ও সময়উপযোগী লেখা তাই নয় একেবারে সমস্যার মূলে কুঠারাঘাত করেছেন। লেখকের বক্তবের সাথে পুরোপুরি একমত। লেখাটিকে স্টিকি করা হোক...
৫| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৩:০০
অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: দেবু ফরিদী কে? আপনি কারো লেখা শেয়ার করেছেন?
৬| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১০:২৫
...নিপুণ কথন... বলেছেন: দুটি নামই আমার।
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:৪৭
মোহেবুল্লাহ অয়ন বলেছেন: আসলেই, পরিশ্রম করলে ফল আসেই। আর সেই ফল পেলে, মানুষ আগের সেই অসহনীয় কষ্টকে স্বার্থক মনে করে।