নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিক্ষক, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। ফেসবুকে যুক্ত হোনঃ www.facebook.com/dev.d.nipun

...নিপুণ কথন...

সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।

...নিপুণ কথন... › বিস্তারিত পোস্টঃ

লুকা মদ্রিচঃ শরণার্থী থেকে বিশ্বকাপ ফাইনালের ক্যাপ্টেন

১৫ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:৪১

যদি বলা হয় ক্রোয়েশিয়ার প্লেমেকার কে? সবাই নিশ্চিত একবাক্যে জবাব দেবেন- লুকা মদ্রিচ! হ্যাঁ, তিনিই ক্রোয়েশিয়ান ফুটবল দলের অধিনায়ক, যার কাঁধে ভর দিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে ক্রোয়েশিয়া, স্বপ্ন দেখছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হবার। তিনিই 'গেইম চেঞ্জার'।
.
তাঁকে ঘিরে বিশ্বাস আর আবেগটা সে দেশে এতই বেশি যে সেদিন তিনি বলেই ফেলেছেন, যদি গ্যালারিতে জায়গা থাকতো, তাহলে গোটা ৪০ লাখ ক্রোয়েশিয়ানই নাকি মাঠে চলে আসতো! ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের দিন তিনি জয়ের অনুপ্রেরণা সম্পর্কে বলতে গিয়ে যেমন বলেছেন, বৃটিশদের তাদেরকে ছোট করে দেখার মানসিকতাই তাদের জয়ের পথে প্রেরণা জুগিয়েছে! কিন্তু ক্রোয়েশিনদের এই প্রাণভোমরার জীবনে বড় হওয়াটা খুব একটা সুখকর অভিজ্ঞতা ছিলো না। (লেখাঃ দেব দুলাল গুহ)
.
লুকা মদ্রিচের বয়স যখন ছয়, তখন তার দাদুকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। বৃদ্ধ ভদ্রলোক ১৯৯১ সালের ডিসেম্বর মাসে অন্য দিনগুলোর মতোই সেই সকালেও তাঁর গবাদিপশু নিয়ে পাহাড়ে চড়েছিলেন। এই কাজটাই তিনি করতেন বৃষ্টি কিংবা রোদে, শীত কিংবা গ্রীষ্মে। কিন্তু সেদিন আর তিনি গবাদিপশু নিয়ে ফিরে আসেন নি। পুলিশের উর্দি পরিহিত কিছু মানুষ তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিলো। যদিও তারা আসলেই পুলিশ ছিলো, নাকি পুলিশের উর্দিতে অন্য কেউ, তা জানা যায়নি। কাগজে কলমে নয়, বরং ক্ষমতাটা তখন এসেছিলো বন্দুকের ব্যারেলে।
.
বৃদ্ধ মানুষটার দোষ ছিলো ওই এলাকার অন্যদের মতোই, সাম্প্রদায়িকতা যার মূল কারণ। তিনি ওদের গোষ্ঠীর একজন ছিলেন না, ছিলেন সংখ্যালঘু। তিনি একজন ক্রোয়েশিয়ান, এটাই তাঁর দোষ ছিলো! আর তারা ছিলেন সার্বিয়ান, এজন্যই তিনি তাদের শত্রু!শুধুমাত্র এই একটা কারণেই লুকা মদ্রিচের দাদুকে এবং আরও কয়েকজনকে কাছের এক গ্রামে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলা হয়!
.
তিনি মৃত্যুবরণ করার আগে একটি পরিবার রেখে যান, যেখানে তাঁর প্রিয় নাতি লুকা মদ্রিচ ছিলো, যাকে তিনি গল্প শোনাতেন, যার চোখে তিনি ছিলেন নায়ক! সেই ছোট্ট ছেলেটিই আজ ৩২ বছরের সোমত্ত যুবক, ফিফা বিশ্বকাপের ফাইনালে একটি জাতির নেতৃত্ব দিচ্ছে!
.
দাদুর মৃত্যুর পর লুকার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়। বছরের পর বছর তাদেরকে যাডার শহরের একটি সস্তা হোটেলে থাকতে হয়েছে। যুদ্ধের সময় যখন মর্টারের শেল এসে পড়তো, বয়সে ইয়াং লুকা মদ্রিচ তখন রুমের ভেতর বসে অপেক্ষা করতো কখন বোমা হামলা শেষ হবে। হলেই সে হোটেলের কার পার্কিংয়ে ফুটবল খেলতে নেমে যেতো, কখনও একা আবার কখনও অন্য শিশুদের সাথে।
.
লুকার উচ্চতা এতোটাই কম ছিলো, যে স্থানীয় দল বিগউইগস হ্যাজুক তাঁকে নিলো না। তারপর ১৮ বছর বয়সে বসনিয়ান-হার্সেগোভিনান লীগে জ্রিন্সকি মোস্টার এর হয়ে খেলার সুযোগ পেলো। দলের এবং প্রতিপক্ষের সবাই এই ছেলেটার মাঝে দুটি জিনিস আবিষ্কার করলোঃ চাহিদামতো সকল দক্ষতাই এই ছেলের আছে, এবং সে নিজের খেয়ালটাও নিজেই রাখতে পারে।
.
এরপর ১৫ বছর কেটে গেছে, টটেনহামসহ অন্য দল ঘুরে লুকা রিয়াল মাদ্রিদে এসেছে। যদিও এখনও তাঁকে দেখায় সেই আগের মতোই, গার্ডিয়ান পত্রিকার বার্নি রনের ভাষায় যাকে বলা হয়েছে ‘পিশাচের মতো পোষাকে একটি ছোট বালক’, কিন্তু লুকা এখন বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের একজন, একজন অসম্ভব প্রতিভাধর মিডফিল্ডার, যিনি সময় এবং স্থানকে নিজের মতো করে সাজিয়ে নিতে জানেন।
.
তাঁর আরও একটি গুণ হলো, তিনি অন্যদেরকে ভালো খেলাতে পারেন। যখন সাধারণ একটা পাস করাই সেরা অপশন, তখন তিনি পাসই দেন। যখন কিছুক্ষণের জন্য বলটা ধরে রাখা দরকার, তখন তিনি সদলবলে তাই করেন। আবার দলের অন্য কারো ভুলকে শুধরে নেয়ার প্রয়োজন পড়লেও তিনিই এগিয়ে আসেন। তিনি একজন সুপারস্টার নাহলেও তেমন একজন, যার উপস্থিতি একই শার্ট পরিহিত বাকি ১০ জনকে অনুপ্রাণিত করে। তিনি নিজেই নিজেকে নেতা বানাননি, বরং তিনি হয়েছেন। তাঁকে দেখা যাবে না জয়ের পর শার্ট ছিঁড়ে গোল উদযাপন করতে, কিংবা পরাজিত হয়ে স্তব্ধ হয়ে বসে থাকতে। তিনি এসব মেসি নেইমার রোনালদোদের ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন। অথচ তাঁরা সবাই বাড়ি ফিরে গেলেও তিনি এখনও বিশ্বকাপে টিকে আছেন, যেমনটি আছে তাঁর দল!
.
ক্রোয়েশিয়া দলটা তাদের ক্যাপ্টেন লুকা মদ্রিচকে ভালোবাসে। যখন ডেনমার্কের বিপক্ষে সে প্যানাল্টি মিস করে, তখনও তাঁরা তাঁর পাশে ছিলো। ফলে সাথে সাথেই ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন লুকা। আজকের ফাইনালেও গোটা জাতি তাঁর কাঁধেই ভর করে জয়ের স্বপ্ন দেখবে।
.
এই ক্রোয়েশিয়ান দলটা যে তাদের দেশের কাছে কী অর্থ বহন করে, তা সহজেই বোঝা যায় যখন দেখা যায় সস্তা ইকোনমিক টিকেটে রাশিয়া গিয়ে প্রায় প্রতিটি খেলা দেখা সুন্দরী রাষ্ট্রপতি নিজেই সেমিফাইনাল জয়ের পর তাদের ড্রেসিং রুমে গিয়ে কোচ ও খেলোয়াড়দের বুকে জড়িয়ে উৎসাহ দেন, কিংবা তাদের মন্ত্রীসভায় সবাই ক্রোয়েশিয়ান জার্সি পরে উপস্থিত হন, কিংবা যেই রাষ্ট্রপ্রধানের সাথেই তাঁদের প্রেসিডেন্ট দেখা করেন, তাঁকেই নিজের দেশের জার্সি উপহার দেন!
.
এই লেখাটা যখন লিখছি, তখন রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনাল শুরু হয়ে গেছে। আজ কে জিতবে? ফ্রান্স নাকি ক্রোয়েশিয়া? আমি জানি না। তবে বিশ্বের অধিকাংশ আশাবাদী মানুষের মতোই আমিও চাইবো বিশ্ব আজ নতুন চ্যাম্পিয়ন পাক। হ্যাঁ, লুকা মদ্রিচের হাতেই বিশ্বকাপের সোনার ট্রফিটা দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছি।
.
দেব দুলাল গুহ/ দেবু ফরিদী

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:০৬

আশরাফুল অ্যাস্ট্রো বলেছেন: পৃথিবীতে প্রতিটি কৃতিত্বের পেছনেই একটা করে গল্প লুকিয়ে থাকে ,অনুপ্রেরনার গল্প,অনুপ্রানিত হওয়ার গল্প । সত্যি অসাধারণ ।

২| ১৫ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:৩৪

লায়নহার্ট বলেছেন: {+}

৩| ১৫ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১১:০০

চাঁদগাজী বলেছেন:


ক্রোয়েশিয়ার মানুষেরা মোটামুটি অমানুষ; ওদের পরাজয় হওয়ার দরকার ছিলো

৪| ১৫ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১১:১৮

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:

ক্রোয়েশিয়া নিয়ে না মাথা ঘামিয়ে নিজের দেশে একটা ফুটবল দল আছে। সেটার উন্নতির কথা ভাবা দরকার!

৫| ১৫ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১১:৪২

রিফাত হোসেন বলেছেন: ক্রোয়েশিয়ারা অমানুষ হলে বাংলাদেশেও এই প্রজাতির অভাব নাই কি বলেন! :) প্রত্যেক জাতিতেই খারাপ ভাল রয়েছে। যদিও এই খেলায় ফ্রান্সের পক্ষে ছিলাম। খেলা উপভোগ করেছি। ওরা বিশ্বকাপ পাবার দাবীদার হলেও ফ্রান্স যোগ্য দল হিসেবেই জয় পেয়েছে। আমি ফ্রান্সের গতিকে সমীহ করেই তাদের পক্ষ নিয়েছিলাম, যা প্রমাণ হয়েছে ইতিমধ্যে।
তবে বালকান অঞ্চলের মানুষরা একটু আক্রমণাত্নক। কিন্তু তাদের একতা বাঙালিদের থেকেও বেশি!

৬| ১৬ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:১৮

রাজীব নুর বলেছেন: ক্রোয়েশিয়ার বিশেষত্ব এটাই, তারা লড়েছে। হারার আগে হার মানেনি। অভিনন্দন ফ্রান্স।

৭| ১৬ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:১১

মোঃ খুরশীদ আলম বলেছেন: ক্রোয়েশিয়া খেলেছে, খেলা দেখিয়েছে। পুরো মাঠ জুড়ে তারা তাদের নৈপুণ্য প্রদর্শন করতে কার্পণ্য করেনি। আর জয়-পরাজয়! সেতো কারো না কারো হবেই। এটা নিয়তির লেখা, এটাকেই মেনে নিতে হবে। দেখার বিষয় হলো জয়ের জন্য চেষ্টা কে কতটুকু করেছে।

৮| ১৬ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:৫১

লিযেন বলেছেন: ক্রোয়েশিয়া =p~ =p~

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.