নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।
আমাকে অনেকেই দেখতে পারে না। আমি নাকি কড়া গার্ড দেই। আমি কেন ছাত্রীদেরকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে দেখে লিখতে দেই না? আমি কেন কথা বলতে দেই না পরীক্ষার হলে? আর কেউ তো এমন করে না! কেউ কেউ বলতো, 'আরেহ, ইয়ার ফাইনাল প্রিটেস্ট টেস্টে কি গার্ড দিবেন? ওরা তো একটু দেখবেই'। সেটা না মেনে আমি কেন বলবো, 'দেখে দেখে পরীক্ষা দিয়ে সনদ পাওয়া যায়, কিন্তু ভালো কিছু আদতে করা যায় না, ভালো মানুষ হওয়া যায় না'? নিশ্চয়ই আমি খারাপ। বিসিএস ক্যাডার হয়ে আমার নাকি খুব অহংকার হয়ে গেছে। ফরিদপুরে আমার খুব বদনাম। বিশেষ বদনাম শিক্ষক সমাজে। কারণ আমি জুনিয়র হয়েও সিনিয়রদের অন্যায়কে প্রশ্রয় দেইনি, প্রতিবাদ করেছি একাই। সেই বদনাম ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে মাউশি থেকে নায়েম সব জায়গায়।
।
আমি অনেক খারাপ, কারণ আমি সিনিয়র স্যারদেরকে ক্লাস বাদ দিয়ে প্রাইভেট পড়ানোর সমালোচনা করতাম প্রকাশ্যে। আমার 'জ্বালায়' অনেকেই ক্লাসে ফিরতে বাধ্য হয়েছিলেন। আমি নিজে প্রাইভেট পড়াতাম না, ক্লাসে নিয়মিত পড়াতাম, অন্য ক্লাস থেকে মেয়েরা চলে আসতো ক্লাসে। এমনও দিন গেছে, তিনজন নিয়েও ক্লাস নিয়েছি। ছাত্রীদের মাঝে আমার জনপ্রিয়তা দেখে কেউ কেউ সহ্য করতে পারলো না। আমার 'অত্যাচারে' ইতিহাসে এই প্রথম সারদা সুন্দরী কলেজে বিজ্ঞান বিভাগের প্রতিটা বিভাগে প্রতিটি শিক্ষকের আলাদা বসার জায়গা হয়েছে। অথচ আমিই সেই টেবিল চেয়ারে বসে আসতে পারিনি!
।
যেখানে সিনিয়ররা একটা প্র্যাক্টিক্যাল খাতা সাইন করানোর জন্য দশবার না ঘুরালে নিজের প্রেস্টিজ থাকে না বলে মানেন, আমি কেন সেখানে ল্যাবে বসে নিজ হাতে খাতার ভুল ত্রুটি সংশোধন করে সাইন করে দিয়েছি? কেন তাদেরকে প্রাইভেটে ডাকিনি? কেন টেস্ট প্রিটেস্টের আগে প্রশ্ন আউট করিনি, আর অন্য স্যার করলে সে কথা গিয়ে কলেজ প্রশাসনকে প্রমাণসহ জানিয়েছি? আমি কেন প্রশ্নকর্তার সরবরাহ করা ভুল সমাধান দেখে ডিসি স্যারের মেয়ের খাতা দেখিনি, তার সঠিক ৩ টি অংক কেটে শূণ্য দেইনি, কেন পাকনামি করে সিনিয়রের ভুল বের করে খাতা দেখে আবার সেটা সব ছাত্রীর দেখার জন্য একমাত্র আমিই উন্মুক্ত করেছি? কেন বলেছি ছাত্রীদের সঠিক মূল্যায়ন হচ্ছে না? যেখানে টাকা দিলেই নাকি প্রশ্ন পাওয়া যায়, ফেসবুকেও নাকি পাওয়া যায়, কে জানতো এবার এমন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে প্রশ্নফাঁস ছাড়াই পরীক্ষা হবে? কে জানতো এভাবে ওসব ব্যবসায়ী শিক্ষকেরা ধরা খাবে?
।
তাই তো আজ যাকে জিজ্ঞেস করি, সেই বলে স্যার রেজাল্ট খারাপ! ওদের জন্য আমার খুব খারাপ লাগে। ওরা তো কোমলমতি, যা শেখাবেন তাই শিখবে। ওদেরকে ভুলপথে পরিচালিত করে যারা, তারা তো বহাল তবিয়তেই আছে এবং থাকবে! প্রাইভেটে সারা বছর কী পড়ানো হয় আমি জানি না, একজন বিসিএস ক্যাডার প্রাইভেট পড়াতে পারেন কিনা আইনত সেটাও আমার জানার চেষ্টা আমার বেয়াদবি। কেন খাতা না দেখেই বাড়িয়ে বাড়িয়ে মার্ক প্রথম পাতায় বসিয়ে দেয়া হয়েছে, সেটা জানতে চাওয়াটা আমার চরম অন্যায়। কেন রাজনীতি ঢুকবে কলেজে, কেন রাস্তায় মেয়েরা ইভটিজিঙ্গয়ের শিকার হবে, এটাও জানতে চাওয়া আর বন্ধ করাটাও আমার অন্যায়? হাতেনাতে নকলসহ ধরে বহিষ্কার করাটাও আমার অপরাধ? অথচ এই কাজ করার জন্য সরকার আমাকে বেতন দেয়!
।
ফরিদপুর জিলা স্কুল থেকে বৃত্তিসহ এ প্লাস পেয়ে খুব শখ ছিলো নটরডেম কলেজে পড়বো। বাবার সামর্থ্য ছিলো না, আমার স্বপ্নপূরণ করতে আগেভাগে সরকারি চাকরি ছেড়ে পেনশন নিলো। আমাকে ঢাকায় থাকা খাওয়া পড়ার ব্যবস্থা করে দিলো। কিন্তু টাকা দিতে পারতো সীমিত। কাঁদতাম অনেক বাবা-মাকে ছেড়ে থাকতে গিয়ে, মানিয়ে নিতে না পেরে, তবু গুণে গুণে ৩ মিনিটে ৯ টাকার বেশি খরচ করতে পারতাম না ফোনে। প্রতিটা ক্লাসে মনযোগী থাকতাম। স্যার যা যা বলতো সব খাতায় তুলতাম, আজও সেই খাতা আছে। কিছু না বুঝলে ঢাকার স্থায়ী বন্ধুদের সহায়তা নিতাম, কারণ ওরা অনেক অ্যাডভান্সড ছিলো। আর খেয়াল রাখতাম সমস্যা যেই অধ্যায়ে ওটা কবে স্যার ব্যাচে পড়াবেন, বন্ধুদের সাথে সেই মাসটাই শুধু পড়াতাম। ছুটিতে ফরিদপুর এলে স্থানীয় স্যারদের কাছে মাঝে মাঝে যেতাম। ঢাকার স্যাররা অনেক আন্তরিক ছিলেন। আমার অর্থের সমস্যার কথা জানতেন, তাই এক মাসেরটা পরের মাসেও দিয়েছি।
.
কিন্তু চাকরি নিয়ে ফরিদপুরে এসে দেখি এক ছাত্রী প্রতিদিন ৫-৬ জন স্যারের কাছেও ব্যাচে পড়ে! এতো সময় আর টাকা ওরা পায় কই? আমি ভেবে পেতাম না। নিজের পড়াটা পড়ে কখন? নিজের পড়ায় জোর দিতে বললাম ক্লাসে, বললাম কিছু না বুঝলে আমাকে বিভাগে এসে জিজ্ঞেস করবে। তখনও আমার বসার নির্দিষ্ট জায়গা হয়নি। মেয়েরা তবুও আসতো। এটা অনেকের সইলো না। একটা স্যার বিনামূল্যে কেন অতিরিক্ত সময় পড়াবে? নিশ্চয়ই এখানে ঘাপলা আছে! ইয়াং স্যার মেয়েদের সাথে বেশি বেশি সময় কাটায়! সে বিয়ে করে না কেন? সে এমন কেন? সারা ফরিদপুরে ওর দুর্নাম ছড়িয়ে দাও, ওকে সরিয়ে দাও! বেতন আটকে রাখো!
।
এবার কোথাও প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। ফেসবুকে প্রশ্ন পাওয়ার দিন শেষ। মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় এবং সচিব স্যার আন্তরিক ছিলেন বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। এই কারণে এবার সঠিক মূল্যায়ন হয়েছে । বোর্ডকে বা শিক্ষামন্ত্রীকে গালি দিয়ে লাভ নাই। প্রশ্ন কঠিন হয়নি, স্ট্যান্ডার্ড হয়েছে। গোটা সিলেবাস পড়লে কমন পেয়েছো। যা হয়েছে সবার জন্যই একই হয়েছে। এটাই পরীক্ষা, এটাই প্রতিযোগিতা। নিজেকে নিজে প্রশ্ন করো নিজে কতটুকু পড়েছো, কয়টা ক্লাস করেছো, কয়টা ক্লাস হয়েছে। কতোটা সময় ফেসবুকে কাটিয়েছো, দামি রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেয়েছো, বন্ধুর বাইকের পিছে চড়ে ঘুরেছো? এই সবকিছু বাদ দিয়েও আমাদের সময় এ প্লাস পেতে ঘাম ঝড়ে যেতো।
.
এটা বাস্তব কথা। রাগ হলে হও, কিন্তু এটাই সত্যি। তোমাদের চেয়ে আমাদের শিক্ষকদের দোষটাও কোনো অংশে কম নয়। আমরা তোমাদের সঠিক শিক্ষা দিতে পারিনি। অর্থের লোভে নিম্নমানের বই অনেকেই তোমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন, তোমরা আমার কথা পাত্তা দাওনি, তিন-চারটা বই পড়োনি। নিজের পড়া না পড়ে সারাদিন ব্যাচে সময় নষ্ট করেছো। সিনিয়রদের সাথে আলাপ করো, আজ থেকে ৬-৭ বছর আগে এইচএসসি দিয়েছে যারা তাদের কাছে জিজ্ঞেস করলেও হবে। তুলনা করলে বুঝতে পারবে কতোটা এফর্ট তুমি দিয়েছো আর কতোটা তারা দিয়েছে।
।
তবে হতাশ হইও না। এখন সামনের যুদ্ধটাই আসল, ভর্তিযুদ্ধ। এখন থেকে সব ছেড়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নাও। ভালো কোথাও চান্স পেলে এই রেজাল্টের কষ্ট আর থাকবে না। আর যাদের বাবার অঢেল টাকা আছে, তারা প্রাইভেটে ঢুকে যাও। ওখানে গিয়ে মন দিয়ে পড়ালেখা কইরো, কারো ফাঁদে পা দিও না। আর, আমি একটু কড়া কড়া কথা বলে ফেললাম, কিন্তু মন থেকে সবসময় তোমাদের ভালো চাই। তোমাদের কল্যাণ হোক। বিশেষ দরকারে যোগাযোগ করবে। শুভকামনা।
দেব দুলাল গুহ
২| ২০ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ৮:১০
কাইকর বলেছেন: খুব ভালভাবে নিজেকে নিয়ে লিখেছেন। তবে, আমি ফরিদপুর কিছুদিন আগে ঘুরে আসলা। বিয়েটাও বোধহয় আপনাদের এলাকায় করতে হবে। হা হা হা
৩| ২০ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:২২
রাজীব নুর বলেছেন: ফরিদপুরের নির্বাচনের খবর কি? কে কে নমিনেশন পাবে?
৪| ২০ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:২২
রাজীব নুর বলেছেন: ফরিদপুরের নির্বাচনের খবর কি? কে কে নমিনেশন পাবে?
৫| ২১ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১:০৩
চাডেরনুর বলেছেন: একটা ভাল জিনিস লেখক লেখলেন। কিন্তু নিচুমনা চাদগাজি ঈর্ষান্বিত হলেন
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ৩:৩৬
চাঁদগাজী বলেছেন:
আপনি নিজকে বেশী তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন; নিজের সম্পর্কে কিভাবে সহজে বলা যায়, সেটা নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করুন।