নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।
আজ দুদিন ধরে কী যে আনন্দ পাচ্ছি! কী ভয়ানক আনন্দ, কষ্টকর আনন্দ পাচ্ছি আমি! কী রকম আনন্দ? স্বর্গলাভের আনন্দ। কিন্তু স্বর্গলাভের পর কেমন আনন্দ হয়, তা তো মর্তবাসীর জানবার কথা নয়। তা তো শুধুই অনুভবের। পুণ্যবান মানুষ যেমন স্বর্গলাভের আশায় সৎকর্ম সম্পাদন করে আর স্বর্গসুখ আস্বাদন করে, ঠিক তেমন আনন্দের অনুভবে কাটছে আমার বর্তমান সময়।
.
কমল তাহলে মরে নি। কমল বেঁচে আছে! আমার নিজের চোখকেও আজ অবিশ্বাস করতে হচ্ছে। নিজের ত্বকে চিমটি কেটে বিশ্বাস আনতে হচ্ছে-- কমল মরেনি, কমল মরেনি, কমল এখন চল্লিশোর্ধ যুবক। আমার কমল বাংলাদেশের এক শহরে আমার স্মৃতিময় শৈশব-কৈশোরের মাটি আগলে আমার স্মৃতিকে লালন করছে।
.
আর আমি, জয়বাংলার লোক। একাত্তরে শরণার্থী হয়ে বাবা-মা ভাইবোনদের সাথে এসেছিলাম ভারতে। জয়বাংলা স্বাধীন হলে ফিরে গেলাম সেখানে, আবার বিয়ের পর স্বামীর হাত ধরে চলে গেলাম শ্বশুরবাড়ি। কদিন যেতে-না-যেতেই স্বামীর হাত ধরে আবার এলাম ভারতে। জন্মসূত্রে জয়বাংলার নাগরিক-- বিবাহসূত্রে এখন ভারতীয়। দীর্ঘ বাইশটি বছর জয়বাংলা ফেলে, পিতা-মাতা ভাইবোনদের স্মৃতিসাহচর্য ভুলতে যত কষ্ট লাগেনি, তার চেয়ে বেশি কষ্ট হয়েছিল কমলের স্মৃতিগুলো ভুলতে। সে কষ্ট কষ্টকর হলেও ভুলতে তেমন সময় লাগেনি। কারণ মৃত মানুষের স্মৃতিগুলো তো জীবিত মানুষের জন্য একটা বোঝা, সে বোঝা যত শীঘ্র সম্ভব পরিত্যাগ করাই শ্রেয়। আর জীবিত মানুষ বেঁচে থাকলে একদিন দেখা হবে, এই তো সান্ত্বনা।
.
বাবা-মা ভাইবোন প্রথম যে-হারে আসা-যাওয়া করতেন, এখন আর তা তেমন হয় না। বাবা-মা বুড়ো হয়েছেন, ভাইবোনেরা বিবাহিত জীবনে নিজ নিজ সংসার নিয়েই ব্যস্ত। কালেভদ্রে যাও-বা আসেন, আমরা ভারতীয় তাঁরা বাংলাদেশী। আতিথেয়তা ও আন্তরিকতায় দুটি দেশের অবস্থান দুই মেরুতে। যদিও নৈহাটিতে দাদা একটি বাড়ি করেছেন হালে, তবু তা দূর-আত্মীয়ের মতোই সম্পর্কিত।
.
এই বাইশ বছরে কমল সম্বন্ধেও কারো কাছ থেকে কিছু জানা হয়নি। জানতে চেষ্টাও করিনি। কারণ আমি নিজ চক্ষে যেখানে কমলের থেঁতলানো লাশ দেখে এলাম, লোকজনকে চিৎকার করে করে বলতে শুনলাম-- লোকটি ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে, তার ওপর কমলকে নিয়ে আমার অভিভাবকদের যা এলার্জি-- এরকম অবস্থায় মৃত কমলকে তো আমার না ঘাঁটাই শ্রেয়। যেখানে আমি একজনের বিবাহিত স্ত্রী! আমি তো নারী, আমারও ভবিষ্যৎ আছে।
.
গতকালই জানলাম কমল সেদিন সিগন্যাল পোস্টে বারি খেয়ে পড়ে গিয়েছিক ঠিকই। কিন্তু রক্ষে, ট্রেনের নিচে কাটাও পড়েনি বা ভাংচুরও হয়নি। শরীরে একটু কেটে ফেটে গিয়েছিল। এজন্য ওকে হাসপাতালের বেডে চিকিৎসাধীন থাকতে হয়েছিক অনেক দিন।
.
কালের গতি তো কেউ কোনোদিন থামাতে পারেনি। তার নিষ্ঠুর চাকার নিষ্পেষণে কত প্রাণ যে ঝরে যায়, কী সে ফেলে গেলো, কী রেখে গেলো; নিষ্ঠুর কাল তো তার হিসেব কষে না। কিন্তু আজ হঠাৎ সাঁইত্রিশ বছরের গণ্ডি সে তুলে নিয়েছে, আমি মহাকালে অনুপ্রবিষ্ট, আমার সামনে পিছন নেই-- আমি স্থির ধ্রুব দাঁড়িয়ে আছি এই ১৯৯৭-তে পা রেখেও ১৯৭১-এ। আমার সন্তানের জন্মদিন একুশে এপ্রিলে দাঁড়িয়েও খুঁজছি একাত্তরের একুশে এপ্রিল। যেদিন আমাদের হাতের তালুতে প্রাণ নিয়ে পাক হানাদার বাহিনী ও তার দোসরদের ভয়ে পালাতে হয়েছিল গ্রামে, শরণার্থী হতে হয়েছিল কল্যাণী ক্যাম্পে। জয়বাংলা স্বাধীন হলে আবার বাংলাদেশ এবং বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তর, আমার কমলকে নিয়ে যত দিনরাত্রি।
.
কিন্তু এমন হল কী করে, এতদিন পরে কমলের সব স্মৃতি হৃদয় থেকে মুছে স্বামী-সন্তান-সংসার নিয়ে যখন সুখময় সময় কাটছিল, তখন নতুন করে আবার কমল কেন?
[চলবে]
.
ভালোবাসা শুধু যে কাঁদায় / কবি বাবু ফরিদী।
২| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৪৫
রাজীব নুর বলেছেন: আপনি কি কবি বাবু ফরিদের লেখা আমাদের সাথে শেয়ার করলেন?
নাকি এটা নিপুন কথন লিখেছেন??
১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:২৯
...নিপুণ কথন... বলেছেন: বাবু ফরিদীর উপন্যাস। তিনি আমার বাবা।
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৫
সনেট কবি বলেছেন: বেশ