নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিক্ষক, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। ফেসবুকে যুক্ত হোনঃ www.facebook.com/dev.d.nipun

...নিপুণ কথন...

সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।

...নিপুণ কথন... › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফরিদপুরের বিসিএস ক্যাডার শিক্ষকের ওপর হামলার পর

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১:৪৯

অনেকেই জানতে চায়, আমার ওপর হামলা হলো অথচ শিক্ষকরা কোথাও কোনো মানববন্ধন বা স্মারকলিপি প্রদান করলো না কেন? আমি কোনো জবাব দেই না, নেহাৎ দিতেই হলে বলি, 'নেতারা সবাই উপর থেকে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন পুলিশ-প্রশাসনের সাথে'। কিন্তু তাদের মন ভরে না৷ একজন বলে উঠলো, 'আজ আপনি ডাক্তার হলে সারাদেশে চিকিৎসাবিরতিতে চলে যেতো সব ডাক্তাররা'। পাশেই আরেকজন বললো, 'স্যার তো সোজাসুজি উচিত কথা বলা লোক, তাই আর কি..'
.
সেদিন ফরিদপুর ব্যাংক এশিয়ার নিচে কালামের চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম। ওখানে ফরিদপুরের শিক্ষক সমাজের একটা আড্ডা হয়। তো, স্থানীয় এক শিক্ষক নেতাকে এই কথাটা বলতেই তিনি বললেন, 'আসলে আমরা যখন জানলাম হামলাকারী আপনার কাকা, আর কাকা আপনাকে শাসন করতেই পারেন এমন কথা যখন প্রথম আলোতে এলো যেখানে আপনি দীর্ঘদিন কাজ করেছেন, তখন সবাই ভাবলাম এটা তো সন্ত্রাসী হামলা নয়, আত্মীয়দের মাঝে ঝামেলায় কেন আমরা মানববন্ধন করবো বিচারের দাবিতে?'
.
ব্যাখ্যাটা শুনে আমি হাসলাম। এমন না যে মানববন্ধন করতেই হবে আমার জন্য। ফরিদপুরে সম্ভবত আমি একাই কেউ নকল করলে বহিষ্কার করতাম। আমি ফিজিক্স আর আইসিটির শিক্ষক হয়েও টিউশন করাই না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছি সবসময়। 'বিসিএস ছাড়া ক্যাডার নয়' আন্দোলনে শিক্ষক সমিতির ফরিদপুরের সভাপতি একজন আত্তীকৃত শিক্ষক এবং আরেকজন আত্তীকৃত প্রিন্সিপালের অধীনে চাকরি করেও আমি বক্তব্য দিতে না দেওয়ায় সমিতির সংবাদ সম্মেলন থেকে ওয়াকাউট করেছি। গুটিবাজি করে আমাকে না নিয়ে ঢাকায় শহীদ মিনারে গেলেন নেতারা, আমি বাধ্য হয়ে প্রথম আলোতে আমাদের দাবির পক্ষে মতামত লিখলাম, 'বিসিএস ছাড়া ক্যাডার নয়'। যেদিন লিখলাম, তার পরেরদিনই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়ে দিলেন, বেসরকারি কলেজগুলোর জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হবে। প্রদর্শক থেকে সরাসরি পদোন্নতি পেয়েও বিসিএস ক্যাডার হয় জেনে আমি আমার ব্যাচের পক্ষ থেকে ব্যাচমেট মাহফুজুর রহমান অন্তিম ভাইয়ের সাইন নিয়ে একাই স্মারকলিপি লিখে ডিজি স্যারকে মাধ্যম করে মন্ত্রী মহোদয় বরাবর দিলাম। এতোকিছুর পরেও এই শিক্ষা ক্যাডারের জন্য আমার কোনো অবদান নেই। আমাকে নাকি এক আত্মীয় মেরেছে, তাই এর জন্য মানববন্ধন করা যাবে না!
.
হামলাকারী রঞ্জন ঘোষ যদি আমার আত্মীয় হয়, তাহলে ফরিদপুর শহরে প্রায় সব হিন্দুই আমার আত্মীয়। একাত্তরে কৈজুরী ইউনিয়নের জমিদার গুহ পরিবার সব হারিয়ে হয় নিঃস্ব, ৭৫ এ এক দানা ওষুধ না খেয়ে মারা যায় আমার দাদি। তারপর আমার দাদা (ঠাকুরদাদা) আবার বিয়ে করেন। নতুন দাদি আসার পর আমার কাকা-পিসিদেরকে তাদের বড় ভাই মানে আমার বাবা একা মানুষ করে, দাদু দেখে নাই। নতুন দাদির ছেলে বিজয় গুহ (মনা) এর মেসতুতো (খালাতো) ভাই হচ্ছে এই রঞ্জন ঘোষ। দাদুর সম্পদ বলতে অবশিষ্ট ছিলো শুধু পানি ওয়াপদার পিছের ৫ শতাংশের বাড়িটা, যা ভাগ করার সময় প্রস্তাব দেওয়া হয়, দুই ভাগ হবে, এক ভাগ আমার বাবাকে দিয়ে বাকিটা আমার সৎ কাকা মনা পাবে৷ কিন্তু আমার বাবা খুব নীতি-আদর্শবান বলে তিনি প্রতিবাদ করে বললেন, যদি দিতেই হয়, ৫ ভাইকে সমান ৫ ভাগ করে দেন, আমি একা নিয়ে সারা জীবন বাকি ৩ ভাইয়ের অভিশাপ কুড়াতে পারবো না। এই কথা বলায় বাবাকে কিছুই না দিয়ে পুরোটাই নতুন দাদিকে দিয়ে দেওয়া হলো।
.
আমি তখন সম্ভবত ক্লাস ২ তে পড়ি। খুব কষ্ট করে ভাইবোনদেরকে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়ে বাবা দেখলো, এখানে থাকলে এই কলহের পরিবেশে অভাব অনটন আর পারিবারিক সমস্যায় ছেলেটা মানুষ হবে না। তাই নিজের করা দুই রুমের পাকা ঘর ছেড়ে নতুন দাদির অত্যাচারে টিকতে না পেরে কাঁদতে কাঁদতে বের হয়ে আঙিনার পিছে জায়গা নিলেন। আজও আমাদের ঘর দুটি ভাড়া দিয়ে খায় আমার সৎ কাকা মনা। আমার বাবার পরের ভাই শিবু গুহ খুব কষ্টে ঐ বাড়িতে দুই মেয়ে নিয়ে থাকেন। মনা কাকা ছোট থেকেই অন্যদের চেয়ে আলাদা ছিলো। কোথাও মার খেয়ে আসতো, তো কোথাও মারতো। একদিন দেখি আমার বাসার সামনে বিপুল কাকা মনা কাকাকে ধরে মারছে। আমি দৌঁড়ে গিয়ে বাবাকে জানাতেই বাবা গিয়ে ছাড়িয়ে আনলো। এমন যেখানেই মনা কাকাকে কেউ মারতো তাকেই বাবা সিস্টেমে জবাব দিয়ে দিতো। বাবার সম্মান আর সৎসাহসকে সবাই ভয় পেতো। সৎ ভাই বলে দূরে সরিয়ে দায়িত্ব এড়াতো না বাবা, এতোকিছুর পরেও। এমনকি পড়ালেখা বা কাজ করে না বলে বাবা বাধ্য হয়ে মা মারা যাওয়ার পর পড়ালেখা বাদ দিয়ে ভাইবোন মানুষ করতে যে চাকরিটা নিয়েছিলো, অবসরে যাওয়ার পর সেখানে পোষ্য কোটায় মনা কাকাকে ঢুকাতে চেয়েছিলো। কিন্তু কৃষি ডিপ্লোমা ভর্তি করিয়ে দিলেও কাকা তা শেষ না করে দ্বিগুণ বেতন পাবে বিধায় সেবা টেলিকমে চাকরিতে ঢুকলো! আজ বাবার সেই পোস্টে ঢুকলে সে হতো উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, যা এইতো দ্বিতীয় শ্রেণির হলো! পরে সেই সেবা কোম্পানিসহ মার্কেট আউট হয়ে যায়। এমন অনেক কাজ করে কোনোটাতেই সে স্থায়ী হতে পারে নাই। সন্ধ্যা হলেই তাকে পাওয়া যায় বদরপুরের ওদিকে। বছরখানেক আগে বিয়ে করেছে, কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর আমাদের বিপদে সেভাবে কোনোদিনই তাদেরকে পাশে পাইনি। বরং উলটো দেখেছি হিংসা। তাই যাওয়া-আসা নাই। আমার বাবা অল্প বয়সে মরার পরেও একা সংগ্রাম করে বিসিএস ক্যাডার হয়েছি, এটা অনেকেরই সহ্য হচ্ছে না।
.
মনা কাকার খালাতো ভাই রঞ্জন ঘোষের বাসায় আমি কোনোদিন যাইনি। শুনেছি তিনি মাকে নিয়ে পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তার কাকার বাসায় থাকেন, কাকার ঘরেই মাকে নিয়ে খান। বিয়ে করেননি, রাজনীতি করেন, সন্ধ্যা হলেই অমিতাভ বোস মামার দোকানের ওখানে তার দেখা মেলে। আমি চাকরি নিয়ে ফরিদপুর আসার পরেই আমার কাছে কারণে অকারণে তার আসা শুরু হয় এবং কখনও মোবাইলের এটা-ওটা বুঝতে, কখনওবা চা-বিড়ি খেতে বা খুচরো টাকার জন্য আমার কাছে আসতো। আমার বাসা দখল হয়ে আছে শুনে বেশ কয়েকবার আমাকে এসে তাড়া দিয়েছিলো যেন আমি তাকে জায়গার সমস্যা সমাধান করতে ডাকি। কিন্তু এতে শুধু টাকা যাবে, কাজের কাজ হবে না আমার ধারণা, তাছাড়া এটা এখন প্রশাসনের হাতে গিয়েছে জানিয়ে আমি বারবার এড়িয়ে যাওয়াতে সে আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয় এবং স্থানীয় কাউন্সিলরের ছেলে আর প্রতিবেশী দখলদারসহ আরও লোকজন নিয়ে আমাকে ডেকে নিয়ে আমার ওপর পরিকল্পিত হামলা চালায়। আশপাশের লোক এগিয়ে না এলে আরও বড় ক্ষতি হতো।
.
এখন আমাকে বলেন, যে তার নিজের মাকে রোজগার করে খাওয়াতে পারে না, কাকার ঘরে খায় আর সেচ্ছাসেবক লীগের 'রাজনীতি' করে বেড়ায়, সে একজন বিসিএস ক্যাডারকে শাসন করার যোগ্যতা রাখে কিনা? ফরিদপুর শহরে আমার এতো আত্মীয় থাকতে, ৮ মামা ৬ মাসি, ৩ কাকা ৩ পিসি জীবিত থাকতে, আমার বাবা ফরিদপুরের কবি বাবু ফরিদীর বন্ধু-সুহৃদরা থাকতে, সবচেয়ে বড় কথা আমার মা থাকতে আমার সৎ কাকার খালাতো ভাইকে কেন আমাকে শাসন করতে হবে? এই অধিকার তাকে কে দিয়েছে? আর আত্মীয় মারলেই সেখানে প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধনে দাঁড়ানো যাবে না এটা কেমন কথা? আমরা কি এমন মেরুদন্ডহীন স্থানীয় শিক্ষক নেতাদের চেয়েছিলাম? (প্রথম আলোর ফরিদপুর প্রতিনিধি পান্না বালার নিউজের প্রতিবাদ আমি ফেসবুকে দিয়েছি। তিনি কেন অমন করেছেন বা তাকে করতে হয়েছে সেটা ফরিদপুরে তাঁর অতীত ইতিহাস বিবেচনায় এনে সহজেই অনুমেয়। নিতান্তই পারিবারিক কথাগুলো বলতে বাধ্য হলাম, কারণ এটা নিয়েও গুটিবাজি হচ্ছে।)

লেখাঃ দেব দুলাল গুহ নিপুণ,
৩৫ বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৮:৩৩

রাজীব নুর বলেছেন: ফরিদপুর বড় অদ্ভুত একটা দেশ।

২| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১০:০৪

পাঠকের প্রতিক্রিয়া ! বলেছেন: আপনি যে ফরিদী বাবুর ছেলে ব্লগে এসে জানা। উনাকে আমরা শ্রদ্ধা করি।

আপনার লেখাগুলো আগেও পড়েছি। বরাবরই আপনারা নির্যাতিত। জানি না আপনি কেন এত নিপিড়ীত? জানার আগ্রহ থেকে বলছি, পারলে আপনার ও আপনাদের পরিবারের রাজনৈতিক দিকটা তুলে ধরবেন।

আপনি টিউশনি করান না শুনে ভালো লাগল। আপনাকে যতটুকু জানি, আপনি সৎ থাকার চেষ্টা করেন এবং প্রতিবাদী। সমস্যাটা এখানেই। সব কিছু আজ নষ্টদের দখলে। (পারলে আপনার ব্যাচের পরিচিত পুলিশ ক্যাডারদের সাথে কথা বলেন। উনারা আপনার কাছের থানার এসআইকে জানিয়ে রাখবে। বিপদে কিছুটা সুবিধা পাবেন।)

৩| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১০:১৩

ঢাবিয়ান বলেছেন: জোড় যার মুল্লুক তার। এইটাই এখন অলিখিত আইন দেশে।

৪| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:১৬

নতুন বলেছেন: রাজীব নুর বলেছেন: ফরিদপুর বড় অদ্ভুত একটা দেশ।

নুর ভাই... ফরিদপুর খুবই ভালো দেশ.... আমিও এই দেশের ....

৫| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:১৯

নতুন বলেছেন: কিন্তু এতে শুধু টাকা যাবে, কাজের কাজ হবে না আমার ধারণা, তাছাড়া এটা এখন প্রশাসনের হাতে গিয়েছে জানিয়ে আমি বারবার এড়িয়ে যাওয়াতে সে আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয় এবং

আপনার উপরে হামলা করে তিনি অবশ্যই অন্যায় করেছেন।

কিন্তু আপনি তাকে এড়িয়ে গেছেন বা এমন কিছু বলেছেন বা করেছেন যাতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.