নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।
বন্ধু পীযূষের বিয়ের খাওয়া-দাওয়া ছিলো গতকাল। কিন্তু দাওয়াত পাইনি। মনের দুঃখে নিজেই বাজারে গিয়ে মুরগি কিনে এনেছি। তারপর ঘরেই ভরপেট খেয়ে বন্ধুর বিবাহ উদযাপন করেছি! কী কপাল আমার! যে বন্ধু আমার পিতৃবিয়োগের খবর শুনে ঢাকা থেকে ছুটে এসেছিলো, সেই পীযুষ কতটা চাপে থাকলে আমাকে নিজের বিয়েতে দাওয়াত দেয় না?
.
এই কপাল কি একদিনে হয়েছে? হয়নি। কর্মগুণে এই কপাল আমি অর্জন করেছি। পীযুষের কাকা আমার এলাকার পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শ্যামল সাহা, ওরফে শ্যামল মাস্টার। তাঁর এবং পৌরসভার সংরক্ষিত আসনের স্থানীয় মহিলা কাউন্সিলর তৃষ্ণা সাহার নিষেধাজ্ঞায় এলাকার কেউ বিয়ের দাওয়াত-টাওয়াত দেয় না। বিষয়টাকে আমি বেশ আনন্দের সাথেই নিয়ে থাকি, উপহার কেনার পয়সা যে বেঁচে গেলো!
.
পীযুষের সাথে আমার বন্ধুত্ব স্কুল লাইফ থেকে। আমার জন্ম শহরে, ওর গ্রামে। শহরেই আমার পড়ালেখা, ওর গ্রামে। ক্লাস এইটে ও এসে জিলা স্কুলে ভর্তি হলো, আমি ক্লাস ফোরে। ও ওর কাকার বাসায় এসে উঠলো, যিনি আমার প্রতিবেশি। ওর বাবা আবার খুব নিপাট ভদ্রলোক, একদম সোজাসাপ্টা মানুষ, নিজের রান্না ছাড়া খান না; আমার বাবার সহকর্মী ছিলেন। তো, আমার ওপর দায়িত্ব পড়লো ওকে সাথে নিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসার। খুব ভদ্র ও পরিশ্রমী ছেলেটি এসেই ভালো করতে শুরু করলো। কাকার বাসায় ওর রুমটায় সারাক্ষণ ও গুণগুণ করে পড়তো। বাবা ওর প্রশংসা করে বলতো, দেখ পীযুষ কত পরিশ্রমী! যদিও ছাত্রজীবনে ওর চেয়ে তুলনামূলক ভালোই করেছি আমি। তখন আমার খুব আদর ছিলো সেই বাসায়, ওর কাকার দুই ছেলেমেয়েও আমাকে সম্মান করতো। কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই আমাদের মূল্য কমে গেলো।
.
স্কুল শেষ করে আমি গেলাম নটরডেম কলেজে, আর ও ইয়াসিন কলেজে। দুজনে আবার এক হলাম ঢাবিতে, জগন্নাথ হলে। একসাথে রাজনীতি করতাম। ও অ্যান্থরপলজিতে, আমি ফিজিক্সে৷ হল ছেড়ে ও গেলো ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে মন্দির ভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমে সহকারী পরিচালক হিসেবে গোপালগঞ্জে, আর আমি প্রথমে প্রথম আলোতে এবং পরে বিসিএসে। গোপালগঞ্জে পোস্টিং পেয়ে গিয়ে ফোন দিলে একদিন ওর অফিসে নিয়ে গিয়ে অনেক কিছু এনে খাইয়েছিলো। ভুলতে পারি না। সেই বন্ধু আজ আমাকে তার জীবনের এমন মুহূর্তে একবার জানায়ও নাই! নাহ, কষ্ট পাই নাই। কষ্ট পেয়ে আর কী হবে?
.
সমাজে সবসময়ই স্বার্থপর লুটেরা হায়েনাদের রাজত্ব। তাদের কারণে সমাজের স্বাভাবিক ঈশ্বরপ্রদত্ত সম্পর্কগুলো নষ্ট হয়। তারা খুব ক্ষমতাবান হয়। সরাসরি না পেরে সমাজের এসব মোড়লরা তখন খারাপ একটা জাল বিস্তার করে প্রতিপক্ষের নিরীহ লোকটাকে একা বানিয়ে ফেলে। যার কারণে বন্ধুর বিয়েতে বন্ধুর ছোটভাইরা দাওয়াত পেলেও বন্ধুই পায় না।
.
আশার কথা, এই মাসে ঢাকা আর ঝিনাইদহে আরও দুই বন্ধুর বিয়ের দাওয়াত পেয়েছি। দুজনই নটরডেম কলেজের বন্ধু, একজন আর্মির মেজর, অন্যজন বুয়েট পাস ইঞ্জিনিয়ার, আমেরিকায় উচ্চশিক্ষারত। পোস্টিং আর কাজের সুবাদে হয়তো কোনোটাতেই যাওয়া হবে না। কিন্তু তবুও মনে আনন্দ, কারণ দাওয়াত পেয়েছি!
.
ঠিক করেছি, এই জীবনে আর বিয়েই করবো না। করলেও ঢাকেশ্বরী মন্দিরে নীরবে করবো, কাউকে দাওয়াত দেবো না। মা যদিও ভিন্ন কথা বলে। তার কথা হলো, 'তুই ঐ পীযুষকেই সবার আগে তোর বিয়ের কার্ড দিবি। এটাই হবে ওদের উচিত শিক্ষা'।
২| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৫৭
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
না একদম না!
মন খারাপ কেন করবেন।
প্রেেয়োজনে নিজে বিয়ে করে
তাকে দেখিয়ে দিন যে আপনিও পারেন।
তাকেও আপনার বিয়েতে দাওয়াত দিবেন না।
৩| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:১৭
সৈয়দ মেহবুব রহমান বলেছেন: হয়তো আপনাদের বন্ধুত্ব আন্তরিক ছিলোনা , মানে আপনার ওই বন্ধু অন্তর থেকে আপনাকে হয়তো বন্ধু ভাবেনি
৪| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৭:৪৬
রাজীব নুর বলেছেন: যান বিয়ের দাওয়াত খেয়ে আসেন।
৫| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:৫৮
বাংলার মেলা বলেছেন: বন্ধুর বিয়েতে দাওয়াত লাগেনা, লাগে খবর। তবে মৌখিকভাবে যদি আসতে নিষেধ করে দেয়, তবে ভিন্ন কথা। আমার বন্ধুদের কেবল বৌভাতে দাওয়াত করেছিলাম, কিন্তু বিয়ের ব্যাপারটা পুরো গোপন রাখা সত্ত্বেও বিয়ের দিন সবাই দল বেঁধে চলে এসেছিল।
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৫৫
হাবিব বলেছেন: বন্ধুর বিয়ের দাওয়াত না পেলে কি মন খারাপ করা উচিত?
--না, বরং খুশি হওয়া উচিত। কারন দাওয়াতে গেলে দামী গিফট লাগে