নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিক্ষক, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। ফেসবুকে যুক্ত হোনঃ www.facebook.com/dev.d.nipun

...নিপুণ কথন...

সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।

...নিপুণ কথন... › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভাই, আপনি কি নামাজ পড়েছেন? পড়েন নাই? বলেন কি!

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:২৫

আমাদের পাড়ার মিরাজ ভাই নামাজ পড়তেন না। তিনি যে ধর্ম বিশ্বাস করেন না সেটাও সবাই জানত। কিন্তু কোনদিন ধর্ম নিয়ে কোন কথা মুখ ফুটে বলত না। পাড়ার ছোটভাইরা তাকে নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে টানাটানি করত। যেন তারা জানে না মিরাজ ভাই নাস্তিক- এরকম একটা কৌতুককর খেলা চলত তাকে দেখলেই। ভাই আসেন নামাজ পড়ে আসি…কেন নামাজ পড়বেন না… আচ্ছা বলেন তো যে আপনাকে সৃষ্টি করেছে তার জন্য কষ্ট করে একটু নামাজ পড়তে পারবেন না?... ভাই রোজা রাখছেন?... মিরাজ ভাই নিজের হতাশা গোপন করতে পারেন না। তবু শান্তভাবে জবাব দেন, দেখো, ইউরোপীয়ানদের সঙ্গে আমাদের তফাত কি জানো, তারা এইরকম প্রশ্ন আরেকজনকে কোনদিন করবে না…। পোলাপান এসব শুনে আরো হাসে! মিরাজ ভাই পাগলাটে… লোকটা নাকি নাস্তিক…ঐটারে জোর কইরা মসজিদে নিয়া গিয়া ঢুকাবি… মিরাজ ভাইয়ের বন্ধুরা বলত। ১৯৮৬-৮৭ সালের দিকে মফস্বলের ছোট্ট একটা শহরে পাবলিক লাইব্রেরিতে বিজ্ঞান সেমিনার করা চাট্টিখানি কথা ছিলো না। প্রযুক্তি এমন সহজলভ্য ছিল না তবু কিভাবে যেন মিরাজ ভাই একটা পর্দার মধ্যে মহাবিশ্বের ছবি দেখিয়ে স্কুলের ছাত্রদের সৃষ্টিতত্ত্বকে বুঝানোর চেষ্টা করতেন। মিরাজ ভাই বিজ্ঞানমনস্ক একটা প্রজন্ম তৈরি করার জন্য নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়াতেন। কিন্তু তিনি পাড়ায় একটা হাস্যরসের পাত্র হয়ে উঠেছিলেন। তাকে দেখলেই সব বয়েসী মানুষের যেন কিছু ঈমানী দায়িত্ব মনে পড়ে যেতো।… আচ্ছা ভাই আপনি মারা গেলে আপনাকে কি কবর দেয়া হবে নাকি পোড়ানো হবে?... না মানে আপনি তো নামাজ-টামাজ পড়েন না… হয়ত পোড়ানোই হবে কি বলেন?... মিরাজ ভাই শান্তভাবে বলেন, লাশ পুড়িয়ে বা মাটি চাপা দিয়ে নষ্ট করার চাইতে এই দেহটা যদি দান করে যাও তাহলে তোমার অঙ্গপ্রতঙ্গ দিয়ে জীবিত মানুষ বাঁচতে পারবে, সেটাই কি সবচেয়ে ভালো না?... ভাই শোনেন, আমরা মুসলমানরা মাটি চাপা দেই না… এইটা আপনি কোন আক্কেলে বললেন… ধুর মিয়া আপনে ভুয়া!...

আস্তে আস্তে মিরাজ ভাইকে মুখ খুলতে হলো। তিনিও ভেতর ভেতর ক্ষুব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন বোধহয়। একদল যুক্তিহীন মূর্খ ধার্মীকের দিনের পর দিন অযৌক্তিক কথা আর ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ তিনি আর সহ্য করতে পারছিলেন না। তারপর থেকেই তার ধাঁরালো যুক্তিতে পরাস্ত হতে লাগল পাড়ার ইঁচড়ে পাকার দল। তার বন্ধুস্থানীয়রা, বড়ভাইরা বেকায়দায় পড়ে যেতে লাগল। মিরাজ ভাইকে হযরত আলীর রেফারেন্সে একজন প্রশ্ন করল, যদি মরার পর দেখলেন পরকাল বলে কিছু নাই তাহলে তো ভাই বেঁচে গেলেন, আমরাও এতদিন নামাজটামাজ করে হুদাই কষ্ট করলাম ঠিক আছে, কিন্তু যদি পরকাল দেখেন আছে তাহলে তো ভাই আমরা বেঁচে গেলাম কিন্তু আপনার কি হবে ভেবে দেথছেন?... মিরাজ ভাইয়ের তৎক্ষণাৎ পাল্টা প্রশ্ন, মরার পর যদি দেখলে পরকাল আছে কিন্তু তুমি যে ধর্মটা মানো সেটা মিথ্যা তখন কি করবে? মিরাজ ভাই নবী মুহাম্মদের মিরাজ ভ্রমণ নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক তর্ক করে তার সঙ্গে কুতর্ক করতে আসা সবার মুখে নুনের ছিটা দিলেন যেন। আশ্চর্য যে যারা গায়ে পড়ে তার সঙ্গে ধর্ম নিয়ে খোঁচাখুচি করতে এসেছিলো এখন তারাই বলছে, ভাই আপনি ধর্ম মানেন না ঠিক আছে, কেউ তো আপনাকে জোর করে নাই। তাই বলে আপনি কারোর ধর্ম বিশ্বাস নিয়া আজেবাজে কথা বলতে পারেন না।… এবার মিরাজ ভাই মুচকি হাসে। তিনি সম্ভবত জব্দ করার নতুন হাতিয়ার পেয়েছিলেন। তিনি বাড়িয়ে দিতে লাগলেন ধর্মের বিরুদ্ধে তীক্ষ্ম ধাঁরালো সব যুক্তি। সঙ্গে নবীদের জীবনী থেকে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বিষয়টা আর হালকা রইল না। এদিকে তিনি বিজ্ঞান সেমিনার করছেন, লাইব্রেরি করছেন, ‘কোথা থেকে এলাম’- নামের একটা পোস্টার ছিলো মানব বিবর্তনের বিখ্যাত ছবিটা দিয়ে- শিপাঞ্জীরূপী থেকে আধুনিক মানুষ। তিনি ছুটির দিন স্কুলের ঘরে এইরকম করে বিজ্ঞান বুঝাতেন। এইবার সকলের ধর্মীয় অনুভূতিতে সুরসুরি লাগতে শুরু করল। খুব দ্রুতই সেটা চুলকানিতে রূপ নিলো। তার বন্ধুস্থানীয়রা তাকে ‘বনচটকানা’ মারতে চায়। ছোটভাইরা তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে শাঁসায়, আল্লা-নবী কাছে নিজের বাপ-মাই কিছু না আর তুই তো চ্যাটের বাল!...

একদিন বিকেল বেলা মিরাজ ভাইকে স্কুল ঘর থেকে বের করে দিলো এলাকার কিছু পোলাপান। ভেঙ্গে ফেলল তার যন্ত্রপাতি, ছবি, বই কাগজ সব ছিঁড়ে ফেলল। অভিযোগ ছিলো মিরাজ আমাদের ছেলেমেয়েদের ধর্মহীন করার চেষ্টা করছে… এতবড় সাহস! মিরাজ ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন। নিশ্চয় তিনি আন্তর্জাতিক কোন খ্রিস্টান মিশনারীদের এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। মুসলমানদের ঈমান নষ্ট করতে খ্রিস্টানরা মুসলমান ঘরে জন্ম নেয়া কিছু কুলাঙ্গারদের টাকার বিনিময়ে কাজে লাগায়…। এই ধরণের গোয়েন্দা রিপোর্ট সবাই মাথা নেড়ে সায় জানায়। এমন অবস্থা হলো মিরাজ ভাই এলাকায় ব্রাত্য তো হলেনই উল্টো শারীরিকভাবে নাজেহাল হবার জোর সম্ভাবনা জাগালেন। অথচ তিনি কখনই মানুষের সঙ্গে তাদের ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে বিন্দুমাত্র কথা বলতে চাইতেন না। তিনি কেবল তার মত থাকতে চাইছিলেন। কিন্তু ধার্মীকদের চুলকানি ছিলো কেন তিনি তাদের সবার মত ভেড়ার পালে যোগ দেন নাই- প্রতিনিয়ত তাকে এই নিয়ে খোঁচাখুচি করত। মিরাজ ভাই তার ভেতরের মুক্তচিন্তা দিয়ে ছোট পরিসরে তার এলাকায় কিছু করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হলো যে হতাশায় দু:খে তিনি হুট করে একদিন বিদেশ চলে গেলেন। ভালো ছাত্র ছিলেন। বিদেশের একটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিঠি আসল। মিরাজ ভাই একদিন খুব বেশি কাউকে না জানিয়ে চুপচাপ চলে গেলেন…।

আজকাল যখন অল্প বয়েসী তরুণদের মুখে সুন্নতি দাড়ি দেখি, মাথায় টুপি- অনলাইনে এসব নিয়ে বললে কিছু মানুষ আমাকে ঝাঁরি মারেন, সমস্যা কি কেউ তার ধর্ম পালন করলে? একবার এক বামাতী নিজের বাবা ও বড় ভাইয়ের ধর্মীক চরিত্র তুলে ধরে বললেন, তারা তো কেউ ধর্মান্ধ নয়! ধর্মকে কেন বড় করে দেখান! আপনারা নব্য নাস্তিকরা আসলে ইসলাম বিদ্বেষী…। বগল বের করা স্লিভলেস আধুনিকা মেয়ে যদি বলে সুষুপ্ত কি সব ধর্ম নিয়ে দিন রাত প্যানপ্যানি করে, খালি জিহাদ, দারুল ইসলাম, গণিমত, জিজিয়া কর… যত্তসব! দুই একটা হুজুর কি বলে না বলে বলুক না! এই সুষুপ্ত খালি ইসলামরে রাক্ষস বানাইয়া ডর দেখায় এইটা সবাইরে খাইয়া ফেলবে… আরে ভাই যে ধার্মীক তারে ধর্ম পালন করতে দেন না! যে আস্তিক তারে তার মত থাকতে দেন তো!

এরা জানে না হুজুররা এখন আর সবাইকে মাদ্রায় পড়তে বলে না। তারা বলে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পড়েন, মেডিকেল বুয়েট অক্সফোর্ড গিয়ে পড়েন। যেখানেই যান নিজের মুসলমানিত্বের চিহৃ ফুটিয়ে তুলেন। মেয়েরা যে দেশে গিয়েই পড়েন, মাথায় হিজাব বোরখা পড়ে সবাইকে বুঝান আপনি মুসলমান। অর্থ্যাৎ ফান্ডামেন্টালিস্ট ইসলামিস্টরাও এখন প্যান ইসলামিজমের উপর জোর দিচ্ছে! এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা মোড়। ল্যাবরোটরিতে বসে অনুবিক্ষণে চোখ রেখেছেন, নামাজের সময় হলো, আপনার পাশে কাজ করা ভাইটি বা আপুটি বলছেন আসেন নামাজ পড়ে নেই। সে কি আপনি নামাজ পড়েন না? ওমা কেন? আপনি মুসলমান না? আপনাকে নামাজ পড়তেই হবে…। যেসব মেয়েরা ধর্ম নিয়ে বেশি বলাকে কচকচানি মনে করেন, ধার্মীককে তার বিশ্বাস নিযে থাকতে দিতে বলেন, নাস্তিকদের অহেতুক ধর্ম নিয়ে চুলকানি আছে বলে মনে করেন- তারা একদিন দেখবেন তার সহকর্মী ফার্মাসিস্ট স্মার্ট সুপুরুষ ছেলেটি বলছে, প্লিজ আপু একটা কথা বলি, একজন মুসলমান হিসেবে আপনার কিন্তু পর্দা করা উচিত। আপনি তো আকাশ থেকে পড়লেন। জামা কাপড় পড়ে থাকার পরও কিসের পর্দার কথা বলছে এই লোক? আপনি হয়ত বলবেন, দেখুন এসব আমার ব্যক্তিগত বিষয়, প্লিজ এ নিয়ে কথা বলবেন না। আপনার ধার্মীক সহকর্মীটি কিন্তু এসব মানতে একদমই চাইবে না। কারণ মুসলমান হিসেবে অপর মুসলমানকে ফরজ সম্পর্কে সতর্ক করা তার ঈমানী দায়িত্ব। এগুলোকে কোন মুসলমান ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে মনে করে না। ধর্ম মানা না মানাকে কোন মুসলমান ব্যক্তিগত চয়েজ বলে বিশ্বাস করে না। আপনি মুসলমান হয়ে মানবেন না- তা হবে না! কোন ধার্মীক মুসলমান আপনাকে ইসলামের নির্দেশ অমান্য করতে দিবে না। তার মানে আপনাকে আপনার মত থাকতে দিবে না। যেদিন আপনি আপনার পোশাকের স্বাধীনতা হারাবেন, আপনার পাড়ায় আপনাকে পর্দা করে চলতে হবে বলে জ্ঞান দিবে সেদিন কি আপনার বোধদয় হবে- মুখে সুন্নতি দাড়ি আর টুপির পরিমাণ বেড়ে যাওয়া যে অশনি সংকেত ছিলো- সেদিন বুঝবেন? কেন আমি ক্রমাগত ধর্ম নিয়ে সবাইকে সতর্ক করে চলেছি- সেইদিন আপনি বুঝতে পারবেন? কিন্তু তখন বুঝে আর কি হবে?

লেখাঃ সুসুপ্ত পাঠক।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:৪৪

রাজীব নুর বলেছেন: আল্লাহ কুরআনে বার বার জোর দিয়ে বলেছেনঃ "যালিকা ইয়াওমুল হাক্কু" - এই দিন নিশ্চিতই আসবে! যারা নামায পড়বেনা তাদের মাথা পাথর দিয়ে আঘাত করে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দেওয়া হবে...

২| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৪:৩৩

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: কথায় আছে চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে।সেদিন তারা মহান স্রষ্টাকে বলবে আবার দুনিয়ায় প্রেরন করতে কিন্তু মহান আল্লাহ সেই সুযোগ তাঁদের দিবেন না। কারন দুনিয়ায় যখন মহান আল্লাহ এতো সুন্দর সুন্দর নিদর্শন রেখেছিলেন তখন তারা দেখেও না দেখা,জেনেও না জানার ভান করেছিল।

৩| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৪:৫৬

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: যারা মুসলিম নাম নিয়ে এসব প্রশ্নে বিব্রত হবেন বা ধর্মহীন জীবন যাপন করতে চান, তারা মুসলিম নাম বদল করলে এই ধরনের সমস্যা অনেক কমে যেত। কারণ, মুসলিমরা কোন অমুসলিমকে এসব প্রশ্ন করে বিব্রত করে না...

৪| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ২:১৯

উম্মু আবদুল্লাহ বলেছেন:

পৃথিবীর সবদেশে সব জায়গায় ভিন্নমতীরা সুবিধা করতে পারেনা। ফ্রান্সে মুসলিমদের জব্দ করার জন্য নূতন নূতন আইন প্রনয়ন হয়ে থাকে। এই হল দুনিয়া!

৫| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:৫৯

নীল আকাশ বলেছেন: এই দুনিয়া আপদ বিপদ দিয়ে আল্লাহ বান্দাদের ইমানের পরীক্ষা নেন। সবর করার সুযোগ করে দেন। তার কাছে পানাহ চাইবার সুযোগ করে দেন।

৬| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১৬

গরল বলেছেন: অতি মুসলমানেরা অতিমাত্রায় বিরক্তিকর, সবচেয়ে বিরক্তিকর কাজ তারা করে সেটা হল ওজু করে পুরো অফিস নোংরা করাকে তাদের ঈমানী দায়িত্ব বলে মনে করে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.