নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।
'তরকারি.. তরকারি...' ডাক শুনে রান্না রেখে বাইরে ছুটে গেলো মা। আজ অনেকদিন পর ছেলে বাড়িতে, মাংস রান্না হবে। কিন্তু বাসায় তো আদা শঁসা ইত্যাদি নেই! ছেলে দীর্ঘদিন ধরে বাইরে বাইরে। বাজার করে দেবে কে? আমি বললাম, থাক, এই কড়া রোদের ভেতর বাইরে যাওয়ার দরকার নাই মা। কিন্তু মা শুনলো না।
.
তরকারিওয়ালা আমাদের পূর্বপরিচিত। একটা সময় আমাদের এলাকাতেই থাকতেন, তার বোন আর জামাইবাবুর সাথে। সেই বোন মৃত, বোনের এক ছেলে সমীর টাকাপয়সা মেরে চম্পট দিয়েছে বলে লোকে বলাবলি করে, খবর নাই। আরেক ছেলে ভালো, তাকেও ঠকিয়েছে ঐজন। এখন সে একা দেনার টাকা শোধ করে বাজারে চা বিক্রি করে! অথচ একজন ছাত্ররাজনীতি করতো, পাড়ায় মাতবরি করতো আর কি; অন্যজন কাপড়ের দোকানি ছিলো।
.
তো, এই তরকারিওয়ালা আগে রিক্সা চালাতেন। প্রতিদিন যা রোজগার করতেন, বাসায় ফেরার পথে জোলার ওপারে এক সাহার ছেলে সব টাকা কেড়ে রেখে দিতো। একদিন কান্নাকাটি করে এসে তিনি পড়লেন আমার বাবার কাছে। সব শুনে বাবা পেছনের মোল্লাবাড়ির জঙ্গী কাকাকে দিয়ে ঐ ছেলেকে সতর্ক করালেন। জঙ্গী কাকা বাবার স্কুলের বন্ধু এবং বিএনপি নেতা। ফরিদপুরে তো বছর দশেক আগেও বিএনপিই সব ছিলো। বাবার আবার সব দল ও মহলেই আলাদা গ্রহণযোগ্যতা ছিলো। সেই থেকে সেই ছেলে আর টাকা নিতে আসেনি।
.
কিন্তু এই তরকারিওয়ালা সেসব এখন আর স্বীকার করেন না। মনে রাখেননি বলেই মনে হলো। কয়েকদিন আগের বাসি শঁসা, দাম হাকালেন ৫০ টাকা কেজি। মা বললো, 'বাজারে তো দাম কম, আর বাড়ির ওপর বাকি যারা আসে তারাও ৪০ টাকা কেজি নেয়। মানলাম ৫টাকা অটোভাড়া বাজার থেকে এখানে, তাই বলে এত বেশি নিবেন?' সে বলে বসলো, বাজারেও এমনই দাম। মাকে বাসায় রেখে দাম দিতে ফিরে এসে তাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, 'আচ্ছা, অনেকদিন আগে আমার বাবা থাকতে ঐপারের সাহার ছেলে নাকি খুব উৎপাত করতো আপনাকে? মারতো, টাকা কেড়ে নিতো? এ নিয়ে আপনি বাবার কাছে একদিন অনেক কান্নাকাটি করেছিলেন মনে হয়?'
.
আমি তখন ছোট ছিলাম। এটা মনে আছে যে তা হয়তো ভাবেননি। তাছাড়া এলাকার শত্রুরা তো আমার বদনাম করেই বেড়ায়, না করলে ভাত হজম হয় না তাদের। যাহোক, তরকারিওয়ালা একটু দম নিয়ে বললেন, 'ওপারের কুসুমার সাহা। ওরে ঠিক করতে আমার লাগছিল মাত্র দুই মিনিট।' জিজ্ঞেস করলাম, সেটা কে করেছিল? তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন বাবুলের নাম বললেন। ক্যাপ্টেন বাবুল আজও বাবাকে ছোটভাইয়ের মতো দেখেন। আমি ডাকি কাকা। আমি বললাম, 'সে যেই বলে দিক, বাবার মাধ্যমে গিয়েছিলেন কিনা?' তিনি মাথা নিচু করে চোখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে জবাব দিলেন, 'মনে নেই'। বললাম, 'এসব মনে রাখতে হয় এবং বলতেও হয়। কারো উপকার ভুলতে নাই। এভাবে ডাকাতি দাম রাখবেন, আবার কিছু বললে তর্ক করবেন? সম্মানি লোককেও ছাড় দিবেন না? উপকারকারীকে মনে না রাখলে উন্নতি হবে না কোনোদিন'। ষাটোর্ধ লোকটা মনে হয় নাতির বয়সীর থেকে এমন শক্ত কথা মানতে পারলেন না। তিনি বললেন, 'আমি অনেক উন্নতি করছি।' ঠিক তখন মুখ ফসকে বেরিয়ে গেলো একটা কথা, যা আমি বলতে চাইনি-- 'উন্নতি করেছেন বলেই তো এই শেষ বয়সেও রোদের ভেতর ভ্যানে করে তরকারি নিয়ে ঘুরতে হয় রাস্তায় রাস্তায়..'
২| ১৯ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ৮:০০
মাহমুদুর রহমান বলেছেন: আজকাল উপকারের কথা কেউ মনে রাখে না।
পূর্বে ইহাকে আমরা বলতাম অকৃতজ্ঞ আর বর্তমানে স্বার্থপর।
সুন্দর লেখা।
৩| ১৯ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ৮:২০
রাজীব নুর বলেছেন: কেউ কেউ মনে রাখে।
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ২:৫৭
আকতার আর হোসাইন বলেছেন: উপকারের তিন দোষ। প্রবাদ আছে।