নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।
শেষ কবে এতটা ভালো পহেলা বৈশাখ আমরা কাটিয়েছিলাম, মনে পড়ে না। অন্তত বিগত ১৫ বছর বাবার অবর্তমানে তো নয়ই, বাবা থাকতেও। আজ আমার ফ্রিজে দুই পদের মিষ্টি ছিলো। খাবার প্লেটে ছিলো মায়ের হাতে রান্না করা খাসির কাচ্চি বিরিয়ানি, ছিলো ইলিশ মাছ ভাজা, ছিলো ডিমও। কোক আর সেভেন আপ এই রাতেও ঢেঁকুর তুলে মনে করিয়ে দিচ্ছে তারাও জায়গা পেয়েছে আমার পেটে, দায়িত্ব পেয়েছে খাবার হজম করানোর।
ছাপোষা সরকারি চাকুরে, ১০০% সৎ, প্রতিবাদী, পরোপকারী, কবি, অবসরপ্রাপ্ত হয়ে আইনপেশায় সিনিয়র ও বিজ্ঞ হয়েও বর্তমান সময়ের ছ্যাঁচড়ামিপনার সাথে মানিয়ে নিতে না পারা আমার বাবা কবি বাবু ফরিদী একাত্তরে জমিদারিহারা, পঁচাত্তরে অকালে মাহারা হয়ে ভাইবোনদের প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে নিজেকে বঞ্চিত করেছেন অনেক ভাবেই। তাই, পহেলা বৈশাখে প্রিয় ফল তরমুজ পেতাম প্রতিবেশীদের থেকেই, বাবা আনত বাঙ্গি। গড়িবের ডাক্তার আমার মা Krishna Guho যে আয়ে রোগীর সেবা দিয়েছেন ২০+ বছর, তা ইতিহাসে বিরল। তাই বছরের প্রথম দিন মিষ্টি বাঁ বেশী দামের ইলিশের বিলাসিতা আমরা করতে পারিনি তেমন। কিন্তু কখনো কষ্টবোধ হয়নি, কারণ বাবা থাকতে প্রতিবেশীরাই আমার জন্য থালা ভরে ভরে হরেক রকম খাবার পাঠাতো। আমরা পাঠাতাম সেভাবেই, মাঝে মাঝেই এলাকার সবাইকে হালিম, বিরিয়ানি ইত্যাদি নিজ হাতে রান্না করে খাওয়াত বাবা। সেই প্রতিবেশীর বাসাতেই ২০০৮ সালে বাবার রহস্যজনক অকালমৃত্যুর পর সেই প্রতিবেশীদের আদরও হারিয়ে গেলো, বাজার আসাও বন্ধ হয়ে গেলো বাড়িতে!
কে করবে বাজার? আমাকে শুধু বলতো লেখাপড়া করে বড় মানুষ হতে, বাজার, রাজনীতি, কুটিলতা, সমুচিত জবাব দেওয়া, প্রতিঘাত করা শিখিয়ে যেতে পারেনি বাবা আমায়। মায়ের অবস্থা একই। ভাঙার জান্দি মিত্রবাড়ির মেয়ে আমার মা, জমিদারি যারও রক্তে। মাকে একা রেখে ঢাবিতে গেলাম, মামার খোঁজও নিলো না, শুধু মাস্যা একবার হঠাত বেড়াতে গেলে একবেলা খাইয়ে দিতো মাকে। ব্যাস! মেঝো কাকা মহিম স্কুলের মোড়ে আর্টিস্ট শিবু গুহ কাকাকে অনেক অনুরোধ করেও আমার পাঠানো টাকায় সপ্তাহে একদিন মাত্র ১০ মিনিট হাঁটাপথে তার না খেয়ে থাকা অসুস্থ, সদ্য স্বামীহারা বিধবা বৌদিকে বাজার দিয়ে আসতে রাজি করাতে পারিনি। মা তাই একা রান্না করতে ইচ্ছা করতো না বলে, প্রতিবেশীদের নির্যাতন-টিটকারি-টিজিং থেকে বাঁচতে বিভিন্ন পাঠ-কীর্তনেই ডাক্তার দিদি হিসেবে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে খেয়ে বাঁচত। শ্রীঅঙ্গনের দাতব্য চিকিৎসালয়ে বাজারের গোপাল ট্রেডার্সের মাড়োয়ারিদের পূর্বপুরুষের স্মৃতিরক্ষার্থে মাত্র ৩০০-৫০০ টাকা বেতন আর ২-৫ টাকা রোগিপ্রতি ভিজিতে বাবার রেখে যাওয়া চেম্বারেই মা নানা দুর্ব্যবহার-অপমান সহ্য করে শুধু সেখানেই ডাক্তারি করেছে। আঙিনার স্টাফ হিসেবে অখাদ্য খাবার খেয়ে বেচেছে, যা গরুর খাদ্যই ছিলো বলতে গেলে। মাসকলাইর ডাল আর মটাচালের ভাত। তবে কেউ ভোগ দিলে বা অনুষ্ঠান থাকলে কালেভদ্রে ভালো খাবার মিলত। তাও দিতে চাইতো না সাধু নামের ভণ্ড চোরেরা। ২০১৯ সালে শ্রীঅঙ্গনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক Bandhu Sabok ব্রহ্মচারীকে হত্যার পর আমাদের প্রতিবাদে লাশ গুম করতে ওরা পারেনি, চুরির খবর প্রমাণিত হয়েছে, কমিটি ভেঙেছে, কমিটিতে জেলা প্রশাসন ঢুকেছে। রামকৃষ্ণ মিশন থেকে নিয়ে সেই ধাঁচে গঠনপ্রণালী প্রণয়ন করেছে, কিন্তু এখনও ভালো খাবার পাওয়া যায় কিনা, লুটপাট হয় কিনা আমার জানা নেই। কারণ আমাকে দেখলেই সাধুরা মারতে আসে, মেরেছেও। আমি তাই গত ৪ বছর শ্রীঅঙ্গনে যাই না বললেই চলে।
আর আমি? যারা আমাকে ভার্সিটি লাইফে দেখেছেন, তাঁরাই বলতে পারবেন কেমন ছিলাম দেখতে, কী খেয়েছি। জগন্নাথ হলের ক্যান্টিনের খাবার অনেক খরচ মনে হতো, টিএসসি ও বিজ্ঞান ক্যাফের ২০ টাকার লাঞ্চ ও ডিনার ছিলো আমার প্রিয়। সেই খাবার খেয়েই সিটের জন্য অ্যাক্টিভ ছাত্র রাজনীতি, টিউশন, লেখালেখি করতে হতো। এমনকি ছাত্রাবস্থায় সাংবাদিকতা করলেও অফিসের দেওয়া সামান্য অর্থের বাইরে আর কোনো ধান্দা করিনি। বাড়ির খাবার যে কতদিন খাইনি! কত রাত যে ম্যাগির ন্যুডলস শুধু পানিতে সেদ্ধ করে খেয়ে ঘুমিয়েছি! সকালে তো এক কাপ চা আর একটা বিস্কুট, আর কিছু খাইনি। ক্লাসের তাড়া থাকতো খুব।
২০১৭ সালে সরকারি চাকরিটা পাওয়ার পর থেকেই মূলত নিজে বাজার করা শুরু করলাম। অনেক ঠকেছি, আবার জিতেছিও। বাবা মরেছে, আর কোনোদিন ব্যাগভর্তি বাজার আসবে না বাড়িতে-- এই ভেবে বসে থাকা মায়ের চোখে আনন্দঅশ্রু দেখেছি হাতে ব্যাগভর্তি বাজার গুঁজে দিতেই। কিন্তু সেই সুখ ফরিদপুরের প্রভাবশালী নেতা , শ্রীঅঙ্গন কমিটি ও প্রতিবেশী আমার জমির অবৈধ দখলদারদের সহ্য হয়নি। তারা তাদের অনুগতদের দিয়ে পচা মাছ গছিয়ে দিয়ে ঝামেলা পাকিয়েছে, প্রতিবাদ করায় বন্ধুদের দিয়েও অর্থ, ঠিকাদারি ও চাকরির লোভ দেখিয়ে আমার বিরুদ্ধে যাতা লিখিয়েছে ও বলিয়েছে। ফরিদপুরে এক বছর না থাকতেই তাই বদলি হতে হলো, মা-ছেলের শুঁখের বাজার করে খাওয়া আর ভাগ্যে কুলাল না, কারণ দুজন দুই জায়গায়। কিনলাম জীবনে প্রথম ফ্রিজ, যাতে মায়ের খাবারটা থাকে ঘরে। এরপর আস্তে আস্তে স্মার্ট টিভি, ওভেন, ইন্ডাক্সন কুকার্য, ঘর আলো ঝলমলে করা নতুণ প্রজন্মের এল,ই,ডি লাইট, উন্নত নতুন সিলিং ফ্যান, দামী মোবাইল, ম্যাকবুক, সিসি ক্যামেরা, মাসিক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সবই হয়েছে আমাদেরকে একঘরে করে রাখা, সব জায়গায় শত্রুদের লোক দিয়ে ঝামেলা পাকানোসহ নানা জটিলতার মধ্য দিয়ে।
তবু কাল ছিলো আমার জীবনের স্মরণীয় দিন। কারণ গতকাল আমি জীবনে প্রথম খাসির মাংস কিনেছি। আর দোকানের খাসির বদলে চামড়া, কুকুর নাকি বিড়াল সন্দেহ নিয়ে খেতে হবে না। প্রথমে একের মাংস বলে বুড়া পাঠা গছিয়ে দিলে পরে ভালো মাংস পেয়েছি হাজার টাকা কেজিতে। ইলিশ মাছ কিনলাম এই জীবনে দ্বিতীয়বার, দুটিতে এক কেজির একটু বেশী, দাম হাজার টাকা! দ্রব্যমূল্যের লাগাম নাই, তাই বাজারে যেতে ইচ্ছা করে না। কিন্তু গতকাল কেন যেন অতিরিক্ত সাহসী হয়ে গেলাম। সকালেই প্রতিবেশীদের যখন দেখলাম আমাদেরকে বাড়ির সামনের মন্দিরের পূজা দিতে না দিয়ে সেজেগুজে এসে পূজা দিচ্ছে, আমার মন্দির ভেঙে রেখেছে, মায়ের মলিন মুখের বুলিতে যখন উঠে এলো, 'ডিম আছে আর পোলাও রান্না করি?', তখনই হয়তো জেদ চাপল মনে। হারিজিতি আজ বাজারে যাবি। হোক তর্কযুদ্ধ, করুক দোকানিরা দাম নিয়ে অপমানিত। তবু আমি যাবি!
গিয়েছি, হেরেছি, আবার জিতেছিও। বছরের প্রথম দিন পাতে ছিলো খাসির কাচ্চি বিরিয়ানি, ডিম সেদ্ধ, ইলিশ মাছ ভাজি। কোক, কাঁচা এমের সরবত ছিলো ফ্রিজের বরফ দিয়ে। অথচ এক টুকরা বরফের জন্য ছোটবেলা কত বাড়িতে যে খোঁজ করতাম, বাপ-ব্যাটা গরমে লেবুর সরবত অথবা বাবার হাতে বানানো বিখ্যাত মাঠা খাবো বলে!
এতেই শেষ না। জীবনে এই দ্বিতীয়বার মাকে শাড়ি দিলাম, তাও একসাথে দুটি। বিকেলে যারা মাকে দেখেছেন, তারা দেখে থাকবেন। একটি কাতান, অপরটি জামদানি। আমাদের দুখ দেখে শত্রুদের কালো মুখ দেখি আর আনন্দ পাই, নিজের সাফল্যে খুশী হই। যখন শুনি প্রতিবেশী শত্রু আমাদের উপর হামলাকারী সুমন রায়ের স্ত্রী আর আসবে না বলে আগের প্রেমিকের বাড়ী চলে যায়, পায়ে ধরে ফিরিয়ে আনলে কয়েক দিন পরেই যখন শুনি আরেক প্রতিবেশীর কুকুর এসে নাকি তাদের সিঁড়িতে পায়খানা করে রেখে গেছে, যখন দেখি সুমন ওর মাকে ধরে পেটায়, যখন শুনি সাবেক এলজিআরডি মন্ত্রীর সাবেক এপিএস সত্যজিৎ মুখার্জি সুমনকে তাড়িয়ে দিয়েছে নেতাগিরি তথা তার বাড়ীর কাজের লোকের পদ থেকে, তাই সুমন যখন দুধওয়ালা হয়েছে, ওর ছোটভাই সুজিত যখন অনেক রাত অবধি বাইরে থেকে মাদকাসক্ত হয়ে বাড়ী ফেরে, ওর মেয়ে যখন বিনা কারণে চিৎকার করে বাবামাকে অমান্য করে, অন্য প্রতিবেশী শত্রুদেরও যখন এমন প্রকৃতির শাস্তি পেতে দেখি, তখন আমার মনে হয় আমার প্লেটে এত ভালো খাবার দরকার নেই, শুধু যদি বাবাকে ফিরে পেতাম! সেই ২০ জুলাইয়ের রাতে ওরা কী যে করলও আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ বাবাটার সাথে! আজও জানতে পারলাম না! জিডি-পোস্টমর্টেম করতে দেয়নি, ছিলাম নাবালক!
আজ এই শেষরাতে প্রতিবেশীদের নির্যাতনে যখন ঘুম আসছে না, তখনও বসে ভাবি, এতকিছুর দরকার তো নেই! শুধু বাবামা আর আমি তিনটা প্লেটে পান্তাভাত আর কাচামরিচ-পেয়াজ দিয়ে খেলেই তো স্বর্গসুখ পেতাম! কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আরও একটি নতুন বছর আমরা শুরু করলাম বাবাকে ছাড়া। বাবার রেখে যাওয়ার স্মৃতি ঘিরেই আমাদের এই বেঁচে থাকা, নতুন কিছু না করতে যাওয়ার আলস্য, ভালো পোশাক না পরার ইচ্ছা, ভালো খাবার খাওয়ার আগে বাবার মুখটা চোখে ভাসা, যেকোনো সাফল্যের খবর আগে বাবাকে দিতে চেয়ে দিতে না পারার কষ্ট ও নিঃসঙ্গতা নিয়েও এই বছরটা ও আগামী বছরগুলোও যে কাটিয়ে দিতে হবে!
দেব দুলাল গুহ
২| ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ৮:২৯
ঢাবিয়ান বলেছেন: প্রথম পাতায় দুই দুইবার একই পোস্ট দিলেন !!!!
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ৮:২৮
শেরজা তপন বলেছেন: খুব অল্প পরিসরে অনেক বেশী স্মৃতিমুলক কথা লিখে ফেলেছেন বলে একটু এলোমেলো খাপছাড়া মনে হোল।
কয়েক জায়গায় হোঁচট খেয়েছি- বুঝতে অসুবিধা হোল। স্মার্ট টিভি ম্যাকবুক সব হোল আপনার কিন্তু বাজারে গিয়ে কখনো মাংস কিনেননি কেন বুঝলাম না। মাকেও কেন এতদিন বাদে শাড়ি দিলেন? আপনি যদি আপনার মায়ের একমাত্র সন্তান হন তবে তাকে এমন নরক থেকে নিয়ে গিয়ে কেন নিজের কাছে রাখেন না?
সুমন রায়ের কথা শেষে এসে আলাপ করলেন- আগে শুধু প্রতিবেশী বলেছেন ওর নামটা বলেননি।
আরেকটু গুছিয়ে লিখলে ভাল হোত।