নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিক্ষক, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। ফেসবুকে যুক্ত হোনঃ www.facebook.com/dev.d.nipun (DEV DULAL GUHO)

...নিপুণ কথন...

সময়ের সাথে দৌঁড়ে পারিনা, জীবনের দৌঁড়েও পিছিয়ে আমি!খুঁজে ফিরি আপন মানুষ, মাঝে মাঝে হই বেহুঁশ...হৃদয়ে অবিরাম স্বপ্ন গাঁথন, বলব আজ নিপুণ-কথন।

...নিপুণ কথন... › বিস্তারিত পোস্টঃ

নৃত্যশিল্পী স্বপন দাসের মৃত্যুতে শোক

১৯ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১২:৩৯


শতকষ্ট চেপে রাখা এই হাসিমাখা মুখটা আর দেখবো না। গতকাল খবরটা পাওয়ার পর থেকেই আমি অসুস্থ, ঘুমাতেও পারিনি। একের পর এক মৃত্যু সংবাদ আমাকে কাবু করে ফেলেছে। আজ সকাল থেকে বাড়ির সামনে ডিজের অত্যাচারে শব্দদূষণ চলমান, ঘুমাতে পারলাম না সকালেও। শরীরের এই অবস্থায় শিল্পকলা ও শ্মশানে যাওয়ার প্রচন্ড ইচ্ছাকেও তাই বাধ্য হয়ে নিবৃত করতে হলো। শেষ দেখা আর হলো না স্বপন দাসের সঙ্গে। মা বললো, 'গেলেই তুই আরও অসুস্থ হয়ে যাবি, বাবার কথা মনে পড়বে'। এই যে ধর্মের নামে অধর্ম করে আমাদেরকে একঘরে করে রাখা, নির্যাতন, বেরোলেই প্রাণনাশের হুমকির প্রেক্ষিতে আপনজনের শেষযাত্রায় শরিক হতে না পারা, অসুস্থ বৃদ্ধা মায়ের আজ বাধ্য হয়ে বাজারে যাওয়া, আমার এভাবে শব্দদূষণ ও নির্যাতনের প্রেক্ষিতে অসুস্থ হয়ে পড়া, এই যে বেআইনিভাবে বছরের পর বছর আমার বেতন আটকে রাখা-- এর আসলে বাংলাদেশে কোনো বিচার নাই।
.
শেষ দেখা হয়েছিলো মাসখানেক আগে ফরিদপুর গুহলক্ষ্মীপুরে আমার এক আত্মীয়ের বাড়িতে। জাতীয় শিল্পকলা পদকপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী ও নৃত্যপরিচালক স্বপন দাস তাঁর একমাত্র ছেলে নীলকে নিয়ে সেই বাড়িতে বসেছিলেন। আমার এক পিসির মেয়েকে তিনি নাচ শেখাতেন। আমাকে দেখেই 'আপনি' সম্বোধন করে কথা বলা শুরু করলেন, আমার বাবা কবি বাবু ফরিদীকে স্মরণ করে স্মৃতিচারণ করলেন। প্রায় দুই ঘন্টার সেই আড্ডায় উঠে এলো অনেক আলোচনাই.. আমি তাঁকে 'তুমি' করে বলতে অনুরোধ করেছিলাম।
.
স্ত্রী নেই, জানালেন ছেলেকে নিজেই রান্না করে খাওয়াতেন। পায়ের কাছে চারটি প্যাকেট। কথাপ্রসঙ্গে জানলাম সেগুলো মা কালীর খিচুড়ি প্রসাদ। দীর্ঘ প্রায় তিন দশক আমাদের বাড়িতে এমন খিচুড়ি আর লাবড়া তরকারি হতো মা কালীর পূজায়। শতশত লোক ধর্মভেদে এসে তৃপ্তি সহকারে তা খেত বাড়ির সামনের বিশাল মাঠে বসে। সেই স্মৃতি মনে পড়ায় নির্লজ্জের মতো প্রসাদে আগ্রহ দেখিয়ে ফেলেছিলাম জীবনে সেই প্রথম। স্বপন কাকু ছেলেকে বললেন প্রসাদ দিতে, খেলাম। তখন কি জানতাম এটা তাঁদের বাপ-ছেলের দুবেলার আহার? আহারে, জানলে কি ভাগ বসাতাম তাতে?
.
ছেলে নীল মেট্রিক পাশ করেছে মাত্র, আঁকার দিকে খুব ঝোঁক। মোবাইলে নিজের কাজ দেখালো। আমি তাকে চুরি-বালায় ছবি না এঁকে আগে ভালোভাবে পড়ালেখা করতে উৎসাহ দিলাম। কিন্তু সে যেতে চায় ভারতে বা দেশেই চারুকলায় আগ্রহ। আমার বাবা আজ থেকে দুই দশক আগে আমাদের ঘরের দেয়ালে নিজ হাতে লিখে গেছেন, "জীবনটা ঠিকঠাকভাবে শুরু করাটা খুব জরুরি"। হতাশা ব্যাক্ত করতেন বাবা। আমাকে বলতেন, আমি যেন আগে পড়ালেখা শেষ করে বড় অফিসার হই, নিজের চেয়ারটা ঠিক করি আগে। তারপর নাকি জিনগতভাবে সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আমি এমনিতেই সুনাম পাব। তাই মাত্র ৫ বছরে নাটক-গান-আবৃত্তি করতে মঞ্চে উঠে ৭ বছরে পত্রিকায় লিখলেও জিলা স্কুলে ভর্তির পর নটরডেম কলেজে ওঠা অবধি এসব বন্ধ ছিলো, শুধু লেখাপড়া ছিলো।
.
একাত্তরে জমিদার থেকে গরিব হয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা যান আমার ঠাকুরমা। এরপর আত্মীয়ের কুবুদ্ধিতে দাদু আবার বিয়ে করেন। সেই নতুনজনকে বাড়ি লিখে দিয়েছেন বলে জেনেছি, আমার বাবাকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা বাদ দিয়ে ফরিদপুরে চাকরিতে ঢুকতে হয়েছিলো অনেকগুলো ভাইবোন মানুষ করার জন্য। আমার বাবা স্বপন দাসের চেয়েও অনেক কষ্ট করেছেন জীবনে, কিন্তু লড়াই থামাননি। তিনি জিরো থেকে হিরো হয়েছিলেন। সেই সময় প্রচণ্ড অর্থকষ্টে থাকলেও কারো কাছে কোনোদিন হাত পাতেননি। আত্মীয় আমাদের অনেক টাকা আটকে রেখেছিলেন। যাহোক, বাবার রহস্যজনক অকালমৃত্যু হয় ২০০৮ সালে। কোনো তদন্ত ছাড়াই দাহ করা হয় লাশ। আজও বাবাকে ভেবে কাঁদি।
.
নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই তাই নীলকে বলেছিলাম, আগে পড়ালেখা শেষ করো। পরে এসব আঁকাআঁকি করতে পারবে অনেক। কিন্তু ও ইন্টারে উঠেছে মাত্র, এখনই দেখলাম বিয়ে করতে উদগ্রীব। হয়তো বাবার কষ্ট সহ্য হতো না ওর, তাই ঘরে বউ আনার চিন্তা ছিলো। কিন্তু এই এক মাসে ওর বাবার অবস্থার এত অবনতি হয়েছে, তা ও আমার ফ্রেন্ডলিস্টে থেকেও কখনও বলেনি। তাই করা হয়নি আর কিছুই। বছরের শুরুর দিকে নাট্যকার ম. নিজাম কাকুর মাধ্যমে চিকিৎসার জন্য স্বপন কাকুকে কিছু টাকা পাঠিয়েছিলাম সুদূর লালমনিরহাট থেকে। এখন নিজেরাই বিপদে, প্রায় বছরখানেক ধরে বেতন-ভাতা পাই না, বেআইনি ও অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয়েছে। তাই, অন্যের বিপদে আর পাশে দাঁড়াব কীভাবে?
.
যাহোক, স্বপন দাসের আত্মার শান্তি কামনা করছি। নীলের একটা গতি হোক। বাবা-মা হারা ছেলেটা এই রাতে বাবাকে দাহ করে এসে কীভাবে আছে, কী করছে তাই ভাবছি।

-- দেব দুলাল গুহ -- দেবু ফরিদী

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১১:০২

রাজীব নুর বলেছেন: প্রতিটা মৃত্যু দুঃখজনক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.