নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চিন্তা প্রসবের বেদনা মগজব্যাপী স্থায়ী হওয়ার আগেই কলম ধরতে হতো। মাথার মধ্যে জমে থাকা ভয়ংকর সব চিন্তাগুলোকে পরিণতি দেয়া মত শব্দ কোনো কালেই ছিল না।তারপরও সেই সব গল্প লেখতেই হতো,যেগুলো লেখার পর শান্তিতে ঘুমানো যায়।

নির্বাক স্বপ্ন

নির্বাক স্বপ্ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

মদ্যপ মোৎজার্ট

২৬ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১১:০২

১।
ওস্তাদ বিসমিল্লাহ্‌ খানের 'রাগ ভৈরবী' শুনেছিলাম।বিকাশের ফোন পেয়ে ঘর থেকে বের হতে হলো।অনেক দিন পর বিকেলবেলা ঘর থেকে বের হচ্ছি।আকাশের একটা জায়গা নীল থেকে গোলাপি রঙ ধারণ করেছে।বিকাশ তার বান্ধবী শুভ্রা কে নিয়ে ঘুরতে এসেছে।পুরান ঢাকায় ঘুরে দেখার মতন কি আছে ভেবে পেলাম না।যা ই হোক তারা এসেছে ব্যাক্তিগত সিদ্ধান্তে।পকেটে টাকা কম।ওদের নিয়ে ভিক্টোরিয়া পার্কে বসি।পার্কে মানুষের খুব একটা আনাগোনা নেই।অন্ধকার নেমে আসছে,একটু একটু করে।আমরা তিন জন বসে আসমানে আলো আধারের খেলা দেখছি।শুভ্রা হঠাৎ বলে উঠলো,তোমার লেখালেখির কি খবর?নতুন কি লেখছো?আমি সংক্ষেপে উত্তর দিলেম,নতুন কিছু লেখছি না।বাতাসের দমকের মত সে বলে উঠলো,কেন?আমি কোন উত্তর খুঁজে পেলাম না।রাইটার্স ব্লকে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ছয় মাস যাবত গর্তজীবি।দরকার ছাড়া ঘর থেকে খুব একটা বের হই না।রাতের দিকে ঘর থেকে বের হয়ে ছাদে যাই।চাদ দেখি।মোবাইল থেকে রবীন্দ্রনাথ শুনি।ঘন্টা দুয়েক ছাদে কাটিয়ে আবার নেমে আসি।রাতে খাওয়ার জন্য হোটেলে যেতে হয়।ষাট টাকা তে উদরপূর্তি।কোন দিন তেলাপিয়া আবার কোন দিন রুই।বাবা মা নিউইয়র্ক যাওয়ার পর থেকে এমন ই চলছে।প্রতি সকালে এক মাসি আসে। সে ঘরদোর পরিস্কার করে দিয়ে যায়,রান্না করে দিয়ে যায়।রাতের খাবার ফ্রিজ থেকে বের করে গরম করতে হয়।এই অযাচিত ঝামেলা এড়ানোর জন্য রাতে বাইরে ই খাই।সারাদিন ঘরে একা থাকি।বই পড়া,মিউজিক শোনা ছাড়া আর কিছু ই করার নেই।বড় ভাই প্রতি মাসে দুই তিনশো ডলার পাঠায়।সেই টাকা দিয়ে ই আমার দিন যায়।পাচ ছয় ধরে কিছু লেখতে পারছি না।লেখতে বসলেই মাথা খালি হয়ে যায়।বিকেলের সময়টাতে যন্ত্রসঙ্গীত শোনার চেষ্টা করি।আজ কে বিসমিল্লাহ্‌ খান শোনার সময় বিকাশের ফোন পাই।অন্য কেউ হলে এড়ানো যেতো।
শুভ্রা অধৈর্য হয়ে আবার জিজ্ঞেস করল,নতুন কিছু লেখছো না কেন?আমি হেসে উত্তর দিলাম,মাথা তে নতুন কোন আইডিয়া আসছে না।
বিকাশ মনে হয় আমার ব্যাপার টা আচ করতে পারল।বিকাশ বলল,যখন লেখার হবে তখন এমনিতেই লেখতে পারবি।এখন জোর করে লাভ কি।আমি ছোট করে বললাম,আমি ও তাই ভাবছি।
শুভ্রা এতক্ষণ আমাদের কথা শুনছিলো।আমার আর বিকাশের নীরবতার সুযোগে শুভ্রা গান ধরলো "কতবার ভেবেছিনু আপনা ভূলিয়া"।
গান শেষ হয়েছে।শুভ্রা চা খাচ্ছে।আমি কাপের অর্ধেক টা খেয়ে শুভ্রা কে দিয়েছি। বিকাশ বলল,একটা ব্যাপার খেয়াল করেছিস?আমরা বাংগালীরা ফুল,ফল,লতা পাতার বাইরে চিন্তা করতে পারি না।আমরা শিল্প সাহিত্য কে প্রেম ভালোবাসার সমার্থক বানিয়ে ফেলেছি।সাহিত্য এখন মন কে যোগায় বেশি ভাবায় কম।
শুভ্রা প্রতিবাদ করল,বাঙ্গালীদের ইমোশন কে তুই কোন ভাবেই আন্ডারইস্টিমেট করতে পারো না।আমরা আবেগ কে ক্যাপিটালাইজ করতে পেরেছিলাম বলেই একাত্তুরে নরম হাতে শক্ত রাইফেল ধরেছিলাম।আমি ও এবার আলোচনা তে অংশ নিলাম,আমরা কোন সময় ই আবেগ দিয়ে স্বাধীন হই নি।আমাদের মুক্তির দরকার ছিল টাকার জন্য,দুই বেলা ঠিক মতন খাওয়ার জন্য।আদর্শ,নীতি সব তো এসেছে পরে।অশিক্ষিত চাষার দেশে রবীন্দ্রনাথের জায়গাতে ইকবাল আসলো কিনা এতে তাদের রেশমি চুল ছেড়া যায় না।
বিকাশ চটে গেল।কঠিন কিছু বলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

সে মুহুত্বেই শুভ্রা বলল,দানিয়েল এখন কি সুলতান ভাইয়ের চা পাওয়া যাবে?।গিয়ে দেখতে হবে,বলে আমি উঠে দাঁড়ালাম।

২।
রাত তিনটে বাজে।বোতলের হইস্কি এখনো তলা তে পৌচ্ছায় নি।ফ্রিজে আর বরফ নেই।আমি পর পর দুই প্যাগ র' খেলাম।কিছু দিন ধরে মদের প্রতি আসক্তি চক্রাকারে বেড়েই চলছে।বেশ কয়েক দিন আগে বিকাশ আর শুভ্রা আমার এখানে এসেছিল।সেই দিন এক বোতল হইস্কি কিনেছিলাম।তারা কেউই দুই প্যাগের বেশি মদ খায় নি।প্রথম দিকে মদ খেলে হ্যালুসিনেশন হতো।খালি ঘরে কবি সাহিত্যিকদের আনাগোনা হতো।তাদের সাথে কথা হতো।চার পাচ ঘন্টা মদের ঘোর থাকতো।কিন্তু এখন সে রকম কিছুই হয় না।পুরো ফ্লাটে কয়েকটা টিকটিকি, পাতি ইঁদুর ছাড়া কোন জীবন খুঁজে পাওয়া যাবে না।'আলকেমিষ্ট'পড়ে সময় কাটানো যায়।রাত কাটানো যায় না।একা রাতে মোৎজার্ট ও তার আবেদন হারায়।পরকীয়া করা বাম হাতটা ও কাহিল হয়ে পড়ে একা রাতে।আমার রাতটা একা না ও হতে পারতো।একটা সঙ্গীনী খুঁজে বের করা কঠিন হতো না।কিন্তু ইচ্ছে হয় নি।আমি আমার নিজের দায়িত্ব পালন করতে আগ্রহী না।অন্য কারো দায়িত্বর চিন্তা করতে ও ভয় হয়।যখন বিরিশিরি থেকে ফিরে আসি তখন ভেবেছিলাম সুস্থ হয়ে নিজেকে নতুন করে সাজাবো।অন্য সবার মতন।ভালো একটা চাকরীর খোজ করবো।দরকার হলে তদবিরের জন্য মামার কাছে যাবো।কিন্তু কিছুই করা হয় নি।ইউ এস ডি ভাঙানো টাকা দিয়ে বই কিনি,মদ কিনি,সিগারেট কিনি।কাজের মাসির টাকা দেই।ভাড়া দিতে হয় না।বাবা মা নিউইয়র্ক যাওয়ার আগে নিজেদের ফ্লাট করতে পেরেছিলেন।নতুন ফ্লাটে বেশি থাকতে পারেন নি তারা।তাদের ভিসা এসে পড়েছিল।এখন আমি একাই এই ফ্লাটে থাকি।সম্পূর্ণ একা থাকি।ছোট কালে বড্ড ভীতু ছিলাম,হয়তো এখনো রয়ে গেছি।কিন্তু তারপর ও নিজস্ব একাকিত্ব নিয়ে চার রুমে ফ্লাটে

বাইশ ঘন্টা বেচে থাকি...
বাইশ ঘন্টা বেচে থাকি শব্দের অবলম্বনে..
সাহিত্যের অবলম্বনে...
সাহিত্য আমাকে শেখায় একা থাকতে ...
শেখায় সমাজ থেকে বিমুখ হতে...
শেখায় রাত তিনটে বাজে মদ্যপ অবস্থায় ডাইরি লেখতে...

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৩:৩৩

শ্রাবণধারা বলেছেন: ইন্টারেস্টিং লেখা। আপনাদের তিন বন্ধুর আলোচনা ভালো লাগলো । জানিনা নিছক গল্প কি না, তবে বাস্তবে এমন হলে আপনাদের বন্ধুতা শুভ হোক ।
আর অশিক্ষিত চাষার দেশে রবীন্দ্রনাথ আসাই তো যুক্তিযুক্ত তাই না ? অবশ্য ইকবাল সম্পর্কে আমার জানাশোনা নেই, জানার ইচ্ছাও তেমন নেই ...।

শুভকামনা ।

২৮ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:২৭

নির্বাক স্বপ্ন বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ সময় নিয়ে পড়ার জন্য।আপনার জন্যও শুভ কামনা রইল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.