![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মারা যাবার আগে তার শেষ কিছু স্ট্যাটাস !
Tahmida Jannat নামের এই মেয়েটা কিছুদিন
আগে মারা গেছে ক্যানসারে । তার ফেসবুক
আপডেটগুলো একজন শেয়ার করেছে ।
পড়ে শেয়ার না করে পারলাম না । বাস্তবতা কি
জিনিস, তা দেখিয়ে দিয়ে গেলো......
৭-৩-২০১৩.........
আজ আমার ক্যান্সার জীবনের সপ্তম দিন।
খবরটা বাবা মা আমাকে দেয়ার সাহস করে নাই ।
সারিন আমাকে জানায় আমার লিউকেমিয়া । কিভাবে
নিব ব্যাপারটা বুঝতে পারছিলাম না । আমিতো
ক্যানসারকে চাই নাই । তাহলে সে কেন
আসলো আমার কাছে । আমিতো অন্য
কাউকে চেয়েছিলাম...
যাহা পাই তাহা চাইনা ।
১৩-৭-২০১৩.........
শেষ পর্যন্ত স্কুলে যাওয়াও বন্ধ হল আমার.. ।
ব্লিডিং বেড়ে যাচ্ছে । কি অদ্ভুত । একসময়
জ্বরের ভান করে পড়ে থাকতাম । আর এখন
স্কুলে যাওয়ার জন্য সুস্থ থাকার অভিনয় করতে হয়
। পোয়েটিক জাস্টিস ।
ক্যান্সার মনে হয় একটা মানুষের অতীতের সব
খোজ খবর নিয়ে আসে । এই যে একসময়
বৃষ্টি ভালো লাগত না । কিন্তু এখন যেন
বৃষ্টিকেই আপন মনে হয় । রোদ অসহ্য
লাগে । রোদ আমাকে আমার অক্ষমতার কথা
মনে করিয়ে দেয় ।
২২-৯-২০১৩.........
আজ আমার বন্ধুরা আমাকে দেখতে এসেছিল ।
ঐশি, মৌমিতা,সানি, রিয়ন । অনেকদিন পর একটা
ভালো সময় কাটালাম । কিন্তু কোথায় যেন সুরটা
কেটে গেছে । আমি জানি ওরা আমায় প্রচন্ড
ভালোবাসে । সানি আমার চোখের দিকে
তাকাচ্ছিল না। লজ্জায় বোধহয় । সম্পর্কটা শেষ
হয়েছে প্রায় তিনমাস । আমার ক্যান্সারের কথা
শুনে সানিই আস্তে আস্তে দূরে সরে যায় ।
আমি জানি ও আর মৌমিতা প্রেম করা শুরু করেছে
। খারাপ লেগেছে ওরা আমাকে খোলা মনে
ব্যাপারটা জানালেই পারত। সত্যি কথা শোনার অধিকার
কি থাকেনা একজন ক্যন্সার রোগীর । সবাই
এমন অভিনয় করে কেন ?
১৬-১-২০১৪.........
অনেকদিন লিখিনি । অনেক দেরি হয়ে গেছে
। রোগটা আমাকে গ্রাস করে ফেলছে ।
ইদানিং সানিকে খুব মনে পড়ে । ওকে ফোন
দেই ধরেনা । ক্যান্সার তো ছোঁয়াচে না ।
তবে কেন এত অবহেলা । আজকাল রিসানের
সাথে কথা বলে সময় কাটে আমার। ছেলেটার
সাথে আমার ফোনে পরিচয় । কোন শর্ত
ছাড়াই ভালোবাসে আমায় । কিন্তু আমার কিছু করার
নেই । একজন ক্যান্সার রোগীর কাউকে
ভালোবাসার কিংবা কারো ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার
নেই ।
২৬-১-২০১৪.........
দ্বিতীয় কেমো দিয়ে বাসায় আসলাম । চুলের
ব্যপারে সবসময় একটু বেশি খুত খুতে ছিলাম
আমি । নতুন নতুন ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু কন্ডিশনার
কিনতাম । এখন আর ওসবের প্রয়োজন হয়না ।
চুলই নেই, শ্যাম্পু দিয়ে কি করব । কাজের
বুয়াকে বলে ড্রেসিং টেবিলটাকে ঘর থেকে
বের করে দিয়েছি । আয়নায় তাকাতে ভালো
লাগেনা । এদিকে বাবা মার মধ্যে ঝগড়া বেড়েই
চলেছে দিন দিন । এই সম্পর্ক বেশিদিন টিকবে
না আমি জানি । ওইদিন মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে
দেখি বাবা আমার পায়ের কাছে বসে কাদছে ।
ভালোবাসার বিয়ের এ কি পরিণতি । ভালোবাসার
থেকে বোধহয় ক্যান্সারও ভালো...
২-২-২০১৪.........
২৬ ঘন্টা পর আমার জ্ঞ্যান ফিরল । রিসানের সাথে
ঝগড়া করলাম অনেকক্ষন । ওর সাথে ঝগড়া
করতে আমার ভালো লাগে । ঝগড়া করার কেউ
থাকা লাগে জীবনে । না হলে বেঁচে থাকাটাই
বৃথা...
১৩-৩-২০১৪.........
গত ৪৮ ঘন্টায় আমায় নিয়ে যমে ডাক্তারে টানাটানি
হয়েছে । আমি আমার সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা
করেছি ডাক্তাররা যাতে জিতে । কিন্তু জানি শেষ
পর্যন্ত জয়টা ক্যান্সারের হবে । লিখার শক্তি
পাচ্ছিনা...
সানিকে অনেক মিস করছি । যদিও মিস করাটা উচিত না
। ক্যান্সার রোগীদের কাউকে মিস করার
অধিকার নেই...
২৫-৫-২০১৪.........
এই লিখাটাই বোধহয় আমার শেষ লেখা হতে
যাচ্ছে । শেষ শক্তিটুকু জমিয়ে লিখাটা লিখছি ।
আমার রেখে যাওয়া জিনিসের মধ্যে ডায়রিটা
রিসানের ভাগে পড়েছে । ছেলেটার মধ্যে
মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর ঈশ্বর প্রদত্ত
ক্ষমতা আছে । ও অনেক ভালো থাকুক ।
লিখতে লিখতে চোখের কোণে জল
জমে একফোটা । এই জলটা কার জন্য । জানিনা ।
খুব মিস করব । বাবা মাকে, আমার ছোট্ট
বোনটাকে । বন্ধুদের মিস তো করবই । সানি
ভালো থাকুক । স্কুলের সামনে যে মামাটা আচার
বিক্রি করত, তাকেও মিস করব অনেক । আচ্ছা,
স্বর্গে কি আঁচার বিক্রি হয় । মনে হয়না ।
আরেকটা দিন বেঁচে থাকার শখ ছিল ।
আফসোস । যাহা চাই তাহা পাইনা ।
অবশেষে মে মাসের ২৭ তারিখে তার যুদ্ধটা
শেষ হয়...
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:০৮
Msd Sagor বলেছেন: লিখাটা পড়ে অনেক খারাপ লাগছে, বাস্তবতা যে এমন হয় সেটা নিজেদের সাথে না হলে বুঝা যায় না। দোয়া করি মেয়েটি জেনো জান্নাতবাসী হয়