নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বাভাবিক,সরল জীবন স্বাফল্যের উৎস

ভবঘুরে যাযাবর

IF YOUR ACTIONS INSPIRE OTHERS TO DREAM MORE, LEARN MORE, DO MORE AND BECOME MORE-YOU ARE A LEADER

ভবঘুরে যাযাবর › বিস্তারিত পোস্টঃ

আট বছর আগের একদিন /জীবনানন্দ দাশ…

২১ শে মে, ২০১৩ সকাল ১০:১২

শোনা গেলো লাশকাটা ঘরে

নিয়ে গেছে তারে;

কাল রাতে - ফাল্গুনের রাতের আঁধারে

যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ

মরিবার হলো তার সাধ।

বধূ শুয়ে ছিলো পাশে - শিশুটিও ছিলো;

প্রেম ছিলো, আশা ছিলো - জোৎস্নায়, - তবু

সে দেখিল

কোন ভূত? ঘুম কেন ভেঙে গেলো তার?

অথবা হয়নি ঘুম বহুকাল -

লাশকাটা ঘরে শুয়ে ঘুমায় এবার।

এই ঘুম চেয়েছিলো বুঝি !

রক্তফেনামাখা মুখে মড়কের ইঁদুরের মতো ঘাড়

গুঁজি

আঁধার ঘুজির বুকে ঘুমায় এবার;

কোনোদিন জাগিবে না আর।

‘কোনোদিন জাগিবে না আর

জানিবার গাঢ় বেদনার

অবিরাম - অবিরাম ভার

সহিবে না আর - ‘

এই কথা বলেছিলো তারে

চাঁদ ডুবে চলে গেলে - অদ্ভুত আঁধারে

যেন তার জানালার ধারে

উটের গ্রীবার মতো কোনো-এক

নিস্তব্ধতা এসে।

তবুও তো প্যাঁচা জাগে;

গলিত স্থবির ব্যাং আরো দুই মুহূর্তের

ভিক্ষা মাগে

আরেকটি প্রভাতের ইশারায় - অনুমেয় উষ্ণ

অনুরাগে।

টের পাই যূথচারী আঁধারের গাঢ় নিরুদ্দেশে

চারিদিকে মশারির ক্ষমাহীন বিরুদ্ধতা;

মশা তার অন্ধকার

সঙ্ঘারামে জেগে থেকে জীবনের স্রোত

ভালোবাসে।

রক্ত ক্লেদ বসা থেকে রৌদ্রে ফের উড়ে যায়

মাছি;

সোনালি রোদের ঢেউয়ে উড়ন্ত কীটের

খেলা কতো দেখিয়াছি।

ঘনিষ্ঠ আকাশ যেন - যেন কোন বিকীর্ণ জীবন

অধিকার করে আছে ইহাদের মন;

দূরন্ত শিশুর হাতে ফড়িঙের ঘন শিহরণ

মরণের সাথে লড়িয়াছে;

চাঁদ ডুবে গেলে পর প্রধান আঁধারে তুমি অশ্বথের

কাছে

এক গাছা দড়ি হাতে গিয়েছিলে তবু একা - একা;

যে জীবন ফড়িঙের, দোয়েলের - মানুষের

সাথে তার হয় নাকো দেখা

এই জেনে।

অশ্বথের শাখা

করেনি কি প্রতিবাদ? জোনাকির ভিড়

এসে সোনালি ফুলের স্নিগ্ধ ঝাঁকে

করেনি কি মাখামাখি?

থুরথুরে অন্ধ প্যাঁচা এসে

বলেনি কি : ‘বুড়ি চাঁদ

গেছে বুঝি বেনো জলে ভেসে?

চমৎকার! -

ধরা যাক দু -একটা ইঁদুর এবার!’

জানায়নি প্যাঁচা এসে এ তুমুল গাঢ় সমাচার?

জীবনের এই স্বাদ - সুপক্ব যবের ঘ্রাণ

হেমন্তের বিকেলের -

তোমার অসহ্য বোধ হলো;

মর্গে কি হৃদয় জুড়োলো

মর্গে - গুমোটে

থ্যাঁতা ইঁদুরের মতো রক্তমাখা ঠোঁটে!

শোনো

তবু এ মৃতের গল্প; - কোনো

নারীর প্রণয়ে ব্যর্থ হয় নাই;

বিবাহিত জীবনের সাধ

কোথাও রাখে নি কোন খাদ,

সময়ের উর্ধ্বতনে উঠে এসে বধূ

মধু - আর মননের মধু

দিয়েছে জানিতে;

হাড়হাভাতের গ্লানি বেদনার শীতে

এ জীবন কোনোদিন কেঁপে ওঠে নাই;

তাই

লাশকাটা ঘরে

চিৎ হয়ে শুয়ে আছে টেবিলের’পরে।

জানি - তবু জানি

নারীর হৃদয় - প্রেম - শিশু - গৃহ - নয় সবখানি;

অর্থ নয়, কীর্তি নয়, স্বচ্ছলতা নয় -

আরো এক বিপন্ন বিস্ময়

আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে

খেলা করে;

আমাদের ক্লান্ত করে;

ক্লান্ত - ক্লান্ত করে;

লাশকাটা ঘরে

সেই ক্লান্তি নাই;

তাই

লাশকাটা ঘরে

চিৎ হয়ে শুয়ে আছে টেবিলের ‘পরে।

তবু রোজ রাতে আমি চেয়ে দেখি, আহা,

থুরথুরে অন্ধ পেঁচা অশ্বথের ডালে বসে এসে,

চোখ পালটায়ে কয় : ‘বুড়ি চাঁদ

গেছে বুঝি বেনো জলে ভেসে?

চমৎকার !

ধরা যাক দু - একটা ইঁদুর এবার -’

হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজও চমৎকার?

আমিও তোমার মতো বুড়ো হব -

বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব

কালীদহে বেনো জলে পার;

আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের

প্রচুর ভাঁড়ার।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.