নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জন্মের সময় আমি খুব কেঁদেছিলাম, এখন আমার সবকিছুতেই হাসি পায়। আমি জন্মের প্রয়োজনে ছোট হয়েছিলাম, এখন মৃত্যুর প্রয়োজনে বড় হচ্ছি ।

আজ আমার হারিয়ে যেতে নেই মানা।।

নির্লিপ্ত কাব্য

নির্লিপ্ত কাব্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি কেবলই মেঘ ছু’তে গিয়েছিলাম - পার্ট-১

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:২৬

১)

অনেকক্ষন ধরে রুপক আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। নিজেকে চিনতেই পারছে না সে। এ কয়দিন ব্যাস্ততার জন্য দাড়ি কামানো হয়নি। চুলগুলোও বেশ বড় হয়ে গেছে। আসলে ব্যাস্ততা বলতে তেমন কিছুই না। বেকার মানুষদের নানা অকাজে ব্যাস্ত থাকতে হয়। সেও তেমন কোনো একটা অকাজেই ব্যাস্ত ছিল। আয়নার ভেতর থেকে কে যেন তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। কেউ তার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকলে খুব রাগ হয় তার। সে কোনো রুপবতী মেয়ে নাকি ? সে একটা ছেলে তার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকার কি আছে? আয়নার ভেতরের মানুষটাকে কষে একটা চর দিতে পারলে ভাল লাগত। রুপক মনে মনে ঠিক করল যেভাবেই হোক ঐ মানুষটাকে একটা চর দিতেই হবে। সে আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেই নিজের গালে কষে একটা চড় দিল। তারপর চোখ বন্ধ করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। গাল ভর্তি দাড়িওয়ালা বিভৎষ্য লোকটা এখন আর তার দিকে তাকিয়ে নেই। এই ভেবে তার ভাল লাগছে।





বারান্দায় কয়েকটা হাসনাহেনা ফুলের গাছ সুন্দর ভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এক কোনায় একটা ইজি চেয়ার পাতা আছে। আরেক কোনায় একটা খাচাঁর ভেতর দুইটা পাখি ঝুলছে। পাখি দুইটার নাম লাভ বার্ড না কি যেন। তারা একটু পর পর ঝাপ্টাঝাপ্টি করছে। ওসব রুপক’র বাবা রায়হান উদ্দিন’র কাজ। তিনি চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর গাছপালা আর পক্ষীদের নিয়ে ব্যাস্ত সময় পার করছেন। রুপক গরম কফির মগ নিয়ে বারান্দায় চেয়ারে গিয়ে বসল। সকালের উষ্ণ রোদ এসে তার পা ছুয়ে দিচ্ছে। এদিকে টেলিফোন বাজঁছে অনেকক্ষন হল। কিন্তু রুপকের উঠে যেতে ইচ্ছে করছে না। কিছুক্ষন আগে পর্যন্ত চার বার তার বড় বোন নফিজা ফোন করেছে। কোনো কাজের কথা নয় সব অর্থহীন কথাবার্তা বলার জন্য। যেমন - কেমন আছিস ভাই ? কি করছিস ? ইত্যাদি টাইপের বকবক। এবারও নিশ্চয় আপাই ফোন করেছে। রুপক চেয়ার ছেড়ে টেলিফোনের কাছে এগিয়ে গেল। রিসিভারটা তুলে কানে ধরতেই…



- কি রে এতোক্ষন ধরে টেলিফোন করছি শুনতে পাসনি ?

- শুনতে পেয়েছি, কিন্তু ধরতে ইচ্ছে করেনি।

- এটা কেমন কথা ? টেলিফোন ধরতে ইচ্ছে করবে না কেনো?

- এমনি ধরতে ইচ্ছে করেনি।

- তোর শরীর ঠিক আছে তো ?

- হুম ঠিক আছে।

- কি করছিলি ?

- বদনা ভরে মদ গিলছিলাম।

- একটা থাপ্পর দিয়ে সবগুলো দাঁত ফেলে দেব বেয়াদপ। আমি তোর বড় বোন না ? বড় বোন মায়ের মত। তাদের সাথে সম্মান দিয়ে কথা বলতে হয় এটা জানিস না ? সরি বল।

- সরি।

- এইতো ভালো ছেলে। এই শোন! তখন বলতে ভুলে গেছি…তোর দুলাভাই রাতে আসার সময় আমার জন্য একটা সাদা শিফনের শাড়ি এনেছে। কি যে সুন্দর! তুই না দেখলে বিশ্বাসই করবি না।

- আপা আমি বিশ্বাস করছি। আর কোনো কাজের কথা থাকলে বল ।

- এমন করছিস কেনো! শোন না…তোর দুলাভাই শাড়ির সাথে রঙ মিলিয়ে অনেকগুলো কাঁচের চুড়ি আর টিপও এনেছে। অনেক রাত হয়ে গেছিলতো তাই কাচা ফুল আনতে পারেনি।

- আপা তুই ফোনটা রাখতো।

- তুই রেগে যাচ্ছিস কেনো?

- কেনো রেগে যাচ্ছি বুঝতে পাচ্ছিস না ?

- নাহ ! অকারনে কেনো রেগে যাচ্ছিস ?

- তুই একটু পর পর ফোন করে অর্থহীন বকবক করছিস। আর আমার সেটা বিষ পানের মত নীরবে গিলতে হচ্ছে। এজন্য রেগে যাছি।

- তুই এ কথা বলতে পারলি! যা তোকে আমি আর জীবনেও ফোন করব না।

- থ্যাংক ইয়্যু আপা। তোর ফোন করতে হবে না। মাস দুয়েক পর পর আমরাই তোর খবর নেব। এখন রাখি আপা?

- জানিনা…

- না জানলেও চলবে। আমি ফোনটা রাখলাম।



রুপক রিসিভার নামিয়ে রাখল। কফিটা ঠান্ডা হয়ে গেছে। ঠান্ডা কফি খেতে কেমন লাগে কে জানে। সে ঠান্ডা কফির মগ নিয়ে আবারও বারান্দায় গিয়ে বসল। কফির মগে চুমুক দিয়ে সে মুগ্ধ! ঠান্ডা কফি এত মজার হয়। রুপক চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করল। এখন কিছুটা সময় হাসনাহেনার মিষ্টি গন্ধে মাতাল ভাবে কাটুক।







ভাইয়া একটা চিঠি এসেছে। রুপক চোখ খুলল। টুনি হাতে একটা চিঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে রুপকের মামাতো বোন। গ্রামের বাড়ি থেকে এসেছে। পড়াশোনায় অসম্ভব ভালো। টুনির ইচ্ছা সে শহেরে কোনো একটা কলেজে ভর্তি হবে। রুপকের মা হোসনে আরা বেগম টুনিকে এখানে নিয়ে এসেছেন। একটা ভাল কলেজে ভর্তিও করিয়ে দিয়েছেন। টুনি এখন এখান থেকেই পড়াশোনা করছে। টুনি খুবই মিশুক টাইপের একটা মেয়ে। যে কারো সাথে মুহুর্তের মাঝেই মিশে যাওয়ার অসীম ক্ষমতা তার। ওকে দেখলেও গ্রামের আটঁ-দশটা মেয়ের মত মনে হয়না। শহুরে মেয়েদের মতই চলাফেরা, কথাবার্তায় অল্প কয়দিনেই অভ্যস্থ হয়ে গেছে। ওর চেহারের মাঝে এক ধরনের মায়া আছে। রুপকের ছোট ভাই-বোন নেই। থাকলে ওদের চেহারা কেমন হত কে জানে! রুপকের কেনো জানি টুনিকে দেখলেই তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে ইচ্ছে করে। এই মেয়েটাকে সে খুবই পছন্দ করে। এইটা কার চিঠি রে টুনু ?

ভাইয়া আমার নাম টুনি। তুমি টুনু বল কেনো ?

আদর করে বলি। আচ্ছা যা আর বলব না।

আদর করে বললে ঠিক আছে। তোমাকে আরো একবার টুনু বলার পারমিশন দিলাম।

ওরে পিচ্চি মেয়ে দে চিঠিটা কার দেখি। রুপক টুনির হাত থেকে খামটা নিল। খামে প্রাপকের নাম নেই। শুধু ঠিকানা লেখা। এদিকে পেরকের নাম লেখা রুপন্তি। কিন্তু কোনো ঠিকানা নেই। আশ্চর্য! এমন চিঠি কে পাঠাল?

ভাইয়া এই রুপন্তিটা কে শুনি?

এই রুপন্তিটা কে আমি কি করে জানব? চিঠিতো আমার নামে আসেনি।

ভাইয়া চিঠি তোমার নামে আসেনি তা ঠিক। কিন্তু আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে চিঠিটা তোমার কাছেই লেখা।

আমার কাছে চিঠি লিখার মত এমন কেউ নেই বুঝলি ? আচ্ছা তোর আজ কলেজ নেই? কয়টা বাজে খেয়াল আছে?

ভাইয়া আজতো শুক্রবার।

তাই নাকি! আজকাল দেখি কিছুই মনে থাকে না আমার। মাথা বো্ধয় পুরোটাই গেছে। আরো এক বালতি কফি খেতে পারলে মনে হয় ঠিক হয়ে যেত।

এই মাত্ররই না কফি খেলে। আবার!! আমি আনতে পারব না।

প্লিজ নিয়ে আয়না। খেতে খেতে তোর সাথে গল্প করি।

চিঠির গল্প করবে ?

হুম।

তাহলে যাচ্ছি। হুহ !

এই টুনু কফিটা কিভাবে আনবি শুনে যা।

এতে শোনার কি আছে? অন্য সময় যেভাবে আনি এখনও সেভাবেই আনব।

আরে না। সে ভাবে আনলে হবে না। অন্যভাবে আনতে হবে। শোন গরম কফির মগ তিন মিনিট ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা হলে তারপর আনবি।

তাহলে গরম করার দরকার কি? ঠান্ডা পানিতেই ন্যাসকাফ বানিয়ে আনি।

ঠান্ডা পানিতে আনলে হবে না। গরমটাই আস্তে আস্তে ঠান্ডা হতে হবে।

ভাইয়া তোমার পাগলামী দেখলে আমার মাঝে মাঝে মরে যেতে ইচ্ছে করে।

ইচ্ছে করলে মরে যাবি কোনো সমস্যা নেই। আমি পরে তোকে কয়েকটা মরার সহজ টেকনিক শিখিয়ে দেব। এখন যাতো কফি নিয়ে আয়।

হুহ…!

টুনির হুহ করে মুখ বাকাঁনোর দৃশ্যটা দেখতেও রুপকের খুব ভাল্লাগে।





হলুদ খামের উপর “রুপন্তি” লেখা নামটা রুপকের পছন্দ হয়েছে। কিন্তু খামের ভেতরে কি লেখা আছে এখনো সে কিছুই জানে না। সে চিঠিটা পড়বে কি পড়বে না বুঝতে পারছে না। কারন চিঠিটা কার কাছে লেখা তা সে জানে না। রুপক ভাবতে লাগল রুপন্তি নামে তার পূর্ব পরিচিত কেউ আছে কিনা……

ভাইয়া এই নাও তোমার ঠান্ডা কফি।

থ্যাংক ইয়্যু টুনু। ঘর থেকে মোড়াটা এনে বস। রুপক কফির মগে চুমুক দিল। এই কফিটা আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। এর পর থেকে কফি খেলে এভাবেই খেতে হবে।

টুনি মোড়া এনে অনিকের পাশে বসল। ভাইয়া তুমি এখনো চিঠিটা পড়নি ?

না পড়ি নি। পড়ব কিনা ভাবছি।

সামান্য একটা চিঠি পড়া নিয়ে এতো ভাবার কি আছে?

অনেক কিছুই আছে। চিঠিটা কার কাছে লেখা হয়েছে সেটা আমি জানিনা। ধর এখন চিঠিটা আমি পড়লাম। পড়ে দেখলাম যে এমন একজনের কাছে চিঠিটা লেখা হয়েছে যেটা আমার পড়া উচিত হয়নি। যেমন ধর চিঠিটা বাবার প্রাক্তন প্রেমিকা বাবার কাছে লিখেছে। কিন্তু ভুল বশত আমি পড়ে ফেলেছি। তখন আমার নিজের কাছেই খারাপ লাগবে।

ভাইয়া তোমার কাছে সব সময় শুধু দুষ্টোমি। ভাল্লাগে না !! চিঠিটা না পড়লে বুঝবে কি করে কার কাছে লেখা এই চিঠি। আর যদি না-ই জানো তাহলে যার চিঠি তার কাছে পৌছে দেবে কি করে ?

তোর কথায় যথেষ্ট যুক্তি আছে। কিন্তু…

আহ! ভাইয়া পড়তো। তোমার সব কিছুতেই ‘কিন্তু’ খোঁজার একটা বদ-অভ্যাস হয়ে গেছে।

ঠিক আছে পড়ছি।



প্রিয় বন্ধু তুমি,

শুরুতে জানাই কাঠ গোলাপের শুভ্র শুভেচ্ছা। কাঠ গোলাম আমি কখনো দেখিনি। আমার বন্ধু ফারীহা যখন আমাকে চিঠি লিখে তখন এই কথাটা লিখে। জানো, আমার আপু কাঠ গোলাপ দেখেছে। এটা নাকি গোলাপ ফুল থেকে আরো অনেক সুন্দর। আমি আপুকে বলেছি আবার যখন দেখবে তখন যেন আমাকেও দেখায়। আপু বলেছে আচ্ছা। আমার আপুর নাম রুপন্তি। আপু অনেক বড় ক্লাসে পড়ে। আর আমি ক্লাস থ্রি’তে পড়ি। আমার নাম হেমন্তি। হেমন্তি নাম আমার পছন্দ না। আমার কি কি ভালো লাগে জানো ? আমার ছবি আকঁতে ভালো লাগে। স্কুলে যেতে ভালো লাগে। কার্টুন দেখতেও ভালো লাগে। কিন্তু আপুর জন্য আমি একদিনও ডোরেমন দেখতে পারিনা। আমি ডোরেমন দেখতে গেলে আপু শুধু বকাবকি করে। তখন আপুর উপর আমার খুব রাগ হয়। রাগ হলে আমি আপুর নাম দিয়ে চিঠি লিখি। আপুর ঘরে যে একটা টেলিফোন আছে না। তার নাম্বার আমি মুখস্ত করে রেখেছি। চিঠি লিখলে এই নাম্বার আমি লিখে দেই। যাতে আমার বন্ধুরা আপুকে খুব করে বকে দিতে পারে। ০২৪৭৫৪৭৮৩। তুমিও আপুকে বকে দিও।



Eতি

আনিকা আফরোজ হেমন্তি।

ক্লাস থ্রি

রোল নং ০২






হি হি হি………

পাগলের মত হাঁসির কি হল ?

ভাইয়া তোমার কাছে ক্লাস থ্রিতে পড়ুয়া একটা বাচ্চা মেয়ে চিঠি লিখছে। তাও আবার বড় বোনের নামে নালিশ করে এজন্য হাসঁছি। হি হি হি…

আজ কালের পিচ্চিগুলাও যা পাকা হইছে না। এই থাম! এই ভাবে কেউ হাসে ?

ভাইয়া এইটুকু মেয়ের মাথায় আপুকে শাস্তি দেয়ার এমন আইডিয়া এল কোত্থেকে? এইটা ভেবেইতো আমার হাসি থামাতে পারছিনা। হি হি হি……





২)

রুপক তাকিয়ে আছে পাখি দুইটার দিকে।

টুনি বলল ভাইয়া এখন কি করবে ?

ভাবছি হেমন্তির দেয়া নাম্বারটায় ফোন করব।

কি! তুমিও পাগল হয়ে গেলে ?

না হইনি। তবে পিচ্চিটার সাথে কথা বলে পাগল হতে পারি কিনা দেখি। আমার ধারনা ঐ পিচ্চি মেয়েটা একটা ইন্টারেষ্টিং ক্যারেক্টার হবে।

তুমি কি এখনই ফোন করবে ?

না। পরে একসময় করব।

তাহলে এখন কি করবে ?

এখন কবিতা শুনব। মহাদেব সাহা’র “চিঠি দিও” এই কবিতাটা তুই পারিস না ?

আমি কবিতা টবিতা কিছু পারি না।

গাদী কোথাকার ! এসব পারবি কেনো? পারিসতো শুধু ফোকঁলা দাঁতে হি হি করে হাসতে।

ভাইয়া ভালো হবে না বলে দিচ্ছি !

যা কবিতাটা আমিই তোকে শুনাচ্ছি। ভালো করে শুনে রাখ………



করুণা করে হলেও চিঠি দিও, খামে ভরে তুলে দিও

আঙ্গুলের মিহিন সেলাই

ভুল বানানেও লিখো প্রিয়, বেশি হলে কেটে ফেলো তাও,

এটুকু সামান্য দাবি, চিঠি দিও, তোমার শাড়ির মতো

অক্ষরের পাড়-বোনা একখানি চিঠি।

চুলের মতন কোনো চিহ্ন দিও বিস্ময় বোঝাতে যদি চাও ...

বর্ণণা আলস্য লাগে তোমার চোখের মতো চিহ্ন কিছু দিও।




টুনি হুংকার দিয়ে বলল ভাইয়া থামতো। তোমার কবিতা শুনতে ভাল্লাগছে না। তার চেয়ে তোমার ঘর থেকে গিটার এনে দেই। পারলে একটা গান শুনাও। তোমার কবিতার চেয়ে গান ভালো হয়।

কবিতার মাঝখানে গান! অসম্ভব! এখন কবিতার মোডে আছি। গান গাইতে পারব না। তুই চাইলে আমাকে শুনাতে পারিস। কি শুনাবি? “তোমাকে না লেখা চিঠিটা ডাক বাক্সের এক কোণে” এই গানটা?

আমি পারব না। হুহ…

তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। তুই থাক আমি বরং আপার বাসা থেকে ঘুরে আসি।

তুমি এখন নাফিজা আপুর বাসায় যাবে ?

হুম।

এই অবস্থায় !

তুই আমার চুল দাড়ির কথা বলছিস তো ?

হ্যা। তোমার মুখটা কেমন বাদরের মত লাগছে আয়নায় দেখেছ ?

হুম দেখেছি। অনেক সময় নিয়ে দেখেছি। এবং মুগ্ধও হয়েছি। কারন এমন কবি ভাবের ছেলে সচরাচর দেখা যায় না।

কি হয়েছো বললে! তোমার এই বাদর মার্কা মুখ দেখে মুগ্ধ হয়েছ ? হি হি হি……

হ্যা হয়েছি। ভালো করে দেখ আমাকে এখন কবি নির্মলেন্দু গুন’র মত মনে হচ্ছে না ? ব্যবধানটা শুধু আমার চুল কালো আর কবির চুল সাদা। উনার দাড়িও সাদা। তবে ব্যাপার না। বয়সকালে আমারও এমন হয়ে যাবে। তখন কবির মত আমিও এই টাইপের একটা কবিতা লিখে ফেলব।



আমার ঈশ্বর জানেন, আমার চুল

পেকেছে তোমার জন্য,

আমার ঈশ্বর জানেন, আমার জ্বর

এসেছে তোমার জন্য,

আমার ঈশ্বর জানেন, আমার মৃত্যু

হবে তোমার জন্য ।

তারপর ঐ ঈশ্বরের

মতো কোন একদিন তুমিও জানবে,

আমি জন্মেছিলাম তোমার জন্য, শুধু

তোমার জন্য ।




ভাইয়া তোমার কবিতা কপচানো বন্ধ করতো। হঠাৎ আপুর বাসায় কেন যাচ্ছ ?

আপা আমার উপর খুব রেগে আছে। ওর রাগ ভাঙ্গাঁতে যাচ্ছি।

তুমি আপুর রাগ ভাঙ্গাঁতে যাচ্ছ! হি হি হি… তোমার এই অবস্থা দেখলে আপু আরো রেগে যাবে।

তাহলে কি আর করা আপাকে আরেকটু রাগিয়ে দিয়ে আসি।

ভাইয়া তোমার কয়দিন পাবনা থেকে ঘুরে আসা উচিত। কারন তুমি একটা পাগল। বড্ড উন্মাদ এইটা জানো?

রুপক টুনির মত মুখ বাকিয়ে বলল জানি। হুহ… সে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়াঁল। বারান্দা থেকে চলে যাচ্ছে সে। টুনি চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে অনিকের দিকে।





ঢাকা শহরে মাটি আর সবুজ কচি ঘাস এই দুই বস্তু দেখা যায়না বললেই চলে। তবে দু-একটা বড় বড় গাছ দেখা যায় এটাই বা কম কিসে! বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টি কোনো আয়োজন ছাড়াই চলে এসেছে। টিপটিপ বৃষ্টির ছোয়ায় গাছের সবুজ পাতাগুলোকে আরো সবুজ লাগছে। সব মিলিয়ে প্রকৃতি এখন নতুন বউ’র মত অপরুপ রুপে সেজেঁগুঁজে বসে আছে নগর বাসীর জন্য কখন তারা বলবে ওয়াও! অপুর্ব…





রুপক রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টির দিনে রিক্সা পাওয়া তার জন্য বিরাট ভাগ্যের ব্যপার। সে কখনও বৃষ্টির দিনে ঘর থেকে বের হলে রিক্সা পায়না। সে কি আরো কিছুক্ষন অপেক্ষা করবে নাকি হেটেই রওয়ানা দিবে বুঝতে পাচ্ছেনা। একটা ছাতা নিয়ে আসলেই হত। কিন্তু তার ছাতি নিয়ে ঘুরা একদম পছন্দ না। তার ধারনা এটা একটা মেয়েলী স্বভাব। কেবল মেয়েরাই কারনে অকারনে ছাতা নিয়ে ঘুরবে। কিন্তু ছেলেরা কখনো ছাতা ব্যবহার করবে না। রুপক বৃষ্টির মাঝেই হাটতে শুরু করল। তার মাথায় মাছির মত একটা গান ভন ভন করেই যাচ্ছে……



বাদলা দিনে মনে পরে ছেলে বেলার গান

বৃষ্টি পরে টাপুর টুপুর নদে এল বান।



যদি ডেকে বলি এসো হাত ধরো

চল ভিজি আজ বৃষ্টিতে……





পেছন থেকে একটা গাড়ি এসে রুপকের পাশে থামল। গাড়ির আয়না উঠানো তাই ভেতরে কে আছে ঠিক বুঝা যাচ্ছে না। দরজা খুলে একটা মহিলা বের হতেই রুপক চিনতে পারল। এটা ইভা। তার স্কুল জীবনের বন্ধু। রুপক বলল আরে ইভা তুমি এখানে কি ব্যাপার?

ছোট মামার বাসায় যাচ্ছিলাম। তোমাকে দেখে দাড়ালাম। কিন্তু তুমি এই বৃষ্টির মাঝে কি করছো ?

রুপক বলল অনেকদিন বৃষ্টিতে ভিজি না তাই ভাবলাম আজ একটু ভিজি।

ইভা বলল তোমার মিথ্যে কথা আমি ধরতে পারি। সত্যি করে বল কোথায় যাচ্ছিলে ? ইভার কোলে একটা বাচ্চা ওয়া…ওয়া… করে কেঁদে উঠল।

রুপক বলল আপার বাসায় যাচ্ছিলাম। তোমার কোলে ছেলে না মেয়ে?

ইভা লাজুক হেসে বলল এটা আমার মেয়ে নাম বিভূর।

রুপক বলল তখন আমার গালে দাড়ি গজায়নি বলে তুমি বলেছিলে যাও আগে তোমার গালে দাড়ি গজিয়ে এসো তারপর ভালবাসার কথা বলবে। আজ আমার গালে দাড়ি গজিয়েছে। সে ফাঁকে তোমার কোলে একটা কন্যা সন্তানও গজিয়ে ফেললে ?

ইভা হকচকিয়ে গেল। সে এমন কথা শুনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলনা। ইভা বলল মা… মা…মানে ?

হা হা হা… আরে বোকা মেয়ে ভয় পেও না। আমি তোমার সাথে একটু দুষ্টামি করছিলাম।

ওহ গড! তাই বল। আমিতো সত্যি সত্যি ভয় পেয়ে গেছিলাম। তোমার দুষ্টামীর স্বভাবটা এখনো যায়নি তাহলে ?

রুপক হাসল। যে হাসির মানে হল “না”। তার দুষ্টামী করার স্বভাবটা এখনো যায়নি।

ইভা বলল তোমার আপত্তি না থাকলে আমার সাথে চল। আমাকে মামার বাসায় নামিয়ে ড্রাইভার তোমাকে পৌছে দেবে।

ধন্যবাদ। আমাকে সামনে ফুলের দোকানটায় নামিয়ে দিলেই চলবে।

ফুলের দোকানে কেনো ?

ফুল কিনব। আমার প্রাক্তন প্রেমিকা আমার কাছে একটা কালো গোলাপ চেয়েছে। লাল গোলাপে আমাদের প্রেম শুরু হয়েছিল। আজ কালো গোলাপ দিয়ে শেষ করে আসব। তারপর অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করে ঘর-জামাই চলে যাব।

ইভা হাসল। বলল তোমার দুষ্টামির স্বভাবটা এবার ছাড়। বয়সতো কম হয়নি।

রুপকও হাসল। বলল চল যাই।





রুপক তার আপার জন্য বেলী ফুলের মালা কিনল। বেলী ফুল আপার খুবই পছন্দ। কিভাবে যেন আপা এই মালাটাকে খোপায় পরে। দুলাভাই আপার জন্য শাড়ি, চুড়ি আর টিপ এনেছে। কিন্তু ফুল আনেনি। এখন আমি বেলী ফুল নিয়ে গেলেই আপার রাগ গলে যাওয়ার কথা।





রুপক ডোর বেল চাপল। তার সাথে সাথেই নাফিজা আপা এসে দরজা খুলে আবার লাগিয়ে দিল। এমন করল কেন ব্যাপারটা বুঝা গেল না। রুপক আবারও বেল চাপল। নাফিজা এসে প্রায় ধমকের মত বলল মাফ করো। এখন ভিক্ষে দিতে পারব না।

রুপকের চোখ কপালে উঠে গেল। তার আপা তাকে ভিক্ষুক বানিয়ে ফেলল!

নাফিজা বলল কি হল কথা কানে যায় নি?

আপাগো ভিক্ষা না দিলে আমি যামুই না।

কি! মগের মল্লুক নাকি ?

না ভাইয়ের মল্লুক। তুই আমাকে চিনতে পারলি না আপা ?

কে!

আমি তোর ভাই। রুপক ।

ও আল্লাহ! তোর এই অবস্থা কেন ?

গোয়েন্দা বিভাগে চাকরি পেয়েছি আপা। একটা অপারেশনে যেতে হবে সে জন্য এ ছদ্মবেস ধরেছি।

সত্যি তুই চাকরী পেয়েছিস!!! আগে বলিস নি কেনো ?

এখন তো বলেছি। এই নে তোর জন্য বেলী ফুল এনেছি।

আল্লাহ! এতো সুন্দর ফুল! কোথায় পেলি রে ?

কোথায় পেলাম সেটা কোনো কথা না। যা তো এক কাপ গরম গরম চা নিয়ে আয়।

ভাই তুই বস আমি এক্ষুনি আনছি।

রুপক সোফায় গিয়ে বসল। সোফার পাশের টেবিলের উপর টেলিফোন রাখা। আপা বস বলেই তার সাজঘরের দিকে ছুটে গেল। এ ফাকে হেমন্তিকে ফোন করা যাক… রুপক নাম্বার টিপে কল করল। দুবার রিং হতেই ওপাশ থেকে মেয়েলী কন্ঠে বলল…



- হ্যালো…

- তুমি হেমন্তি ?

- না। আমি হেমন্তির বড় বোন। কিন্তু আপনি ?

- আমাকে আপনি চিনবেন না। হেমন্তিকে ডাকুন।

- আপনার নামটা অন্তত বলুন।

- বললামতো চিনবেন না। হেমন্তিকে দিন।

- আমি আপনাকে চিনব না। অথচ হেমন্তি ছোট্ট একটা মেয়ে ও আপনাকে চিনবে ?

- চেনারতো কথা। যাইহোক, হেমন্তি ছোট্ট একটা মেয়ে আর আপনি বুঝি খুব বড় মেয়ে ? আমারতো মনে হয় আপনিও ছোট্ট একটা মেয়ে। হয়তো ক্লাস সিক্স কিংবা সেভেনে পড়ছেন।

- কি! আমার কথা শুনে সিক্স সেভেনে পড়ি মনে হয়। হুমমম ?

- তাইতো মনে হয়। তো আপনি কিসে পড়েন শুনি।

- আমি অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্রী।

- তাহলেতো ছোট্ট মেয়ে ঠিকই আছে। আচ্ছা হেমন্তিকে ফোনটা দিন।

- আপনার নাম না বললে দেয়া যাবে না।

- ঠিক আছে বলছি। আমার নাম হেমন্ত।

- হেমন্ত ?

- হুম। হেমন্তি থেকে হেমন্ত।

- আপনি আমার সাথে ফাজলামু করছেন ?

- হুম করছি। কারন আমি ফাজিল একটা ছেলে ।

- সত্যি করে বলুনতো আপনি কে ?

- সেটা না হয় মুখো-মুখি বসেই বলব। হেমন্তি আছে কিনা সেটা বলুন।

- হেমন্তি ঘরে নেই। ছাদে খেলতে গেছে।

- আচ্ছা! আমি তাহলে পরে আবার ফোন করব। এখন ফোনটা রাখি? রুপন্তি…

- আপনি আমার নামও জানেন ?

- ………।

- হ্যালো… হ্যালো…



রুপক রিসিভার নামিয়ে রাখল। আপা সেজেগুজে তার সামনে এসে দাড়াল। কার সাথে কথা বলছিলি ? তোর দুলাভাই ফোন করেছিল ?

না আপা। কেউ ফোন করেনি। আমি নিজেই ফোন করেছিলাম।

কার কাছে ?

একটা মেয়ে। নাম রুপন্তি। অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ে। ওর ভয়েজটা

কি সুইট রে আপা। ভাবছি প্রেমে পড়লে আমি ওর প্রেমেই পরব। কিন্তু এখন মেয়েটাকে দেখব কিভাবে সেটাই ভাবার বিষয়।

আপা হাসছে। মনে হয় আমার কথায় সে খুব মজা পাচ্ছে।

ভাই তুই এতো বড় হয়েছিস। অথচ তোর দুষ্টুমির স্বভাবটা এখনো গেল না।

আপা আমি কিন্তু তোর সাথে মোটেও দুষ্টুমি করছি না। আমি সিরিয়াসলি বলছি যেভাবেই হোক ঐ মেয়েটাকে আমি দেখব। পছন্দ হলে বিয়েও করে ফেলতে পারি। এখন আমি যাই রে আপা। দুলাভাই আসার সময় হয়ে গেছে। এসে আমাকে দেখলে আর যেতে দিবে না।

এখনই যাই কি! রাতে খেয়ে যাবি না ? তোর পছন্দের সব কিছু রান্না করা আছে।

আপা তোর হাতের রান্না যথেষ্ঠ খারাপ। দুলাভাই কি করে যে দিনের পর দিন তোর রান্না সহ্য করছে আমি সেটাই ভাবছি।

তুই এমন কথা বলতে পারলি ?

আপার সামনে বসে থাকতে আর ভালো লাগছে না। তাই মিথ্যে কথা বলতে হচ্ছে। হ্যা পারলাম। এবার নে দরজাটা লাগিয়ে দে আমি চলে যাচ্ছি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৭:৫৫

রেইন ম্যান বলেছেন: ভালো লাগলো । পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ।

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৪৯

নির্লিপ্ত কাব্য বলেছেন: ধন্যবাদ। ২য় পর্ব রাতে দিয়ে দেব।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.