![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঈশ্বরের সাথে মোলাকাতে এসেছি। তার শয়নকক্ষের বাইরে বসার ঘরে অপেক্ষা করছি। ইংরেজিতে বসার ঘরকে ড্রয়িং রুম বলা হলেও এখানে কি ড্র করা হয় তা আমার এখনও জানা হয়নি। বেশ কিছু চিত্রকর্ম আর দামী আসবাবপত্র দিয়ে সাজানো বসার ঘরটা। বেশ কিছু জীবজন্তুর মাথার খুলীও ঝোলানো আছে দেখছি। মাথার ওপরে বিশাল রূপালী ঝুমুর বাতি। আমার এসব চাকচিক্য খুব একটা পছন্দ না। আমি আবার মধ্যবিত্ত সেকেলে স্বভাবের মানুষ। বেনসন আমার ভাগ্যে যোটে না, আমি ডার্বিতেই খুশী। পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে মনের খায়েশে দু-চারটে টান দিতেই ভারী একটা কন্ঠ পেছন থেকে কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করল। "What nonsense are you smoking!!"। আমি ইংরেজি খুব একটা বুঝিনা তাই ভাবলাম সিগারেট খাওয়ার কারণে উনি বিরক্ত হয়েছেন। তবে আমার ঘোলাটে ভাবনা পরিষ্কার হল যখন তিনি নিজের পকেট থেকে একখানা "মার্লবোরো গোল্ড" আমার দিকে এগিয়ে দিলেন। রাজকীয় চেয়ারটায় বসতে বসতে তিনি বলতে থাকলেন, " সিগারেট খাবে খাওয়ার মত খাবে। সিগারেট খাওয়ার ধরণ তোমার রুচি প্রকাশ করে"। ভেবে দেখলাম কথাটা উনি ফেলে দেওয়ার মত বলেন নি। ডার্বি খাওয়ার কারণেই হয়ত উচ্চবিত্ত আর খোলামেলা নারীদের প্রতি সুড়সুড়ি অনুভব করি না। যাইহোক, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বেশ কিছু ঘটনা নিয়ে ঈশ্বর আলাপ করবেন বলে আমায় ডেকেছেন। আমি অবশ্য আলাপ করতে আসিনি। আলাপ করার জন্যে উনি আমাকে কেন বেছে নিয়েছেন সেটা জানতে এসেছি। হঠাৎ ভারী কণ্ঠটা বলে উঠল,"বুঝলে নিভৃত, বড় যন্ত্রণায় আছি আজকাল!"। তার কণ্ঠ এবং চেহারায় যন্ত্রণার কোনো ছাপ নেই। মানে উনি মিথ্যে সিম্প্যাথি নেওয়ার ট্রাই করছেন। ভদ্রতার ভান করে জিজ্ঞেস করলাম "সেটা কেন?"।
-তোমাদের মানুষের চিন্তা শক্তি বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন।
-এটাতো স্বাভাবিক বিষয়। এই বিষয়ে আপমার যন্ত্রণা কেন হচ্ছে?
-কেন হবেনা সেটা বল! চিন্তাশক্তি খুবই খারাপ বিষয়। মানুষ যদি এত বুদ্ধিমান হয়ে যায় তাহলে তাদের ওপর রাজত্ব করা কঠিন হয়ে পড়বে!! আমার ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে তারা!!
-রাজত্ব করা বলতে কর্তৃত্ব খাটানো বোঝাচ্ছেন??
-অন্য অর্থ আছে নাকি?
-অবশ্যই আছে। রাজত্ব মানে প্রভাব বিস্তার করা। সেটা ওপরে নয়, বরং পাশে থেকে। আপনি যেটা চাইছেন সেটাকে আমিই কর্তৃত্বই বলব।
-হা হা হা। তোমার ব্যপারে শোনা কথাগুলো তাহলে সত্য?
-ঠিক বুঝতে পারিনি!!
-বলছিলাম তুমি নাকি আমায় নিয়ে বেশ লিখালিখি কর? আমার প্রতিটা সিদ্ধান্তে তুমি নাকি ভুল খুঁজে পাও?
-আমি একজন স্বাধীন মানুষ। আমার চিন্তাশক্তি স্বাধীন। তাই আমি লিখতেই পারি যা খুশী এবং যে কারও সিদ্ধান্তের গঠন মূলক সমালোচনার অধিকারও আমার আছে।
-অবশ্যই! অবশ্যই! কেন নয়!! তবে দু-একজন মানুষ এমন শিক্ষিত হওয়া ভাল কিন্তু সব মানুষ এভাবে ভাবতে থাকলে তো আমার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে!! তখন দেখা যাবে আমাকে ডার্বি খেতে হবে!
-আপনি বোধহয় আমায় অপমান করলেন?!
-মোটেও না। তবে তফাৎটা বোঝালাম শুধু।
-তা আপনি এখন চাইছেন কি? ভাবুক সবাইকে আলাপের জন্যে ডাকবেন? সমঝোতা করবেন?
-অত সময় কি আছে বল? আমার ভাবনাটা একটু অন্যরকম। দেখ,আমার ওপর প্রভাব খাঁটানোর কেউ নেই। সুতরাং আমি যা-ই করি সবই ঠিক।
-ঠিক বুঝলাম না!!
-এই যে বুদ্ধিপ্রবণ এইসব রাস্কেলদের মাঝে আমার কিছু উত্তরসূরীদের আমি দিয়ে দেব। তাদের কাজ হবে এইসব ভাবুকদের ভাবনাকে মেরে ফেলা।
-কতজনকে মারবেন আর কতদিন মারবেন?
-হা হা। তোমরা মানুষরা যতই বুদ্ধিদীপ্ত হও তবুও খুবই ভীতু এবং তোমাদের খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সে কারণে অন্যান্য প্রাণীকূলে এত দাঙ্গাফাসাদ নেই কিন্তু তোমাদের অভাব নেই।
-উদাহরণ স্বরূপ!
-বলছি। আগে বল চা খাবে নাকি কফি।
-আরেকটা সিগারেট খাব। "মার্লবোরো"
- হা হা। এই যে দেখেছ! ক্ষণিকের জন্যে তোমার চিন্তায় আমি দাগ ফেলেছি। ঠিক এভাবেই তোমরা মানুষরা ৪৫ মিনিটের বেশী একই বিষয়ে মাথা ঘামাতে ইচ্ছাপোষণ কর না। ধর এখন একটা শহর তলীয়ে গেল যেখানে নিহত হল কয়েজশ মানুষ আর পাওয়া গেল একটা ৯ পা যুক্ত অক্টোপাস। তোমরা ব্যস্ত হয়ে পড়বে ওই অক্টোপাসের ৯ পা এল কীভাবে এটা নিয়ে।
- (.......)
- হা হা হা। নিজেদের চেহারা দেখে নিজেরাই আঁতকে উঠছ? আমার সম্পূর্ণ পরিকল্পনাই ঠিক আছে তবে বাঁধা হয়ে আছে ওই ভাবুক মানুষ গুলো। এরা খুবই অদ্ভুত। অক্টোপাসের পা নিয়ে এদের মাথা ব্যথা হয় না। এরা ব্যস্ত হয়ে পড়বে শহর তলীয়ে যাওয়ার কারণ খুঁজতে। আর খুঁজলেই তো আমার দোষ বেড়িয়ে আসবে। তাই এদের ভাবনাকে আমি খুন করব।
-আমায় কি সেই কারণে ডেকেছেন??
- মোটেও নাহ। তোমাকে ডেকেছি নিজের পরিকল্পনা শোনাতে। কারণ আমি জানি তোমার শ্রেণীর মানুষের ভাবনা, সাহস আর মনোবল থাকলেও তোমাদের গ্রহণযোগ্যতা নেই। যাদের জন্যে তোমরা ভাবো তারা তোমাদের নিয়ে ভাবে না। তোমরা এমনিতেই মৃত।
-অপমান করছেন বোধহয়।
-হ্যা এখন করছি। তবে তোমাকে নয়। আচ্ছা তুমি এবার আসতে পারো!
-ঠিকই বলেছেন। আমি ক্ষমা চাইছি কারণ আমি ভুল ছিলাম। আমাদের ওপর আসলেই রাজত্ব করা যায় না। কর্তৃত্বেই আমরা খুশী। ক্ষমতা,লোভ, চাকচিক্য আমাদের সব কিছুতে ছেয়ে যাচ্ছে। সিগারেট খাচ্ছি এতে আমরা খুশী থাকিনা, আমাদের প্রয়োজন ব্রান্ডের সিগারেট। পশুর মধ্যে মনুষ্যত্ব নেই বটে তবে আমাদের মধ্যে পশুত্ব যথেষ্ট আছে। তবে জানেন তো, ধোঁয়া চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে সময় নেয় না। হয়ত মনুষ্যত্বও একদিন ছড়িয়ে পড়বে। সেদিন হয়ত আপনাদের আর ঈশ্বর বলা হবে না। উপরে যিনি আছেন তার বন্দনা করবে সকলে। আসি আজ...
২| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৩১
নিভৃত ইসলাম্ বলেছেন: কৃতজ্ঞতা।
যার সাথে মোলাকাত করেছি তিনি সমাজের উচ্চপদস্থ ঈশ্বর /ক্ষমতাবান আর উপরের ঈশ্বর বলতে স্রষ্টাকে বুঝিয়েছি। আজকাল আমরা ক্ষমতাবানদেরই ঈশ্বর মানতে অভ্যস্ত একসময় হয়ত পরিবর্তন আসবে। এটাই মূলত বলতে চেয়েছি
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১:৪০
আরোগ্য বলেছেন: ঈশ্বরের সাথে বার্তালাপ ভালো লাগলো। তবে একটা জায়গায় একটু খটকা রয়ে গেছে।
" সেদিন হয়ত আপনাদের আর ঈশ্বর বলা হবে না। উপরে যিনি আছেন তার বন্দনা করবে সকলে। "
এই লাইনটা একটু বুঝিয়ে বলবেন?
শুভ কামনা।