নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"কেউ হারিয়ে যায় ,কেউ বদলায়,কেউ বা নিজেকে মানিয়ে নেয়। আমি নিখোঁজদের দলে\"

নিভৃত ইসলাম্

নিভৃত ইসলাম্ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রক্তজবা প্রেম

১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:১৬

বৃষ্টি হচ্ছে। আকাশ ভেঙ্গে ভেঙ্গে অমৃত হয়ে ঝড়ে পড়ছে। কিন্তু আমার মনে ছিটেফোঁটা প্রেম নেই। আর দশটা জ্ঞানীগুণী লোকের মত বারান্দায় ঠ্যাং তুলে দিয়ে বই হাতে নিয়ে উপভোগ করতে পারছিনা। এই যাত্রায় আমি মূর্খ।
মূলত ঘরে কোনো বারান্দা নেই। আর যে কয়টা বই আছে সবই পড়া শেষ করেছি গতরাতেই। বৃষ্টি মহাশয় এমন সময় এসে আমাকে বড্ড বিপাকে ফেলেছেন। নিরুপায় আমি কঠিজ এক ঘুম দিয়ে উঠলাম। তবে প্রসন্ন হতে পারছিনা। এমম বাদলা দিয়ে আসলেই একটা মোটাসোটা বই দরকার। পড়ার জন্যে নাহলেও লোক দেখানোর জন্যে দরকার।
ঘরের এককোণে লম্বামত একটা করিডোর আছে। চাইলে সেটাকে সেমি-বারান্দা বলা যায়। তো সেখানে বসের বৃষ্টি মহাশয়ের স্বাদ নিচ্ছিলাম। মামাতো ভাইটা এসে চা দিয়ে গেল। চা হাতে ভাবলাম, চায়ের সাথে 'টা' হলে মন্দ হত না। সময় বেশীক্ষণ লাগেনি তবে বৃষ্টির বন্ধু বাতাসের জন্যে ধরাতে কিছুটা বেগ পেতে হল।
আমার সিগারেট খাওয়া নিয়ে মামা-মামির কোনো সমস্যা নেই সুতরাং এই আরামের জায়গায় বসে দু-চারেক টান দেওয়া ক্ষতি নয়।
সিগারেট আর চায়ের ধোঁয়া, সাথে বৃষ্টির ফোঁটা; হঠাৎ কবিতা লিখার ইচ্ছা জাগলো। বসে পড়লাম খাতা নিয়ে। কিন্তু কি লিখব! প্রেম? ভালবাসা? বিরহ-বেদনা?
না! এসব আমার দিয়ে হবে না। কিন্তু এই বৃষ্টির দিনে মহব্বত ভরা দু-চার লাইন না লিখলে তথাকথিত সোশ্যাল সাইটে আমার মানসম্মানে আঘাত আসতে পারে। এটা মোটেও কাম্য নয়।
তবে শিল্পের সাথে এভাবে ঠাট্টা মস্করা করা আমার পছন্দ না। দু-চার লাইন আবেগী কথাবার্তা লিখে তাকে কবিতা কিংবা পদ্য বলতেও লজ্জা হয়। তাই সোশ্যাল সাইটের চিন্তা বাদ দিয়ে আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে এবার কিছুটা দূরে তাকানোর চেষ্টা করলাম। ভাবলাম একটা বিশাল কবিতা হয়ত লিখা যায়।
বৃষ্টিটা আসলেই মাদকতা ছড়াচ্ছে। দুটো পাখি দেখলাম জড়সড় হয়ে একটা বড় পাতার নিচে বসে আছে। কি পাখি তা আমার জানা নেই। তবে পাখিগুলো কাঁ কাঁ করে ডাকতে শুনেছি কয়েকবার।
কিছুক্ষণ পর পর মেঘ ডাকছে আর ফ্ল্যাশ লাইটের মত কিছু একটা জ্বলছে। তবুও আমার কবিতা লিখা হচ্ছেনা। পাখিগুলো দেখলাম উড়ে গেল হঠাৎ। তাদের বিশেষ মুহূর্তে আমার তাকিয়ে থাকা তারা বোধহয় পছন্দ করেনি।
আমি এবার একটু ঘুরে পাশের বাড়ির বারান্দায় তাকানোর চেষ্টা করলাম। একটা ফুল!! হ্যা! একটা সুন্দর লাল টকটকে ফুল ফুটে আছে। বৃষ্টির জল তার মসৃণ দেহ ছুঁয়ে মাটিতে গড়িয়ে পড়ছে। অপূর্ব এমন দৃশ্য আমি শেষ কবে দেখেছি ঠিক মনে নেই। বারান্দার বাইরে ফুটে থাকা ফুলটি যেন বৃষ্টির সাথে নৃত্য করছে। বাতাসে ধাক্কায় তার সমস্ত দেহ কেঁপে কেঁপে উঠছে। কোনো নির্বোধ তরুণীর দেহ ঠিক এইভাবে কেঁপে ওঠে কিনা আমার জানা নেই।
ফুলটার নাম রক্তজবা। চমৎকার একটি ফুল। গোলাপের মত এর প্রেম কাহিনী নেই। তবে বিরহ কাহিনী আছে বেশ কিছু। আমার এক প্রেমিকাকে রক্তজবার মত টকটকে বলায় সে আমায় ছেড়ে চলে গেছে গাঁদার মত এক গাধার সাথে।
বৃষ্টি কমে গেছে কিন্তু কবিতা আমার লেখা হয়নি। এই ফুল আর পাখির সাথে প্রেম করতে করতে সময় চলে যাচ্ছে আর মুখবইতে আমার মানসম্মান। মনুষ্য কোনো কন্যার প্রতি এই রক্তজবার প্রেমের মত প্রেম কেন আমার জাগে না এই নিয়ে আমি দুশ্চিন্তায় পড়ে যাচ্ছি।
তরুণ সমাজের মাঝে লেখক/কবি হিসেবে নিজেকে পরিচিত করতে আমি ব্যর্থ। তবে বৃষ্টি আর ফুলের কাছে আমি ব্যর্থ নই। বৃষ্টি জানে তার প্রতিটি নগ্ন ফোঁটা আমায় ছুঁয়েছে। ওইটা রক্তজবা জানে তার দুলতে থাকা দেহ আমার মনে শীতল শিহরণ দিয়েছে। কোনো মনুষ্যকন্যার পক্ষে এধরণের অনুভূতি সৃষ্টি করা অসম্ভব।
মনুষ্যকন্যারা বৃষ্টি বোঝে না, রক্তজবা বোঝে না। তারা সবকিছুতে রোমান্টিকতা খোঁজে কিন্তু রোমান্টিকতা বোঝে না। বৃষ্টির দিনে তাদের শরীরে শরীরে যে কাম সৃষ্টি হয় তারা সেটার বৃষ্টির সাথে উপভোগ করেনা, সেটা প্রেমিক কিংবা স্বামীর স্পর্শে শেষ করতে চায়। কাঁ কাঁ করা ওই পাখিগুলো তাদের কাছে কুৎসিত মনে হয়। কারণ নিজেদের প্রতিবিম্ব দেখতে তারা ভয় পায়।
গুনে গুনে আটটা সিগারেট শেষ হয়েছে কিন্তু কবিতা এখনও আসেনি। আজ আর কবিতা আমায় ধরা দেবেনা। সে হয়ত কাঁ কাঁ শব্দ শুনতে শুনতে কোনো এক রক্তজবার বাগানে বৃষ্টিস্নানে ব্যস্ত...

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:২৭

হাবিব বলেছেন: দারুণ লিখেছেন ....... চালিয়ে যান

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:১৭

নিভৃত ইসলাম্ বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.