![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন, ১৮৮৫ ভূমি নিয়ন্ত্রণে প্রজা এবং জমিদারদের পারস্পরিক দায় ও অধিকার সংক্রান্ত কানুন। আইনটি প্রণীত হয়েছিল একটি বিশেষ প্রেক্ষাপটে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পর থেকে জমিদার প্রজা সম্পর্কে অবনতি ঘটতে থাকে। পরিশেষে উভয় শ্রেণীর মধ্যে দ্বন্দ্ব এমন চরমে ওঠে যে ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা হুমকির সম্মুখীন হয়। জামিদারদের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রজা অসন্তোষ প্রশমনের উদ্দেশ্যে সরকার প্রয়োজনীয় বিধিবিধান প্রণয়নের আবশ্যকতা অনুভব করে। স্মর্তব্য যে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থা জমিদারকে ভূমির একমাত্র মালিক বলে ঘোষণা করলেও রায়তের অধিকার সম্পর্কে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত রেগুলেশন ছিল নিরুত্তর। তবে ভূমিতে যে প্রজার প্রথাগত অধিকার বিদ্যমান সে সম্পর্কে রেগুলেশনে অস্পষ্ট আভাষ ছিল। উনিশ শতকের প্রথমদিকে কৃষকের চেয়ে ভূমি বেশি থাকায় প্রজার ওপর জমিদারদের উৎপীড়ন তেমন লক্ষ্য করা যায় না। কিন্তু উনিশ শতকের শেষপর্বে এসে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ভূমির ওপর পৌনঃপুনিক চাপ বৃদ্ধি পায় এবং এর স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয় জমিদার রায়ত সম্পর্কের ওপর। ভূম্যধিকারী শ্রেণীর মধ্যে ভূমির চাহিদা বৃদ্ধির সুযোগে খাজনার হার বৃদ্ধি করার প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু রায়তশ্রেণী জামিদারদের এহেন প্রবণতাকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে এ যুক্তিতে যে ভূমিতে তাদের প্রথাভিত্তিক অধিকার রয়েছে এবং তা ক্ষুর্ণ করার অধিকার জমিদারের নেই। তারা দাবি করে যে প্রত্যেক মহালের পরগনা নিরিখ বা খাজনার হার প্রথাগতভাবে নির্ধারিত রয়েছে। তাদের মতে পরগনা নিরিখ মোতাবেক সে নির্ধারিত হার সম্পূর্ণ আইনানুগ এবং বৈধ। তারা দাবি করেন যে যুগ যুগ ধরে প্রচলিত ওই পরগনা নিরিখ উপেক্ষা করে খাজনা বৃদ্ধি করার অধিকার জমিদার বা সরকারের নেই। কিন্তু জমিদার শ্রেণী এ যুক্তি বরাবর অগ্রাহ্য করে পাল্টা যুক্তি দেয়ে যে জমির একচ্ছত্র মালিক হিসেবে জমিদার ইচ্ছেমতো খাজনা বৃদ্ধির অধিকার রাখে। তাদের মতে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত রেগুলেশন অনুসারে রায়ত হলো জমিদারের ইচ্ছাধীন প্রজা tenant-at-will, অর্থাৎ ভূমির মালিক হিসেবে জমিদার ইচ্ছেমতো খাজনার হার পরিবর্তন করতে পারে এমনকি রায়তকে উচ্ছেদও করতে পারে।
জমিদার প্রজা সম্পর্ক অবনতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে মধ্যস্বত্ব সমস্যা। সূর্যাস্ত আইনের চাপে পড়ে খাজনা সংগ্রহের সুবিধার্থে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত রেগুলেশন লঙ্ঘন করে জমিদাররা ভূমিতে মধ্যস্বত্ব সৃষ্টি করতে থাকে উনিশ শতকের প্রথম থেকেই। এ প্রবণতার ফলে জমিদার এবং প্রজার মধ্যখানে উদ্ভূত হয় উৎপাদনে ভূমিকাহীন মধ্যস্বত্বাধিকারী নামে একটি পরজীবী শ্রেণী। জমিদার এবং মধ্যস্বত্বাধিকারীর আয় অটুট রাখা বা বৃদ্ধি করার জন্য খাজনা বাড়ানোর প্রয়োজন দেখা দেয়। ভুক্তভোগী রায়ত আইনের আশ্রয় নিলে আদালত মধ্যস্বত্বাধিকারীর অধিকার সম্পর্কে কোন চূড়ান্ত রুলিং না দিয়ে কখনও এ সমস্যাকে বৈধ কখনও বা অবৈধ বলে রায় প্রদান করেন। ফলে রায়ত এবং জমিদার শ্রেণী তথা রায়ত ও ঊর্ধ্বতন সকল ভূ স্বার্থশ্রেণীর মধ্যে বিরোধ বাড়তেই থাকে। আর সে বিরোধকে তীব্রতর করে আরেকটি নবোত্থিত ভূমি ভিত্তিক শ্রেণী।
ব্রিটিশ শাসনাধীনে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ এবং কৃষিপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি প্রভৃতি কারণে গ্রামীণ সমাজে ধনী কৃষকের উদ্ভব ঘটে। কিন্তু ভূমিতে তাদের অধিকার ছিল অন্যান্য প্রজার মতোই নূ্যন যা তারা মেনে নিতে পারেন নি। তাদের স্বচ্ছলতা এবং সামাজিক প্রতিপত্তি এমন বৃদ্ধি পায় যে তারা অধিকার আদায়ের জন্য সাধারণ প্রজাদের নেতৃত্ব দিতে থাকেন। এসব ধনী কৃষককে শান্ত করার উদ্দেশ্যে শাসকশ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত করে প্রণীত হয়েছিল ১৮৫৯ সনের খাজনা আইন আর সে আইনে ভূমিতে ধনী কৃষকদের কিছু অধিকার স্বীকৃত হয়। কিন্তু তাতে কৃষক অসন্তোষ প্রশমিত হয় নি।
উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে কৃষক প্রতিরোধ আন্দোলন ক্রমশ দানা বেঁধে উঠলে সরকার উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে। ১৮৭০এর দশকে সারা বাংলায় বিশেষ করে পাট উৎপাদনকারী জেলাসমূহে কৃষক প্রতিরোধ আন্দোলন এমন চরমে ওঠে যে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে জেলায় জেলায় জমিদারবিরোধী প্রজাজোট গঠন করে রায়তশ্রেণী আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটায়। পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সরকার ১৮৮০ সনে একটি খাজনা কমিশন গঠন করেন। খাজনা কমিশনের সুপারিশের আলোকে বঙ্গীয় আইন পরিষদ ১৮৮৫ সালে অষ্টম আইন প্রণয়ন করে যা সাধারণভাবে বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন নামে পরিচিত পায়। প্রজাদের দাবিদাওয়া অনেকাংশে মেনে নিয়ে আইনটি বিভিন্ন শ্রেণীর প্রজা এবং মধ্যস্বত্বাধিকারীর অধিকার ও দায়দায়িত্ব সংজ্ঞায়িত করে। প্রথাগত অধিকারও সে আইনে স্বীকৃত হয় যা কৃষক প্রতিরোধ আন্দোলনের এক বড় অর্জন হিসেবে দেখা যায় বা বিবেচিত হয়।
তবে বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইনে নিম্নশ্রেণীর রায়তের অধিকার সংজ্ঞায়িত হয় নাই। কোর্ফা, বর্গা, চাকরান, নানকার, কর্ষা প্রভৃতি নিম্নশ্রেণীর কৃষক জমিদারের ইচ্ছাধীন প্রজারূপে চিহ্নিত হলো এবং বাকি সব প্রজা স্থায়ী ভূ স্বার্থ শ্রেণী হিসেবে স্বীকৃত হলো। বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন পর্যায়ক্রমে ভূমি জরিপের জন্য একটি ম্যানুয়েলও তৈরি করেন। সে জরিপের উদ্দেশ্য ছিল জমিদার থেকে নিম্নতম প্রজা পর্যন্ত সকল শ্রেণীর অধিকার দায়দায়িত্ব চিহ্নিত করে একটি চকভিত্তিক স্বত্ব খতিয়ান Record of Right দলিল তৈরি করা।
০২ রা এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১০:০১
নাইম রাজ বলেছেন: সে ব্যাপারে আমার থেকে আপনিই ভালো বোঝেন ভাইয়া।
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১০:১৯
চাঁদগাজী বলেছেন:
এখন জমির উপর চাপ কি রকম?