নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

উল্কা!

নক্ষত্রচারী

আমার নক্ষত্র হচ্ছে আমার মস্তিষ্কের প্রতিটি নিউরন । প্রায়ই এসব নক্ষত্র জুড়ে যার অবাধ বিচরন । বিচরনকালীন এক পর্যায়ে অতীতগুলোকে মনে হয় দূরের কোনো নক্ষত্রপুঞ্জ; উল্কাবেগে ধাববান সময়ের বালুঘড়ি প্রতিনিয়ত পেছনে ঠেলে দিচ্ছে যাকে । সময়ের অতল গহ্বরে একসময় হারিয়ে যাবে সেই নক্ষত্রপুঞ্জের মিট মিটে আলো ।

নক্ষত্রচারী › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাঁচের ওপারে

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৫



সেদিন রাস্তায় টং দোকানের সম্মুখে একটি দুর্ঘটনা ঘটে । চেষ্টা করেও আমি আর বাকি চা টুকু গলাধঃকরণ করতে পারলাম না! জীবনে এই প্রথম আমি একটি বীভৎস মৃতদেহ দেখি, পড়ে আছে রাস্তার পাশে । রক্তিম ছিন্ন পোষাকে তার পিষে চলা যন্ত্রণার দাগ । যে কোনো কেমিক্যালই সেই দাগ কাপড় থেকে তুলে ফেলতে পারবে কিন্তু মন থেকে নয় । চশমা পরিহিতা সেই রূপসী কি ভুলতে পারবে তার নিজের দুর্ভাগ্যের কথা? নিথর মৃত দেহটি ছিল একজন ষোড়শীর । তার কপাল আর নাকের অন্তর্বর্তী স্থানে ফ্রেমের ছাপ, ঠোঁটের কোণে লালের শ্লেষ মিলিয়ে গেছে । হয়তো রক্তের কিংবা লিপস্টিকের । ছিন্ন পোশাক, অসংবৃত সংস্করণ আমার জৈবিক অনুভূতিগুলোকে তাড়িত করেনা আজ । বরং কিসের এক অবিস্মিত প্রলংকারি সংজ্ঞা অবাধ্য অনুভূতিগুলোকে সংকুচিত করে রাখে । আমি আজ নির্ভয়ে রাস্তা পারাপারের প্রতিযোগিতায় সোচ্চার হবোনা, বরং আবালবৃদ্ধ আমজনতা থেকে দূরে সরে গিয়ে বহুমূত্রীয় রোগীদের মত ওভারব্রিজ ব্যবহারে সচেষ্ট হবো । সামনে একজন চশমা পরিহিতা মেয়ে । তার পড়নে লেনিয়েন্ট জিন্স আর টপস । মেয়েটি ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পাড়ি দিচ্ছে । আমার বুকের ধড়পাকানি বেড়েই চলল; এই বুঝি গাড়িটা এসে ওকে ধাক্কা মেরে চলে গেলো । কিন্তু না, সে সহজেই রাস্তা পেরিয়ে গেছে । আমি আমার জায়গায় স্থির ।



ফুট ওভারব্রিজ, ড্রাইভিং লাইসেন্স, সিটবেল্ট, হেলমেট ইত্যাদির প্রয়োজনীয়তাগুলো আমাদের দেশের ত্যাঁদড়েরা যেমন বুঝে না বুঝে একরকম স্কিপ করে যায় তেমনি কেউ কেউ আবার সেগুলোকেই ডিফেন্স হিসেবে আঁকড়ে ধরে । আমিও সেই কেউ কেউরই দলে । অবশ্য আকস্মিক ঘটে যাওয়া সেই দুর্ঘটনার পরে ।



ইদানীং দূরের বস্তুগুলো কেমন ঝাপসা ঠেকে । তাই মাইনাস ফিগারের একটা চশমা নিতেই হলো । যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে ভেবে মোটা ফ্রেমের চশমা নিয়ে ফেললাম । বাহ্ ! কি চকচকে দেখা যাচ্ছে সব; ডিভিডিরিপের দিন শেষ, এখন ব্লুরে প্রিন্টের যুগ ।



সার্বক্ষণিক দশমণ ওজনের একটা ঠুলি পরে থাকাটা অস্বস্তির চরম সীমায় পৌঁছে গেছে ইতোমধ্যে । আবার না ইউজ করলে ক্লাসের প্রোজেক্টর আলো ছাড়া আর কিছুই রিপ্রেজেন্ট করেনা । বস্তুত এই ড্যিলেমায় পড়ে আমি শুধু ক্লাসের ক্ষেত্রে চশমা ইউজ করি আর বাকিসময় ডিভিডি প্রিন্টেড ভিশন নিয়েই ভালো থাকি । আমার এই আকস্মিক পরিবর্তন এবং সাবধান প্রবণ সেন্সকে সুযোগ সন্ধানীরা খোঁচা মারতে ভুলল না । হাবিবের সাথে দেখা হলেই শুনতে হয় একগাল, কীরে শালা শেয়াল থেকে মুর্গী হইয়া গেলি যে! এরকম হাজারো বাক্য উপেক্ষা করে আমি আমার পথেই চলি । কিন্তু ইদানীং যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে কত আর সহ্য করা যায় ! যখন দেখি সহপাঠী মেয়েরাও তাদের দলে সামিল হয়ে আমার এই উদ্যোগকে নন্দলাল বলে পরিহাস করে, হাস্যরসে পরিণত করে । মোটা ফ্রেমের চশমা নাকি আমার ফেইসের সাথে যায়না !



সেদিন পত্রিকা উল্টাতেই চোখে পড়ল ষোল সতেরো বয়সের একটি মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে রাজধানীতে । স্থানীয়রা জানায় এটি নিতান্তই একটি সড়ক দুর্ঘটনা কিন্তু তদন্ত কমটির লোকজন মতপ্রকাশ করে এটি একটি মার্ডার কেইস । মেয়েটিকে খুন করে এনে রাস্তায় ফেলে রাখা হয়েছে; তার শরীরে জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে !!



অসম্ভব ! ধক করে ওঠে আমার বুক । আমার এই পরিবর্তনের মূলে রয়েছে সেদিনের সেই বিভীষিকাময় মুহূর্ত । তবে যা ভেবেছি পুরোটাই কি মিথ্যে ? কিন্তু তা হতে পারেনা । আমি নিজে পর্যবেক্ষণ করেছি তার ক্ষত বিক্ষত দেহ । ছিন্ন বস্ত্র, রাঙ্গাগাত্র এ সবই কি মিথ্যে ? হতেই পারেনা । আচ্ছা মেয়েটির নিস্তেজ মহার্ঘ্য বস্তুগুলো কি আমার স্থিতিশীল মনোগহীনে অর্ঘ্য আরোপ করতে পেরেছিল ? মনে হয়না । তাহলে এ মেয়ে ধর্ষিতা নয়, সাধারণ দুর্ঘটনা; মার্ডারও কিনা সন্দেহ । কারণ তার আকর্ষণ ক্ষমতা সীমিত । যদিও মেয়েটি রূপসী কিন্তু যৌনাবেদনময়ী নয় । আমার এই উদ্যোগ, ত্যাগ বিফলে যাবে তা আমি কখনই হতে দিতে পারিনা । তদন্তে আমাকে নামতেই হবে । ছেলেবেলার তিন গোয়েন্দা, শার্লক আর এখনকার ফেলু মিত্তির আমাকে কোন হেল্প করতে পারলনা । বিভিন্ন পত্রিকা কলাম ইত্যাদি ঘেঁটে যা জানতে পারলাম, মেয়েটি রাজউকের স্টুডেন্ট । বয়স আঠারো যা তার ফিজিক্যাল গ্রোথের সাথে বেমানান । হাতিরপুলে তাদের নিজস্ব বাসা আছে, ওর বাবা একজন ব্যবসায়ী এবং বিশিষ্ট বাড়ীওয়ালা । ও; মেয়েটির নাম সামিয়া । আমাকে আরও জানতে হবে ।

রাজউক থেকে কয়েকটা ছেলে বের হচ্ছে । স্টাইলিশ দাঁড়ি, পিঠে ব্যাগ, চোখে চশমা, হাতে বাজু এই ধরনের ছেলেপেলেদের সাথে কথা বলতে আমার একটু অস্বস্তি লাগে । তারপরও আমি এগিয়ে গিয়ে ওদের একজনকে ডাক দিলাম । কেমন একটা বুনো দৃষ্টিতে তাকাল ওরা । কাছে এগিয়ে আসলো মোটা ছেলেটি ।



কি হইছে? কোনো সমস্যা ??

না, ইয়ে মানে … আপনারা কি সেকেন্ড ইয়ারে পড়েন ?

তা দিয়া আপনার কি? আবে হালায় সামিয়ার খোঁজ নিবার আইছে, পাশের আরেকজন বলে ওঠে । তাইলে ফুটেন; আপনের আগে আরো অনেকেই খোঁজ নিয়া ফালাইসে ।



নিরুৎসাহিত হয়ে আমি আবার ফিরে আসি । কত টিভি চ্যানেল নিউজপেপারের লোকজন আসে তার কোনো হিসাব আছে! যেভাবেই হোক মেয়েটির বাসার ঠিকানা আমাকে খুঁজে বের করতেই হবে । আমি চলে আসি সেই পরিচিত চিরচেনা টং দোকানের বেঞ্চিতে ।



ধূমায়িত চায়ের কাপে চুমুক বসাতে বসাতে একপর্যায়ে টংয়ের মালিক কে জিজ্ঞাস করে ফেললাম, আচ্ছা মামা গত সপ্তায় রাস্তার ঐ পাড়ে যে একটা লাশ পাওয়া গেসিল মনে আছে?

কোন লাশ মামা? ঐ যে মাইয়া মাইনসের লাশ?

হ্যাঁ, হ্যাঁ এক্সেক্টলি ।

আর কইয়েন না মামা । মাইক্রোটা ব্রেক চাইপা ধরসিলো তারপরও ধাক্কা লাইগা মাইয়া পইড়া যায় রাস্তায় । ব্যাস এক্সিডেন্ট একটা ঘইটা গ্যালো ।

বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাই আমি । আপনি নিজের চোখে দেখসেন মামা?

দোকানদার কেমন একটু মিইয়ে গিয়ে বলে, ঠিক আমি দেখি নাই । তবে আমার ভাইগ্না দেখসে । ওনার ভাইগ্না পাশেই সিগারেট বিক্রি করে । মামা আফনে আবার এসবে আইছেন ক্যান? আফনে থাকবেন লেখাপড়া নিয়া, ভার্সিটি নিয়া । এসবে জড়াইবেন না, খুব খারাপ জিনিস । পুলিশ সন্দেহ করতে পারে ।

দোকানদার কি আমাকে সাবধান করে দিলো না থ্রেট দিলো বুঝতে পারলাম না । চায়ের বিল মেটাতে গিয়ে দেখি পাঁচশো টাকার নোট ছাড়া আর ভাংতি কিছু নেই । দোকানি অবশ্য বলল পরে দিলেও অসুবিধা নেই । কিন্তু নাছোড়বান্দার মত আমি গাঁইগুই করলাম, ভাংতি আমার লাগবেই । দোকানি তার ভাইগ্নাকে দিয়ে পাঠালো ভাংতি আনার জন্য । কিন্তু সে ফিরে এসে বলল, ভাংতি দেয় না ।

কি!! শালা চুদানির পোলা ভাংতি দিবো না মানে, তর বাপে দিবো । মানিক্কা তুই থাক আমি ভাংতি লইয়া আইতাছি । দোকানদারের আকস্মিক উগ্রতায় আমি বিস্মিত । সম্বিৎ ফিরে এলো ওনার ভাইগ্নার ডাকে ।

ভাইজান আফনে ক্যান বইয়া রইছেন আমি সেইডা জানি । মামা আফনের লগে মিছা কইসে ।

তাই নাকি?

হ’ ভাইজান । গত দুদিন আগে এক পার্টি আইসা এই মোড়ের যত দোকান আছে বেবাকেরে ট্যাকা দিয়া গেছে । আর কইছে পুলিশ জিগাইলে যাতে কয়, মাইয়াডা গাড়ির তলে পইড়া মরসে । মামা আইতাছে । এসব কথা কাউরে কইয়েন না । পরে আমি ভাংতি নিয়ে চলে আসি ।

একের পর এক বিস্ময় নিস্তব্দ করে দিচ্ছে দেখি । কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে অজগর বেরিয়ে আসার জোগাড় । নাহ্! আমার পক্ষে আর তদন্ত করা সম্ভব নয় । পরক্ষনেই ভেঙ্গে পড়া শরীরে নতুন উদ্যম ভর করে । অবাধ্য অনিয়ন্ত্রিত সত্ত্বাটা আমার দৃষ্টি পরিস্ফুট করে । জন্মান্তরের সাঁটানো চোখের অদৃশ্য অস্বচ্ছ ঘোলা চশমাটাকে সরিয়ে দেয় নিমিষেই । দশ মণ ওজনের চশমাটা চোখে দিয়ে আমি নতুন মনোবলে আবার ঝাঁপিয়ে পড়ি কাজে । ইন্টারনেট, ফেইসবুক এবং বিভিন্ন সামাজিক ওয়েবসাইট ঘেঁটে ঐ মেয়ের ঠিকানা বের করে ফেলি ।

অনেক ঝক্কি ঝামেলা পেরিয়ে যথাসময়ে আমি উপস্থিত হই ওদের গলিতে । দারোয়ান বসে বসে ঝিমুচ্ছিলো, ডাক দিতেই আড়চোখে তাকাল । আমি জিজ্ঞাস করলাম সামিয়ারা কয়তালায় থাকে । দারোয়ান বিরক্ত হয়ে বলল, ওরা বাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে । হতাশার পঙ্গপাল আরো একবার গ্রাস করলো আমাকে ।



তারপর বের হতে না হতেই দেখলাম ষণ্ডামার্কা একলোক আমাকে ইশারা করছে । ভয়ে ভয়ে কাছে গেলাম ।

আপনে কে ভাই? এইখানে কি করেন?

আমি বললাম, কিছুনা ।

ঐ মিয়া ভদ্র ভাষায় কথা বলেন । কিছু না করলে ঐ বাসায় গেছিলেন ক্যান?

অভদ্রতা কি করলাম নিজেও জানিনা , তবে চুপ থাকাটাই শ্রেয় বলে মনে হল । পরক্ষনেই মনে হল- না, ভয় পেলে চলবেনা । সত্য আমাকে উদ্ঘাটন করতেই হবে । এ লোক হয়তো আমাকে সাহায্য করতে পারবে কিংবা সে যে পুলিশের লোক নয় তাই বা কে জানে । হয়ত আড়াল থেকে লক্ষ্য রাখছে- কে আসে কে যায় ।

সাহস করে বলেই ফেললাম, ভাই আমি সামিয়ার মৃত্যুরহস্য সম্পর্কে তদন্ত করছি ।

আপনে কি পুলিশের লোক ?

কেন জানি মিথ্যে বলে ফেললাম, হ্যাঁ ।

লোকটি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল আমার দিকে ।

ফাইজলামো করেন? চেঁচিয়ে উঠলো লোকটি ।

জী? ......

ভাগেন এইখান থেকে ।

আমি স্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম ।

ঐ হালা কথা কানে যায়না? তেড়ে আসতে লাগলো এবার লোকটি । আমি আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালাম না । পেছনে শুনতে পেলাম লোকটি চেঁচাচ্ছে, আর কোনদিন যদি ধারেকাছে দেখি সাইজ কইরা ফালাইমু কইয়া দিলাম ।



সান্ধ্যকালীন চা আড্ডায় আমি কিছুতেই হিসাব মেলাতে পারছিলাম না । আমার মন পড়ে আছে সামিয়ার দিকে । কি সুন্দর নিষ্পাপ মুখখানা, বার বার নাড়া দেয় মনকে । ক্লান্ত লাগছে খুব, দৌড়াদৌড়ী করেই সারাদিন গেলো । কি লাভ হলো? সবটাই পণ্ডশ্রম । সম্বিৎ ফিরে আসিফের ডাকে, কিরে বিল দিবিনা? আজকে তুই দিয়ে দে মামা পকেট একদম খালি, বললাম ওকে ।



হইসেটা কি তোর বলতো? দেখে তো মনে হয় দুইরাত ঘুমাস নাই, হাবিব সুধায় ।

আর বলিস না দোস্ত । সামিয়ার কেইস, ঐ যে মেয়েটা রাস্তার ধারে যার লাশ পাওয়া গেসিলো ।

আস্তে ... বলে চারপাশে তাকিয়ে আসিফ নিচু স্বরে বলা শুরু করে, এসব কথা এরকম খোলা জায়গায় বলবি না । আর ভুলেও সামিয়ার নাম মুখে আনবি না । শালার লাইফটাই নষ্ট কইরা দিলো থার্টি ফার্স্ট নাইট ।

মুহূর্তে চক্কর দিয়ে ওঠে আমার মাথা । আমার মনে পড়ে সেদিন ছিল নতুন বছরের প্রথম দিন । যেদিন সামিয়ার লাশ পাওয়া যায় । ক্যান দোস্ত ? থার্টি ফার্স্ট নাইটে কি হইসিল?

সাধু সাজার চেষ্টা করিস না, হাবিব বলল চোখ গরম করে ।



কিছু না বুঝে বোকার মত তাকিয়ে থাকলাম আমি । ঠিকই তো থার্টি ফার্স্ট নাইটে কি হইসিল ! একি !! মনে করতে পারছিনা আমি । একটা রাত বেমালুম উধাও হয়ে গেলো আমার স্মৃতিভান্ডার থেকে । আমি একদিন পরে একদিন পেছনে যেতে থাকি, রিওয়াইন্ড করতে থাকি সব । আসলে কি এমন ঘটেছিল সেদিন, যা আমার অবচেতন মন জানতে দিতে চাচ্ছে না আমাকে । বহুচেষ্টার পর আমার আবছাভাবে মনে পড়ে, আগের দিন আমরা প্ল্যান করেছিলাম । এই আমাদের শেষ সেমিস্টার, বছরের শেষ রাত্তিরে অন্য সবার মত একটু আনন্দ ফুর্তি না করলেই নয় । আমি কখনই ব্যাড এডিক্টেড ছিলাম না । এ নিয়ে সবাই একটু আধটু খোঁচা মারত ।



ফয়সাল আমাকে ব্রেইন ওয়াশ দিলো, আরে ব্যাটা এই জীবনে আর বাঁচবি কয়দিন । তার আগে জীবনের স্বাদটা নিয়া নে । একবার খাইলেই তো নেশা হয়না, তুই তো শুধু স্বাদটা চাখবি ।

নারে ভাই, আমার পিনিক হবার কোনো ইচ্ছা নাই । কি লাভ এসবে, কি উপকার আছে এই সাময়িক ঘোরগ্রস্থতায় ।

তাইলে তুই কিছুই জানস না । এই পৃথিবীতে ক্রিয়েটিভ বলে কিছু থাকতো? যদি হুইস্কি পাওয়া না যাইত? আমাদের জারিফ ইউ এস এ তে স্কলারশিপ পাইত? যদি না পুঁটলি না থাকতো । আরে বেটা অনিও তো ওয়েভার মিস করতো যদি না সে বাবার আশীর্বাদ নিতো । শেক্সপিয়র, হেমিংওয়ে আমাদের মধুসূদন ওরা আজ কি জন্য বিখ্যাত জানিস? মিড নাইট ইন প্যারিস মুভিটা তো দেখছস, নাকি?

এর পরে আর কোনো কথা থাকে না । আমি নিমরাজি হলাম । তারপর আর আমার কিছুই মনে নেই । আশ্চর্য!!



গুলশান বনানী সব চইষা ফেললাম । আর তুই কস তোর কিছুই মনে নাই । ফাজলামি করস ব্যাটা ? আমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠে আবারো ।



গতকালকের পেপার পড়ছস?

আমি মাথা নাড়াই ।

সে মুচড়ে থাকা পত্রিকার কার্টিং টা আমার দিকে এগিয়ে দেয় । আমি লেখা গুলোর দিকে তাকাতে গিয়ে দেখি ঝাপসা লাগছে । হঠাত হাত দিয়ে দেখি চশমাটা নেই ! কষ্ট করে পড়লাম; ষোল সতেরো বয়সের একটি মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে রাজধানীতে । স্থানীয়রা জানায় এটি নিতান্তই একটি সড়ক দুর্ঘটনা কিন্তু তদন্ত কমিটি সংস্থা মতপ্রকাশ করে এটি একটি রেইপ কেইস । মেয়েটিকে ধর্ষণ করে এনে রাস্তায় ফেলে রাখা হয়েছে; তার শরীরে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে !!

আমূল পরিবর্তন এসেছে লেখাগুলোয় । আমি হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি ।

এবার বাংলাদেশ প্রতিদিন কাগজের কার্টিংটা এগিয়ে দেয় ফয়সাল ।

আমি দেখি র‍্যাব সন্দেহ করেছে, আগেরদিন রাতে দুর্বৃত্তরা মেয়েটিকে ধর্ষণ করে ভোরে গাড়ী করে এনে রাস্তায় ফেলে রাখে চলে যায় অবচেতন মেয়েটিকে । মেয়েটির বাবা শহরের একজন প্রভাবশালী ব্যাক্তি । তিনি পারিবারিক মানসন্মান রক্ষার্থে ব্যাপারটিকে ধামাচাপা দিতে গিয়ে বেআইনি পন্থার শরণাপন্ন হয়েছিলেন । মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়াটা বহু কষ্টে ঠেকালাম আমি ।



চশমা পড়ুয়া মেয়েটি কি দেখতে পায়নি ওদের গোপন অভিসন্ধি? নাকি আমারই মত জন্মান্ধ, অস্বস্তিকর একটা ঘোলা চশমা দিয়ে তাকিয়েছিলো সে ।

এই তোরা কি চশমা পরে ছিলি ঐদিন?

কী? অবাক হয় সবাই । তাদের দৃষ্টিতে আমি দেখতে পাই নিজের এবনরমাল সেন্সেবিলিটি ।



কি নিষ্ঠুর এই পৃথিবী । অদৃষ্টের এই অস্বচ্ছ ঘোলা কাঁচ তাদেরকে জন্মান্ধ করে রেখেছে । আসল সত্যটা কেউ জানতেও পারেনি । দশ মণ ওজনের একটা ভারী ফ্রেমের চশমা দিয়েই কি সকলে তাকিয়ে দেখে এসব ? জানিনা অস্বচ্ছ কাঁচের ওপারে কি রহস্য লুকিয়ে আছে, হয়তো এরকম আরো কোনো কুৎসিত অপ্রিয় নির্মম সত্য, কিংবা একটি সুন্দর পৃথিবী ।



___________









মন্তব্য ৪০ টি রেটিং +১৪/-০

মন্তব্য (৪০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:১৯

আহমেদ আলাউদ্দিন বলেছেন:
চমৎকার! এক টানে পড়ে ফেললাম। আবার আসবো।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:১১

নক্ষত্রচারী বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই :)
ভাল থাকবেন ।

২| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:২৮

শহিদুল ইসলাম বলেছেন: একটানা পড়লাম !

চমৎকার গাথুনী

খুব ভালো লাগল !

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:১২

নক্ষত্রচারী বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ শহিদুল ভাই
শুভকামনা রইল ।

৩| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৪৬

শায়মা বলেছেন: +++ ভাইয়া।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:১৪

নক্ষত্রচারী বলেছেন: :)

থ্যাংকু আপ্নু ।

৪| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৪৬

স্বপনবাজ বলেছেন: খুব ভালো লাগলো !

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:১৫

নক্ষত্রচারী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ স্বপনবাজ
ভাল লাগাতে পেরে আনন্দিত ।

ভালো থাকবেন ।

৫| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৪৯

ইনকগনিটো বলেছেন: প্রয়োজন। এই ধরনের লেখার যে বড় প্রয়োজন।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:১৮

নক্ষত্রচারী বলেছেন: কৃতজ্ঞতা :)

প্রয়োজন মেটাতে সচেষ্ট থাকবো সবসময় ।
ভালো থাকা হউক ইনকগনিটো ।

৬| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:২৬

কালোপরী বলেছেন: চমৎকার :)


পোস্টে প্লাস

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৫৪

নক্ষত্রচারী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ কালোপরী

ভালো থাকা হোক :)

৭| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:১৬

চুক্কা বাঙ্গী বলেছেন: শেষে এসে একটা ধাক্কা লাগলো। চমৎকার এন্ডিং। অদ্ভুত লিখসেনরে ভাই। এরকম পোস্টের জন্য অপেক্ষা করতেও ভাল লাগে। প্লাস।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৩০

নক্ষত্রচারী বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ ।

এরকম মন্তব্য পেতেও ভালো লাগে ;)

শুভকামনা চুক্কা বাঙ্গী ভাই ।

৮| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৩২

শ্রাবণ জল বলেছেন: গল্প পড়ি খুব কম। ধৈর্যে কুলোয় না।

আপনার টা পড়লাম।

বেশ ভাল। মনে হচ্ছিল সত্যি ঘটনা।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৬

নক্ষত্রচারী বলেছেন: কষ্ট করে পড়েছেন বলে কৃতজ্ঞ ।

ভালো থাকবেন আপু :)

৯| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৯

লোনলিফাইটার বলেছেন: +++ ব্রো :)

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৭

নক্ষত্রচারী বলেছেন: থ্যাংকু B-)

ভালো থাকা হউক ।
শুভকামনা ।।

১০| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৪

হাসান মাহবুব বলেছেন: চশমাটা খসে গেলে আমরা সবাই মুশকিলে পড়ি!

ভালো লাগলো গল্প।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫০

নক্ষত্রচারী বলেছেন: একমত; সে চেষ্টা না করাটাই ভালো ।

আমিও মুশকিলে পড়সিলাম গল্পের শিরোনাম নিয়ে; একবার ভাবি চশমাবৃত্তান্ত আরেকবার এইটা ।

শুভকামনা হাসান ভাই :)

১১| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৫

ভিয়েনাস বলেছেন: অস্বচ্ছ কাঁচের অপারে কি তা কখনই জানা যায় না সুতরাং জানার চেষ্টা করাটাও বৃথা।

গল্পে ভালো লাগা রইলো।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৮

নক্ষত্রচারী বলেছেন: অস্বচ্ছ কাঁচের ভেতরে ক্ষীণ দৃষ্টি, মায়ার ধুম্রজাল । বাইরেরটা কে জানে !

ধন্যবাদ অনেক ভিয়েনাস ।
শুভকামনা ।।

১২| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৪:২৭

রেজওয়ান তানিম বলেছেন: বেশ ভাল লাগল গল্পের কাহিনী বিন্যাস। লেখা চলুক এই আশাই করি।

কিছু কিছু জায়গায় অতি ক্যাজুয়াল হয়ে গেছে লেখকের বর্ননা ( সংলাপ অংশ নয়)

আমার মনে হয় ওটা খেয়াল করলে ভাল হবে। যেমন অভদ্রতামি এটা অভদ্রতা লিখলেই শোভন হত, এরকম টুকটাক

যা হোক গল্প বেশ লেগেছে

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫৩

নক্ষত্রচারী বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ তানিম ভাই ।

আসলে পুরো গল্পটিতেই কথ্যভাষার প্রয়োগ ঘটাতে চেয়েছিলাম । খুঁটিনাটি কিছু ভুল হয়তো থেকে গেছে । তারপরও ভালো লেগেছে; এর বেশি আর কি চাওয়া !

ফিক্স করে নিয়েছি শব্দটা । আরেকবার কৃতজ্ঞ থেকে গেলাম আপনার কাছে ।

ভালো থাকবেন নির্নিমেষ :)

১৩| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৩২

নীলঞ্জন বলেছেন: অনেক ভালো লাগলো নক্ষত্রচারী ভাই।

+++++++++

শুভ কামনা রাশি রাশি।

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:১৬

নক্ষত্রচারী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ নীলঞ্জনদা
আপনার ভালো লাগাতে আমারও ভালো লাগলো ।

শুভকামনা সবসময় :)

১৪| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:১১

সান্তনু অাহেমদ বলেছেন: চমৎকার গল্প, নক্ষত্রচারী।++

শুভ কামনা।

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৫৫

নক্ষত্রচারী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই :)
অনেকদিন পরে !

ভালো থাকবেন ।
শুভকামনা ।।

১৫| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৫২

আরজু পনি বলেছেন:

পড়তে পড়তে শেষে এসে শেষ করতে না পেরে ট্যাগ দেখে স্বস্তি পেলাম :(

এক কথায় বেশ ভালো লিখেছেন....পরে কি হবে বুঝতেই পারিনি!

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৩১

নক্ষত্রচারী বলেছেন: আহা! কষ্ট করে পড়েছেন বলে কৃতজ্ঞ ।

এখানেই তো গল্পের ক্রেডিট ;)
আপনার প্রশংসা পেয়ে ভালো লাগলো ।

ভালো থাকবেন ।

১৬| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৪০

যাযাবর৮১ বলেছেন:





গণদাবি একটাই

আবার জেগেছে তারুণ্যের প্রজন্ম
দ্বিধা ভেদ ভুলে জাগরণের জন্ম,
কবে কে দেখেছে এই বাংলার বাঘ
শাবাশ জনতা ঐ জেগেছে শাহবাগ।

আলোকিত প্রাণ প্রজন্ম চত্বরে
বিকশিত গান খুঁজছে সত্তারে,
আর নয় ভুল, মুক্তির স্লোগান
ধূম্র ধূসরে ফাগুনের জয়গান।

ঘৃণায় আক্রোশে জানায় যে ধিক্কারে
গণদাবি আজ প্রদৃপ্ত হুঙ্কারে,
জেগেছে জনতা, বিচার এবার চাই
ফাঁসি, ফাঁসি, ফাঁসি, গণদাবি একটাই।

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৫৭

নক্ষত্রচারী বলেছেন: বাহ ! ফাগুনে আগুন ঝরানো কাব্য ।

দাবী উত্থাপন করলাম আমিও :)

১৭| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৬

যাযাবর৮১ বলেছেন:





কলঙ্ক মুক্তি চাই (গীতি কবিতা)

বসন্ত আজ যে আবার এসেছে
আগুন ঝরা উত্তাল বানে
ধূসর জীবনের পাতায় পাতায়
রক্ত রাগে দ্রোহের গানে।

জাগরণ জেগেছে নব প্রজন্ম
প্রদৃপ্ত প্রজন্ম চত্বর
আবার জনতা খুঁজে পেয়েছে পথ
চাইছি আবার একাত্তর।

হৃদয়ে বসন্ত জ্বলছে আগুন
গণদাবি আজকে একটাই
জাগে বাংলাদেশ দৃপ্ত স্লোগানে
কলঙ্ক মুক্তি চাই।

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৭

নক্ষত্রচারী বলেছেন: হৃদয়ে বসন্ত জ্বলছে আগুন
গণদাবি আজকে একটাই
জাগে বাংলাদেশ দৃপ্ত স্লোগানে
কলঙ্ক মুক্তি চাই।

বেশ লিখেছেন ।।

১৮| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৬

ডানাহীন বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন ।

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৮

নক্ষত্রচারী বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে ।
ভালো থাকবেন :)

১৯| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৫৬

আলম িসিিদ্দকী বলেছেন: খুব ভালো লাগলো !

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৯

নক্ষত্রচারী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই ।

আপনার ভালো লাগাতে আমারও ভালো লাগলো :)

২০| ০৬ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:২৬

কালা মনের ধলা মানুষ বলেছেন: সামু তে কি অসাধারন সব লেখকই না আছে !! মাঝে মাঝে খুঁজে পেলে এত অবাক হই !!

অদ্ভুত একটা লেখা !!

দারুন লেখনী।

০৬ ই মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৭

নক্ষত্রচারী বলেছেন: বলেন কী !

অনেক ধন্যবাদ ভাই ।
ভালো থাকবেন :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.