![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ওভি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিল। রাতের শহর আলো ঝলমলে, কিন্তু তার মনটা নিভু নিভু প্রদীপের মতো। ছয় মাস হলো, তৃষ্ণা নেই। তৃষ্ণা, যে ছিল তার ভালোবাসা, তার স্বপ্ন, তার আত্মার অংশ—সে আর নেই। শুধু স্মৃতিগুলো রয়ে গেছে, যেন একটা পুরোনো দাগ, যা কোনোভাবেই মুছে ফেলা যায় না।
তৃষ্ণা ধনী পরিবারের মেয়ে, রাজনীতিবিদের কন্যা। বুদ্ধিমতী, উচ্চশিক্ষিত, ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিত্বে অনন্য। ওভিও কম যায় না—নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ার, রাষ্ট্রীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কাজ করে। কিন্তু সম্পর্ক সবসময় যোগ-বিয়োগের হিসাব মেনে চলে না। সম্পর্ক মানে আবেগ, বিশ্বাস, আর একে অপরকে বোঝার ক্ষমতা। তৃষ্ণা বুঝতে পারেনি ওভিকে। শেষমেশ, তৃষ্ণা চলে গেল—চিরদিনের মতো।
বিচ্ছেদের যন্ত্রণা এমনই যে, একসময় ওভি সিদ্ধান্ত নিল—সে বিয়ে করবে। ভালোবাসার জন্য নয়, ভুলে থাকার জন্য। রিনি—এক সাধারণ মেয়ে, যার চেহারা কিংবা জীবন নিয়ে কোনো গল্প লেখা যাবে না। তৃষ্ণার মতো উচ্চশিক্ষিত নয়, বিত্তবানও নয়। তবুও, ওভি বিয়ে করল, যেন নিজের মনে জমে থাকা কষ্টগুলো ভুলতে পারে।
২
ওভির মন পড়ে আছে অন্য কোথাও। বিয়ের পরও সে রিনিকে ঠিক স্বামী-স্ত্রীর মতো গুরুত্ব দেয়নি। রিনি বোঝে, কিন্তু কিছু বলে না। সে ওভিকে সময় দেয়।
একদিন সন্ধ্যায়, ওভি আর রিনি বের হলো বাইরে। ওভির ইচ্ছা ছিল না, কিন্তু রিনি খুব করে বলল,
— “তুমি তো সারাদিন কাজ করো, একটু বাইরে গেলে মন্দ হয় না!”
ওভি গম্ভীর মুখে বলল, “হুম, চলো।”
তারা এক ছোট্ট চাইনিজ রেস্টুরেন্টে ঢুকল। জায়গাটা বড়জোর আট-দশটা টেবিলের, খুব সাধারণ, কিন্তু শান্ত পরিবেশ।
খাবার এলো, সবার আগে রিনি ওভির সামনে স্যুপের বাটি এগিয়ে দিল।
— “তুমি ক্লান্ত, আগে স্যুপটা খেয়ে নাও।”
ওভি থমকে গেল। কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল স্যুপের কাপের দিকে। এই ছোট্ট কাজটাই কেন যেন ওভির বুকের ভেতর কোথাও গেঁথে গেল।
তৃষ্ণার সঙ্গে সে কত জায়গায় খেয়েছে—ফাইভ স্টার হোটেল, ব্যয়বহুল ক্যাফে, দামি রেস্টুরেন্ট—কিন্তু কখনো তৃষ্ণা এভাবে ওভির দিকে স্যুপ এগিয়ে দেয়নি। তৃষ্ণার ভালোবাসা ছিল বুদ্ধির, বিত্তের, উচ্চাকাঙ্ক্ষার। কিন্তু রিনির ভালোবাসা?
সেটা ছিল একেবারে নিখাদ, নিঃস্বার্থ।
ওভির চোখের সামনে যেন একটা পর্দা সরে গেল। সে আসলে কী খুঁজছিল এতদিন? তৃষ্ণার কাছে যা পায়নি, রিনির কাছে কি সেটাই পেয়েছে?
ওভি চুপচাপ স্যুপের বাটি হাতে নিল, এক চুমুক খেল। স্যুপটা ছিল গরম, আর তার ভেতরের বরফটা যেন আস্তে আস্তে গলতে লাগল।
সে বুঝল—সে আসলে জিতেছে।
সে খুঁজে পেয়েছে অতি সাধারণের মাঝে লুকিয়ে থাকা অসাধারণকে।
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:১৩
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: ভাল লাগল। লিখতে থাকুন।