নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাগজের তৈরি কাক

নকল কাক

নকল কাক

নকল কাক › বিস্তারিত পোস্টঃ

রানি নীথ

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ভোর ৪:৪৫

নীল নদের বুকে তখন রোদ্দুরের সোনালি আভা। সুবিশাল রাজপ্রাসাদের উঠানে একদল দাসী সুরেলা সঙ্গীত গাইছে, বাতাসে মিশে আছে ধূপের মিষ্টি গন্ধ। সারা রাজ্যে উত্সবের আমেজ। কারণ আজ রাজপ্রাসাদে রানি নীথের আগমন।

নীথ—যে মিসরের চাঁদের আলো, যার চোখের দৃষ্টি যেন গভীর মরুদ্যানের জল। তার গায়ের রঙ রোদে পুড়তে চাওয়া বালির মতো—উজ্জ্বল, কোমল। সারা শরীর নীলকান্তমণি আর স্বর্ণের অলঙ্কারে ঢাকা, তবুও তার সৌন্দর্যের পাশে সেগুলো যেন তুচ্ছ।

সে ধীরে ধীরে মহল পেরিয়ে রাজদরবারে প্রবেশ করল। চারপাশে নতমুখ দাস-দাসী, মাথা অবনত অভিজাত পুরুষেরা। তারা জানে, রানি নীথ শুধু রূপে নয়, বুদ্ধিতেও অনন্য। রাজা তাকে শুধুই এক রানি নয়, এক সম্রাজ্ঞী মনে করেন।


সিংহাসনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পরাক্রমশালী ফারাও তাকে একবার দেখে হাসলেন,
— "নীথ, তুমি কি জানো, তোমার নামে এবার আমরা নতুন বাগান গড়ছি? যেখান দিয়ে গেলে যেন স্বর্গের সুগন্ধ আসে!"

রানি হাসলেন মৃদু, তার লালচে ঠোঁট যেন রক্তকমলের মতো ফুটে উঠল।
— "বাগান তৈরি করা সহজ, রাজন। কিন্তু তুমি কি মিসরের মানুষদের হৃদয়েও ফুল ফুটাতে পারবে?"

রাজদরবার স্তব্ধ হয়ে গেল। নীথ জানে, এই রাজপ্রাসাদের সোনার প্রাচীরের বাইরে হাজারো মানুষ দিনরাত পাথর ঠেলে, মাটি খুঁড়ে রাজপ্রাসাদ গড়ে তোলে। তাদের শ্রমে জন্ম নেয় এই ঐশ্বর্য, অথচ তারা রয়ে যায় ক্ষুধার্ত, পরিশ্রান্ত।

রাজা একটু হাসলেন, তবে চোখে বিরক্তি লুকাতে পারলেন না।
— "তুমি রাজনীতি বোঝার চেষ্টা করো না, নীথ। মিসর চলে শাসকের লাঠির শক্তিতে, করুণায় নয়।"

রানি এবার একটু কাছে এসে দাঁড়ালেন। তার সুরেলা কণ্ঠস্বরে যেন তেজ ফুটে উঠল।
— "কিন্তু রাজন, ইতিহাস শাসকের ক্ষমতার জন্য নয়, বরং শাসকের বিচারের জন্য বেঁচে থাকে। তুমি কি চাও, তোমার নাম ভয়ে উচ্চারিত হোক, না কি ভালোবাসায়?"

রাজা নিরব হয়ে গেলেন। কিন্তু মিসরের আকাশের নক্ষত্রদের মতো, রানি নীথ জানতেন—এখানে সত্য বলার অধিকার খুব কম মানুষেরই থাকে।


সন্ধ্যার পর যখন প্রাসাদের ঝাড়বাতিগুলো জ্বলে উঠল, নীথ তখন ছাদের কিনারে বসে ছিলেন। তার দৃষ্টি দূরে, সেইসব ক্রীতদাসদের দিকে, যারা দিনশেষে ক্লান্ত হয়ে তাদের ছোট্ট কুটিরে ফিরছে। তিনি জানেন, এই সুবিশাল পিরামিড, এই প্রাসাদ—সবই তাদের রক্তে গড়া।

পাশ থেকে এক দাসী ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে বলল,
— "রানি, আপনি এত মন খারাপ করে আছেন কেন?"

নীথ হাসলেন, কিন্তু চোখের কোণে অদ্ভুত এক বিষাদ।
— "কখনো কখনো আমি ভাবি, সত্যিকারের ক্ষমতা কিসের? সোনার সিংহাসন, নাকি ভালোবাসার আশীর্বাদ?"

দাসী কিছু বলল না, শুধু মাথা নিচু করল। কারণ সে জানে, পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক রানি এসেছে, অনেক রাজা এসেছে—কিন্তু নীথের মতো কেউ আসেনি।

তাকে মনে রাখা হবে, শুধু তার সৌন্দর্যের জন্য নয়, বরং তার সাহসের জন্য। তার মনের আলোয় যে মিসর একদিন আলোকিত হয়েছিল, ইতিহাস তাকে সেই কারণেই মনে রাখবে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

হোসনে আরা বেগম বলেছেন: অভিনন্দন আপনাকে।
অসম্ভব রকমের সুন্দর! আপনার ভাষার চমৎকার গাঁথুনি আর রানির চরিত্রের উন্মোচন দারুণ লেগেছে। রানি নীথ যেন মানবিকতারই উদ্ভাসন। সোনার সিংহাসনের চেয়ে ভালোবাসার আশীর্বাদ হোক আমাদের সকলের কাম্য।
আরো লিখুন।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫২

নকল কাক বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.