নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাগজের তৈরি কাক

নকল কাক

নকল কাক

নকল কাক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেলবোর্ন থেকে সিডনি

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:৪৫

ভোরের কুয়াশা এখনো আকাশে ঝুলে আছে, রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলো ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে আসছে। মেলবোর্ন শহরকে পেছনে ফেলে যাত্রা শুরু করলাম। শহরের কোলাহল পিছনে পড়ে রইল, উঁচু দালানগুলোর বদলে চোখের সামনে এখন খোলা প্রান্তর, সবুজ মাঠ আর অনন্ত দিগন্তের হাতছানি। মনে হলো, যেন একটা নতুন জগতে প্রবেশ করছি—যে জগৎ শুধু পথের নয়, অনুভূতিরও।

গাড়ি যখন প্রিন্সেস হাইওয়েতে উঠল, তখন সূর্যের সোনালি আভা পুরো দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার ওপর ছড়িয়ে পড়েছে। দুই পাশে অবারিত সবুজের গালিচা, মাঝে মাঝে চোখে পড়ছে খামারবাড়ি, গরুর পাল, কখনো বা উঁচু-নিচু টিলার মাঝে হারিয়ে যাওয়া সরু পথ। দূরে একচিলতে লেক, যেখানে এখনো ভোরের কুয়াশা জড়িয়ে আছে, যেন এক ঘুমন্ত কবিতা।

কিছু দূর এগোতেই পাহাড়ি পথ শুরু হলো। গ্রেট ডিভাইডিং রেঞ্জের সবুজ পাহাড়গুলো মনে করিয়ে দিল প্রকৃতি সত্যিই এক শিল্পী। গাছপালার আড়াল থেকে সূর্যের আলো উঁকি দিচ্ছে, ছোট ছোট নদী বয়ে চলেছে নির্জনে, কোথাও কোথাও পাহাড়ের গা বেয়ে জলপ্রপাত গড়িয়ে পড়ছে। বাতাসে ইউক্যালিপটাস গাছের গন্ধ, আর রাস্তার পাশ দিয়ে কখনো ছায়া, কখনো আলো খেলা করছে। মনে হচ্ছে, কোনো রূপকথার দেশে চলে এসেছি।

পথের ধারে মাঝে মাঝে ছোট ছোট শহর পড়ছে। কোথাও ব্যস্ততা, কোথাও নিস্তব্ধতা—ক্যাফেগুলোতে ঘরোয়া উষ্ণতা, পুরোনো গির্জাগুলোতে সময়ের ছাপ। এক শহর থেকে আরেক শহর পেরিয়ে যেন এক গল্প থেকে আরেক গল্পের ভেতর ঢুকে যাচ্ছি।

একটা জায়গায় থামলাম সামান্য বিশ্রামের জন্য। সামনের মাঠে একদল ক্যাঙ্গারু লাফিয়ে বেড়াচ্ছে! দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার পথের এই অনিবার্য দৃশ্য আমাকে মোহিত করল। কিছু দূরেই এক বিশাল আঙ্গুরের বাগান, বাতাসে মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে আছে। পাশের ছোট্ট রোডসাইড দোকান থেকে এক কাপ গরম কফি আর বিস্কুট কিনলাম। পথের ক্লান্তি যেন নিমেষেই উড়ে গেল।

এরপর রাস্তার মোড় ঘুরতেই এক নতুন বিস্ময় হাজির হলো—সমুদ্র! বিশাল নীল জলরাশি, যেখানে ঢেউগুলো পাথুরে তীরে এসে আছড়ে পড়ছে। বাতাসে নোনা গন্ধ, সাদা ফেনার ছোট ছোট ফোঁটা বাতাসে উড়ছে, আর সূর্যের আলোতে জলরাশি ঝলমল করছে, যেন কোনো অপার্থিব সৌন্দর্যের প্রদর্শনী চলছে। কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলাম, সময় যেন থমকে গেছে।

দুপুরের পর থেকে পথ একটু বদলে গেল। সবুজ বন আর পাহাড়ের বদলে এলো রুক্ষ, শুকনো জমি। গাছপালার সংখ্যা কম, কিন্তু আকাশটা আরও বিশাল মনে হচ্ছে। সূর্যের আলোয় পথটা চকচক করছে, দূরে কোথাও কোথাও ছোট্ট জলাশয় দেখা যাচ্ছে, যার জল যেন আকাশের নীল ছুঁয়ে রেখেছে।

গোধূলি আসার সঙ্গে সঙ্গে আকাশ রঙ বদলাতে লাগল। কমলা, গোলাপি, বেগুনি—তিন রঙের অপূর্ব সংমিশ্রণ ছড়িয়ে পড়ল পশ্চিম দিকের পাহাড়গুলোর গায়ে। সেই আলোর ছায়ায় পাহাড়গুলো আরও রহস্যময় হয়ে উঠল। আর ঠিক তখনই দূর থেকে দেখা গেল সিডনি!

শহরের আলো এক এক করে জ্বলে উঠছে, যেন তারার আলো নেমে এসেছে পৃথিবীতে। হারবার ব্রিজ যেন এক বিশাল দরজা, আমাকে স্বাগত জানাচ্ছে স্বপ্নের শহরে। অপেরা হাউসের ঢেউখেলানো ছাদ চাঁদের আলোয় সাদা পাল হয়ে ঝলমল করছে। চারপাশে জলে প্রতিফলিত শহরের আলোগুলো দুলছে, ভাসছে, ঠিক যেন কোনো স্বপ্নরাজ্যের ছবি।

সিডনির এই দৃশ্য যেন বাস্তব আর কল্পনার মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা এক মোহময় অনুভূতি। বাতাসে সাগরের গন্ধ, রাস্তার কোলাহল, কফিশপের উষ্ণতা—সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে আমি এক স্বপ্নের গভীরে চলে এসেছি।

মেলবোর্ন থেকে সিডনি—এই যাত্রা শুধু পথ পেরোনো নয়, বরং প্রকৃতির সঙ্গে, সৌন্দর্যের সঙ্গে, আর নিজের অনুভূতির সঙ্গে নতুন করে পরিচিত হওয়া। এমন যাত্রা একবার শুরু হলে, মন কখনোই আর ঠিক আগের জায়গায় ফিরে যেতে পারে না।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:১১

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: আমি দুবার সিডনী গেলাম কিন্ত
মেলবর্ন বেড়ানো হলোনা,
সেখানে এক দুর আত্নীয় আছে কিন্ত তাদের
আতিথেয়তা বিষয়ে সন্দেহ আছে বিধায় যাওয়া হলো না ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.