![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নদীর ধারে ঘাসের ঝোপের মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে আছে ছোটন। তার নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার জোগাড়, চোখ দুটো চকচক করছে উত্তেজনায়। কয়েক হাত দূরে ধূসর রঙের একটা হাঁস পানিতে ডুব দিয়ে শামুক খুঁজছে। ছোটন ধীরে ধীরে পা টিপে এগোচ্ছে, নিঃশ্বাসও প্রায় বন্ধ করে ফেলেছে। হাঁসটি একটু কাছে আসতেই সে ঝাঁপিয়ে পড়ল! মুহূর্তের জন্য তার হাত হাঁসের ডানায় লেগেছিল, কিন্তু প্যাঁক প্যাঁক করে চিৎকার করতে করতে হাঁসটি ছুটে পালালো। ছোটন হতাশ না হয়ে পেছন পেছন ছুটতে লাগল।
হাঁসটি দ্রুত ডানা ঝাপটিয়ে সামনে এগিয়ে গেল, তার পায়ের আঘাতে পানিতে ছোট ছোট ঢেউ উঠল, সূর্যের আলোয় সেগুলো মুক্তোর মতো ঝলমল করতে লাগল। স্বচ্ছ পানির নিচে চিকচিকে বালির স্তর দেখা যাচ্ছে, মাঝে মাঝে ছোট মাছগুলো ছুটোছুটি করছে, যেন তারাও এই উত্তেজনাপূর্ণ দৌড়ের অংশীদার। হাঁসটি কখনও জলের ওপর ছুটছে, কখনও ডুব দিচ্ছে, ছোটনের চোখ ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করছে। ছোটনও নাছোড়বান্দা, হাঁটু অবধি পানিতে নেমে ছুটছে, কিন্তু শক্ত বালির স্তরেও কখনও কখনও পা পিছলে যাচ্ছে।
চারপাশে নদীর শোভা যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে এই তুমুল ধাওয়ার মাঝে। লাল আর সাদা শাপলার দল পানির ওপরে নরম সোনালি আলোয় দুলছে, বাতাসে তাদের পাপড়ির গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। পানির ওপরে ভেসে থাকা পাতা মাঝে মাঝে ছোটনের ছুটন্ত পায়ের ধাক্কায় উলটে যাচ্ছে। রুপালি মাছেরা আতঙ্কে লাফিয়ে উঠে আবার দ্রুত ডুব দিচ্ছে। প্রজাপতিগুলো—নীল, হলুদ আর কমলা রঙের—পালক-ঝাপটানো হাঁস আর ছোটনের সৃষ্ট হুলস্থুলের মধ্যে উড়ে পালিয়ে যাচ্ছে।
ছুটতে ছুটতে ছোটন একসময় নদীর পাড়ের কাশবনের ধারে এসে পড়ল। বাতাসে দুলছে কাশফুলের সাদা গুচ্ছ, সূর্যের আলোয় তুলোর মতো ঝলমল করছে। কিছু বুনো ফুলের মিষ্টি গন্ধ বাতাসে মিশে আছে, সেই গন্ধের ভেতরেও আজ উত্তেজনা। মৌমাছিরা গুনগুন করছে, তারা অবশ্য এই দৌড়ঝাঁপের তোয়াক্কা করছে না, নিজের কাজেই ব্যস্ত।
এদিকে হাঁসটি হাঁপিয়ে উঠেছে, কিন্তু থামার উপায় নেই। আর মাত্র কিছুটা এগোলেই তার নিরাপদ আশ্রয়। হাঁসটা শেষ মুহূর্তে এক চালাকি দেখাল—ডুব দিয়ে গেল একটা ঘন শাপলা পাতার নিচে। ছোটন ত্রস্তভাবে এদিক-ওদিক খুঁজতে লাগল, কিন্তু হাঁসের আর দেখা নেই। একটু পরেই ক্লান্ত হয়ে সে হাঁটুতে হাত রেখে হাঁপাতে লাগল, বুঝতে পারল, এই যাত্রায় সে হেরে গেছে।
ক্লান্ত হাঁসটা অবশেষে ভেসে উঠল নদীর এক কোণে। ছোটনের চোখ ফাঁকি দিয়ে নদীর ধারের ঘন ঝোপের মধ্যে ঢুকে গেল। ঝোপের ভেতর তার নরম শুকনো ঘাস দিয়ে বানানো বাসা, সেখানে সযত্নে রাখা ডিমগুলো তার অপেক্ষায়। হাঁপাতে হাঁপাতেও হাঁসটি চোখ বন্ধ করে তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলল, ধাওয়া এড়ানো গেছে, আরেকটা দিন নিরাপদে কাটল। নদীর জল তখনও মৃদু ঢেউ তুলে বয়ে যাচ্ছে, আশপাশের কাশফুল দুলছে বাতাসের তালে। ছোটন ক্লান্ত পায়ে ফিরে যাচ্ছে গাঁয়ের পথ ধরে, মাথার ওপর সূর্য ঢলে পড়ছে পশ্চিমে। তার মন খারাপ, কিন্তু একরকম রোমাঞ্চও আছে—আগামীকাল আবার সে চেষ্টা করবে!
০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৪৬
নকল কাক বলেছেন: এই সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ
২| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৩২
শায়মা বলেছেন: ছোটন কেনো হাঁসটা ধরতে চায়!
এই হাঁসের মালিক নেই?
যাক হাঁসটা তার বাড়ি ফিরে যেতে পারলো এটাও ভালো কাজ ....
০৩ রা এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২২
নকল কাক বলেছেন: বুনো হাঁস, মালিক নেই।
৩| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:১৮
রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল সুন্দর গল্প।
০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:১০
নকল কাক বলেছেন: ধন্যবাদ
৪| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:১৯
সোনালি কাবিন বলেছেন: জীবন ও প্রকৃতির এক টুকরো প্রতিচ্ছবি।
০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:২১
নকল কাক বলেছেন: ধন্যবাদ
৫| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:১৫
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: সুন্দর গল্প। এরকম ছোট গল্প পড়তে ভালো লাগে। সময় লাগে না । ধন্যবাদ আপনাকে
০৯ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১:০৭
নকল কাক বলেছেন: যেহেতু মানুষ এখন ব্যস্ত............. অতএব ছোটগল্পের আকর্ষন বেশী
৬| ০৯ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১:০২
নকল কাক বলেছেন: https://payhip.com/b/A9qvB
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৩৯
Sulaiman hossain বলেছেন: গল্পটি অনেক ভালো লাগল।আসলে পশুপাখির প্রতি আমাদের মায়া হওয়া উচিত।ওদেরকে শিকার না করা উচিত।কিন্তু ক্ষুধার্ত হলে,অথবা নিরুপায় হলে শিকার করা যায়