নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাষ্ট্র মামা কিডা? তারে আমি চিনি না।

শাহাদাত নোমান

আমি শুধু রাতের মানুষ!

শাহাদাত নোমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

মধ্যরাতের প্রলাপ

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১১:৪৪

সেদিন আকাশের কান্না শুনে থমকে গিয়েছিল আরেকটি আকাশ! মৃত্যুকে ভালোবেসে বরন করে গিলে খেয়েছে আরেকটি মৃত্যু! এভাবে মৃতরা একদিন আকাশ হয়ে যায়। আকাশের গ্রহ, নক্ষত্র আর তারকারাজির হাত ধরে হেঁটে চলেছে একটি মহাকাল। সে মহাকালের গর্ভে বসে একজন প্রিয়তী এঁকে চলেন একটি অপরাজিতা। ব্যাবচ্ছেদ করা একটি ফুলের গল্প! গল্পের নটনটিরা ইট কাঠ পাথরে গড়া মূর্তির মতন জীবনকে চেটে খায়। জীবনটাকে বেছে নিয়েছে তারা নির্বিকার উপহাসের মতন। হে মৃত্যু, আপনি একজন ভাগ্যবান নাগরিক! শুধুমাত্র আপনার জন্য শহরের সমস্ত তলাবিহীন মানুষ ক্ষুধা পেটে গড়ে তুলছেন এক অনবদ্য সভতা! সাধ করে যাকে ডাকা হয় নগর!
অভ্র সে নগরেরই একজন নাগরিক। শার্টের কলারে বেঁধে থাকা ঘামের দুর্গন্ধ একদিন যাকে স্বাধীনতার উপহাস তুলে দিত খাবারের প্লেটে! অথচ শহরের পঁচা, আবর্জনা, জানলায় ঝুলে থাকা অন্তর্বাস, আকাশকে গিলে খেয়েছে পরম নির্ভাবনায়। সেই সব নির্ভাবনা পরম ভাবনায় জীর্ণ করে রাখতো এইসব অভ্রদের। অভ্ররা রাষ্ট্রকে ঘৃণা করতে শিখে গেছে। ফলে রাষ্ট্র তাকে কিছু দিতে পারেনি। 'বাঞ্চোদ' বলে সুতীব্র ঘৃণায় গালাগাল করে উড়িয়ে দেয় একজন হাস্যরত বুদ্ধকে! এইসব বুদ্ধরা শেষমেশ শান্তি দিতে পারেনি অভ্রদের। যেহেতু বুদ্ধ আর কোন রাষ্ট্রীয় অর্জন নয়। অতএব, সমকালীন রাষ্ট্রকেও অভ্র কিছু দিতে পারেনি।
অভ্র জেনে গেছে, সমকালীন রাষ্ট্রের মানুষ জাগতিক অভাবের কাছে হার মেনে আছে। অতএব অভ্র একজন জাগতিক মানুষ! শেষবার চুমু খেয়ে দীর্ঘ নিশ্বাসের ভেতর সে দেখে, তাল গাছের একজন ভুত পরাজিত সৈনিকের মতো হেঁটে যাচ্ছেন একটি ব্যক্তিগত কফিনে। হয়তো এখন সে আকাশের তারা গুনে গুনে খিলখিল করে হাসতে ভুলে গেছে। এ তার শৈশবের ভুত! ক্রয়কৃত মাছের গন্ধে বাড়ি পৌঁছে যায় যে পেত্নি, কৈশরে তার হাত ধরে পুকুরে সাঁতার কেটেছে ভর দুপুরে।
মনুষ্য সদৃশ উপরতলার প্রাণীদের কাছে অভ্র শিখে নিয়েছে তলাবিহীন মানুষের অভিশাপ। অথচ সেও একজন মানুষ! তার দল নেই, বল নেই, কেঁদে উঠবার অনুভূতি নেই। কিংবা অবাক বনে যাওয়া শিশুর মন নেই, মৃত্যুকে ভালোবাসবার আরেকটি মৃত্যু নেই। কি এক পরম অনুভূতিহীনতার ভেতর সে খুঁজে বেড়িয়েছে একজন প্রিয়তী। যিনি লিখে চলেন একটি অপরাজিতা। ব্যাবচ্ছেদ করা একটি ফুলের গল্প!
অভ্র বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতোন এক বিচ্ছিন্ন জীবনের প্রতিচ্ছবি। অথচ প্রিয়তী ভেঙ্গে চলেছেন এক অনিশ্চয়তার পাহাড়! একটি কাকতালীয় জীবনকে হাস্যমুখে বিদায় জানানোতে অসুবিধা ছিলো না তার, মৃত্যুকে উপহাস করে জীবন খুঁজে নিতে হয়েছিল যার জন্যে তার নাম প্রিয়তী।
-তুমি আসবে তো? চলে এসো কিন্তু!
-দেখি, এলে জানাবো।
ভালোবাসাকে খেলো করে না অভ্র। প্রিয়তী নিজেও! কিন্তু সেইসব ভালোবাসারা যারা আজও ডিঙ্গাতে পারেনি অনিশ্চয়তার পাহাড়। সেইসব ভালোবাসারা যারা আজও পরষ্পরের জন্যে নিশ্চিত হতে পারেনি বিত্তের কাছে। কিংবা যারা দারিদ্র্যে পীড়িত, ক্ষুধা পেটে তারাও কি রাতগভীরে নাগরের ঠোটে চুমু খায়? পৃথিবীর আদিতম আনন্দে কাটিয়ে দেয় একটি রাত!

প্রিয়তী সেদিন ফিরে এসেছিলো। তাকে ফিরে আসতেই হতো। যেহেতু সে মৃত্যুকে হাতের মুঠোয় রেখে বাঁচতে শিখেছে। নয়তো অভ্র'র জন্য তার মায়া হয়। অভ্রকে সে ভালোবেসেছিলো শর্ত বিহীন এক জীবন নিয়ে। এই এক মহান ভালোবাসার দায় কাঁধে নিয়ে বেঁচে থাকার নাম দিয়েছে সে জীবন! তবু তো মানুষ মরে যায়। মানুষের মৃত্যুই মানুষকে বেঁচে থাকা শেখায়। কিংবা মানুষ ক্লান্ত হয়, চোখের কোনে পানি জমে! অসহায় হয়ে পড়ে বিত্তের কাছে। অর্থ-বিত্তের কাছে মানুষের বেঁচে থাকাকে জিম্মি করে রাখে সুমহান রাষ্ট্র! শুধুমাত্র রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় শাষনকে টিকিয়ে রাখার দায় প্রিয়তীকে কেউ দেয়নি। সুতরাং অভ্রকে সে ভালোবাসবেনা কেন?
একান্ত একটি ব্যাক্তিগত জানলার ধারে প্রিয়তী দেখে মানুষ, আসলে মানুষ নয়। রাষ্ট্র! ওই যে একটা লোক রাস্তায় ভ্যান গাড়ি নিয়ে বিক্রি করছে তরকারী। ফুলকপি, গাজর, শিম, বাঁধাকপি, পেঁয়াজ, আলু, পটল, চিচিঙ্গা, কাঁচা মরিচ ইত্যাদি। বিক্রেতা মধ্যবয়স্ক, পঁয়তাল্লিশ বছর বয়স। স্বাধীনতা দেখেনি, তবে তার জীবদ্দশায় রাষ্ট্র বদলে গেছে কয়েকবার। একবার স্বৈরশাসনের পতন তার চোখের সামনেই ঘটেছে। সে সময়টা তাকে কেমন করে নাড়া দিয়েছে তা এখন আর চোখ দেখে বোঝা যায় না। এখন সে স্বৈরশাসনের সংজ্ঞা জানে না। কিংবা তার এই আলু, পটল, পেঁয়াজ বিক্রির জীবনে স্বৈরশাসনের সংজ্ঞা কেউ ধরিয়ে দেয়নি। আচ্ছা লোকটা কি জানে মুক্তবাজার কাকে বলে! হয়তো সে জানে না। অথচ সে কী পরম নির্ভাবনায় বিক্রি করে চলছে তুর্কিস্তানের পেঁয়াজ! যার মূল্য কেজি দরে আড়াই'শ টাকা! পঁচিশ টাকায় সে দেশি পেঁয়াজ পাঁচটি এবং তুর্কিস্তানের পেঁয়াজ বিক্রি করে দু'টি! আচ্ছা লোকটা কি নিজে এক কেজি পেঁয়াজ কেনার সামর্থ্য রাখেন!
প্রিয়তীর মনে পড়ে রেল লাইনের পাশে টং দোকানে এক কাপ চা, একটা পাউরুটি এবং একটা সিগারেট দুপুরের ভাত
চলবে...

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ৯:২৩

রাজীব নুর বলেছেন: অভ্র মতোন ছেলে এদেশে বহু আছে।
তাদের ভীষন কষ্ট। অথচ ওরা চুপ করে থাকে।

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১০:১৮

শাহাদাত নোমান বলেছেন: হুম। তাদের চুপ করে থাকতে হয়।

২| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:২৪

দজিয়েব বলেছেন: খুব সুন্দর।

২০ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:৩৫

শাহাদাত নোমান বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.