নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাষ্ট্র মামা কিডা? তারে আমি চিনি না।

শাহাদাত নোমান

আমি শুধু রাতের মানুষ!

শাহাদাত নোমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্ষুধা বনাম করোনা ভাইরাস

২০ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:১৩

আমাদের পৃথিবী এখন দাঁড়িয়ে আছে দেড় লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর মিছিলের মাঝে। আমি মৃত মানুষদের দেখতে পাই। দেখতে পাই রাষ্ট্রের করালঘাতের ভেতর নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষ। এখন যারা মৃত। কিংবা যারা আগত মৃত্যুর প্রতীক্ষায়। এসব জরাগ্রস্থ মৃত্যু আমাকে মনে করিয়ে দেয় প্রাচীন গ্রীসের রাষ্ট্রিয় কাঠামোর অন্ধকার প্রকোষ্ঠের করালঘাত। যেখানে দূর্বল, অসহায়, অন্ধ, বিকলাঙ্গ এবং উৎপাদন ব্যাবস্থায় অংশগ্রহনে অক্ষম মানুষদের হত্যা। এখানে রাষ্ট্র মনে করে এসব জনগোষ্ঠী রাষ্ট্রের পক্ষে অভিশাপ। যাদের দিয়ে রাষ্ট্রের উন্নয়ন সম্ভব নয়, তারা রাষ্ট্রের জন্য জঞ্জাল। জঞ্জাল নিয়ে একটি রাষ্ট্র প্রগতির দিকে ধাবিত হতে পারে না। অতঃপর তাদের হত্যা করাটা অনাগত ভবিষ্যতের জন্য কল্যানকর।
অধুনা কালে রাষ্ট্র কাঠামো বেশ বদলে গেছে। বদলে গেছে প্রগতির সংজ্ঞা। এখন শারীরিক এবং মানসিকভাবে দুর্বল মানুষ সমাজিক প্রগতির বিশাল চারণ ভূমিতে প্রগতির বীজ বুনে। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা না জন্মালে আজকের আধুনিকতা কয়েকশ বছর পেছনে হাবুডুবু খেত বটে! যেমন ধরা যাক হোমার। ভদ্রলোক অন্ধ ছিলেন। কিন্তু তার এই অন্ধত্ব পৃথিবীর সাহিত্যের চোখে আলো দিয়েছে। একেবারে অধুনাকালের শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক স্টিফেন হকিন্স! শারিরীকভাবে অক্ষম একজন মানুষ চিন্তার জগতে পৃথিবী দাপিয়ে বেড়ালেন। তাহলে কেউ কেউ দুর্বলতা অতিক্রম করে ওঠেন। কারন দুর্বলতা একজন মানুষের ভেতর তৈরী করে টিকে অদম্য ইচ্ছা। সে টিকে থাকার ইচ্ছাই পৃথিবী ভরে ওঠে আরও উৎপাদনশীলতায়। পৃথিবীতে খাদ্য উৎপাদনের যেমন প্রয়োজন আছে, তেমনি আছে চিন্তার উৎপাদন। এরই মধ্যে সমন্বয় ঘটে পৃথিবীর। এই প্রকৃতির নিয়ম।
তবে পৃথিবীর হাজারও সৌন্দর্যের ভেতর কদাকার, কদর্যপূর্ণ কিছু চর্চাও রয়েছে। তার মধ্যে গত শতকের ইতিহাসে সমগ্র পৃথিবী দুটো বিশ্বযুদ্ধ, কতক মহামারী এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছে। আর এসবের ফলাফল হিসেবে উৎপন্ন হয়েছে ক্ষুধা, দারিদ্রতা, শ্রেনীর দ্বন্ধ এবং মৃত্যু। হাজার বছর ধরে হোমো সেপিন্স নামক এই প্রানীদের কাছে জরা, ক্ষুধা, দারিদ্রতা এবং শ্রেনীর সংঘাত নতুন কিছু নয়। কিন্তু ক্রমাগত আধুনিকতা চর্চার ফসল হিসেবে আজকের এই মহামারী আমাদের কাম্য নয়। আমার মনে পড়ে প্লেগ নামক মহামারীতে পৃথিবী আক্রান্ত হয়েছিলো গত শতকেই। সেবারই প্রথম সরকারী ডাক্তার বলে একটি টার্ম প্রচলিত হয়েছিল। অথচ তখনকার সময়ে সে মহামারীকে তোয়াক্কা না করার সাহস দেখাতে পারেনি চিকিৎসা বিজ্ঞান। সে সময়ের একজন হাতুড়ি ডাক্তার তার ডাইরীতে অল্প বিস্তর লেখা পড়ার সুযোগ আমার হয়েছিলো। আমি তার লেখায় দেখতে পেলাম, কিভাবে মানুষগুলি অন্ধ বিশ্বাসে জর্জরিত হয়েছিল। তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস তাদের মস্তিষ্ক হতে যুক্তি তৈরী করার ক্ষমতা বিলুপ্ত করেছিলো। মহামারী খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত করেছিল, লোকেরা ক্ষুধায় হিংস্র জানোয়ারের মতো আচরণ শুরু করেছিলো।
পৃথিবী একটা ভয়ংকর অভিজ্ঞতা লব্ধ করেছে প্লেগ মহামারীতে। কিন্তু সেসব অভিজ্ঞতা আজকের পৃথিবীকে কতটুকুই বা পটু করে তুলেছে! আমি খুব সহজ ভাষায় বুঝে থাকি যে, পৃথিবীর বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে সে জ্ঞান সঞ্চার করে। সেসব জ্ঞান সময় এবং প্রয়োজনের স্বার্থে ব্যাবহার করে ক্রমাগত আধুনিক হতে থাকে। এটাই পৃথিবীর ধর্ম। কিন্তু আজ ২০২০ এসে আসন্ন মহামারীর ভেতর বসে, বিগত শতকের লব্ধ জ্ঞানকে যেন নিতান্ত সিনেমার গল্পের মতো আলমারিতে তুলে মাঝে মাঝে খুলে দেখা ছাড়া আর কোনো কাজে এলো বলে মনে হয় না। নাকি এই মহামারী এবং মানুষের মৃত্যুর মিছিলের ভেতর অন্য কোন প্রয়োজন মেটায় রাষ্ট্র?

সার্স কোভিড ১৯ নামের একটি ভাইরাস, সাধারণভাবে করোনা ভাইরাস নামে আলোচিত। যার উৎপত্তিস্থল হিসেবে ধরা হয় চিনের উহান শহরকে। উহান শহরে লোকেদের খাদ্যভ্যাস এই ভাইরাস ছড়ানোর কারন হিসেবে অনেকে দাবী করলেও এই চিন্তা নিতান্তই রেসিজমকেই প্রমোট করে। মানুষের বৈচিত্রতা উদযাপনের বিষয়, ঘেন্না করার নয়। কিন্তু এটাও মেনে নিয়ে খাদ্যভ্যাস তৈরী করা উচিৎ যে আমরা বন্য কিছু খাবো না, প্রকৃতি ধ্বংস করবো না। যা খাবো নিজেরা উৎপাদন করে খাবো। করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় অজস্র মানুষ উহানে মারা পড়েছে। এরই মধ্যে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বলে এক ধরণের দোষারোপের রাজনীতি খেলে যাচ্ছে বিশ্ববাসী। দ্য ডিপ্লোম্যাট জার্নালে প্রকাশিত হওয়া মু চুনসাং এর একটা আর্টিকেলে তিনি বলেন, ''উহানবাসী যখন করোনায় পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি আক্রান্ত, এবং মরে গেছে দু হাজারেরও বেশি! তখন যুক্ত রাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যান পল গোসার এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারী মাইক পম্পেও একে আখ্যা দেন "উহান ভাইরাস" হিসেবে।'' আমি চাইনাবাসীদের উপর আবর্তিত এই দোষারোপ ঢাকবার দায়িত্ব নেই নি। কিন্তু একটা স্বাভাবিক প্রশ্ন উঠে আসে যে উহান তো নিজেই ভিক্টিম! তাহলে তার বিরুদ্ধে জীবানু অস্ত্র দিয়ে হামলা করার অভিযোগ কেন?
আর এসবের ভেতর বসে ঝাউ লিজিয়ান নামক এক ভদ্রলোক টুইটারে দাবি করে বসলেন যে এই ভাইরাস চিনে আমদানি করে বসলো আমেরিকার খেলোয়াড় যারা চিনে খেলতে এসছেন। কিন্তু তাতেও একটা খুব মৌলিক প্রশ্ন উঠে আসে, করোনায় আক্রান্ত একজন ব্যাক্তি অন্য দেশে খেলতে যাবার জন্য শারিরীক সক্ষমতা রাখেন? তাছাড়া খেলোয়াড়দের কি ফিজিক্যাল টেস্ট হয় না! আমাদের দেশে তো মাশরাফীরা হাঁটু ব্যাথায় বাদ পড়ে যান। আর শ্বাস কষ্টে ভুগতে থাকা একজন খেলোয়াড় যাবেন অন্য দেশে খেলতে!

সে যাই হোক এই সব ষড়যন্ত্র তত্ত্বের সবচেয়ে ভালো আউটপুট নিল ইরান। সেখানে করোনা দেখা দিলে তারা ঘোষনা করে আমেরিকা, চিন এবং ইরানের উপর জীবানু অস্ত্র প্রয়োগ করেছে। তারা একটি অভিনব পদ্ধতী উদ্ভাবন করে করোনা মোকাবেলায়। বিশ্বের আমজনতার কাছ হতে চাঁদা তুলে করোনা প্রতিহত করে। সেখানে চাইনিজরাও অংশগ্রহন করে। তাদের অংশগহনের পেছনে ইরান প্রীতি নয়, বরং আমেরিকা বিদ্বেষই কাজ করেছে। অথচ বিশ্বের অন্যান্য মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির চেয়ে আমেরিকার কোম্পানিগুলো করোনা মোকাবেলায় চিনকে অনেক বেশি আন্তরিকতার সাথে সাহায্য করেছে।

আর এদিকে আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারত, তাদের কাছে আছে আরও বিরাট অস্ত্র! নাম তার 'প্রোপাগান্ডা'! চিনের সাথে তার বর্ডারের ক্ষোভ ঐতিহাসিক। খুব বেশি নয়, ভারতের বামপন্থিরা চিনকে যেভাবে বিশেষায়িত করে সেটা ভারতের আপামর জনগণ মেনে নিতে শেখেনি। ঐতিহাসিকভাবে আমাদের ভারতবর্ষ সমাজতন্ত্র বোঝেনি, একটা কল্পিত আদর্শ সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র কল্পনা করে তা কায়েম করতে চেয়েছে হালের বামপন্থিরা। জনতার সাথে তাদের নানা ধরণের দুরত্ব তৈরী হয়েছে। জনতা তাদের ভাষা বোঝেনি। ভারতের বামপন্থি নেতারা ঘোষনা করে, সারা বিশ্ব চিনবাসীদের সামাজিক দুরত্ব রাখার কথা প্রচার করে তাদের অবহেলা করছে। তারা একটা মুভমেন্টের ডাক দিয়েছে যেখানে তারা বিশ্ববাসীকে আহবান করে যে, চীনবাসীদের সাথে সামাজিক দুরত্ব প্রতিহত করার। ফলে আমজনতা তাদের গ্রহন করবে কেন? আর ভারতের অন্যান্য অঞ্চল যেখানে গোমাতাই সর্বরোগের সমাধান, সেখানে তারা গোমুত্রই করোনার প্রতিষেধক হিসেবে আবিষ্কার করেছে। কিন্তু তা আমার আলাপের বিষয় নয়, কেননা ৪৭ এর পর থেকে তারা বিভিন্ন রাজ্যে কি ধরণের শিক্ষা সরবরাহ করেছে সেটা তার নমুনা মাত্র। তবে ভারতের জন্য রইলো শুভকামনা। কারন আমি ৪৭ এর বিভাজন মেনে নিতে শিখিনি।

আমাদের বাংলাদেশ এবছর একটা ঐতিহাসিক এবং স্মরণযোগ্য সময় পার করছে। কিছুদিন আগে আমরা বাংলা নববর্ষে পা দিয়েছি। আমাদের জনগণ সেটা স্বাভাবিক ভাবে পালন করতে পারেনি। তারও কিছুদিন আগে আমাদের মুজিববর্ষ পালনের আয়োজন ব্যাহত হয়েছে। আমরা গত একটি মাস গৃহবন্দি হয়ে বেঁচে আছি। ফলে এই বছরটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি দুঃখজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে।

বাংলাদেশে করোনা আক্রান্ত করেছে লোকেদের ফুসফুসে, কিন্তু অসুস্থ হয়েছে মানুষের মস্তিষ্ক! এদেশে প্রায় বিশ কোটি জনগণ আর তার আয়তন সে বিচারে খুবই ক্ষুদ্র! ফলে লোকেদের বসবাসের ঘনত্ব অনেক বেশি। আমাদের ঢাকা শহরে মানুষ ঘর থেকে বের হলেই হিউম্যান ট্র্যাফিক জ্যামে আটকা পড়ে যায়। সেখানে সামাজিক যে দুরুত্বের কথা বলা হয় সেটা পালন করাটা আরও বেশি শক্ত। আমাদের রাষ্ট্রটির বয়স হয়েছে ৪৯ বছর। আগামী বছর এই মহামারী না থাকলে আমরা অর্ধশত বছর বার্ষিকী উদযাপন করতাম। কিন্তু তা এই সময়ে এসে আমরা ভাবতে পারছিনা। সে বিচারে আমরা গত পঞ্চাশ বছরে আমাদের দেশকে কিভাবে গড়ে তুলেছি সেটার একটা নমুনা তুলে ধরা যাক। দুই দশক আগে আমাদের দেশে একজন পন্ডিত ছিলেন। নাম তার আহমদ ছফা। দেশের বয়স পঞ্চাশ যেখানে, সেখানে চল্লিশ বছর আগে 'বাঙ্গালি মুসলমানের মন' নামের একটি গ্রন্থে বলেন-

"ইতিহাসে বিশ ত্রিশ বছর কোন দীর্ঘ সময় নয়। বাঙ্গালি মুসলমান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠা করেছে সে রাষ্ট্রের সংকটের অন্ত নেই, কোথাও কোন দিক-নির্দেশনার চিহ্ন পরিদৃশ্যমান নয়। সামাজিক সভ্য এবং ধর্মীয় কুসংস্কার সাম্প্রতিককালে এমন প্রচন্ড আকার নিয়ে দেখা দিয়েছে,অনেক সময় মনে হয় এই জাতি মেরুদণ্ডের উপর থিতু হয়ে কোনদিন দাঁড়াতে পারবেনা। মধ্যযুগীয় ভূত এই জাতিকে এমনভাবে আষ্ট্রে-পৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে তার নাগপাশ কখন কিভাবে ছাড়াতে পারবে একথা এখন একরকম চিন্তা করাও অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।"

আমি খুব আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম, ছফা চল্লিশ বছর আগে যে সংকট অনুভব করেছিলেন আজ চল্লিশ বছর পরেও আমাদের সেই একই সংকটের মুখোমুখি দাঁড়াতে হচ্ছে। তাহলে গত চল্লিশ বছরে আমাদের রাষ্ট্রটি একটুকুও বদলায় নি? বাঙ্গালি মুসলমানের কাছে করোনা কেবলই আল্লাহর গজব! আর এই গজব থেকে উদ্ধার পেতে লাখ লাখ মুসল্লি জমায়েত হয়ে মোনাজাত করেন। জানাজা পড়তে যান সিলেট থেকে বি-বাড়িয়ায়! বাংলাদেশের মসজিদ কেউ বন্ধ করতে পারবেনা বলে হুমকি ধামকি দেন। অথচ মুসলমানদের কিবলা মক্কা মদিনা লক ডাউন। আমি মাঝে মাঝে অবাক হয়ে ভাবি, বাংলার হুজুররা কত বেশি পীরে মুর্শিদ! মক্কার আলেমদের হিসেবেই ধরেন না! এছাড়া নানা রকমের আজগুবি তথ্যের সমাহার এবং স্বপ্নের ব্যাখ্যার ছড়াছড়ি! আমি হুজুরদের শিক্ষা এবং স্কুলিং সম্পর্কে কিঞ্চিৎ ধারণা রাখি। কারন আমার জীবনের শুরুটা ছিলো কওমি মাদ্রাসার স্কুলিং দিয়ে। ফলে তাদের এহেন আলাপকে আমি গুরুত্ব দেই না। কিন্তু অবাক হতে হয়, ইংরেজী বাংলা বিজ্ঞান পড়া লোকেরা লকডাউনের নীতি ভেঙ্গে মসজিদে যাবার ব্যাপারে ব্যাপক আগ্রহী। এদের আগ্রহের কারন কি? এদের শিক্ষায় কোথায় গলদ ছিলো? প্রতিটি রাষ্ট্র তার নিজের পক্ষের সুবিধাজনক শিক্ষাই তার জনগোষ্ঠিকে সরবরাহ করে। আমাদের রাষ্ট্র ভেবেছিল যে, এমন জ্ঞানের প্রয়োজন নেই যে জ্ঞানের ফলে সে বৈপ্লবিক চিন্তার চর্চা করতে পারে। তাহলে শাষন টিকিয়ে রাখতে সুবিধা হয়। ফলে আমাদের দেশের পোস্ট গ্র্যাজুয়েটরা ভোট দিয়ে নির্বাচন করেন এইট পাশ প্রতিনিধি! আমি নিতান্ত একজন মানুষ, ফলে এতোটা নগ্নভাবে কথা বলাটা আমারই সাজে। তাই নয় কি!

একটা গল্প বলি, আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকি তার পাশের একটা ছোট্ট গ্রামে বাস করেন একজন কাঠ মিস্ত্রি। আমি তার জীবনের গল্প অল্প বিস্তর জানি। তিনি জীবনের নানা সংকট মোকাবেলা করে বাড়ি থেকে পালিয়ে কিভাবে মিস্ত্রি হয়ে ক্যারিয়ার গড়লেন তার সমস্তটাই আমার জানা। করোনা এট্যাকের ফলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হলো। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে মেয়েরা আনন্দে বগলদাবা হয়ে বাড়ি যাচ্ছে। বহুদিন পর ছুটি বলে কথা! একদিন সন্ধ্যায় খুব আফসোস করে সেই মিস্ত্রি আমাকে বললো- ''দেশে আল্লাহর গজব আইসা পড়লো। এখন এই গজব থেকে আমরা উদ্ধার পামু ক্যামনে। কাম কাজ সব বন্ধ করে দিলে এখন তো আমরা গরীব মানুষ না খেয়ে মরমু।" একেবারে খাঁটি কথা। তার পাশের একজন রিকশাওয়ালা সায় দিলেন। দেশের বেশিরভাগ "মুসলমান বাঙ্গালি"র একই মত! তো আমি খুব দায়িত্ব নিয়ে তাকে একটি রুপকথার গল্প শোনালাম। বললাম- আগে কখনও করোনা ভাইরাসের কথা শুনেছেন? সে বললো- না! আমি বললাম- আজ থেকে হাজার হাজার বছর আগে যখন পৃথিবীতে মানুষ ছিলো না। পৃথিবীতে তখন জ্বীনের রাজত্ব ছিল। জ্বীনের অত্যাচার পৃথিবীতে বেড়ে গেলে আল্লাহ তাদের ধংস করে দেন। সেই জ্বীনকে ইংরেজীতে বলে ডাইনোসর। এইসব বড় বড় ডাইনোসোরগুলো বরফের দেশে মারা গেছে ফলে তারা বরফে জমে গেছে। এখন পৃথিবীতে প্রয়োজনের চেয়ে মানুষ অনেক বেড়ে গেছে। ফলে মানুষের নিশ্বাসের গরম, কলখারনার গরম বেড়ে সে বরফগুলা গলে পানি হয়ে সমুদ্রের পানির সাথে মিশে গেছে। সেই বরফগলা পানির সাথে জ্বীনের গায়ে উৎপাদিত ভাইরাস গুলা সমুদ্রের মাছের সাথে মিশে মানুষের শরীরে ঢুকেছে। এখন এই ভাইরাসের জন্যেই পৃথিবীর এই দশা।
লোকটা আমাকে আশ্চর্য করে দিয়ে এই গল্পটা বিশ্বাস করে নিয়েছে। এবং সে বিশ্বাস করে নিয়েছে গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর জন্য পৃথিবী দিন দিন ধংস হতে যাচ্ছে। এখন তার কাছে জনসংখ্যার ক্রম বৃদ্ধি, কলখারখানার ধোঁয়া মারাত্মক শত্রু হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। মানুষই মানুষের বিপর্যয়ের কারন।

কিছুদিন পূর্বে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বন্ধু কামরুল হাসান শাওন তার একটি লেখায় মহামারীতে পরিবেশের উপর ডোমিনো এফেক্ট নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। তার ভাষ্যমতে,

"কোভিড-১৯ মহামারী এই নিওলিবারেল অর্থনীতির জন্য চরম হুমকি স্বরূপ। এই মহামারী যতদিন বিদ্যমান থাকবে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ-ও ততটাই বাড়তে থাকবে, নিওলিবারেল অর্থনীতি মরিয়া হয়ে এই ক্ষতি পোষানোর চেষ্টা করবে। আর ক্ষতি পোষানোর এই চেষ্টার কারণেই কার্বন নিঃসরণ কমানো হয়ে উঠবে least priority।"

তাহলে লকডাউনে থাকার ফলে পৃথিবী নিশ্বাস ফেলার যে অবকাশ পেলো, মহামারী পরবর্তি সময়ে তা আবার চিরতরে বন্ধ হতে যাচ্ছে। এরপর আবার নতুন ভাইরাস! আবার লকডাউন, আবার মহামারী। হয়তো ভিন্ন ভিন্ন রুপে। একেই বলে ডোমিনো এফেক্ট! ফলে পৃথিবীকে নবজাতকের জন্য বাসযোগ্য করে যাবার স্বপ্ন কেবল রুপকথাই হয়ে রইলো। তবে আমি এর সমাধান দেবার কেউ নই। কিন্তু এটুকু বলতে পারি পুঁজির বাজারে পরিবেশ বান্ধব যান্ত্রিক আয়োজনের সমন্বয় ঘটানো যেতে পারে।

কিছুদিন আগে, সোশ্যাল মিডিয়াতে একটা ভিডিও ঝড় তুলেছিল। আমি দেখলাম, রাস্তায় নেমে পড়া মানুষ রাষ্ট্রের কাছে তাদের পেটের ক্ষুধার কথা বলছে। একজন মহিলা ক্ষুব্ধ হয়ে বলছেন, "মানুষ পাইলে মানুষও খায়া ফালামু।" এই ভদ্রমহিলার পেটের ক্ষুধার যন্ত্রণা দেখে আমার বিশ্বাস হয়, আমাকে পেলে লবন পানি সহ হাড়িতে চড়াতে খুব বেশি সময় নেবেন না। অথচ একমাস হলো দেশ লকডাউন। আমি গ্রামের খবর কিছু পেয়েছি, ব্যক্তিগত যোগাযোগ মারফত। সরকার কোটি টাকা প্রণোদনা, ত্রান দিয়েছেন। কিন্তু কার কাছে কোথায় আটকে গেলো আমাদের কারো জানা নেই। কিন্তু গ্রামের মানুষ ক্ষুধার যন্ত্রণায় হিংস্র হয়ে উঠছে। কিছুদিন পর তারা মরে যেতে শুরু করবে। অথচ আমাদের পঞ্চাশ বছরের স্বাধীন রাষ্ট্র বসে বসে দেখবে ক্ষুধায় মানুষ মরতে কেমন দেখায়? তাহলে গত পঞ্চাশ বছর ধরে কি করেছিলো এই দেশ? না দিতে পেরেছে সঠিক শিক্ষা, না নিশ্চিত করতে পেরেছে খাদ্য। আচ্ছা চিকিৎসারত করোনা রোগীরা কেমন আছেন হাসপাতলে ? না তারাও ভালো নেই। যাদের করোনা আক্রমন করেছে তারা যেন এই মুহুর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে অভিশপ্ত মানুষ। তাদের কাছে ডাক্তার নার্স কেউ যান না। খাবার দূর থেকে ছুড়ে দেয়া হয়। যারা সেখানে অসুস্থ, তারাই বাথরুম পরিষ্কার করছেন। দু'মুঠো কুড়িয়ে খাচ্ছেন (প্রচলিত সংবাদ মাধ্যম মারফত জানা)। এর মধ্যে কেউ কেউ ভাগ্যক্রমে সুস্থ হয়ে উঠছেন। আর বেসরকারী হাসপাতালের ডাক্তাররা সরকারী মেডিক্যাল কলেজে জনগণের টাকায় পড়ে এখন হাসপাতালের দরজা বন্ধ করে পরিবারের সাথে কোয়ারিন্টিনের ছুটি কাটাচ্ছেন। তাহলে মহান রাষ্ট্র, ব্যক্তি মালিকানা হাসপাতাল করে মোটা দাগের পয়সা ভ্যাট নিয়ে এই চিকিৎসা সেবা জনগণকে দিয়ে যাচ্ছেন? স্বাধীন বাংলাদেশের বয়স যখন পঞ্চাশ, সেখানে এতো বছর স্বাধীন থেকে নিজ দেশের চিকিৎসা ব্যাবস্থার এই দশা কেন? কে আটকালো আপনাকে?

তাহলে আসুন কি দাঁড়ায়! খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা কোনটিই এই রাষ্ট্রটি জনগনকে নিশ্চিৎ করতে পারেনি। রাষ্ট্রের জিডিপি এবং উন্নয়নের যে গালগল্প শুনি বা দেখি তা কেবলই শুভংকরের ফাঁকি! এতো বছর শাসনের নামে যারা লুটপাট করে গেছেন, তারা কি এর জবাব দেবেন?

এতোক্ষনের আলাপে আমার দেখার বিষয় হলো বাংলাদেশ নামক একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র একটি বিকলাঙ্গ রাষ্ট্র। তাহলে রচনার একদম গোড়ার দিকে ফিরে যাওয়া যাক। যেখানে আমি বলেছিলাম প্রাচীন গ্রিসে দুর্বল মানুষেরা রাষ্ট্রের হত্যা যজ্ঞের শিকার হতো। এখনও তাই হবে। শুধু তারাই বেঁচে থাকবে যারা শারিরীক এবং মানসিকভাবে টিকে থাকার সক্ষমতার পরিচয় দেবেন। আজকের আমেরিকা তাই করার চেষ্টা করছে। ট্রাম্প লকডাউন শিথিল করার পক্ষে। কারন তিনি চান না তার মানুষ ক্ষুধায়, অর্থনৈতিক মন্দায় মারা যাক। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সেটা আরও বেশি প্রয়োজন। কারন রোগে মরার চাইতে ক্ষুধায় মরে যাওটা আরও বেশি অমানবিক। আমরা খেতে দিতে পারিনি বলে মানুষ মরে গেলো! এই পাপের প্রায়শ্চিত্য করবেন কিভাবে? খুব সহজ হিসেব, যে সার্ভাইব করার ক্ষমতা রাখেন কেবল তিনিই বেঁচে থাকবেন। কেননা করোনার প্রতিষেধক বাজারে আসতে আসতে বছর দুই এর কম সময় লাগবেনা। এর মধ্যে যারা সুস্থ হয়ে উঠছেন, ধরে নিতে হবে তাদের শরীরে ভাইরাস প্রতিরোধের এন্টবডি তৈরী করে নিয়েছে। এর একটা উদাহরন আজকের আফ্রিকার দিকে তাকালে পাই। সে দেশের মানুষের শরীর এইচ আই ভি ভাইরাস নিয়ে দিব্যি বেঁচে থাকতে সক্ষম। সুতরাং পৃথিবীর যদি ৩০ ভাগ মানুষ যদি প্রতিষেধক বাজারে আসার আগে করোনায় মারাও যায়, তবে মৃত্যুর সংখ্যা অর্থনৈতিক মন্দা সহ ৪০ ভাগ হবে না। অর্থনীতির চাকা বন্ধ হবেনা। তাছাড়া গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর যে যন্ত্রণা তা কেবল মানুষ বৃদ্ধির সাথে সাথে কার্বন নিঃসরনের পরিমান বাড়তে থাকবে। ফলে এটা বললে আমার নিজেকে নিষ্ঠুর মনে হবে না যে, পৃথিবীকে আরও ক'টা বছর বাঁচিয়ে রাখার জন্যে হোমো সেপিন্স নামক এই প্রানীটির প্রাদুর্ভাব কমানো প্রয়োজন। আর যদি মনে করি, দুর্বল মানুষেরাও পৃথিবীর সম্পদ, তাহলে হে মহান রাষ্ট্র! ইতিহাস জুড়ে এতো এতো মহামারী দেখলেন, তো শিখলেন কি?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.