নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিয়াজের ব্লগ ভূবন ( www.niaz.co.uk )

.... তবুও আমি স্বপ্ন দেখি ... (স্বপ্ন, বাস্তব এবং ব্লগের সর্বস্বত্ব ব্লগার কতৃক সংরক্ষিত)

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী

বলার নেই তেমন কিছু!

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিরন্তর ২: অতঃপর (১ম পর্ব)

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ দুপুর ২:২৪

“নিরন্তর” হচ্ছে আমার এক অদ্ভুত ভালো লাগার অনুভূতি। ২০০৮ সনের ঘটনা। একদিন সন্ধ্যায় ডাবলিনে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে বসে বিরক্ত সময় কাটাচ্ছিলাম। হঠাৎ মনে হলো একটা উপন্যাস লেখা শুরু করি। অনেকটা ঝোঁকের মাথায় প্রথম পর্বটা লিখে সামহ্যোয়ারইন ব্লগে পোস্ট করি। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। পাঠকের ভালোবাসায় সিক্ত নিরন্তর আর ব্লগের চৌকাঠে সীমাবদ্ধ থাকে নি। ২০০৯ সনের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বই আকারে প্রকাশিত হয় নিরন্তর। সে সময় জানিয়ে ছিলাম, এই গল্পকে আমি একটা ট্রিলজি হিসেবে দাঁড় করাবো। নিরন্তর হচ্ছে তার প্রথম উপন্যাস। আজ থেকে প্রকাশিত হবে নিরন্তর ট্রিলজির পরবর্তী উপন্যাস “অতঃপর”।



অতঃপর প্রকাশিত হবে সরাসরি আমার ফেইসবুক পেইজ এবং সামহ্যোয়ারইন ব্লগ থেকে। চেষ্টা করবো প্রতি সপ্তাহে অন্তত একটা পর্ব প্রকাশ করার। সে হিসেবে আশা করছি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে উপন্যাসটা শেষ হয়ে যাবে। যারা নিরন্তরের ভক্ত, আশা করবো এই যাত্রায় তাদের পাশে পাবো। যদি উপন্যাসটা আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে আপনার বন্ধুকেও পড়তে আমন্ত্রণ জানান। যারা এখনও প্রথম উপন্যাসটা পড়েন নি, তারা এখান থেকে ডাউনলোড করে পড়ে নিতে পারবেন।







প্রেক্ষাপট: মার্চ ২০১০, ঢাকা



“তোমার নামটাতো সুন্দর, কিন্তু আইডি-টা হন্টেড ডেভিল কেন?”

অভ্র MSN-এর চ্যাট উইন্ডোটার দিকে তাকিয়ে হাসে। রাত গভীর। ঘড়ির কাটা তিনটা ছাড়িয়ে গিয়েছে পনেরো মিনিট আগে। বিছানায় ল্যাপটপ নিয়ে ঝুঁকে বসে চ্যাট করছিল অভ্র। ফেইসবুক থেকে আইডি নিয়ে দুটো নূতন মেয়েকে “এ্যাড রিকোয়েস্ট” পাঠিয়েছিল আজ। তাদের একজন, রেজওয়ানার সাথে কথা হচ্ছিল।

“কেন খারাপ কোথায়?”

“কেমন যেন উইয়ার্ড।”

অভ্র দুষ্টামি করে বলে, “এটা একটা ওয়ার্নিং। আগেই সাবধান করে দিচ্ছে। পরে কিছু বলতে পারবে না কিন্তু!”

“তাই নাকি?” রেজওয়ানা হাসে। তারপর আবার লিখে, “তুমি কী পড়ছো?”

“দ্যাটস অ্যা মিস্ট্রি। খুঁজে বের করার কাজ তোমার।”

“ধুর। তুমি বেশী হেঁয়ালি করো।”

“তাইতো বললাম, দ্যাটস অ্যা মিস্ট্রি।” অভ্র মজা পাচ্ছে চ্যাট করে।

“আচ্ছা বাবা, আমার সব বলছি। আমি সেকেন্ড সেমিস্টারে পড়ছি – IUB। বি.বি.এ। হলো? এবার তোমার ইনফো দাও।”

“কই? তোমার সব ইনফো তো এখনও দাও নি।” অভ্র একটু যেন অবাক হয়েছে এভাবে বলে।

“কী বাদ দিলাম?”

“কত কিছুইতো বাদ দিয়েছো। এই যেমন ধরো হাইট।”

রেজওয়ানা কপট দুষ্টামি করে বলে, “ছেলে! শুতে দিলে বসতে চায়। হাইট পর্যন্তই থকো, বুঝলা? এর থেকে বেশী স্ট্যাট জানার চেষ্টা করবা না, সাবধান।” তারপর বলে, “ফাইভ স্যাভেন।”

“তুমিতো অনেক টল। আই লাভ টল গার্লস। শর্ট মেয়েদের আমার কাছে কেমন যেন গিনিপিগ গিনিপিগ মনে হয়।” অভ্র একটু খুশি করে দেয় রেজওয়ানাকে। বোঝা গেলো অন্যদিক থেকে সে আহ্লাদে গদগদ হচ্ছে।

“তাই? জানো আমার এত হাইট ভালো লাগে না। আরেকটু শর্ট হলে কী ক্ষতি হতো? এখনতো ছেলে পাওয়াও টাফ হয়ে গেছে। দেখো না বুড়ি হয়ে যাচ্ছি কিন্তু এখনও সিঙ্গেল। তার উপর আমি একটু মোটাও। যদিও আমার প্রোফাইল পিক-এ বোঝা যাচ্ছে না কিন্তু থার্ড এ্যালবামের ফোর্থ পিকটা দেখো। ওটায় একটা টাইট কামিজ পড়েছি। কী যে বাজে লাগছে। আমি ঐ পিকটা আজই ডিলিট করবো...।”

অভ্র দেখলো ওকে আর কিছু বলতে হচ্ছে না। রেডিও আপনা-আপনি বেজে চলেছে। লম্বা মেয়েদের এই একটা দুর্বল দিক। তারা যে লম্বা এটা তাদের একবার মনে করিয়ে দিলেই হলো। রেডিও স্বয়ংক্রিয় ভাবে “টিউন” হয়ে যাবে।

অভ্র সেটাকে আরেকটু “ফাইন টিউন” করার জন্যে লিখল, “কে বলে তুমি মোটা? তুমি হেলথি, কিন্তু মোটা না। লিকলিকে মেয়ে আমার একদম পছন্দ না। মনে হয় যেন বাঁশের উপর কাপড় ঝোলানো।”

“আরে জানো, আমারও তাই মনে হয়। কী হয়েছে সেদিন শোন...”, রেডিও নূতন উদ্যামে আবারও বাজতে শুরু করলো।



পৌনে চারটা বাজে। অভ্র হাই তুলতে শুরু করেছে তখন। ঘুমানো দরকার। সকাল বেলা মায়ের চিৎকার শুনতে আর ভালো লাগে না। ঘুম ভাঙ্গে বারোটায়। তাতেই মায়ের যত আপত্তি। আরে ঘুম বারোটায় ভাঙলে তাতে অভ্রর দোষ কোথায়? ঘুমের মধ্যে কি সে ঘুমকে মনিটর করে নাকি যে ঠিক অমুক সময় সে তার ঘুমকে ভাঙ্গিয়ে দেবে?

রেজওয়ানার রেডিও তখনও বেজে চলেছে। “বাই” দিয়ে শুতে যাবে বলে যেই ঠিক করলো অভ্র অমনি MSN-এ অন্য একটা উইন্ডো ভেসে উঠল,

“তুমি অভ্র, তাই না?”

“হ্যা, আপনি কে?”

“বাহ! আমাকে এ্যাড করে এখন নিজেই ভুলে গেলে? দারুণ ছেলেতো তুমি!”

অভ্র দ্রুত আইডিটা দেখে, “ওহ। আনিতা। কেমন আছ? সরি, আমি একদম বুঝতে পারি নি।”

“ইটস ওকে। কিন্তু এবারই প্রথম এবং এবারই শেষ। এই কাজ আরেক দিন করলে সোজা ডিলিট করে দেব কিন্তু; ফেইসবুক এবং MSN – দুটো থেকেই।”

অভ্র হাসে। একটু সরি বলেছে তাতেই কী “পার্ট”। মেয়েদের দুইটা জিনিসের ইলাস্টিসিটি দেখে অভ্র খুব অবাক হয়। প্রথমটা তাদের জিন্স। অপেক্ষাকৃত মোটা মেয়েরাও কীভাবে যেন ভয়াবহ টাইট জিন্সের মধ্যে ঢুকে যায়। আরেকটা তাদের ভাব। কথার মাঝে একবার একটু সুযোগ দিলেই ভাবের সাগরে ভাসতে শুরু করে তারা। ভাবটাকে টানতে টানতে এমন পর্যায়ে নিয়ে যায় যেন আরেকটু হলে ছিড়েই যাবে। তবে আজকে অভ্রর খারাপ লাগছে না। আনিতা মেয়েটা দেখতে দারুণ।

অভ্র আবার লিখে, “আচ্ছা বাবা। এই ভুল আর হবে না।” তারপর আবার বলে, “তুমিতো ব্র্যাকে পড়ো? তাই না?”

“হ্যা। আমি আর্কিতে আছি। এটা আমার থার্ড সেম। তুমি কী পড়ো?”

“দ্যাটস অ্যা মিস্ট্রি!” অভ্র ল্যাপটপের সামনে বসে হাসতে হাসতে লিখে।

“বেশী মিস্ট্রিয়াস হতে যেয়ো না। আমার মিস্ট্রির পাল্লায় পড়লে কেঁদে কূল পাবা না।”

“আচ্ছা, তাই নাকি? তুমিতো অনেক ছোটখাটো। এত পিচ্চি মেয়ে আমাকে থ্রেট দিচ্ছো?” অভ্র মজা করে লিখে।

“ওহ। শর্ট বলে খোঁচা দিচ্ছো?”

“ওহ গড। সেটা বলি নি।”

“তাইতো বললা।”

“আরে নাহ। ইউ নো হোয়াট? আই লাভ শর্ট গার্লস। লম্বা মেয়েদের আমার কাছে কেমন যেন ঘোড়া ঘোড়া লাগে। শর্টদের অনেক কিউট লাগে।”

আনিতা একটা স্মাইলি দিল। মনে হয় বেশ খুশি হয়েছে। তারপর লিখলো, “তবুও আমার অনেক দুঃখ হাইট নিয়ে। আরেকটু লম্বা হলে কী ক্ষতি হতো?”

“তোমার হাইট কতো?”

“মাত্র পাঁচ এক। তবে আমিতো অনেক স্লিম। তাই মানিয়ে যায়।”

“আরে তুমিতো পার্ফেক্ট। বাঙ্গালী মেয়েদের এমনই হাইট হয়। তার উপর তোমার ফিগার ভালো। হাইট নিয়ে চিন্তা করবা না। মাথায় রাখবা যেন মোটা না হও। মোটা মেয়ে আমার একদম অসহ্য লাগে। সালোয়ার কামিজ পরলে মনে হয় যেন সার্কাসের প্যান্ডেল।”



হঠাৎ অভ্রর ফোন বেজে উঠায় চ্যাট থেকে ওর মনোযোগ সরে যায়। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে এত রাতে কে কল দিল। তারপর ডিসপ্লেতে নামটা দেখে খুশি খুশি গলায় ফোনটা ধরে,

“ব্রো!”

“তোকে কতবার মানা করেছি আমাকে ব্রো ব্রো করবি না। যত্তসব ইয়ো জেনারেশন। ভাইয়া ডাকবি। ভ-এ আকার, হ্রস্ব ই, অন্তস্থ অ-এ আকার।”

“ধুর ব্রো, তুমি একদমই ব্যাকডেটেড। ব্রোর মধ্যে একটা ভাব আছে। ঐটা ভাইয়ার মধ্যে নাই।”

“হায়রে আমার ভাব! এই ভাব তোদের জেনারেশনটার মাথাটা নষ্ট করলো। ভাব কপচাতে কপচাতে কী করছিলি? বয়সে বড় ইউনিভার্সিটির মেয়েদের সাথে চ্যাট, তাই না?”

অভ্র হাসে, কিছু বলে না।

“মেয়েগুলা কি জানে তুই কয়েক মাস আগে ও লেভেল শেষ করেছিস? তোর এক বছর স্ট্যাডি গ্যাপ আছে মানলাম – কিন্তু তবুও ঐ মেয়েগুলো তোর থেকে অন্তত এক-দেড় বছরের বড়। নাকি তোর হাইট দেখে ভাবছে কী আমার ড্যাশিং ডুড।”

এবার অভ্রর রাগ লাগে। দ্রুত বলে, “ব্রো, পার্সোনালিটি বয়স বা হাইটে থাকে না, এ্যাটিটুডে থাকে। মেয়েরা আমার সাথে মেশে সেই এ্যাটিটুডের জন্য।”

“তোর এ্যাটিটুড নিয়ে তুই থাক। যে জন্যে ফোন দিলাম সেটা বলি। এই মাসের শেষ শুক্রবার আমার এক ফ্রেন্ডের বড় বোনের হলুদ। ওখানে বাজাতে পারবি? ব্যান্ড আমার ফ্রেন্ডের। ওদের বেইজিস্ট হঠাৎ ঢাকার বাইরে গেছে। আমার তোর কথা মনে হলো।”

“ব্রো, আমি আমার ব্যান্ড ছাড়া বাজাইনা।”

“ঢং বন্ধ কর। কী আমার ব্যান্ড!”

“সেইটাও মানা যাবে, কিন্তু আমি সব সময় লিড বাজাই। বেইজ বাজায়ে মজা নাই।”

“তোকেতো মজা করতে ডাকা হচ্ছে না। হেল্প করতে ডাকা হচ্ছে। আর তাছাড়া অনেক চিক্স আসবে। ডোন মিস দিস চান্স মাই বো-রো।”

অভ্র কয়েক সেকেন্ড চিন্তা করে বলে, “ঠিক আছে, আমি যাবো। তবে আমি আমার মত বাজাবো। চিল্লানো যাবে না আমার উপর।”

“সেটা সময় মত দেখা যাবে। মূল প্রোগ্রামের আগে এক দুইবার জ্যামিং-এ যাবো আমরা। তারপর বোঝা যাবে কে কী বাজাবে।”

“আবার জ্যামিং-এও যাইতে হবে?” মনেমনে ভাবে অভ্র, কিন্তু মুখে কিছু বলে না। “চিক্স” শব্দটা তখন মুলার মত বেচারার নাকের সামনে ঘুরছে। ফোনের অপর প্রান্তের মানুষটার অভ্রর মনের অবস্থা বুঝে নিতে কষ্ট হয় না। তাই সে হাসে। তারপর বলে, “অত চিন্তা করতে হবে না। যা হবার পরে দেখা যাবে। এখন সোজা ঘুমাতে যা।”

অভ্রও হাসে। তারপর শয়তানীর স্বরে জবাব দেয়, “আচ্ছা, আকাশ ভা-ই-য়া।”



অভ্র আকাশের মামাতো ভাই। বয়সে চার বছরের ছোট হলেও আকাশের সাথে ওর রয়েছে এক অন্য রকম বন্ধুত্ব। আকাশদের পরের জেনারেশনের প্রতিনিধি তারা। এরা আকাশদের থেকেও ভয়াবহ। নিজেদের মধ্যে কথা বলবে প্রমিত বাংলার চরম বিকৃত রুপে, এ্যাকসেন্ট থাকবে ইয়ো ধরণের, প্যান্টটা কোনক্রমে পশ্চাতদেশ থেকে ইঞ্চি ছয়েক নীচে ঝুলে থাকবে, শরীরে অর্থাৎ গলায়, হাতে, কোমরে এত এত মেটাল থাকবে যে তাদের যদি ভুল করে মেটাল ডিটেক্টরের মধ্য দিয়ে পাঠানো হয় তো সেই মেটাল ডিটেক্টর নষ্ট হয়ে যাবে। তাদের নাক-ঠোট-ভ্রু-জিভ কোনটাই পিয়ার্সিং এর হাত থেকে রেহাই পায় না। কোন দিন যদি এরা মেয়েদের মত পায়ে নূপুর পরা শুরু করে তাহলেও আকাশ অবাক হবে না। এক বাক্যে বাংলাদেশে তৈরি হওয়া এই ইয়ো জেনারেশন ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত প্রথম রোমান সম্রাট অগাস্টাসের ঝলসে যাওয়া মুখের ছাঁচের পাশে স্থান পাবার যোগ্যতা রাখে!



অভ্রর ফোন রেখে আকাশ ঘড়ির দিকে তাকায়। চারটার বেশী বাজে। সূর্যোদয় বঞ্চিত প্রজন্মের প্রতিনিধিরা একে একে ঘুমাতে যাচ্ছে এখন। আকাশও ঘুমাতে যাবে। তবে তার আগে আরেকটা ফোন করা দরকার। প্লে-লিস্টেই থাকা একটা বিশেষ নাম্বারে আকাশ কল করে। দুইবার রিং হবার পর বিজি লেখা ভেসে উঠে। আকাশ বোঝে, লাইনটা কেটে দেয়া হয়েছে। এত দ্রুত ধৈর্য হারাবার পাত্র আকাশ নয়। আবার কল করে। আবার লাইন কেটে দেয় অন্য দিকের মানুষটা। আকাশ আবারও কল দেয়। এভাবে প্রায় দশ-বারোবার কল দেয়ার পর আকাশ হাল ছেড়ে দেয়। তবে মনেমনে ভাবে, “তোমাকে আমি ফোন ধরিয়েই ছাড়বো। শুধু সময় লাগছে কিছু দিন, এই আর কী!” (চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.