![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আগে থেকে কোন প্রকার জানান না দিয়েই সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয়ে গেলো তমুল বৃষ্টি। গ্রীষ্মের এটাই যেন নিয়ম।এমন বৃষ্টির দিনগুলোতে মনটাও যেন ঘুরেফিরে স্মৃতির ঐ একটা কুঠুরির সামনে গিয়ে দাড়ায় যে কুঠুরিতে সযত্নে রাখা আছে আমার ফেলে আসা ছোট্ট শহরের স্মৃতি গুলো । ঠিক শহর নয় ওটা ছিল শহরতলি ।সেই দিনগুলোতেও যখন এমনি ভাবে বৃষ্টি নামত তখন আমার রুমের জানালা দিয়ে এক মাথা ভেজা চুল নিয়ে উঁকি দিতো একটা হাসি মুখ। ফিসফিস করে বলত রাজুদের বাগান এর সব আম মাটিতে নয়ত মল্লিক বাড়ির আম গুলো সব সাফ করার এই সুযোগ ।মায়ের বকুনির কথা চিন্তা করে আমি বরাবরি না করতাম কিন্তু পাগল টার সাথে পারব সেই সাধ্য কি আমার আছে। প্রতিবারই পাগলটার পাল্লায় পড়ে পেছনের দেয়াল টপকে ঐ ঝড়ের সন্ধ্যায় বেরিয়ে পড়তাম ।কাকভেজা হয়ে যখন বাসায় ফিরতাম তখন মায়ের একটা মারও মাটিতে পড়ত না।তারপর ও আবার যেতাম ।এভাবে ঐ পাগলটার সব পাগলামিতেই আমি থাকতাম ।আর বিনিময়ে পেতাম শাস্তি। তারপরও কখনও তাকে না করতে পারি নি,পাগলটার উপর রাগ ও করে থাকতে পারি নি।কি করে পারব ঐ পাগলটাই তো আমার সবচেয়া ভালো বন্ধু। হ্যাঁ অন্তু ছিল আমার খুব ভালো বন্ধু।তাকে আমার মত ভালো করে আর কেউ চিনত না,কারন ছোটবেলা থেকেই একি সাথে বড় হয়েছিলাম। তার যত পাগলামি উৎপাত সব ই ছিল আমার উপর। স্কুল এ বিতর্ক প্রতিযোগীতায় সেরা বিতার্কিক এর প্রাইজ তা নিয়ে যেদিন বাসায় এসেছিলাম সেদিন সবাই অনেক ভালো ভালো কথা বললেও শয়তানটা এসে মুখ বাকিয়ে বলেছিল "উ কি আমার প্রাইজ রে এটাতো এম্নিতেই সবাই জানে মেয়েরা ঝগড়ায় চাম্পিওন।"
এটা শুনে এমন রাগ হয়েছিল যে ইচ্ছে করছিল গাধাটার মাথাই ফাটিয়ে দি।একবার খুব ঝগড়া হয়েছিল ভেবেছিলাম গাধাটার সাথে আর কথাই বলব না।কিন্তু সন্ধ্যায় যখন অন্তু কাগজে মোড়ানো চালতার আচার নিয়ে কাচুমুচু মুখে সামনে এসে দাড়িয়ে sorry বলা শুরু করল তখন হাসির চোটে আমার সব রাগ কোথায় ভেসে গেলো।
এভাবে কত মানঅভিমান কিংবা পাগলামি তে ভরা সময় গুলো একটা একটা করে অনেকগুলো বছরকে অতীত করে দিলো। একি কলেজ এ ভর্তি হয়েছিলাম আমরা ।অন্তু অনেক মেধাবী ছাত্র ছিল যদিও অসুস্ত থাকায় ক্লাস এ আসতে পারত না।ছোটবেলা থেকেই প্রায়ই খুব অসুস্ত থাকত অন্তু।কিন্তু তার রোগ টা যে কি ছিল টা ডাক্তার ধরতে পারে নি।
একদিন কলেজ থেকে ফিরেই মায়ের কাছে শুনি অন্তুকে নাকি হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে ।মা নিজের মনেই বললেন এবার বোধহয় ছেলে টা আর বাঁচল না তারপর আর কিছু শোনার প্রয়োজন ছিল না আমার । ঐ কলেজ ড্রেস ই ছুটে যাই হসপিটালে। ।অন্তুর কেভিনের দরজায় দাড়িয়ে চমকে উঠেছিলাম সেদিন । একটা রক্তহীন নিথর দেহ যেন পড়ে আছে সাদা বিছনায় ।হটা ৎ করেই যেন সাড় এলো নিথর দেহটায় চোখ খুলে আমকে দেখেই অন্তু হেসে উঠল। সেই চিরচেনা হাসি ।কেঁদে ফেলেছিলাম সেদিন নিজেকে ধরে রাখতে পারি নি।আমার কান্না দেখে অন্তু বলেছিল
"আরে পাগলি কাঁদিস কেন তুই" আমি চিৎকার করে বলি ,"তোর কি হয়েছে অন্তু"
কিছু সময়ের জন্য চুপ হয়ে যায় অন্তু। জানালার দিকে তাকিয়ে বলে একটা টিউমার একটু একটু করে আমাদের সবার চোখের আড়ালে আমাকে শেষ করে দিয়েছে ।আর খুব বেশি সময় আমার হাতে নেই।অন্তুর দু হাত ধরে আমি চিৎকার করে বলে উঠেছিলাম ,"না না তুই যেতে পারবি না।তুই যেতে পারবি না" আর কিছু বলার শক্তি যেন আমার ছিল না। অন্তু হেসে বলেছিল,"শুন পাগলি প্রকৃতি আমাদের সবার জন্য একটা করে গল্প সাজিয়ে রাখে।যাদের গল্প শেষ হয়ে যায় তাদের চলে যেতে হয়।আমার গল্প ফুরিয়েছে তাই আমাকে যেতে হবে।"
আমি ছুটে বেরিয়ে গিয়েছিলাম কেভিন থেকে।সবকিছু যেন কালবৈশাখী ঝড়ের মতই এক নিমিষেই শেষ হয়ে গিয়েছিলো ।সেদিন রাতেই আমাদের সবাইকে ছেড়ে অন্ত প্রকৃতির শেষ হওয়া গল্প হয়ে গিয়েছিল । সেদিন প্রকৃতি কে আমার বড় নিষ্ঠুর মনে হয়েছিল।
তারপর অনেক গ্রীষ্ম কেটে গেছে,ফুরিয়ে গেছে অনেক বিকেল।সেই শহরতলি আমি ছেড়ে এসেছি।আর এখনও বেঁচে আছি। সেই ঝড়ের সন্ধ্যা , নির্জন বিকেলের পাগলামি আর অন্তুর স্মৃতি নিয়ে আমি আজও বেঁচে আছি প্রকৃতির অসমাপ্ত গল্প হয়ে ।আর অপেক্ষা করছি ।কিন্তু কিসের অপেক্ষা জানা নেই।
২| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৬
নিঃশব্দতা বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৬
ভবঘুরেআমি বলেছেন: valo laglo , thanks