![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আবুল হাসান আলী নদভী এই উপমহাদেশের এমন একজন ব্যক্তিত্ব যার জ্ঞান-গরিমা গ্রহণযোগ্যতা আরব আজম সর্বত্র সর্বজনবিদিত, যার পাণ্ডিত্যের সৌরভ গ্রন্থাগার, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সুবাসিত করে, জ্ঞানী ব্যক্তিরাও তাকে নিয়ে দু'কলম লিখতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করেন।
একজন আলী নদভী গড়ে ওঠার পেছনে অনেক কিছুর প্রভাব বিদ্যমান। এমনি এমনি একজন সাধারণ মানুষ অসাধারণ হয়ে যান না। জ্ঞানার্জনের একেকটি স্তর পেরোতে পেরোতে এমন এক উচ্চতায় চলে যান যেখানে সেই সময়ে অথবা সেই ভূখণ্ডে এমন কোনো জীবিত মানুষ পাওয়া যায় না যারা সেই উচ্চতায় পৌঁছতে পারেন।
আলী নদভীদের মতন মানুষ তৈরির পেছনে 'পরিবেশ' একটা বড় ফ্যাক্ট। সে কোন পরিবেশে বেড়ে উঠছে এটার পেছনে সে ভবিষ্যতে কি করতে পারে তা অনুমান করা যায় যদিও সবসময় তা ধ্রুব সত্য নয়।
আল্লামা আবুল হাসান আলী নদভীর পিতা মাতা ছিলেন সে যুগের অনেক বড় মানুষ। আর বড় মানুষদের ঘরে বড় মানুষরাই জন্মাবে, এটাই স্বাভাবিক। আলী নদভী এমন পরিবেশে বেড়ে উঠেছিলেন যেখানে ইল্ম বিদ্যা ঐতিহ্যগত ভাবে এসেছিল। আলী মিয়ার (তাকে আলী মিয়াও বলা হয়ে থাকে) পিতার কথা বললে অনেক হবে, এর চেয়ে বরং তার মায়ের কথা বলি।
আলী নদভীর মা সায়্যিদা খাইরুন নিসা যিনি কিনা জিয়াউন্নবী আল-হাসানীর কন্যা, তিনি হাফিযা এবং সুলেখিকা ছিলেন, তিনি পাঁচ খানা বা তার বেশি গ্রন্থ প্রণয়ন করেছিলেন। এটা আজকের কালকের কথা না, আজ থেকে প্রায় এক শত বছর বা এর চেয়ে একটু বেশি সময়ের আগের কথা।
আলী নদভী "আমার আম্মা" নামে একটি গ্রন্থও লিখেছিলেন। মায়ের দ্বারা কতটা প্রভাবিত হলে এরুপ গ্রন্থ লিখা যায় চিন্তা করুন।
আলী নদভীর দুই জন বোন ছিল, তাদের কথাও বলা যেতে পারে, বড় বোন আমাতুল আজিজ লিখেছিলেন কয়েক খানা জ্ঞানগর্ভ গ্রন্থ। আর তার চার ছেলে ছিল যারা প্রত্যেকেই স্বনামধন্য আলিম, সাহিত্যিক এবং গবেষক হয়ে উঠেছিলেন।
আরেকজন বোন আমাতুল্লাহ তাসনীম আয়েশাও একজন গুণী মানুষ ছিলেন। তার "সফরের পাথেয়" গ্রন্থটি হিন্দুস্তানের বিভিন্ন মাদ্রাসায় সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত। তার আরেকটি গ্রন্থের নাম "তাসনীম তরঙ্গ", এছাড়া তিনি কবিতা লিখতেন এবং মুসলিম নারীদের মুখপত্র "রিদওয়ান" পত্রিকার সম্পাদিকা ছিলেন।
এবার নিশ্চয়ই উপলব্ধি করতে পারছেন আলী নদভী কেনো আলী নদভী হলেন। তিনি এমন এক পরিবারে জন্মেছিলেন যেখানে যে-ই জন্মেছে সে রত্ন হয়ে উঠেছিল।
প্রতিটি মহান মানুষ পরিশ্রম অধ্যবসায় আর জ্ঞান গরিমার মাধ্যমে নিজেদের স্থান অন্যদের থেকে উচুতে করে নিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু এর পেছনে একটি পরিবারের ভূমিকা অবশ্যই আছে। যারা ঐতিহ্যবাহী বিদ্বান পরিবারে জন্মেছে, ইল্মি পরিবেশে বেড়ে উঠেছে তারা অবশ্যই যারা এরুপ পরিবারে জন্মে নি তাদের থেকে আলাদা স্থান করে নিয়েছে। দ্রঃ লেখক কোনো ঐতিহ্যবাহী বিদ্বান পরিবারে জন্মান নি বা ইল্মি পরিবেশে বেড়ে উঠেন নি।
কিন্তু আব্দুল হাই হাসানী আর সায়্যিদা খাইরুন নিসাদের ঘরে সবসময় যে শায়খ নদভীরা জন্মান তা কিন্তু নয়, আবার আলী নদভীর ঘরেও তাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার মতন কেউ আসতে অনেক সময় লাগে। ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) কথা না বললেই নয়, তার পিতামহ মাজদুদ্দিন আব্দুস সালাম ছিলেন অনেক বড় বিদ্বান ব্যক্তি, যে যুগের পাঁচ জনের নাম করলেও তার নাম আসতে বাধ্য। সেই ইমাম মাজদুদ্দিনকে তার নাতী ছাড়িয়ে যাবেন কে জানতো? দেখা গেলো ইমাম ইবনে তাইমিয়া এতো দূরে গেলেন যে সাত শত বছর পেরিয়ে গিয়েছে অথচ তার প্রভাব এতো টুকু কমেনি। আবার ইবনে তাইমিয়ার পরশে ইবনে কায়্যিম, ইবনে কাসির, আয যাহাবী, ইউসুফ মিযযির মতন ব্যক্তিরা গড়ে উঠেছিলেন যাদের তুলনা এই হাজার বছরে বিরল।
©somewhere in net ltd.