নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুক্তিবাহিনী ও সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি ও সর্বাধিনায়ক এম, এ, জি ওসমানীর ৩১তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:১২


বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনী ও সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি মহম্মদ আতাউল গণি ওসমানী, যিনি জেনারেল এম. এ. জি. ওসমানী নামে অধিক পরিচিত। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বঙ্গবন্ধুর ডাকে ওসমানী সীমান্ত পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারী ও মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়। ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে ভাষণ দেন৷ ঐ ভাষণে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবকাঠামো গঠনের কথা উল্লেখ করে এম. এ. জি. ওসমানীকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে ঘোষণা দেন৷ এর ধারাবাহিকতায় ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার শপথ গ্রহণ করে মুজিবনগর সরকার গঠিত হয় ওসমানীকে করা হয় মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার্থে লন্ডন থাকাকালীন ১৯৮৪ সালের আজকের দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আজ তাঁর ৩১তম মৃত্যুবার্ষিকী। মুক্তিবাহিনী ও সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতির মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

১৯১৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর সিলেটের সুনামগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন মহম্মদ আতাউল গণি ওসমানী। তাঁর পিতৃপুরুষের বাড়ি সিলেট জেলার বালাগঞ্জ থানার (বর্তমানে ওসমানীনগর থানা) দয়ামীরে। তাঁর পিতা খান বাহাদুর মফিজুর রহমান, মাতা জোবেদা খাতুন। খান বাহাদুর মফিজুর রহমান তৎকালীন আসামের সুনামগঞ্জ সদর মহকুমায় সাব-ডিভিশনাল অফিসার হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন৷ দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট ছেলে ওসমানী। পিতার চাকরির সূত্রে তাঁর শৈশব-কৈশোর কেটেছে বিভিন্ন জায়গায়। তাই কিছুদিন পর বদলির আদেশ নিয়ে সুনামগঞ্জ থেকে চলে যেতে হয় গোহাটিতে৷ আর সেখানেই ওসমানীর প্রাথমিক শিক্ষার শুরু হয়৷ ১৯২৩ সালে 'কটনস্ স্কুল অব আসাম'-এ ভর্তি হন তিনি ৷ লেখাপড়ায় যে তিনি খুবই মেধাবী ছিলেন। স্কুলের প্রত্যেক পরীক্ষায় তিনি প্রথম হতেন৷ ১৯৩২ সালে ওসমানী সিলেট গভর্নমেন্ট পাইলট হাই স্কুল এ ভর্তি হন ৷ তৎকালীন সময়ে সিলেটের এই স্কুলটি 'ক্যালকাটা ইউনিভর্সিটির' অধীনে ছিল৷ ১৯৩৪ সালে সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন অসাধারণ কৃতিত্বের সাথে৷ সমগ্র ব্রিটিশ ভারতে তিনি প্রথম স্থান লাভ করেন৷ এই অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য ব্রিটিশ সরকার এম. এ. জি. ওসমানীকে প্রাইওটোরিয়া পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে সম্মানিত করে। এর পর ১৯৩৮ সালে তিনি আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে ওসমানী তৎকালীন সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমিতে তাঁর সামরিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। এই সময় তাঁর মধ্যে শৃঙ্খলা, নিয়মতান্ত্রিকতা, আনুগত্য, ন্যায়পরায়ণতা ইত্যাদি গুণগুলো বেড়ে উঠেছিল। ১৯৪০ সালে তাঁর সামরিক শিক্ষা সমাপ্ত হয়। একেবারে পূর্ণাঙ্গ একজন সৈনিক হিসেবে গড়ে উঠার পর ব্রিটিশ-ইন্ডিয়ান আর্মিতে কমিশন পান। ১৯৪২ সালে দেখা যায় ওসমানীই হচ্ছেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সর্বকনিষ্ঠ মেজর। ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ব্রিটিশ-ইন্ডিয়ান আর্মির একজন মেজর হিসেবে ওসমানীকেও ঐ যুদ্ধে লড়তে হয়। বার্মার রণাঙ্গনে তাঁকে এক ব্যাটেলিয়ান সৈন্য পরিচালনা করতে হয়েছিল। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়। ভারত ভাগ হতেও আর বেশি বাকি নেই। এই রকম একটা সময়ে ওসমানী ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে লং কোর্স পরীক্ষা দিয়ে উচ্চস্থান লাভ করেন এবং ১৯৪৭ এর ভারত বিভাগের আগেই তিনি লেফটেনেন্ট কর্নেল পদে উন্নীত হন।

১৯৪৭ সালের আগস্টের মাঝামাঝিতে উপমহাদেশকে পাকিস্তান ও ভারত নামে বিভক্ত করে ব্রিটিশরা বিদায় নেয়। আঞ্চলিক অথবা ধর্ম ভিত্তিক বিভাজনের ফলে এম. এ. জি. ওসমানী পাকিস্তানের নাগরিক হন এবং ১৯৪৭-এর ৭ অক্টোবর লেফটেনেন্ট কর্নেল পদ নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন তিনি। ১৯৫১ সনে তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ফাস্ট ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক নিযুক্ত হন। এর পর তিনি চট্টগ্রাম সেনানিবাস প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ববাংলার আরও কয়েকটি আঞ্চলিক স্টেশনের দায়িত্বও তিনি সফলতার সাথে পালন করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি কর্নেল পদমর্যাদা লাভ করেন এবং সেনাবাহিনীর হেডকোয়ার্টারের জেনারেল স্টাফ এন্ড মিলিটারি অপারেশনের ডেপুটি ডিরেক্টরের দায়িত্ব পান। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে তিনি পাকিস্তানের হয়ে যুদ্ধ করেন৷ এভাবেই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তাঁর উপর অরোপিত দায়িত্বগুলো সুষ্ঠুভাবে পালন করে নিজেকে একজন সাহসী, দায়িত্ববান ও বলিষ্ট সৈনিক রূপে গড়ে তোলেন। পাক-ভারত যুদ্ধ যখন শেষ হয় তখন তাঁর বয়স চল্লিশের উপরে৷ ১৯৬৬ সালের মে মাসে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে অবসরকালীন ছুটি নেন এবং পরের বছর অর্থাৎ ১৯৬৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে '৭০-এর নির্বাচনে ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ-বিশ্বনাথ এলাকা থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালের নির্বাচন এবং তার পরবর্তী সময়ের ইতিহাস কারোরই অজানা নয়। স্বাধীনতা পিপাসু এক পক্ষের আন্দোলন, সংগ্রাম আর অন্য পক্ষের কঠোর ভাবে দমনের ইচ্ছার মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হয় কয়েকটি মাস। এম. এ. জি. ওসমানী বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পক্ষে কাজ করছিলেন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে ঢাকাতেই ছিলেন এম. এ. জি. ওসমানী। পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে বছর চারেক আগে অবসর নেয়া ওসমানীর সামরিক দক্ষতা ও দূরদর্শিতা সম্পর্কে পাকিস্তান সরকার অবগত ছিল। তাই ঐ রাতেই ওসমানীকে হত্যার চেষ্টায় হন্যে হয়ে খোঁজে পাকবাহিনীর একটি কমান্ডো। কিন্তু একেবারেই ভাগ্যগুণে অলৌকিকভাবে প্রাণ বেঁচে গিয়েছিল ওসমানীর। পরের চার দিন ঢাকাতেই আত্মগোপনে থেকে পঞ্চম দিনে নদীপথে পালিয়ে গিয়ে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের যুদ্ধরত ব্যাটেলিয়নদের সাথে যোগ দেন। শুরু হয় ওসমানীর জীবনের নতুন এক অধ্যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও পাক-ভারত যুদ্ধের পর এবার শুরু হয় নিজের মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার যুদ্ধ। যে যুদ্ধ ছিল নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল, বলা যায় প্রায় নির্বাসিত অবস্থায় মুজিব নগরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। তাজউদ্দিন আহমদ প্রধানমন্ত্রী মনোনীত হন। ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রে ভাষণ দেন। ঐ ভাষণে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবকাঠামো গঠনের কথা উল্লেখ করে এম. এ. জি. ওসমানীকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে ঘোষণা দেন। ১৯৭১ সালের ১২ এপ্রিল থেকে এম. এ. জি. ওসমানী মন্ত্রীর সমমর্যাদায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। রণনীতির কৌশল হিসেবে প্রথমেই তিনি সমগ্র বাংলাদেশকে ভৌগোলিক অবস্থা বিবেচনা করে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে নেন এবং বিচক্ষণতার সাথে সেক্টরগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন এবং প্রাক্তন ইপিআর এর বাঙালী সদস্য, আনসার, মোজাহেদ, পুলিশ বাহিনী ও যুবকদের নিয়ে একটি গণবাহিনী বা গেরিলাবাহিনী গঠন করেন। শুরু হয় নতুন উদ্যমে মুক্তিযুদ্ধ। বিজয় পেতেই হবে মুক্তির এই যুদ্ধে; এ রকম মানসিকতা দৃঢ় হচ্ছিল সমগ্র বাঙালির ভেতর। মুক্তির সংগ্রামে এম. এ. জি. ওসমানীর হাতে কোনো নৌবাহিনী ছিল না। তবে নিয়মিত নৌবাহিনীর কিছু অফিসার এম. এ. জি. ওসমানীর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতেন। তাছাড়া ফ্রান্সের জলাভূমিতে থাকা পাকিস্তানের ডুবোজাহাজের কিছু সংখ্যক কর্মীও মুক্তিবাহিনীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। কিছুদিন পর এম. এ. জি. ওসমানী তাদের এবং কিছু সংখ্যক গেরিলা যুবক নিয়ে একটি নৌকমান্ডো গঠন করেন। আগস্টের মাঝামাঝিতে তাঁরা নদীপথে শত্রুর চলাচল প্রায় রুদ্ধ করে দেয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষের দিকে দুটি হেলিকপ্টার ও একটি অটার আর তাঁর নিজের চলাচলের জন্য একটি ডাকোটা নিয়ে ছোট্ট একটি বিমানবাহিনীও গঠন করেছিলেন তিনি।

১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর এম. এ. জি. ওসমানীর গঠিত নিয়মিত ও গেরিলাবাহিনীর সাথে ভারতের সৈন্যরাও যুদ্ধে অংশ নেয়। ভারত তাঁদের সাথে যোগ দিলে তিনি তাদের ট্যাংক ও কামানের সহায়তায় বিজয় ত্বরান্বিত করেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়। এ ভাবেই এম. এ. জি. ওসমানী বিচক্ষণতা আর দূরদর্শিতার মাধ্যমে যুদ্ধ পরিচালনা করার কারণে বাংলাদেশের বিজয় অর্জিত হয়েছিল। ওসমানী তাঁর অকৃত্রিম দেশপ্রেমের স্বীকৃতিও পেয়ছিলেন গণমানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা। স্বাধীন দেশে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাঁকে কর্নেল থেকে জেনারেলে পদে উন্নীত করে। ১৯৭২ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়কের পদ বিলুপ্ত হয়ে গেলে জেনারেল ওসমানী সামরিক বাহিনী থেকে অবসর নেন। সামরিক জীবন থেকে অবসরের পর পুনরায় ফিরে এলেন রাজনীতিতে। ১৯৭২ সালের ১২ এপ্রিল তিনি কেবিনেটে শপথ নেন। এরপর বাংলাদেশ সরকারের জাহাজ চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ ও বিমান চলাচল মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু তখনও তিনি গণতান্ত্রিক বা নির্বাচিত উপায়ে কেবিনেট সদস্য ছিলেন না। ১৯৭৩ সালে নিজের যোগ্যতা অথবা জনপ্রিয়তা যাচাই করার সুযোগ পান তিনি । ১৯৭৩ সালের মার্চে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ঐ নির্বাচনে ওসমানী তাঁর নিজের এলাকা থেকে অংশ নেন এবং নির্বাচনে ৯৪ শতাংশ ভোটে বিজয়ী হয়ে অভাবনীয় সাফল্য লাভ করেন। ফলে কেবিনেট পদ পুনর্বহাল থেকে যায়। জাহাজ চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ ও বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের সাথে আরও যুক্ত হয় ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।

১৯৭৩ থেকে ১৯৭৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেক কিছু ঘটে যায়। বলা যায় স্বাধীনতা পরবর্তী এক ধরনের অস্থিরতা। এসব ঘটনায় একেবারেই নীরব দর্শক হয়েছিলেন জেনারেল এম. এ. জি. ওসমানী। দেশের একটা চরম বিশৃঙ্খল অবস্থায় সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী গৃহীত হয়। যার ফল ছিল বাকশাল (বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ) গঠন। বাকশাল গঠনের প্রতিবাদে তিনি সংসদ সদস্য পদ থেকে সরে দাঁড়ান। বাকশাল গঠনের কিছুদিন পর শেখ মুজিবের পরিবারকে নৃসংশভাবে হত্যা করা হয়। এই সময় তিনি নিজেকে একেবারেই আড়ালে রাখেন। ১৯৭৬ সালে তিনি জাতীয় জনতা পার্টি গঠন করে জনগণকে ঐক্যের ডাক দেন। কিন্তু সে ডাকে তিনি খুব একটা সাড়া পাননি। কারণ রাষ্ট্রযন্ত্র ততদিনে একটা সংগঠিত সামরিক শক্তির নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছিল। ১৯৭৮ সালে জেনারেল ওসমানী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন গণঐক্য জোট-এর প্রার্থী হিসেবে। কিন্তু ঐ ধরনের পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নেয়াটা ছিলো ওসমানীর মতো বিচক্ষণ ব্যক্তির পক্ষে ভুল সিদ্ধান্ত। বয়সের ভারে ভারী হতে থাকলে হয়ত মানুষের স্বাভাবিক বিবেক বুদ্ধি লোপ পায়। তিনি ১৯৮১ সালে নাগরিক কমিটির জাতীয় প্রার্থী হিসেবে পুনরায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু ১৯৮১ সালের নির্বাচনেও তিনি ব্যর্থ হন। বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা এই বীর সৈনিক যুদ্ধের সময় বহুবার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এলেও শেষতক চিরন্তন মৃত্যুকে জয় করতে পারেননি। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার্থে লন্ডন একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিছুদিন পর শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি হলে ১৬ ফেব্রুয়ারি সেখানেই জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলে বর্ণাঢ্য এক সৈনিকের জীবনের যবনিকা ঘটে। পরে তাঁকে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় সিলেটে সমাহিত করা হয়। তাঁর স্মরণে ঢাকায় গড়ে উঠেছে ওসমানী উদ্যানও স্থাপিত হয়েছে বাংলাদেশ সচিবালয়ের বিপরীতে ওসমানী মেমোরিয়াল হল ৷ এছাড়া তার সিলেটস্থ বাসভবনকে পরিণত করা হয়েছে জাদুঘরে৷ সরকারি উদ্যোগে সিলেট শহরে তার নামে একটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনী ও সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি ও সর্বাধিনায়ক এম, এ, জি ওসমানীর ৩১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। বাঙ্গালী জাতিকে স্বাধীনতা উপহার দেওয়া অকুতভয় বীর সেনানী এম, এ, জি ওসমানীর মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:৪৪

তোমোদাচি বলেছেন: অকুতভয় বীর সেনানী এম, এ, জি ওসমানীর কে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

২| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:৪৬

অন্ধবিন্দু বলেছেন:
শ্রদ্ধাঞ্জলি ...

৩| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:০০

শাহ আজিজ বলেছেন: এই বীর সেনানীকে আমরা প্রায় চিনতামই না। দেশ স্বাধীন হলে তাকে একবার দেখার সুযোগ হয়েছিল। জিয়ার আমলে নির্বাচনে দাঁড়াবার খেসারত দিতে হয়েছিল নানা রকম কুকথা ও অপপ্রচার করে। কারন তার অধিনে ওসমানী জিয়ার রেডিও ঘোষণায় নিজেকে দেশের রাষ্ট্রপতি ঘোষণায় ক্ষুব্দ হয়ে তার কোর্ট মার্শাল করতে চেয়েছিলেন । ভারতীয়রা ওসমানীকে থামিয়ে দিয়েছিল এই বলে যে এটা যোদ্ধাদের মধ্যে ভাঙ্গন ধরাবে। তারপরও স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ দিকে জিয়া সাসপেন্ড ছিলেন এবং আসাম সেকটরে নিস্ক্রিয় অবস্থায় ছিলেন। নির্বাচনের সময় জিয়া ওসমানির প্রতি চরম প্রতিশোধ নিয়েছিলেন যা আমি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া হিসাবে দেখেছি। ওসমানী সৎ ও একনিষ্ঠ সৈনিক ছিলেন।

শ্রদ্ধাঞ্জলি ।

৪| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৮

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: শ্রদ্ধাঞ্জলী এম এ জি ওসমানী ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.