নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিখ্যাত ব্রিটিশ কবি লর্ড বায়রনের ২২৯তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:২৯


বিখ্যাত ব্রিটিশ কবি, রাজনীতিবিদ এবং রোমান্টিক আন্দোলনের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব জর্জ গর্ডন নোয়েল বায়রন। তবে তিনি সাধারণত লর্ড বায়রন নামেই পরিচিত। বায়রন ছিলেন অত্যন্ত সুদর্শন, প্রাণবন্ত, আবেগপ্রবণ ও অনন্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী, যা খুব কম পুরুষের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। তার এ গুণাবলি সহজেই নারীদের আকৃষ্ট করত। তার আকর্ষণীয় সৌন্দর্য লক্ষ্য করে স্যার ওয়াল্টার স্কট বলেন, তার মুখাবয়ব কেবল স্বপ্নে ধারণা করা সম্ভব হতো। তার উজ্জ্বল চোখ ও বাঙময় মুখাকৃতি সহজে সবাইকে আকর্ষণ করত। তদুপরি তিনি ছিলেন দুর্লভ মেধার অধিকারী। ১৮১২ সালে মাত্র ২৪ বছর বয়সে লর্ড বায়রণ লন্ডনের সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। চাইল্ড হ্যারল্ড কাব্য প্রকাশের মধ্য দিয়ে তার স্বর্ণোজ্জ্বল প্রতিভার প্রথম বিচ্ছুরণ ঘটে। গ্রিকদের স্বাধীনতা যুদ্ধে উসমানীয় সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যান বায়রন, যার জন্য গ্রিকরা তাকে জাতীয় বীর হিসেবে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। বিখ্যাত এই ব্রিটিশ কবির ২২৯তম জন্মবার্ষিকী। ১৮৭৮ সালের আজকের দিনে তিনি গ্রেট্ ব্রিটেনে জন্মগ্রহণ করেন। রোমান্টিক আন্দোলনের কবি বায়রনের জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।

১৭৮৮ খৃষ্টাব্দের ২২ জানুয়ারি গ্রেট ব্রিটেনের ডোভার, কেণ্টে জন্ম গ্রহণ করেন লর্ড বায়রন। তিনি ক্যাপ্টেন জন ম্যাড জ্যাক বায়রন এবং তার দ্বিতীয় স্ত্রী (কার্ডিনাল বিটনের বংশধর এবং স্কটল্যান্ডের অ্যাবার্ডিনসায়ারের গাইট এস্টেটের উত্তরাধিকারিণী) ক্যাথরিন গর্ডন এর ছেলে। বায়রনের দাদা ছিলেন ভাইস অ্যাডমিরাল জন ফাউলউইদার জ্যাক বায়রন এবং দাদি ছিলেন সোফিয়া ট্রিভেনিয়ন। তার নানা স্কটল্যান্ডের জেমস এর বংশধর যে ১৭৭৯ সালে আত্মহত্যা করেছিল। বায়রনের বাবা পূর্বে কারমার্থেন নামক এক বিবাহিত মহিলাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন। পরে কারমার্থেন তার স্বামীকে তালাক দিয়ে বায়রনের বাবা জন ম্যাড জ্যাক বায়রনকে বিয়ে করেন। জন বায়রন যে কারণে তার প্রথম স্ত্রীকে বিয়ে করেন ওই একই কারণে তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে বিয়ে করেন অর্থাৎ তার অঢেল ধন-সম্পত্তির জন্য। বায়রনের বাবা স্কটল্যান্ডে তার দ্বিতীয় স্ত্রীর এস্টেট পাওয়ার উদ্দেশ্যে তার নামের শেষে গর্ডন যুক্ত করেন এবং তার নাম হয় জন বায়রন গর্ডন। কার্মারথেন দুই কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ার পর মারা যান, যার মধ্যে একজন বেঁচে ছিলো। আর তিনি হচ্ছেন বায়রনের সৎ বোন অগাস্টা লেই। তার এক ভাই ছিল পঞ্চম ব্যারন বায়রন, যে দুষ্ট লর্ড নামে পরিচিত।

বায়রনের নাম সারা জীবন পরিবর্তন হয়েছে যেমন জর্জ গর্ডন বায়রন, ৬ষ্ঠ ব্যারন বায়রন ইত্যাদি। দশ বছর বয়সে সে ইংরেজ Barony of Byron of Rochdale এর উত্তরাধিকার পান এবং তিনি হন লর্ড বায়রন। এর ফলে তিনি তার দুইটি বংশনাম বাদ দেন। সে মাঝে মধ্যে জৌলুস করে গাইটের জন বায়রন গর্ডন ব্যবহার করতেন। কিছু সময়ের জন্য বংশনাম জর্জ বায়রনও ব্যবহার করেন এবং এবার্ডিনে স্কুলে জর্জ বায়রন গর্ডন নামে নিবন্ধিত হয়েছিলেন। ১৮২২ সালে যখন বায়রনের শ্বাশুরি জুডিথ নোয়েল মারা যান তখন তার শ্বাশুরির অর্ধেক এস্টেটের উত্তরাধিকারী হওয়ার জন্য তার উইলে বায়রনের বংশনাম নোয়েল এ পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়। তাকে মাঝে মধ্যে লর্ড নোয়েল বায়রন হিসাবে উল্লেখ করা হতো যেন নোয়েল তার টাইটেলের অংশ এবং একই ভাবে লর্ড বায়রনের স্ত্রীকেও মাঝে মধ্যে লেডি নোয়েল বায়রন নামে ডাকা হতো। লেডি বায়রন অবশেষে Barony of Wentworth এর উত্তরাধিকারিণী হন এবং তিনি হন লেডি ওয়েন্টওয়ার্থ। পরে তাকে সেন্ট ম্যারিলেবন প্যারিশ চার্চে খ্রিস্টধর্ম মতে তার নানা গাইটের জর্জ গর্ডনের নামানুসারে জর্জ গর্ডন বায়রন নাম দেয়া হয়।

(আলবেনিয়ান পোষাকে লর্ড বায়রন)
বায়রন ছিলেন দেখতে অপূর্ব সুন্দর, মুখশ্রী ছিল কল্পিত এপোলো মূর্তির মত অনিন্দ্য। তবে চাঁদের কলঙ্ক সদৃশ তার একটি পা ছিল খোঁড়া। তিনি কিছুটা খুঁড়িয়ে হাঁটতেন।শৈশব থেকেই তিনি তার এই খোঁড়া পা নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগতেন এবং প্রায়ই বিষন্ন থাকতেন। অথচ জীবিতাবস্থায় তিনি এতটাই জনপ্রিয় এবং অনুকরণীয় হয়ে উঠেছিলেন যে তার খুঁড়িয়ে হেঁটে চলা ইংল্যান্ডের যুবকদের স্টাইলে পরিণত হয়েছিলো। ইংল্যান্ডের সমস্ত সুস্থ তরুণরা যখন খুঁড়িয়ে চলা শুরু করল তখন আইন করে ব্রিটেনবাসী তরুণদের সোজা করা হয়েছিলো। পরবর্তীতে তার মাতার প্রচেষ্টায় চিকিৎসার মাধ্যমে তিনি অদ্ভুতভাবে আরোগ্যলাভ করেন। কিন্তু এরপর হতে তিনি আরো জেদি ও একরোখা হয়ে পড়েন। মাত্র আট বছর বয়সে মেরি ডাফ নামে এক বালিকার প্রেমে পড়েন বায়রন। দশ বছর বয়সে তার কাজিন মার্গারেট পার্কারের প্রতি প্রবলভাবে আকৃষ্ট হন। আর পনেরো বছর বয়েস তার জীবনে মারাত্মক সংকট সৃষ্টি হয়। এ সময় তিনি গভীরভাবে মেরি চাওয়ার্থের প্রেমে উন্মত্ত হন। বায়রনের পিতৃব্যের-পিতৃব্য দ্বৈতযুদ্ধে মেরি চাওয়ার্থের পিতামহকে হত্যা করেন। উভয় পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্ব^ থাকা সত্ত্বেও বায়রন তার চেয়ে দু’বছরের বড় মেরি চাওয়ার্থকে বিবাহ করতে মনস্থির করেন। কিন্তু মেরি চাওয়ার্থ এ স্কুল বালককে বিবাহ করতে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন। হতাশায় বায়রন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এ অবস্থায় ক্যামব্রিজে কিছুদিন অবস্থানের পর তিনি ইংল্যান্ড ত্যাগ করে বিদেশ ভ্রমণে বের হন। পর্তুগাল, স্পেন হয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন দেশসহ গ্রিস ও তুরস্ক পর্যন্ত ভ্রমণ করেন। এথেন্সে অবস্থানকালে ব্রিটিশ ভাইস কনসালের কন্যা মিস থেরেসা ম্যাক্রিকে উদ্দেশ্য করে সুন্দর একটি ছোট কবিতা মেইড অব এথেন্স লিখেন। তারপর তিনি লন্ডন প্রত্যাবর্তন করে কবি হিসেবে দ্রুত খ্যাতি অর্জন করেন ও প্রভূত সামাজিক মর্যাদা লাভ করেন। বায়রনের বিখ্যাত কর্মের মধ্যে রয়েছে দীর্ঘ বর্ণনামূলক কবিতা Don Juan এবং Childe Harold's Pilgrimage, এবং ছোট গীতি কবিতার মধ্যে রয়েছে She Walks in Beauty।

কবি লর্ড বায়রনের বিখ্যাত রচনাবলীঃ ১। আওয়ার্‌স অফ আইড্‌লনেস (Hours of Idleness), ১৮০৭
২। ইংলিশ বার্ডস অ্যান্ড স্কচ রিভিউয়ার্‌স (English Birds and Scotch Reviewers), ১৮০৯
৩। চাইল্ড হ্যারল্ড্‌স পিলগ্রিমেজ (Childe Harold's Pilgrimage), ১৮১২ - ১৮১৮

প্রাপ্ত বয়সে বায়রন অপরিমিত অভিজাত জীবন-যাপন করতেন যার ফলে তার ছিলো প্রচুর ঋণ। তার ছিলো বহুসংখ্যক প্রণয় ঘটিত সম্পর্ক, তার সৎ বোনের সাথে অজাচারী যৌন সম্পর্কের গুজব এবং নিজ থেকে নির্বাসিত হওয়া। শারীরিকভাবে তিনি ছিলেন অসুস্থ্য। অনুমান করা হয় যে বায়রন বাইপোলার আই ডিসঅর্ডার এবং ম্যানিক ডিপ্রেশনে ভুগতেন তিনি। ফলশ্রুতিতে ১৮২৪ সালের ১৯ এপ্রিল গ্রীসের মেসলঙ্গি থাকা অবস্থায় মাত্র ৩৬ বছর বয়সেজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যান লর্ড বায়ন। তার মৃত্যুতে সমগ্র গ্রীস বেদনায় মুহ্যমান হয়ে পড়ে। মৃত্যুর পর লর্ড বায়রনের দেহ সুবাসিত মমি করে হৃদয়টি মিসোলঙ্গিতে সমাহিত করা হয়। বিখ্যাত এই ব্রিটিশ কবির আজ ২২৯তম জন্মবার্ষিকী। রোমান্টিক আন্দোলনের কবি বায়রনের জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।

সম্পাদনাঃ নূর মোহাম্মদ নূরু

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.