নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

২৪ জানুয়ারি, \'৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান দিবসঃ ঐতিহাসিক এই দিনটিকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:৪০


আজ ২৪ জানুয়ারি, ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থান দিবস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের এক তাৎপর্যপূর্ণ মাইলফলক। ১৯৬৬ সালে পাকিস্তানের শাসন, শোষণ ও বঞ্চনা থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করতে ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। এতে স্বাধিকার আন্দোলনের গতি তীব্র হলে পাকিস্তানিরা একে নস্যাৎ করতে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করে। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী বাঙ্গালীর স্বাধিকার আন্দোলনকে নস্যাত করার হীন উদ্দেশ্যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে বঙ্গবন্ধুকে বন্দি করে। এ মামলার বিরুদ্ধে দেশব্যাপী ছাত্র-শ্রমিক-জনতা দুর্বার ও স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন গড়ে তোলে। কিন্তু ভীত সন্ত্রস্ত সরকার এর আগেই সভাস্থলের চারপাশে ১৪৪ ধারা জারি করে। ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে বিক্ষোভ মিছিল সহ রাজপথে নেমে আসে। পাকিস্তানী সামরিক শাসন উৎখাতের লক্ষ্যে ১৯৬৯ সালের এ দিনে সংগ্রামী জনতা শাসকগোষ্ঠীর দমন-পীড়ন ও সান্ধ্যআইন ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। এ মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণে নিহত হন নবম শ্রেণীর ছাত্র মতিউর রহমান ও রুস্তম।

(শহীদ আসাদ)
১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি স্বৈরাচারী আইয়ুব শাসন বিরোধী গণঅভ্যুত্থানে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ঐতিহাসিক ১১ দফা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে পুলিশের গুলিতে আসাদুজ্জামান আসাদ শহীদ হন। হাজারো ছাত্র-জনতা আসাদের মৃত্যুতে একত্রিত হয়ে পুণরায় মিছিল বের করে এবং শহীদ মিনারের পাদদেশে জমায়েত হয়। আসাদের রক্তমাখা সার্ট সেদিন পতাকায় পরিনত হেয়েছিল।ঐতিহাসিক ২০ জানুয়ারি ৬৯’র গণ-অভ্যুত্থানের নায়ক শহীদ আসাদের আত্মদানের পর ২১, ২২, ২৩ জানুয়ারি শোক পালনের মধ্য দিয়ে ঢাকায় সর্বস্তরের মুক্তিপাগল জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ২৪ জানুয়ারি এই অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়। মানুষের অবিস্মরণীয জাগরনের মুখে ফিল্ড মার্শাল আইউব খান এবং পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর মোনায়েম খান পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। জনতার রুদ্ররোষ এবং গণঅভ্যুত্থানের জোয়ারে স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রধান অভিযুক্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকলকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। পতন ঘটে আইয়ুবের স্বৈরতন্ত্রের। শোষিত মানুষের পক্ষে মুক্তিকামী ছাত্রসমাজের ১১ দফা কর্মসূচীর ভিত্তিতে এই অভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়।

(কিশোর মতিউর রহমান)
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রধান আসামি বঙ্গবন্ধুসহ অন্য আসামিদের মুক্তির এবং পাকিস্তানি সামরিক শাসন উৎখাতের দাবিতে ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি কারফিউ ভঙ্গ করে সাধারণ মানুষ মিছিল বের করে। সেনাবাহিনী নামানো হয় শহরে। তারা পাখিরমতো গুলি করে সংগ্রামী মানুষজনকে একের পর এক হত্যা করে। কিন্তু এতো কিছুর পরও বীর বাঙালী রাজপথ থেকে এক চুল সরে দাঁড়ায়নি। ঊনসত্তরের এদিন ঢাকায় সচিবালয়ের সামনের রাজপথে নবকুমার ইনস্টিটিউটের নবম শ্রেণীর ছাত্র কিশোর মতিউর ও রুস্তম শহীদ হন। প্রতিবাদে সংগ্রামী জনতা সেদিন সচিবালয়ের দেয়াল ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিক্ষুব্ধ জনগণ আইয়ুব মোনায়েম চক্রের দালাল, মন্ত্রী, এমপিদের বাড়িতে এবং তাদের মুখপত্র হিসাবে পরিচিত তৎকালীন দৈনিক পাকিস্তান ও পাকিস্তান অবজারভারে আগুন লাগিয়ে দেয়। গণ-অভ্যুত্থানের কারণে তৎকালীন পাকিস্তানি স্বৈরাচারি আইয়ুব খান সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে প্রধান আসামি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সব আসামিকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল। তাই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় ঊনসত্তরের ২৪ জানুয়ারি ঐতিহাসিক গণ অভ্যুত্থান দিবস হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছে।

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাঙালীর মুক্তির সনদ ৬ দফা, পরবর্তীতে ১১ দফা ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের পথ বেয়ে রক্তাক্ত সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালী জাতি অর্জন করে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন মহান স্বাধীনতা। অপশাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রামে তাই ঊনসত্তরের ২৪ জানুয়ারি গণঅভ্যুত্থান আজও দেশের মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। ১৯৬৯ সালের এই দিনে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা আর ঐতিহাসিক এ দিনটিকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।

সম্পাদনাঃ নূর মোহাম্মদ নূরু

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:০২

তারেক ফাহিম বলেছেন: ১৯৬৯ সালের এই দিনে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা আর ঐতিহাসিক এ দিনটিকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়্

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:০৯

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ফাহিম ভাই
'৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান দিবসে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার
আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মৃতির প্রতি
শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।

২| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:০৮

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:

গুরুত্বপূর্ণ একটি লেখা। একাত্তরের পূর্বসূরি উনসত্তর আর সত্তরকে মনে না রাখলে মুক্তিযুদ্ধকে বুঝা যায় না। ঊনসত্তরের গণউভ্যুত্থানসহ পূর্ববর্তী প্রতিটি ঘটনা আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের পথপরিক্রমাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। সেদিনের বীর শহীদদেরকে প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.