নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইসলামী রেনেসাঁর কবি ও ঔপন্যাসিক সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজীর ৮৭তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

১৭ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:০১


আধুনিক বাংলা গদ্য সাহিত্যের প্রথম দিকের মুসলমান সাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী। বাংলার ইতিহাস, বাংলাদেশের ইতিহাস, বাঙালির ইতিহাস, বাংলাদেশের মুসলমানদের ইতিহাস, বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস, উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক জাজ্বল্যমান তারকার নাম সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী। রাজনৈতিক চেতনা, শিক্ষা, সর্বোপরি স্বাধিকার আদায়ের চেতনা বিকাশে যারা রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সমভাবে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন তাদের মধ্যে ইসমাইল হোসেন সিরাজীর স্থান অন্যতম। তবে ব্রিটিশ আমলেই জন্ম, আর ব্রিটিশ আমলেই মৃত্যু বলে স্বাধীনতার স্বাদ নিতে পারেননি। পারেননি মুক্ত বিহঙ্গের মতো মুক্ত আকাশে ডানা মেলতে। কিন্তু মুক্তচিন্তার অধিকারী এ স্বাপ্নিক মানুষটি মুক্তির চেতনায় ছিলেন সদা বিভোর। স্বাধীনতার প্রত্যাশায় জেল-জুলুম, টর্চার সেল, নির্যাতন, নিপীড়ন কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করেননি। মানবতার মুক্তি এবং মানবাধিকার রক্ষার জন্য দেশব্যাপী চষে বেড়িয়েছেন এই হৃদয়বান মানুষটি। সরকারের হুমকি কিংবা পুলিশের ডান্ডাবেরী তাঁর কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দিতে পারেনি। মুসলিম জাতির হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারে তাঁর কলম চালিত হয়েছিলো অপ্রতিহত গতিতে। তাঁর কলমের তুলিতে উজ্জ্বল হয়ে ফুটে ওঠেছে ইসলামের ইতিহাস ঐতিহ্য আর শান শওকত। বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, আনলবর্ষী বক্তা, কবি ও বাগ্মী ইসমাইল হোসেন সিরাজীর আজ ৮৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৩১ সালের আজকের দিনে তিনি ই্ন্তেকাল করেন। বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে নবযুগের নতুন জীবন চেতনা ও সাংস্কৃতিক বোধ জাগ্রতকারী কবি ও ঔপন্যাসিক সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজীর মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

জাতীয় জাগরণের অগ্রদূত সৈয়দ ইসমাইল হোসেন ১৮৮০ সালের ১৩ জুলাই সিরাজগঞ্জের বাণীকুঞ্জ গ্রামে এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পারিবারিক ও ধর্মীয় কারণে তিনি নামের শেষে 'সিরাজী' গ্রহণ করেন। লেখাপড়া করেন জ্ঞানদায়িনী মাইনর স্কুল এবং বিএল হাইস্কুলে। তার পরিবার এতই দরিদ্র ছিল যে তার পড়াশুনার খরচ চালাতে পারত না। তবে নিজের অদম্য প্রচেষ্টায় লেখা পড়া চালিয়ে যান তিনি। মাত্র ১৯ বছর বয়সে মুন্সী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহর সহযোগিতায় ১৮৯৯ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অনল প্রবাহ'। ১৯০৮ সালে কাব্যগ্রন্থটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হলে কাব্যে রাজদ্রোহ প্রচার এবং মুসলমান সমাজের মধ্যে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অভিযোগে ১৯১০ সালের মার্চে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়। একই বছরের ০৯ সেপ্টেম্বর সশ্রম কারাদন্ড প্রদান। ১৯১২ সালের ১৪ মে হাজারীবাগ জেল থেকে মুক্তি পান সিরাজী। একই বছর বলকান যুদ্ধের সময় তিনি একদল চিকিৎসকের সাথে তুরস্কে যান। পরবর্তীতে প্রথমে তিনি কংগ্রেস ও পরে মুসলিম লীগে যোগ দেন। সিরাজীই উপমহাদেশের প্রথম কবি যিনি স্বাধীনতার জন্য, জাতীয় জাগরণের জন্য কবিতা লিখে জেলের ঘানি টানেন। শুধু তাই নয় তাঁর কণ্ঠ রোধ করার জন্য তাঁর বক্তৃতা ও সভাস্থলে ব্রিটিশ সরকার ৮২ বার ১৪৪ ধারা জারি করেছিলো।

বাংলার পিছিয়ে পড়া মুসলমানদের নবজাগরণের অন্যতম জাতীয় বীর, সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী রচিত কাব্য, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনী ও সঙ্গীত বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থের সংখ্যা ৩২টি। এগুলো হলো- কাব্যগ্রন্থঃ ১। উচ্ছ্বাস (১৯০৭), ২। নব উদ্দীপনা (১৯০৭), ৩। উদ্বোধন (১৯০৮), ৪। স্পেন বিজয় কাব্য (১৯৮৪), ৫। মহাশিক্ষা কাব্য প্রথম খন্ড (১৯৬৯),৬। মহাশিক্ষা কাব্য দ্বিতীয় খন্ড (১৯৭১)। উপন্যাসঃ ১। রায়নন্দিনী (১৯১৫), ২। তারাবাঈ (১৯১৬), ৩। নূরউদ্দীন (১৯১৯)। প্রবন্ধ গ্রন্থঃ ১। মহানগরী কর্ডোভা (১৯০৭), ২। স্ত্রীশিক্ষা (১৯০৭), ৩। আদব কায়দা শিক্ষা (১৯১৪), ৪। সুচিন্তা প্রথম খন্ড (১৯১৬), ৫। তুর্কি নারী জীবন (১৯১৩), ভ্রমণ কাহিনীঃ ১। তুরস্ক ভ্রমণ (১৯১৩)। সঙ্গীত গ্রন্থঃ ১। সঙ্গীত সঞ্জীবনী (১৯১৬), ২। প্রেমাঞ্জলী (১৯১৬) প্রভৃতি। তাঁর অপ্রকাশিত কাব্যগ্রন্থসমূহঃ ১। সুধাঞ্জলী, ২। গৌরব কাহিনী, ৩। কুসুমাঞ্জলী, ৪। আবে হায়াৎ, ৫। কাব্য, ৬। কুসুমোদ্যান, ৭। পুস্পাঞ্জলী এবং অসমাপ্ত উপন্যাসঃ ১। বঙ্গ ও বিহার বিজয় এবং ২। জাহানারা।

১৯৩১ সালের ১৭ জুলাই অগ্নিপুরুষ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ইন্তেকাল করেন। মাত্র বায়ান্ন বছর দুই দিন বেঁচে ছিলেন এই ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ। এই স্বল্পকালীন সময়ে এশিয়া-ইউরোপ ভ্রমণ করেছেন তিনি। বলকান যুদ্ধে তাঁর সেবার খ্যাতি এতই বিশাল ছিলো, যার কারণে লন্ডন থেকে প্রকাশিত 'ডেইলি নিউজ' পত্রিকায় ১৯১৩ সালের ২৩ জানুয়ারি ইসমাইল হোসেন সিরাজীর ওপর একটি বড় প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিলো। প্রবন্ধের পরতে পরতে ছিলো ইসমাইল হোসেনের প্রশংসা আর প্রশস্তি। এই বিরল সৌভাগ্য ভারতীয় মুসলিমের জন্যে তখন ছিলো অকল্পনীয়। তাঁর জীবনাবসানে ব্রিটিশ সরকার হারায় তাদের শক্তিশালী প্রতিদ্বনদ্বীকে, অন্যদিকে বাঙালিরা হারায় তাদের শ্রেষ্ঠ সুহৃদকে। অগ্নিপুরুষ সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী কেবল ভারতের গৌরব ছিলেন তাই নয়, তিনি ইসলাম জগতের নেতা ছিলেন। আজ তাঁর ৮৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। মহাকবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, পর্যটক, সাংবাদিক, সাধক ও বাগ্মী সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজীর মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা।

১৭ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ রাজীব ভাই

২| ১৭ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:২৮

মাকার মাহিতা বলেছেন: তাঁর সকল গ্রন্থ কোথায় পাওয়া যাবে?

১৭ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ভালো মানের যে কোন গ্রন্থাগারে
পাবেন বলে আমার ধারণা।
ভালো থাকবেন

৩| ১৭ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৫

রাকু হাসান বলেছেন: শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি ,,,,,,,,,,উনি অনেক বড় মাপের মানুষ । ভুলে যায় ,আপনি স্বরণ করিয়ে দেন কৃতজ্ঞ আপনার প্রতি ।

১৭ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ রাকু ভাই
ভালো থাকবেন।

৪| ১৭ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৭

বিদ্যুৎ বলেছেন: শ্রদ্ধাঞ্জলি এই মহা মানবের ৮৭তম মৃত্যুবার্ষিকীতে।

১৭ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ বিদ্যুৎ ভাই
কবি ও ঔপন্যাসিক সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজীর
মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।

৫| ১৭ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৬

উম্মু আবদুল্লাহ বলেছেন: উনার বেশ কিছু লেখা আমি পড়েছি। প্রায় সবগুলোই মুসলিম জাতীয়তাবাদী ধারার, ঠিক সার্বজনীন বলা চলে না। তারপরেও ভাল লেগেছে কারন সেসময়কার পরিবেশ পরিস্থিতিকে তা তুলে ধরে।

১৭ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ উম্মু আবদুল্লাহ
চমৎকার মন্তব্য প্রদান করে
সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজীকে
শ্রদ্ধা নিবেদন করার জন্য।

৬| ১৭ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৯

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



সিরাজী ছিলেন স্বাধীনতার অতন্দ্র প্রহরী। আজীবন কংগ্রেসের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। ইংরেজদের হটাবার জন্য, স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যের জন্য তিনি কলম হাতে নিয়েছিলেন শৈশবকালেই। বড় হয়ে লেখনী আর ভাষণ দুটোই একত্রে চালিয়েছিলেন। তাঁর বাগ্মীতায় ব্রিটিশ সিংহাসন কেঁপে ওঠত। কলকাতায় কংগ্রেসের মহারাষ্ট্রীয় মহাসভার অধিবেশনে তিনি যোগদান করেন।

সভায় সভাপতিত্ব করেন লালা লাজপত রায়। সম্মেলনের অহিংস-অসহযোগের প্রস্তাব উঠলে ডাঃ এ্যানিবেশান্ত ও বিপিনচন্দ্র পাল এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেন, আর একবার ইংল্যান্ডে ডেপুটেশন পাঠিয়ে দেখা যাক।' এই কথা বলামাত্র সিরাজী বারুদের ন্যায় জ্বলে উঠে বজ্রহুঙ্কারে বলেন, ‘I challenge you Mr. Poul? How many times do you wish to send deputation to England for India? Young generation do not like to hear you!'

এই কথা বলামাত্র কংগ্রেস মহলে হৈ চৈ পড়ে যায়। মি” পাল পুনরায় বলতে আরম্ভ করলে তিনি বলেন, ‘ Mr. President ! We do not wish to hear any single sold from Mr. Poul.' মিসেস বৈশান্ত বলতে উঠলেও তিনি তীব্র আপত্তি করেন। সভাসুদ্ধ লোক সিরাজী সাহেবকে সমর্থন করতঃ ‘শেম' ! ‘শেম'! করে বৈশান্তকে বসিয়ে দেয়। অতঃপর মহাত্মা গান্ধী বক্তৃতা করেন। তার তেজস্বীতা সন্দর্শনে বাঙালি মাত্রই বিশেষ উৎসাহিত হন।

১৭ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ চৌধুরী ভাই
ফিরে আসার জন্য।
চমৎসার সংযোজন !!
ভালো থাকবেন।

৭| ১৮ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:৩৭

বরুন মালাকার বলেছেন: এখন আর এমন সাহসী মানুষ নাই। আল্লাহ তাকে জান্নাত নসিব করুন।

১৯ শে জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ মালাকার দাদা
সত্যি এখন আর সেই মানুষ নেই
তবে আশায় থাকি হয়তো আবার
আসবে সেই মানুষ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.