নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

অপরাজেয় কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মবার্ষিকীতে আমাদের ফুলেল শুভেচ্ছা

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:২৯


কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। লেখক হিসাবে যিনি প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিলেন প্রথম মহাযুদ্ধের সময়, আর মৃত্যবরণ করেছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তিনি কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বহু বছর পার হয়ে গেলেও তিনি আজও পাঠকের কাছে জনপ্রিয় লেখক এবং অপরাজেয় কথাশিল্পী। শরৎচন্দ্র তাঁর লেখা উপন্যাসের জনপ্রিয়তার জন্য বাংলা সাহিত্যের অমর কথাসাহিত্যিক নামে পরিচিত। জনপ্রিয়তম বাঙালি এই কথাসাহিত্যকের গ্রন্থ বাঙলা ছাড়াও বহু ভারতীয় ও বিদেশী ভাষায় অনূদিত হয়েছে। 'পায়ের তলায় সর্ষে' কথাটা যেন তার যৌবনকালের সেই দিনগুলো বেশি মনে করিয়ে দেয় যখন তিনি বাংলা-বিহারের আর উত্তর প্রদেশের নানা জায়গায় লক্ষ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়িয়েছেন দীর্ঘদিন। অপরাজেয় কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এই গুণটি পেয়েছিলেন তাঁর সংসার উদাসীন ভবঘুরে পিতার কাছ থেকে। চবি্বশ বছর বয়সেই হঠাৎ তিনি সন্ন্যাসীর দলে পথে ভিড়ে বেড়িয়ে পড়েন। বেশ কিছুকাল ভারতের নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ান। ১৯০৩ সালে তিনি আসেন বার্মার রেঙ্গুনে, সেখানে ১২টি বছর কাটানোর পর দেশে ফেরেন। বার্মায় এবং ভারতের অন্যান্য জায়গায়, গ্রামেগঞ্জে এবং শহরে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর বেশে ঘুরে বেড়াতে কখনই অসুবিধা হয়নি তাঁর। শেষ বয়সে তিনি ইউরোপে যাবেন বলেও সব প্রস্তুতি সেরে ফেলেছিলেন। দুঃখের বিষয় ওপারের ডাক এসে পড়ায় তাঁর আর সাগর পাড়ি দেওয়ার সুযোগ হয়নি। কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্রের জন্ম ও মৃত্যু ঘটেছিল রবীন্দ্রনাথের আলোয় আলোয়। আজ তার ১৪২তম জন্মবার্ষিকী। ১৮৭৬ সালের আজকের দিনে তিনি হুগলী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। অপরাজেয় কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের  জন্মবার্ষিকীতে আমাদের ফুলেল শুভেচ্ছা।

১৮৭৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর হুগলী জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কিংবদন্তি কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্ট্যোপাধ্যায়। তাঁর পিতা মতিলাল চট্টোপাধ্যায় ও মাতা ভুবনমোহিনী দেবী। শরৎচন্দ্রের কৈশোর ও যৌবন কাটে ভাগলপুরে মামা বাড়িতে। প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি দেবানন্দপুরের হুগলি ব্রাঞ্চ স্কুল ও ভাগলপুরের দুর্গাচরণ এ.ম.ই. স্কুলে অধ্যয়ণ করেন। ১৮৯৪ সালে টি.এন. জুবিলি কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশ করার পর একই কলেজে এফ.এ. শ্রেণিতে ভর্তি হলেও অর্থাভাবে পড়াশোনা চালাতে পারেননি তিনি। অধ্যয়ণে বিরতি ঘটার পর শরৎচন্দ্র বনেলি স্টেটে সেটেলমেন্ট অফিসারের সহকারী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর তিনি কলকাতা হাইকোর্টের অনুবাদকের কাজ করেনঅ ১৯০৩ সালে ভাগ্যান্বেষণে তিনি রেঙ্গুন চলে যান। সেখানে ছিলেন ১২ বছর। রেঙ্গুনের এক বিপন্না ব্রাক্ষমন যুবতিকে (হিরন্নয় দেবী)আশ্রয় দিয়ে পরে তাঁকেই বিবাহ করেন। কিন্তু দূরারোগ্য প্লেগরোগে তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু হয়। শরৎচন্দ্র বার্মা রেলওয়ের হিসাব দপ্তরের কেরানি পদে চাকরি করেন। এক সময় তিনি সন্ন্যাসিদলে যোগ দেন এবং গান ও নাটকে অভিনয় করেন। শরৎচন্দ্র কংগ্রেসের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯২১ সালে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর সাথে তাঁর পরিচয় হয় এবং সেই বছরই-জেলা কংগ্রেসের সভাপতি হিসাবে তিনি যোগদান করেন এবং হাওড়া জেলা জেলা কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। শরৎচন্দ্রের সাহিত্য সাধনার হাতেখড়ি হয় ভাগলপুরে। তার অনেক গল্প, যা পরবর্তীকালে প্রকাশিত হয়ে তার যশ বৃদ্ধি করেছে, তার খসড়া সেখানে লেখা। ‘মন্দির গল্প’ শরৎচন্দ্রের প্রথম মুদ্রিত গল্প। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে-পল্লী সমাজ, শ্রীকান্ত, দেবদাস, দত্তা, গৃহদাহ, দেনা পাওনা, পথের দাবী, শেষ প্রশ্ন, পরিণীতা, মেজদিদি, স্বামী, ছবি, বিরাজ বৌ, নারীর মূল্য ইত্যাদি। নারীর প্রতি সামাজিক নির্যাতন ও তার সংস্কারবন্দি জীবনের রূপায়ণে তিনি বিপ্লবী লেখক বিশেষত গ্রামের অবহেলিত ও বঞ্চিত নারীর প্রতি তাঁর গভীর মমত্ববোধ ও শ্রদ্ধা তুলনাহীন। সামাজিক বৈষম্য, কুসংস্কার ও শাস্ত্রীয় অনাচারের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন উচ্চকণ্ঠ। কাহিনী নির্মাণে অসামান্য কুশলতা এবং অতি প্রাঞ্জল ও সাবলীল ভাষা তাঁর কাব্যসাহিত্যের জনপ্রিয়তা ও খ্যাতির প্রধান কারণ। বাংলাসহ ভারতীয় বিভিন্ন ভাষায় তাঁর অনেক উপন্যাসের চিত্রনাট্য নির্মিত হয়েছে এবং সেগুলি অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে যা 'দেবদাস', 'শ্রীকান্ত', 'রামের সুমতি', 'দেনা-পাওনা', 'বিরাজবৌ' ইত্যাদি। শরৎচন্দ্র চিত্রনাট্যেও দক্ষ ছিলেন। বহু বছর পার হয়ে গেলেও যিনি আজও জনপ্রিয় লেখক। তাঁর অতি 'মহাশ্বেতা' অয়েল পেন্টিং একটি বিখ্যাত চিত্রকর্ম। 

(১৯৩৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বাঁ থেকে স্যার যদুনাথ সরকার, শরৎচন্দ্র, চ্যান্সেলর আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, ভাইস চ্যান্সেলর এ এফ রহমান)
অসামন্য প্রতিভাসম্পন্ন শরৎচন্দ্রের মধ্যে বর্ণাঢ্য আর ভ্রমণ পিয়াসী শরৎচন্দ্র বেশ কয়েকবার বাংলার রাজধানী ঢাকা ভ্রমণ করেছিলেন। সুনির্দিষ্টভাবে বললে মাত্র দু'বার, একবার ১৯২৫ এর এপ্রিলে এবং পরে আর একবার ১৯৩৬ এর জুলাই মাসে। প্রথমবারে ১৯২৫ সালের এপ্রিল মাসে ঢাকা জেলার মুন্সীগঞ্জে বঙ্গীয়-সাহিত্য সম্মেলনের সাহিত্য শাখার সভাপতি হিসেবে অংশগ্রহণ করতে (১০-১১ এপ্রিল) এসেছিলেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। অধিবেশন শেষে মুন্সীগঞ্জ থেকে তাঁকে ঢাকায় নিয়ে এসেছিলেন সে সময়ের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক এবং জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার, যিনি মুন্সীগঞ্জের এই সম্মেলনে ইতিহাস শাখার সভাপতি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় বার ১৯৩৬ সালে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়া ডিলিট উপাধি গ্রহণ করতে। ১৯৩৬ সালে শরৎচন্দ্র যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণ পান, তখন তাঁর সাহিত্য জীবন খ্যাতির সর্বোচ্চ চূড়ায়। তাঁর কালজয়ী সব উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প অনেক আগেই প্রকাশিত হয়ে তাঁর প্রতিভার চূড়ান্ত স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছে। তার সৃষ্টির মূল্যায়ন নিয়ে সম্ভাব্য বিতর্কেরও অবসান ততদিনে শেষ হয়ে গেছে। সেই সময়ের ভাইস চ্যান্সেলর স্যার এফএ রহমান একটি বিশেষ কনভোকেশনের আয়োজন করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, যদুনাথ সরকারকে সম্মানসূচক ডিলিট এবং জগদীশচন্দ্র বসু ও প্রফুল্লচন্দ্র রায়কে সম্মানসূচক ডি এসসি উপাধি গ্রহণের আমন্ত্রণ জানান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অসুস্থতার কারণে উপস্থিত হতে পারেননি। অন্য সবাই সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সে সময়ের পূর্ববঙ্গের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও রক্ষণশীল পত্রিকা 'ঢাকা প্রকাশ' সম্ভবত শরৎচন্দ্রের উদার দৃষ্টিভঙ্গি ও সমাজের রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে লেখনী ধরনের কারণে মনোক্ষুণ্ন ছিল। 'ঢাকা প্রকাশ'-এ ডিলিট উপাধিদানের একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। কৌতুকের বিষয় 'ঢাকা প্রকাশ'-এ এই বিশেষ সম্মাননা প্রদর্শনে বিরূপ সমালোচনা প্রকাশ করে (ঢাকা প্রকাশ ২৭ পৌষ ১৩৪২)। সমালোচনাটির ভাষা তীব্র এবং দুঃখজনক। 'সেই তালিকার মধ্যে শ্রীযুক্ত শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মহাশয়ের নাম দেখিয়া রুচির প্রশংসা করিতে পারিতেছি না বলিয়া দুঃখিত। তালিকায় প্রকাশিত অপরাপর সুধীবর্গের তুলনায় নীতি ও যোগ্যতার দিক দিয়া শ্রীযুক্ত শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে 'ডক্টর অব লিটারেচার' উপাধি প্রদান করা যাইতে পারে কিনা, সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে।' ঢাকা প্রকাশের বিরূপতা সত্ত্বেও শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্ররা নয়, ঢাকাবাসীও যে তাঁকে সাদরে গ্রহণ করেছিলেন তার প্রমাণ মেলে সে সময় ঢাকার সবচেয়ে নামকরা সাহিত্য প্রতিষ্ঠান ছিল মুসলিম সাহিত্য সমাজ-এর কর্মকাণ্ডে। তখন এই প্রতিষ্ঠানকে বলা হতো ঢাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রধান সংগঠন। এই প্রখ্যাত সংগঠনটি শরৎচন্দ্রকে বিশেষ সম্মাননা প্রদর্শন করে। ১৯৩৬ সালের ৩১ জুলাই এ 'মুসলিম সাহিত্য সমাজ' এর দশম বার্ষিক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে মূল সভাপতি হিসেবে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আমন্ত্রিত হন। শরৎচন্দ্র ঢাকায় কতদিন অবস্থান করেছিলেন, তা সঠিক জানা যায়নি। অধিবেশন শেষে ঢাকার রূপলাল হাউসে 'শান্তি' পত্রিকার পক্ষ থেকে তাঁকে সম্বর্ধনা জানানো হয়।এছাড়া ঢাকা ট্রেনিং কলেজের তদানীন্তন অধ্যক্ষ খান বাহাদুর আবদুর রহমান খানের আমন্ত্রণে একদিন ট্রেনিং কলেজ ও আর্মানিটোলা গভর্মেন্ট হাইস্কুল পরিদর্শন করেন। অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান তখন আর্মানিটোলা স্কুলের ছাত্র। তিনি তাঁর এক স্মৃতিচারণে সে ঘটনার মজার বর্ণনা দিয়েছেন। এর মধ্যবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও তাঁর বন্ধু চারুচন্দ্র বন্দোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে আরও দু'একবার তিনি ঢাকা এসে থাকতে পারেন বলে কারও কারও ধারণা। তবে এমন ধারণার পক্ষে কোনো নিদ্দিষ্ট প্রমাণ এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। 

সাহিত্যকর্মে অসাধারণ অবদানের জন্য শরৎচন্দ্র ১৯০৯ সালে কুন্তলীন পুরস্কার, জগত্তারিণী স্বর্ণপদক, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সদস্যপদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিলিট উপাধি লাভ করেন। লেখক হিসাবে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিলেন প্রথম মহাযুদ্ধের সময়, আর মৃত্যবরণ করেছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর। শরৎচন্দ্রের জীবনের শেষ ক’বছর শরীর আদৌ ভাল যাচ্ছিল না। একটা-না-একটা রোগে ভুগছিলেনই। ১৯৩৭ খ্রীস্টাব্দের গোড়ার দিকে তিনি কিছুদিন জ্বরে ভোগেন। জ্বর ছাড়লে ডাক্তারের উপদেশে দেওঘর বেড়াতে যান। সেখানে তিন-চার মাস থাকেন। দেওঘর থেকে এসে কিছুদিন সুস্থ থাকার পর শরৎচন্দ্র সেপ্টেম্বর মাসে আবার অসুখে পড়লেন। এবার তাঁর পাকাশয়ের পীড়া দেখা দেয় এবং দেখতে দেখতে এই রোগ ক্রমেই বেড়ে যেতে লাগল। যা খান আদৌ হজম হয় না। তার উপর পেটেও যন্ত্রণা দেখা দেয়। শরৎচন্দ্র এই সময় সামতাবেড়ে গ্রামের বাড়িতে থাকতেন। চিকিৎসা করাবার জন্য কলকাতার বাড়িতে এলেন। কলকাতায় ডাক্তাররা এক্স-রে করে দেখলেন, শরৎচন্দ্রের যকৃতে ক্যানসার ত হয়েইছে, অধিকন্তু এই ব্যাধি তাঁর পাকস্থলীও আক্রমণ করেছে। কলকাতার তৎকালীন শ্রেষ্ঠ চিকিৎসকগন-ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়, ডাঃ কুমুদশঙ্কর রায় প্রভৃতি শরৎচন্দ্রকে দেখে স্থির করলেন যে, শরৎচন্দ্রের পেটে অস্ত্রোপচার ছাড়া আর কোন উপায় নেই। ডাঃ ম্যাকে সাহেবের সুপারিশে শরৎচন্দ্রের চিকিৎসার জন্য তাঁকে বাড়ি থেকে দক্ষিণ কলকাতার ৫নং সুবার্বন হস্‌পিটাল রোডে একটি ইউরোপীয় নার্সিং হোমে (পার্ক নার্সিং হোম) নিয়ে যাওয়া হল। সেই সময়কার বিখ্যাত সার্জন ললিতমোহন বন্দোপাধ্যায় শরৎচন্দ্রের পেটে অপারেশন করেছিলেন। অপারেশন করেও শরৎচন্দ্রকে বাঁচানো সম্ভব হল না। অপারেশন হয়েছিল ১২ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে। অপারেশনেরন পর শরৎচন্দ্র মাত্র আর চারদিন বেঁচে ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর দিনটা ছিল রবিবার ১৬ই জানুয়ারী ১৯৩৮ ইং(বাংলা ১৩৪৪ সালের ২রা মাঘ)। এই দিনই বেলা দশটা দশ মিনিটের সময় শরৎচন্দ্র সকলের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৬১ বৎসর ৪ মাস। যে 'ঢাকা প্রকাশ' তাঁর ডিলিট লাভের সংবাদে তীব্র ব্যঙ্গের হুল ফুটিয়ে ছিল সেই 'ঢাকা প্রকাশ' তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে লিখেছিলঃ 'সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র ব্যক্তিগত জীবনে সাধারণ মানুষের মত কাটাইয়া গিয়াছেন। দেশ সেবা ও জনসেবা ছিল তাঁহার আদর্শ। তাঁহার বৈঠকখানায় প্রত্যহ সান্ধ্য বৈঠক বসিত- যেখানে চলিত পল্লীর সুখ দুঃখের আলাপ আলোচনা। শরৎচন্দ্রের মৃত্যুতে বাঙ্গালার সাহিত্য জগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি হইল।' আজ এই মহান সাহিত্যিকের ১৪২তম জন্মবার্ষিকী । অপরাজেয় কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্রোপাধ্যায়ের জন্ম দিনে তাঁর জন্য ফুলেল শুভেচ্ছা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৩৪

চাঁদগাজী বলেছেন:


এই ধরণের বিখ্যাত মানুষদের প্রতি যাতে ব্লগারদের আকর্ষণ বাড়ে, সেটার চেষ্টা করেন।

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
বিখ্যাত লোকদেরকে দিয়ে ব্যালে নৃত্য পরিবেশন করবো
যাতে আপনার মতো সেফু'দার মনোরঞ্জন হয় !!

২| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৩৫

সনেট কবি বলেছেন: প্রিয় লেখকের জন্য শুভেচ্ছা।

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ ফরিদ ভাই
আপনার ওনাকে একটু সমঝাতে বলুন !!

৩| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৩৯

অভীক অর্ণব বলেছেন: জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৯

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ অর্ণব ভাই
লেখকের জন্য শ্রদ্ধা নিবেদন করার জন্য।

৪| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৪৩

বিশিষ্ট বলদ বলেছেন:

চাঁদগাজী বলেছেন:

এই ধরণের বিখ্যাত মানুষদের প্রতি যাতে ব্লগারদের আকর্ষণ বাড়ে, সেটার চেষ্টা করেন।


কি ধরণের কাজ করলে ব্লগারদের আকর্ষণ বাড়বে জনাব গাজী? আপনি একটু উপায় বাতলে দিন। সনেট লিখবে?

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৪০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ওকে বুড়া বয়সরে ভীমরতিতে ধরেছে
খেমটা নাচন নাচাতে হবে !!

৫| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৪৩

পাঠকের প্রতিক্রিয়া ! বলেছেন: শরৎ বাবুর জন্য শুভেচ্ছা। তিনি আমার পছন্দের লেখক।

আহারে বিলাসী....

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৪১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে প্রতিক্রিয়া !!
আমারও পছন্দের লেখক, ছোট বেলায় তার
যেমন ভক্ত ছিলাম আজও তেমনি রয়ে গেছি !

৬| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১:১৫

রাকু হাসান বলেছেন: জন্ম দিনের শুভেচ্ছা । পছন্দের একজন । বেঁচে রবে ।

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৪২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ রাকু হাসান ভাই
শ্রদ্ধেয় প্রিয় লেখকের জন্য
ফুলেল শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের জন্য।

৭| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:১৯

চাডেরনুর বলেছেন: বিশিষ্ট বলদ ভাই, চাদগাজির মত সংবিধান রচনা নিয়া বলদা কমেন্ট করলে আকর্ষণ বাড়ব

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
চাডেরনূর ধন্যবাদ
গাজীসাবের মন্তব্যের প্রতিউত্তরে
বলদ ভাইকে সহায়তা করার জন্য।

৮| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:৫৩

অক্পটে বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ, এই মহান লেখকের বিষয়ে অনেক কিছু জানানোর জন্য।

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ
অকপটে সব সত্যি প্রকাশের জন্য

৯| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:৩১

জসীম অসীম বলেছেন:
আলোকচিত্র:
যে বয়সে আমি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রথম পাঠ করি।
================================
নূর মোহাম্মদ নূরু ভাই,
আপনি শুরুতে লিখেছেন শরৎচন্দ্র মৃত্যুবরণ করেছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর। অথচ যদি আপনার তথ্যমতে শরৎচন্দ্র মৃত্যুবরণ করে থাকেন 1938 সালে, তাহলে সেটা কিভাবে সম্ভব? কারণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তো 1939-1945 সাল পর্যন্ত চলেছে।
তিনি ছিলেন আমার শৈশবের সবচেয়ে প্রিয় লেখক। আজও প্রিয়। প্রিয়তর। তাঁর ‘দেবদাস’ ছিল আমার সর্বোচ্চ প্রিয় উপন্যাস। তাঁর জননী ভুবনমোহিনীর জীবন সার্থক এমন সন্তান জন্ম দিয়ে।
‘পল্লী সমাজ’ আর ‘শ্রীকান্ত’ও খুব ভালো লেগেছিল। এক্ষেত্রে উত্তম-সুচিত্রার ‘শ্রীকান্ত’ চলচ্চিত্রের কথাও মনে পড়ে। ‘মেজদিদি’ আর ‘বড়দিদি’ পড়ে তো শৈশবে অনেক চোখের পানিই ফেলেছি। ‘বিরাজ বৌ’ পড়েছিলাম আরও পরে।
আর ঢাকায় ‘বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে’ সম্মান শ্রেণিতে পড়ার সময় পাঠ্য কথাসাহিত্য তাঁর ‘গৃহদাহ’ উপন্যাস বুকে জ্বালা ধরিয়ে দিয়েছিল। মারাত্মক লেখনি তাঁর। ওই সময়ই এই উপন্যাস অবলম্বনে রচিত শিশির ভাদুরীর ‘অচলা’ নাট্যরূপও পড়েছিলাম কলকাতার ‘দেশ’ সাহিত্যপত্রিকায়। শরৎচন্দ্র শরৎচন্দ্রই। আজকাল আমরা অনেকেই যতই ম্যাজিক রিয়েলিজম বা অন্যান্য ইজমের কথা বলে আমাদের এমন সব মহান লেখকদের উপেক্ষা করি না কেন, তাঁরা তাঁদের সাহিত্যকর্মের আর শিল্পমূল্যের কারণেই যুগ যুগ...শতাব্দী শতাব্দী ধরে নিশ্চিত অমর হয়ে থাকবেন। নয় কি?

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
জসীম অসীম ভাই ধন্যবাদ আপনাকে
হিসেবের খেড়ো খাতা তুলে ধরার জন্য।

আপনার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে,
১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল, এই ছয় বছর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়সীমা ধরা হলেও ১৯৩৯ সালের আগে এশিয়ায় সংগঠিত কয়েকটি সংঘর্ষকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়। পূর্ব এশিয়ায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের লক্ষে জাপান ১৯৩৭ সালে প্রজাতন্ত্রী চীনে আক্রমণ করে। পরবর্তীতে ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ করে এবং তার ফলশ্রুতিতে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ১৯৩৭ সালের জাপান কর্তৃক চীন আক্রমনের ঘটনাটিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা বলে গণ্য করা হয়।
সে যাই হোক ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

১০| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: গ্রেট সাহিত্যহিক।

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৯

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
অসংখ্য ধন্যবাদ!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.