নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পদার্থবিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১০:৫৫


বিজ্ঞান চর্চায় প্রেরণাদায়ক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাঙালি পদার্থবিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা। পদার্থবিজ্ঞানের ‘তাপ আয়নকরণ তত্ত্ব এবং তারকার আবহাওয়া পরিমন্ডলে তার প্রয়োগ’ সম্পর্কিত সাহা সমীকরণের প্রবক্তা বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা। যিনি সমাজের সব স্তরে বিজ্ঞানের কল্যানমুখী ভূমিকা প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন। জগদীশচন্দ্র বসুর পর, মেঘনাদ সাহাই প্রথম বাঙালি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি জ্যোতিঃপদার্থ বিজ্ঞানের স্রষ্টা হিসেবে বিজ্ঞানের ছাত্রদের কাছে অতি পরিচিত। মেঘনাদ সাহা পরমাণু বিজ্ঞান, আয়ন মণ্ডল, পঞ্জিকা সংস্কার, বন্যা প্রতিরোধ ও নদী পরিকল্পনা বিষয়ে গবেষণা করেন। জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং বিজ্ঞানকে সাধারণের মাঝে গ্রহণযোগ্য করে তোলার অন্যতম প্রয়াসী ছিলেন বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা। বাংলায় বিজ্ঞান চর্চা এবং প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সমাজের মৌলিক পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখতেন তিনি। এ দেশের পরমাণু বিজ্ঞান, আয়নমণ্ডল, পঞ্জিকা সংস্কার, বন্যা প্রতিরোধ ও নদী পরিকল্পনা বিষয়ে সবচেয়ে বড় গবেষক মেঘনাদ সাহার ১২৫তম আজ জন্মবার্ষিকী। ১৮৯৩ সালের আজকের দিনে তিনি ঢাকার বিক্রমপুরে জন্মগ্রহণ করেন। পদার্থবিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

মেঘনাদ সাহা ১৮৯৩ সালের ৬ অক্টোবর ঢাকার বিক্রমপুরের শেওড়াতলী গ্রামে এক গরীব ঘরে জন্মগ্রহন করেন। জগন্নাথ সাহা এবং ভূবনেশ্বরী দেবীর আট সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন পঞ্চম। তার পিতা ছিলেন গ্রামের এক মুদি দোকানদার। ফলে এই আয়ে যে সংসার চলতো তাতে উপযুক্ত শিক্ষা পাওয়া সহজসাধ্য ছিল না। এ কারণে অত্যন্ত মেধাবী ও স্মরণশক্তির অধিকারী হয়েও মেঘনাদ সাহার বিষয়-সংসারে অমনোযোগ; কিন্তু পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ লক্ষ্য করে তার পিতা বিরক্ত হতেন। মেঘনাদ সাহা তাতে দমে যাননি। গ্রামের অদূরে একটি ইংরেজি স্কুলে ইংরেজি শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল। স্থানীয় চিকিৎসক অনন্ত কুমার দাসের সহায়তায় মেঘনাদ সাহা ঐ স্কুলে ভর্তির সুযোগ পান এবং এই চিকিৎসকের বাসায় থেকেই তিনি লেখাপড়া করেছেন। অর্থাভাবে বহুপ্রতিকুলতা সত্বেও ১৯০৫ সালে ঢাকা মিডল স্কুলে বৃত্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়ে তিনি ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান।

১৯০৫ সালের ঘটনা। সারা ভারতে তখন স্বদেশী আন্দোলনের হাওয়া বইছে। এ থেকে বাদ পড়েনি স্কুল কলেজও। বারো বছরের একটি বালক। স্বদেশী আন্দোলনে সাড়া দিয়ে যে খাদির পোশাক পরতে শুরু করেছে, খালি পায়েই স্কুলে যাতায়াত করছে। সেই বিস্ময় বালকটির নাম মেঘনাদ সাহা। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে জড়িত হওয়ার অপরাধে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। বাধ্য হয়ে তিনি কিশোরীলাল জুবিলী স্কুলে ভর্তি হন এবং এখান থেকেই তিনি পূর্ববঙ্গের সব পরিক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম হয়ে ১৯০৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এন্ট্রাস পাস করেন। ১৯১১ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইএসসি পরীক্ষায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। এরপর তিনি কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন।

এখানে তার সতীর্থ ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু, নিখিলরঞ্জন সেন, জ্ঞান মুখার্জি, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ এবং তার শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন রসায়নে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, পদার্থবিজ্ঞানে জগদীশচন্দ্র বসু, গণিতে ডি এন মল্লিক ও সি ই ক্যালিস। ১৯১৩ সালে গণিতে সম্মানসহ বিএসসি ও ১৯১৫ সালে ফলিত গণিতে এমএসসি পরীক্ষায় তিনি প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন।

তাপীয় আয়নবাদ (Thermal Ionaisation) সংক্রান্ত তত্ত্ব উদ্ভাবন করে জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন মেঘনাদ সাহা। ১৯১৭ সালে তাঁর প্রথম প্রবন্ধ ‘অন ম্যাক্সওয়েল স্ট্রেসেস’ প্রকাশিত হয় ফিলজফিক্যাল ম্যাগাজিনে। এরপর ১৯২০ সালেই এই ম্যাগাজিনে 'On ionization in the Solar Chromosphere' (সূর্যের বর্ণমণ্ডলে আয়নকরণ) শিরোনামে তার তাপ আয়নকরণতত্ত্ব প্রকাশিত হয় যা জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানে এক নতুন দিগন্ত সূচনা করে। কারণ এই তত্ত্ব দ্বারাই প্রথম তাপবলবিদ্যা ও কোয়ান্টামতত্ত্বের ভিত্তিতে বিভিন্ন শ্রেণীর তারকার বর্ণালী ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়েছিল। কেন সূর্যের বর্ণালীতে সিজিয়াম বা রুবিডিয়াম থাকবে না এর উত্তর দেয়ার সাথে সাথে তিনি এও ভবিষ্যদ্বানী করেন, যদি সূর্যের দেহের অপেক্ষাকৃত কম তাপবিশিষ্ট অংশের বর্ণালী নেওয়া যায় তবে সেখানে কম ভারী মৌলগুলির উপস্থিতি দেখা যাবে। এই তত্ত্ব পদার্থ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানে নতুন সংযোজন। মেঘনাদ সাহার গবেষণা ‘তাপীয় আয়ননবাদ’ নামে সুপরিচিত। তার এই তত্ত্বটিই পরে সাহার সমীকরণ নামে পরিচিতি লাভ করে। পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে ততদিনে তার নাম ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। মেঘনাদ সাহা সম্পর্কে আলবার্ট আইনস্টাইনের উক্তি “Dr. M.N. Shaha has won an honoured name in the whole scientific world ”

১৯১৮ সালে মেঘনাদ সাহা কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন। ১৯১৯ সালে তিনি ‘প্রেসার অব লাইট’এর উপর গবেষণা করে ডি এস সি ডিগ্রী, ১৯২০ সালে ‘অ্যাস্ট্রোফিজিকস’ এর উপর গবেষণা করে প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি পান। পর্যায়ক্রমে গবেষক ও বিজ্ঞানী হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন। গবেষণাকর্মের জন্য তিনি লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটি তাঁকে ফেলোশিপ প্রদান করেছিল। ‘বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি’ নামে একটি মাসিক পত্রিকাও তিনি সম্পাদনা করতেন। ১৯৪৮ সালে তিনি কলকাতায় 'সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স’ প্রতিষ্ঠা করেন । আয়নকরণ তত্ত্ব ছাড়াও মেঘনাদ সাহা তারকার বর্ণালী, নিবাচিত বিকিরণ তাপ, বণালী তত্ত্ব, আয়নিক বিশ্লেষণ, আয়নস্ফিয়ারে বেতার তরঙ্গের পরিচলন, সূর্যের করোনা, সূর্যের বেতার বিকিরণ, চৌম্বক এক মেরু, বিটা তেজস্ত্রিয়তা, শিলার বয়স প্রভৃতি বিষয়ে গবেষণা করেন। পদার্থবিদ্যা, জ্যোতিঃপদার্থবিদ্যা, পরমানুবিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ে তিনি বাংলায় ২৮টি এবং ইংরেজিতে ১১৯টি প্রবন্ধ রচনা করেন। তাঁর রচিত উল্লেখ্যোগ্য গ্রন্থাবলীঃ
১। The Principle of Relativity,
২। Treatise on Heat
৩। Treatise on Modern Physics
৪। Junior Textbook of Heat with Meteorology


১৯৫৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী মৃত্যুবরণ করেন এই কৃতি বিজ্ঞানী । বাংলার বিজ্ঞান চর্চার এই অন্যতম পথিকৃৎ মেঘনাদ সাহার কর্ম ও আবিষ্কার আগামী প্রজন্মের কাছে সবসময়ই অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। বিজ্ঞান চর্চায় প্রেরণাদায়ক এই স্বাপ্নিক বিজ্ঞানীর ১২৫তম জন্মবার্ষিকী আজ। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার জন্মদিনে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১১:১৮

নষ্টজীবন® বলেছেন: সুন্দর পো, ভালো লাগো জেনে, আমি গর্বিতবাঙালি

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ২:৫২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ নষ্টজীবন।
শুভকামনা আপনার জন্য
ফিরে আসুন সুন্দর জীবনে

২| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১১:৫৪

রাজীব নুর বলেছেন: উনাকে আমি আজই প্রথম জানলাম।
ধন্যবাদ আপনাকে।

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ২:৫২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
বলেন কি রাজীব ভাই !!
তার পরেও ধন্যবাদ জানার জন্য।

৩| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:০৭

সনেট কবি বলেছেন: তাঁর জন্য শুভেচ্ছা।

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ২:৫৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ ফরিদ ভাই।
ভালো থাকবেন।

৪| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৩

আখেনাটেন বলেছেন: মহান বিজ্ঞানীকে সামনে আনার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

তিনি বেশ কয়েকবার পদার্থে নোবেলের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন।

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ আখেনাটেন ভাই।
ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.