নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

জেল হত্যা দিবসের ৪৩তম বার্ষিকীতে বাংলাদেশের জাতীয় চার নেতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৫০


আজ ৩রা নভেম্বর, ঐতিহাসিক জেলহত্যা দিবস। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের জঘণ্যতম ও বেদনাবিধুর একটি অধ্যায়। যে কয়েকটি ঘটনা বাংলাদেশকে কাঙ্খিত অর্জনের পথে বাধা তৈরি করেছে, তার মধ্যে এই দিনটি অন্যতম। মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তি এবং এ দেশের তৎকালীন একটি কুচক্রীমহল বাংলাদেশকে পুনরায় পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। এরপর ষড়যন্ত্রকে চূড়ান্ত রূপ দিতে এবং স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার অভিপ্রায়ে হত্যা করা হয় এই চার নেতাকে। বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করতে ৪৩ বছর আগে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অভ্যন্তরীণ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল রাজনীতিতে বিশ্বাসী এই চার নেতা বাঙালি জাতীয়তাবাদ আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এই জাতীয় চার নেতাই বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী হিসেবে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠনের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখেন। প্রতি বছর এই দিনে বাংলাদেশের মানুষ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) মনসুর আলী এবং খাদ্য ও ত্রাণমন্ত্রী এএইচএম কামরুজ্জামানকে। আজ জেল হত্যা দিবসের ৪৩তম বার্ষিকী। জাতীয় চার নেতার মৃত্যুদিনে তাঁদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।

উল্লেখ্য বঙ্গবন্ধুর আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণার পর পরই পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ঐতিহাসিক ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময় সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের মুজিবনগর সরকারের সমধিক পরিচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দিন আহমেদ একটি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় কোটি কোটি বাঙালীর স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বঙ্গবন্ধুর অপর ঘনিষ্ঠ সহযোগি এএইচএম কামারুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন মনসুর আলী আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে নীতি ও কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট’ ঘাতকদের হাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হলে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ঘটে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত সরকারে যোগদানের প্রস্তাব জাতীয় চার নেতা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এ কারণেই বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রী সভার সবচাইতে ঘৃণিত বিশ্বাসঘাতক সদস্য হিসেবে পরিচিত এবং তৎকালীন স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোস্তাক আহমদের প্ররোচণায় এক শ্যেণীর উচ্চাভিলাসী মধ্যম সারির জুনিয়র সেনা কর্মকর্তারা প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাস্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, বাংলদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ, ত্রান ও পূর্ণবাসন মন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামান এবং স্বরাস্ট্রমন্ত্রী মনসুর আলী কে গ্রেফতার করা হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি অবস্থায় ৩ রা নভেম্বর এই চার জাতীয় নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি সেদিন জাতীয় চার নেতাকে শুধু গুলি চালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, কাপুরুষের মতো গুলিবিদ্ধ দেহগুলোকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করে। ইতিহাসের এই নিষ্ঠুরতম হত্যার ঘটনায় শুধু বাংলাদেশের মানুষই নয়, স্তম্ভিত হয়েছিল গোটা বিশ্ব। কারাগারে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা অবস্থায় এ ধরনের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।

ঘটনার পরদিন ৪ নভেম্বর তৎকালীন কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) আবদুল আউয়াল লালবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় বলা হয়, রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের নেতৃত্বে চার-পাঁচজন সেনাসদস্য কারাগারে ঢুকে চার নেতাকে গুলি করে হত্যা করে। পরে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। গত ৩৫টি বছর ধরেই এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি চলছে। ২০০৮ সালের আগস্ট মাসে উচ্চ আদালতের রায়ে আত্মস্বীকৃত খুনিদের প্রায় সবাই খালাস পাওয়ার পরও বিচারের দাবি এতটুকু কমেনি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জেলহত্যা মামলার প্রক্রিয়া পুনরুজ্জীবিত করে। আট বছরেরও বেশি সময় ধরে এর বিচার কাজ চলার পর গত বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময়ে ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর মামলাটির রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০ আসামির মধ্যে ১৫ জনের সাজা হয়। এর মধ্যে তিন সাবেক সেনা কর্মকর্তার ফাঁসি এবং ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। অন্যদিকে মামলার তদন্তে পাওয়া হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বিচারিক আদালতের রায়ে খালাস পান বিএনপি নেতা মরহুম কেএম ওবায়দুর রহমান, বিএনপি নেতা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক মন্ত্রী মরহুম তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর এবং মেজর (অব.) খায়রুজ্জামান ও আজিজ পাশা।

জেলহত্যা মামলার রায়ে আপিল বিভাগ আপিল মঞ্জুর এবং বিচারিক আদালতের রায় বহাল রেখে ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল জেলহত্যা মামলার চূড়ায় রায় ঘোষণা করেন। নানা চড়াই উৎরাই পার হয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে।জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচারও সম্পন্ন হয়েছে। কলঙ্ককময় ইতিহাস সৃষ্টির সাথে জড়িত যারা তারা এদেশেরই মিরজাফরদের দোসর! মানুষ নামের কলঙ্ক! হায়েনার চেয়েও হিংস্র! যতদিন এই বাংলাদেশ থাকবে , ততদিন ওরা ঘৃণিত হয়ে থাকবে এই বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে! কে কবে শুনেছে জেলখানায় বিনা বিচারে আবদ্ধ মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করতে ! যে পাখীটি জবাই করা হয় তারও বাঁধন খুলে দিতে হয় ! কারগার হলো রাষ্ট্রীয় নিরাপত্বাগার, ৩রা নভে¤র যদি হয় সেই নিরাপত্বার নমুনা , যুগযুগ ধরে মানুষ সেই নিরাপত্বাদানকারীদের জন্যে থুথু ছাড়া আর কোন যোগ্য প্রতিদান দেবে ? যে যত বড় দাম্ভিকই হোক ইতিহাস মুছতে পারেনা কেউ। এ জাতি কে বার বার প্রতিক্রিয়াশীলরা দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে কিন্তু কোন বারই শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারেনি ।আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনে। ঘৃণ্য ও শোকাবহ জেল হত্যাকান্ডের মাধ্যমে স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি, দেশবিরোধী চক্র বাংলার মাটি থেকে আওয়ামী লীগের নাম চিরতরে মুছে ফেলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস এবং বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করার যে অপচেষ্টা চালিয়েছিল তা ব্যার্থ হয়েছে। জেল হত্যা দিবসের ৪৩তম বার্ষিকীতে জাতীয় চার নেতার প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:০১

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: জেলহত্যা ইতিহাসের সব চেয়ে খারাপ একটি কাজ।

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:০৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ সাজ্জাদ ভাই
ঘৃন্যতাম জেলহত্যা দিবসে
খুণীদের ঘৃনা জানানোর জন্য।

২| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:১৪

রাকু হাসান বলেছেন:

ইহিতাসের বর্বরতম হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই । আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি রইলো তাঁদের প্রতি ।

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ হাসান ভাই
ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাকান্ড
জেল হত্যাকারেদের প্রতি ঘৃনা
জানানোর জন্য।

৩| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:২৬

শাইয়্যানের টিউশন (Shaiyan\'s Tuition) বলেছেন: একজন আহলে বায়াতসহ কিছু নিরপরাধ মানুষের রক্ত যাদের হাতে লেগে রয়েছে, আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন বলে আমার মনে হয় না।




০৩ রা নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
নিরাপরাধ জাতীয় ৪ নেতার
আত্মার শান্তি কামনা করছি।
ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য
প্রদানের জন্য।

৪| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই এই মহান নেতাদের।

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ জাতীয় ৪ নেতার
মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.