নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে অকুতোভয় সাংবাদিক ও শহীদ বুদ্ধিজীবী নিজাম উদ্দিন আহমদের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫২


বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে অকুতোভয় সাংবাদিক ও শহীদ বুদ্ধিজীবী নিজাম উদ্দিন আহমেদ। ছাত্র থাকাকালীন সময়েই নিজাম উদ্দিন আহমদ ১৯৫০ সালে করাচির 'সিভিল এন্ড মিলিটারি গেজেট' পত্রিকায় কাজ শুরু করেন। এরপর তিনি 'দৈনিক মিল্লাত', 'দৈনিক আজাদ', 'ঢাকা টাইমস', 'পাকিস্তান অবজারভার', 'এপিপি', 'এএফপি', 'রয়টার', 'ইউপিআই' ইত্যাদি পত্রিকা ও সংবাদ সংস্থায় কাজ করেন। ১৯৫৮ সালে 'এপিপি'র পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র ও প্রথম প্রতিনিধি নিযুক্ত হন। ১৯৫৯ সালে তদানীন্তন 'পাকিস্তান প্রেস ইন্টারন্যাশনাল (পিপিআই)' সংবাদ সরবরাহ সংস্থায় যোগ দেন। ১৯৬৪ সালে তিনি 'পিপিআই'-এর সম্পাদক হন। রাজনৈতক সচেতন নিজাম উদ্দিন আহমদ বাঙালি জাতীয়তাবাদে দৃঢ় আস্থা ছিল। ৫২'র ভাষা আন্দোলন, ৫৪'র যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ৫৮'র রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে আন্দোলন, ৬২'র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬'র ছয়দফা, ৬৯'র গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।নাগরিক হিসেবেও খুব সম্মানিত ছিলেন তিনি; কেন্দ্রীয় পাট বোর্ড, যক্ষ্মা সমিতি, সেন্সর বোর্ডের সদস্য ছিলেন। ১৯৭০ সালে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের ২৫ তম অধিবেশনে যোগদান করেছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের নয়টি মাস যিনি নির্ভীক সৈনিকের মতো নানা জায়গায় ঘুরে খবর সংগ্রহ করেছেন এবং বিবিসি'র মাধ্যমে তা বিশ্ববাসীকে জানিয়েছেন, স্বাধীনতা লাভের মাত্র চারদিন আগে সেই নিজাম উদ্দিন আহমদ নিজেই পরিণত হলেন খবরে। নিজাম উদ্দিন আহমদ যে যুদ্ধের কাহিনী নিয়ে নির্ভীকভাবে রিপোর্ট করছিলেন সেই যুদ্ধে বাংলাদেশিদের বিজয়ের খবর বিশ্ববাসীর কাছে তিনি পাঠাতে পারেননি। এর আগেই তাঁকে হত্যা করা হয়। ১৯৭১ সালের আজকের দিনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষ লগ্নে পাকিস্তান সেনাবাহিনী, রাজাকার ও আল-বদর বাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের অংশ হিসাবে তিনি অপহৃত ও পরে শহীদ হন। স্বাধীনতার পর তাঁর হত্যাকান্ড নিয়ে পত্র-পত্রিকায় অনেক লেখালেখি হয়েছে। বিবিসি'র মার্ক টালিসহ অনেক দেশি-বিদেশি সাংবাদিক এব্যাপারে খোঁজ-খবর করেছেন। আজ তার ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। শহীদ বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন আহমদের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

শহীদ নিজাম উদ্দিন আহমদ ১৯২৯ সালের সেপ্টেম্বর (সঠিক তারিখ জানা যায়নি) মাসে মুন্সিগঞ্জ জেলার মাওয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ডাকনাম দাদন। তাঁর বাবা সিরাজউদ্দিন আহমদ এবং মা ফাতেমা বেগম। পিতা-মাতার চার সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। তার লেখাপড়ার শুরু গ্রামেরই মাওয়া প্রাইমারি স্কুলে। পরে স্থানীয় কাজির পাগলা এ.টি ইনস্টিটিউশন-এ দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েন। ১৯৪৬ সালে বিক্রমপুর ভাগ্যকূল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি. পাস করেন। নিজাম উদ্দিন আহমদ মুন্সিগঞ্জের সরকারি হরগঙ্গা কলেজ থেকে ১৯৪৮ সালে ইন্টারমিডিয়েট, ১৯৫১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্মান ডিগ্রী এবং ১৯৫২ সালে তিনি এম.এ. ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৬২ সালে আইয়ুব খান মৌলিক গণতন্ত্রের অধীনে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেন সেই নির্বাচনে ১৯৬৫ সালে নিজাম উদ্দিন আহমদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। এরপরে তিনি পিপিআইতে সাংবাদিক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৬৯ সালে এর সম্পাদক হন। ১৯৬৯ সালে থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ওই সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার হিসাবে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বিবিসি'র সংবাদদাতা হিসাবে কাজ করেন।সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন আহমেদ ১৯৭১ সালে বিবিসি বাংলাদেশের সংবাদদাতা ও পাকিস্তান প্রেস ইন্টারন্যাশনালের(পিপিআই) এর জেনারেল ম্যানেজার ছিলেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। বঙ্গবন্ধুসহ আওয়ামী লীগের উর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দের অনেকের সঙ্গে তাঁর গভীর সখ্যতা ছিলো। ২৫ মার্চ কালো রাত্রির আগে চট্টগ্রামে সোয়াত জাহাজে করে যে অস্ত্র আনা হচ্ছে এই খবর তিনিই প্রথম বঙ্গবন্ধুকে প্রেরণ করেন। নিজাম উদ্দিন আহমদ এই সংবাদটি প্রথম পান ফ্রান্সের এসোসিয়েট প্রেসের (এপি) এক সহকর্মী বন্ধুর মাধ্যমে। বাঙালীর মুক্তি-সংগ্রামের একজন বলিষ্ঠ কর্মী ও সংগঠক হিসাবে গোটা পাকিস্তান আমলেই নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে গেছেন তিনি। একাত্তরে তিনি ঢাকার কলতাবাজারের ১২/সি রুকনপুরে তার স্ত্রী-সন্তান অন্যান্য আত্নীয়-স্বজনদের সঙ্গে যৌথ পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। ব্যক্তিগত জীবনে নিজাম উদ্দিন আহমদ মুন্সিগঞ্জের এক রাজনৈতিক পরিবারের মেয়ে কহিনূর আহমদ রেবার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। স্ত্রী কোহিনুর আহমদ রেবা (১৯৯৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন), বড় মেয়ে শামানা নিজাম সিলভিয়া (৭১'এ বয়স ছিল ১১ বছর, বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী), ছোট মেয়ে শারমিন রীমা (৭১'এ বয়স ছিল ০৯ বছর, বর্তমানে মৃত), কনিষ্ঠ সন্তান পুত্র শাফকাত নিজাম (ঢাকায় বসবাস করছেন)।

১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বরের সেই সকালটি ছিল অন্যদিনের তুলনায় একটু অন্যরকম। গুমট। ওই দিন দুপুরে আলবদররা অপহরণ করে নিয়ে যায় এই বরেণ্য সাংবাদিককে। এরপর তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এমনকি স্বাধীনতার পরে বিভিন্ন বধ্যভূমিতে খোঁজ করেও এই শহীদ বুদ্ধিজীবীর মরদেহ পর্যন্ত পাননি তার স্বজনেরা। তার সন্তান শাফকাত জানান ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর দুপুর ১টা থেকে ২টার মধ্যে বাসার সবাই দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ পাওয়া যায়। দরজা খোলামাত্রই বাসায় দুইজন অস্ত্রধারী প্রবেশ করেন। তারা ভাঙ্গা ভাঙ্গা উর্দুতে সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন আহমেদের নাম ধরে খোঁজ করতে থাকেন। পরিবারের সকলের নিরাপত্তার কথা ভেবে বাবা খাবার টেবিল থেকে উঠে অস্ত্রধারীদের কাছে বলেন, আমিই নিজাম উদ্দিন আহমেদ। পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য অস্ত্রধারীরা তার কাছে পরিচয়পত্র চান। এক পর্যায়ে বাবা তাদেরকে পরিচয়পত্র দেখান। পরিচয়পত্র দেখানোর পরে তারা দেরি না করে তাদের সঙ্গে বাবাকে নিয়ে যেতে থাকেন। তিনি বলেন, মা তাদের পিছু পিছু যেতে থাকলে অস্ত্রধারীরা মাকে বাবার পেছনে আসতে মানা করেন। পরবর্তীতে প্রতিবেশীদের কাছে জানতে পারি, তারা বাবাকে চোখ এবং হাত বেঁধে একটি কাদা মাখানো মিনিবাসে উঠিয়ে নিয়ে যান অস্ত্রধারীরা। এ সময় ওই গাড়ির পেছন দিকে হাত এবং চোখ বাঁধা অবস্থায় আরো অনেক ব্যক্তি ছিলেন। তার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আলবদর বাহিনীর নেতা চৌধুরী মাঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খান সরাসরি জড়িত ছিলেন। নিজাম উদ্দিনের মৃত্যুর পর বিবিসি তাঁর পরিবারের জন্য একটি ট্রাস্ট তহবিল গঠন করে। ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সরকার এই কৃতিমান সাংবাদিককে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করলে বিবিসি সেদিন নিজাম উদ্দিনের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে উল্লেখ করে - 'এই ঘোষণা এমন একজন সাংবাদিকের কাজের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত স্বীকৃতি, যিনি কর্তব্যের প্রতি আনুগত্যের মূল্য দিয়েছেন নিজের জীবন দিয়ে।' উল্লেখ্য ২০১৩ সালের ৩রা নভেম্বরআন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, চৌধুরী মুঈনুদ্দীন এবং আশরাফুজ্জামান খান কে ১৯৭১ সালের ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নিজাম উদ্দিন আহমেদ সহ ১৮ জন বুদ্ধিজীবীকে অপহরণের পর হত্যার দায়ে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।আজ সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন আহমদের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। শহীদ বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন আহমদের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:০০

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি এক পোষ্ট দুই বার করে পোষ্ট করেন নুরু ভাই?

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:০৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
এই তথ্য আপনাকে কে দিলো রাজীব ভাই!
তালকানার সাথে থাকতে থাকতে আপনার
চোখের অবস্থা কি খারাপ করে ফেলছেন?
অবহেলা করবেন না, শিঘ্রই ভালো কোন
চক্ষু বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করুন।

২| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:১৪

হাবিব বলেছেন: শহীদ বুদ্ধিজীবী নিজাম উদ্দিন আহমদের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:০৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ হাবিব ভাই,
শহীদ বুদ্ধিজীবী নিজাম উদ্দিন আহমদের
মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.