নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

আজ ১৫ নভেম্বরঃ ভয়াল স্মৃতি বিজড়িত প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরের একযুগ পূর্তি

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:২২


আজ ১৫ নভেম্বর, প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরের ১২তম বার্ষিকী। ২০০৭ সালের এই দিনে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ সামুদ্রিক ঝড় সিডর আঘাত হানে বরিশাল, বরগুনাসহ দেশের উপকূলীয় এলাকায়। শতাব্দীর ভয়াবহ ওই ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারিয়েছিল সাড়ে ৩ হাজার আদম সন্তান। নিখোঁজ হয়েছিল আরো সহস্রাধিক। সরকারি হিসেবে ২০ লাখ ঘরবাড়ি ভেসে যায় পানির স্রোতে। প্রায় ৪০ লাখ একর জমির ফসল বিনষ্ট হয়। মৃত্যু হয়েছে ৪ লাখ ৬৮ হাজার গবাদি পশুর। এর মধ্যে খুলনা বিভাগের বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরায় মারা গেছে ৭০ হাজার গবাদি পশু। বাকি গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়। ২০০৭ সালের ১৪ নভেম্বর সারাদেশের আকাশ ছিল মেঘলা। অনেকেরই ধারণা ছিল শেষ পর্যন্ত তেমন কিছু হবে না। আবহাওয়াবিদরা প্রথমে ৫ নম্বর সংকেত দিতে থাকেন। রাতে তা ৮নং বিপদ সংকেত গিয়ে পৌছে। ১৫ নভেম্বর সকালে ঘোষণা করা হয় সিডর নামের ঘূর্ণিঝড় ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে বাংলাদেশের উপকূলে। দুপুর নাগাদ তা বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করবে। ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত। ৫ টা নাগাদ হিরণ পয়েন্টে থাকা ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির ওয়্যারলেসের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় যোগাযোগ। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সমুদ্র থেকে উপকূলে উঠতে শুরু করে সিডর। রাত ১০ টার দিকে প্রবল বাতাসের সঙ্গে যুক্ত হল ১২-১৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস। অবশেষে এটি বাংলাদেশের আঘাত হানে ১৫ নভেম্বর রাত ৯টায়। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল পিরোজপুর, মংলা, বরগুনাসহ বেশকিছু অঞ্চল ঘুর্ণিঝড় সিডর আঘাত হানে। ঘণ্টায় ২৪০ কিলোমিটার বেগে সিডরের তাণ্ডবে আর ধেয়ে আসা ১২ ফুট উচু জলচ্ছাসে নিমিষেই উড়ে গেল ঘর-বাড়ি, গাছ-পালা। মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে তরতাজা সাড়ে পাঁচশত জীবন। পিরোজপুর জিয়া নহরের একটি গ্রামেই মারা যায় ৫৭জন। বঙ্গোপসাগরের সব পানি যেন যমদুত হয়ে ভাসিয়ে নিল হাজার হাজার মানুষ। মাত্র কয়েক মিনিটে লন্ড ভন্ড হয়ে গেল গোটা এলাকা। পরের দিন দেখা গেল চারদিকে শুধুই ধ্বংসলীলা। উদ্ধার করা হল লাশের পর লাশ। দাফনের জায়গা নেই, রাস্তার পাশে গণকবর করে চাপা দেওয়া হল বহু হতভাগার লাশ। স্বজন আর সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেল উপকুল এলাকার কয়েক লাখ মানুষ। সিডরের ছোবলে দক্ষিণের উপকুলীয় জেলাগুলো পরিণত হয়েছিল মৃত্যুপুরীতে। সিডরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাগেরহাট, পটুয়াখালী, পিরোজপুর ও বরগুনা জেলা। সিডরের ভয়াবহতা এত নির্মম হবে তা বুঝতে পারেননি উপক‚লভাগের বাসিন্দারা। সিডরের মাত্র কয়েক মাস আগে সুনামির পূর্বাভাস ও তা আঘাত না হানায় সিডর নিয়ে আতঙ্ক ছিল না এ অঞ্চলের মানুষের মাঝে। ১৫ নভেম্বর ছিল বৃহস্পতিবার। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও বঙ্গোপসাগরের ক‚ল ঘেঁষে বসবাস করা বরগুনার পাথরঘাটা, আমতলী-তালতলী, পটুয়াখালীর বাউফল, কলাপাড়া, গলাচিপা, দশমিনা, কাকচিড়া, মাঝেরচর, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার সুবিদখালী ও ভোলার ঢালচর, কুকরি-মুকরি এবং চরপাতিলার লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে আগ্রহী হয়নি। এমনকি কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতেও বেশ কিছু অতিউৎসাহী পর্যটক সেদিন থেকে গিয়েছিলেন। চরমরানিন্দ্রা, হাসারচর ও আশার চরে মাছ ধরতে যাওয়া অস্থায়ীভাবে বসবাসকারী শত শত জেলে সেখানেই থেকে গিয়েছিলেন।

বরিশাল মহানগরীও যেন মৃত নগরীতে পরিণত হয়। রাস্তায় মানুষ তো দূরের কথা কোনো প্রাণীও ছিল না। বাতাসের তীব্র কানফাটা শব্দ সব স্তব্ধতা ভণ্ডুল করে দেয়। পুরো দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে যখন মাতম শুরু করে ঘূর্ণিঝড় সিডর, ততক্ষণে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে প্রেতপূরীতে পরিণত হয় পুরো দক্ষিণাঞ্চল। রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত কিছু কিছু যোগাযোগ সম্ভব হলেও রাত ৯টার পর আর কোনো যোগাযোগের মাধ্যম ছিল না। দুর্গম চরগুলোর গবাদি পশুগুলো প্রাণে রক্ষা পেতে ছুটোছুটি করে শেষপর্যন্ত মৃত্যুর কাছে যেন সমর্পণ করে দেয়। শুধু গবাদি পশু নয় বণ্যপ্রাণীও মারা গেছে বহু। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাণ্ডব বাড়তে থাকে। আতঙ্কিত প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে নতুন ভোরের অপেক্ষায় থাকেন সবাই। কিন্তু সবারই সেই সোনালি সকাল দেখার সৌভাগ্য আর কপালে জোটেনি। নিজের জীবন ও প্রিয় স্বজনকে নিয়ে যারা প্রাণে বেঁচে গেছেন তাদেরও খোয়া গেছে সহায়-সম্বল।সরকারি-বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী সে সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৩০ জেলার ২০০ উপজেলা। সরকারিভাবে মৃতের সংখ্যা বলা হয় ৩,৩৬৩। অপরদিকে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার বলে জানায় রেড ক্রিসেন্ট। পাথরঘাটাসহ গোটা উপকূলের রাস্তাঘাট, ব্রিজ, ঘরবাড়ি, গৃহস্থালি, গাছপালা, হাঁসমুরগি, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা সব লণ্ডভণ্ড করে দেয় সিডর। মানুষ অসহায়ের মতো শুধু চোখ দিয়ে দেখেছে। প্রতিরোধ করার মতো কিছুই তাদের ছিল না। সময়ের আবর্তনে বছর ঘুরে আজ আবার এসেছে সেই দিন। দীর্ঘ ৭ বছর অতিবাহিত হলেও অনেকে হারানো স্বজনদের এখনও ফিরে পায়নি। অনেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেনি।

সেই দিনের দুঃসহ বেদনার কথা আজো ভুলতে পারেননি ক্ষতিগ্রস্তরা। ভয়াবহ সিডরে স্মৃতি মনে উঠলে এখনো মূর্ছা যান দক্ষিণ জনপথের মানুষ। তবুও তাদের বেঁচে থাকতে হচ্ছে অজানা আশঙ্কার মাঝেই। সিডরের পর পরই এই এলাকায় পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকৃতির রুদ্ররোষকে মোকাবেলা করেই তারা বেঁচে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে সব বঞ্চনাকে মেনে নিয়েছেন। পার করে দিয়েছেন সিডর পরবর্তী ১২টি বছর। প্রতিবছর এই দিন আসলে প্রিয়জনকে হারা মা্নুষ এখনো বুক ফাটা কান্নায় ভেঙ্গে পরেন। সিডরের ক্ষত চিহ্ন বহন করে চলেছেন অনেকে। স্মৃতিচারণায় উপকূলের বাতাসে ভাসছে চাপা কান্না আর দীর্ঘশ্বাস। সিডরে নিখোঁজ হওয়া পাথরঘাটার শতাধিক জেলে এখনও ভারতের উড়িষ্যা কারাগারে আটক রয়েছে। তবে যারা সিডরের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেচে আছেন তাদের মধ্যে অনেকেই নিজেদের যোদ্ধা বলে দাবি করেন। কেননা সিডরের পর উপকুলীয় অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া আইলা ও নারগিস নামের ঘুর্ণিঝড়কে মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছেন। "প্রতিবছর উপকূলের মানুষ এই দিনটিকে সিডর দিবস হিসেবেই পালন করে থাকে। উপকূলের মানুষ চায় ১৫ নভেম্বর সরকারিভাবে সিডর দিবস পালিত হোক"। আমাদের প্রত্যাশাও তাই। ১৫ নভেম্বর পালিত হোক সিডর দিবস হিসেবে।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: সেই মর্মান্তিক পুরোনো সৃতি মনে করিয়ে দিলেন।

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৪৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আমি কি আর মনে করিেযে দেই,
আমাকে মনে করিয়ে দেয়।

২| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: কে মনে করিয়ে দেয়???

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:২৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
স্মৃতি !!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.