নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

খ্যাতনামা বাংলাদেশী কন্ঠশিল্পী রুনা লায়লার ৬৭তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৪১


“বন্ধু তিনদিন তোর বাড়িতে গেলাম দেখা পাইলাম না”, “আল্লাহ মেঘ দে”, “একা একা কেন ভালো লাগে না”, “ইস্টিশনে রেলগাড়িটা”, “সাধের লাউ”, “খাঁচার ভিতর অচিন পাখি” - আরও শ'খানেক নাম বলা যাবে এমন অসাধারণ জনপ্রিয় কিছু বাংলা গান যার কণ্ঠে শুনে আমরা অভ্যস্ত, তিনি আর কেউ নন, তিনি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী রুনা লায়লা। তিনি বাংলাদেশে চলচ্চিত্র, পপ ও আধুনিক সঙ্গীতের জন্য বিখ্যাত। তবে বাংলাদেশের বাইরে গজল শিল্পী হিসাবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে তার সুনাম আছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকেই তিনি চলচ্চিত্রের গায়িকা হিসাবে কাজ শুরু করেন। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতীয় এবং পাকিস্তানী চলচ্চিত্রের অনেক গানে তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন। রুনা লায়লা বাংলা, উর্দু, পাঞ্জাবি, হিন্দি, সিন্ধি, গুজরাটি, বেলুচি, পশতু, ফার্সি, আরবি, মালয়, নেপালি, জাপানি, স্পেনীয়, ফরাসি, লাতিন ও ইংরেজি ভাষাসহ মোট ১৮টি ভাষায় ১০ হাজারেরও বেশি গান করেছেন। পাকিস্তানে তার গান দমাদম মাস্ত কালান্দার অত্যন্ত জনপ্রিয়। ১৯৬৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে সংগীত শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পর দেখতে দেখতে ৬৭ বছর পূর্ণ করলেন চিরসবুজ এই গানের পাখি। রুনা লায়লা ১৯৫২ সালের আজকের দিনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। আজ তার ৬৭তম জন্মবার্ষিকী। খ্যাতনামা বাংলাদেশী কন্ঠশিল্পী রুনা লায়লার জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

রুনা লায়লা ১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশের সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সৈয়দ মোহাম্মদ এমদাদ আলী ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা এবং মা আনিতা সেন ওরফে আমেনা লায়লা ছিলেন সঙ্গীত শিল্পী। তার মামা সুবীর সেন ভারতের বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী। তার যখন আড়াই বছর বয়স তার বাবা রাজশাহী থেকে বদলী হয়ে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের মুলতানে যান। সে সুত্রে তার শৈশব কাটে পাকিস্তানের লাহোরে। গানের ছোঁয়া এমদাদ আলীর পরিবারে বেশ আগে থেকেই ছিল। বিখ্যাত গায়িকা আঞ্জুমান আরা ছিলেন তার ভাগিনী। গানের প্রতিভা রুনার বড় বোন দীনার মধ্যে দেখা দেয় খুব ছোটবেলায়, তাই বাসায় ওস্তাদ রাখা হল তার জন্য। বড় বোন দীনা যখন ওস্তাদ আব্দুল কাদের ভূপালির কাছে গান শিখতেন, তখন বোনের পাশে বসে পাঁচ বছরের রুনা গান শেখা দেখতেন। পরে নিজে নিজে সেই গান গাওয়ার চেষ্টা করতেন। রেডিওতে যখনই কোনো গান শুনতেন, তৎক্ষণাৎ তা নিজে গাওয়ার চেষ্টা করতেন। তিনি ওস্তাদ হাবীব উদ্দিন আহমেদ, আব্দুল কাদেরের মতো আরও গণ্যমান্য ওস্তাদের সান্নিধ্য লাভ করেন। ১২ বছর বয়স পর্যন্ত রুনার অসাধারণ সংগীতপ্রতিভা শুধু পরিবারের গণ্ডির মধ্যেই ছিল। ১৯৬৬ সালে লায়লা উর্দু ভাষার হাম দোনো চলচ্চিত্রে "উনকি নাজরোঁ সে মোহাব্বত কা জো পয়গম মিলা" গান দিয়ে সঙ্গীতাঙ্গনে আলোচনায় আসেন। ১৯৬০-এর দশকে তিনি নিয়মিত পাকিস্তান টেলিভিশনে পরিবেশনা করতে থাকেন। এর মধ্যেই ১৯৬৮ সালে এসএসসিতে প্রথম বিভাগ ও ১৯৭০ সালে এইচএসসিতে ২য় বিভাগে উত্তীর্ণ হলেন রুনা। ১৯৭৪ সালে বাবার পরামর্শে সপরিবারে নিজের দেশ বাংলাদেশে আসার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ১৯৭০ সালের মধ্যেই তিনি প্রায় ১০০০টি গান রেকর্ড করে ফেলেছিলেন। ১৯৭২ সালে, মাত্র ১৯ বছর বয়সে তিনি তার নিজের গানের অনুষ্ঠান ‘বাজমে লায়লা’ শুরু করেন। এটি করাচি টিভিতে প্রতি দুই সপ্তাহ পর পর দেখানো হতো এবং এটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সালে তিনি জিয়া মহিউদ্দিন শো-তে গান পরিবেশন করতেন এবং ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দেওয়া শুরু করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি কলকাতায় "সাধের লাউ" গানের রেকর্ড করেন। একই বছর মুম্বইয়ে তিনি প্রথমবারের মত কনসার্টে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এসময়ে দিল্লিতে তার পরিচালক জয়দেবের সাথে পরিচয় হয়, যিনি তাকে বলিউড চলচ্চিত্রে এবং দূরদর্শনের উদ্বোধনী আয়োজনে গান পরিবেশনের সুযোগ করে দেন। এক সে বাড়কার এক চলচ্চিত্রের শীর্ষ গানের মাধ্যমে তিনি সঙ্গীত পরিচালক কল্যাণজি-আনন্দজির সাথে প্রথম কাজ করেন। এই গানের রেকর্ডিংয়ের সময় প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী লতা মুঙ্গেশকর তাকে আশীর্বাদ করেন। তিনি "ও মেরা বাবু চেল চাবিলা" ও "দামা দম মাস্ত কালান্দার" গান দিয়ে ভারত জুড়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। পাকিস্তানি সংগীত পরিচালক-সুরকার নিসার বাজমির বেশ কয়েকটি গান গেয়েছিলেন রুনা। মুম্বাইয়ের একটি প্রতিষ্ঠান তাকে নিসার বাজমির গান গেতে বলে। রুনা প্রতিদিন ১০টি করে তিনদিনে নিসার বাজমির মোট ৩০টি গান রেকর্ড করেন, যা পৃথিবীর একদিনে রেকর্ড করা সবচেয়ে বেশি গানের জন্য গিনিস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম ওঠায়।

রুনা লায়লা আজ পর্যন্ত ৩০০টিরও বেশি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে আছে ভারতের স্যায়গাল অ্যাওয়ার্ড, ২ বার জিতেছেন পাকিস্তানের নিগার পুরস্কার, কালাকার পুরস্কার। বাংলাদেশ থেকে ৬ বার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, স্বাধীনতা পুরস্কার। এ বছর জুলাই মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাকে দেয়া হয় ফিরোজা বেগম স্মারক স্বর্ণপদক। রুনা লায়লা চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত শিল্পী নামক চলচ্চিত্রে চিত্রনায়ক আলমগীরের বিপরীতে মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন। শিল্পী চলচ্চিত্রটি ইংরেজি চলচ্চিত্র দ্য বডিগার্ড-এর ছায়া অবলম্বনে চিত্রিত হয়েছে। সম্প্রতি রুনা লায়লা বাংলা গান কম্পোজিংয়ে মনোযোগ দিয়েছেন, করেছেনও কয়েকটা। স্বামী অভিনেতা আলমগীরের ছবি ‘একটি সিনেমার গল্প’ (২০১৮) এর জন্যও গান কম্পোজ করছেন রুনা। ব্যক্তিগত জীবনে রুনা লায়লা তিনবার বিয়ে করেন। প্রথমবার তিনি খাজা জাভেদ কায়সারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দ্বিতীয়বার তিনি সুইস নাগরিক রন ড্যানিয়েলকে বিয়ে করেন। ১৯৯৯ সালে তিনি বাংলাদেশী অভিনেতা আলমগীরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার এক কন্যা - তানি লায়লা। তার দুই নাতি জাইন এবং অ্যারন। উপমহাদেশের প্রখ্যাত এই গায়িকার আজ ৬৭তম জন্মদিন। আজ জন্মদিনের শুভেচ্ছায় ভাসছেন রুনা লায়লা। জন্মদিনের আগেই সুরকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। দিনটি উদযাপন উপলক্ষে ভারতীয় টিভি চ্যানেল ‘স্টার জলসা’ একটি বিশেষ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিংবদন্তিতুল্য শিল্পী রুনা লায়লার জন্মবার্ষিকীতে আমাদের শুভেচ্ছা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:১৬

শায়মা বলেছেন: প্রিয়তে রেখে দিলাম প্রিয় শিল্পীকে ভাইয়া! :)

২| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:১৬

রাজীব নুর বলেছেন: দারুন প্রতিভাবান একজন মানুষ।

৩| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:২৯

সোহানী বলেছেন: আমার খুব প্রিয় শিল্পী একজন......

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.