নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবির প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:২৬


মোছাম্মৎ তারামন বেগম। যিনি তারামন বিবি নামে অধিক পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রান্না করা, তাঁদের অস্ত্র লুকিয়ে রাখা, পাকিস্তানি বাহিনীর খবর সংগ্রহ করা এবং সম্মুখযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে লড়াই করেছিলেন তিনি। মহান মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অবদান অনেক। আমাদের দেশের আলোচনায় বেশিরভাগ সময়ই এই মহান নারী মুক্তিযোদ্ধাদের নাম উঠে আসে না। কিংবা তাদের অবদানের কথা প্রকাশ করা হয় না। কিন্তু যেসব মহান ও দেশপ্রেমিক নারীরা তাদের জীবন বিপন্ন করে দেশকে ভালবেসে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, তাদের ইতিহাস বাংলাদেশ কখনও ভুলে যাবার নয়। স্বাধীনতার পর প্রথম গেজেটে খেতাবপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন মাত্র দুজন। প্রথম নামটা ছিল ডক্টর সেতারা বেগম আর অন্য নামটা ছিল তারামন বিবির। এদের মাঝে তারামন বিবি অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছিলেন। দুর্ধর্ষ সেই কিশোরীর অসীম সাহসিকতার জন্য বীর প্রতীক খেতাব দেওয়া হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর হাতে তা তুলে দিতে ২২ বছর লেগে যায়। নিভৃতে জীবন যাপন করা এই সাহসী নারীকে খুঁজে পেতেই কেটে গিয়েছিল এতটা সময়। সেই বীর প্রতীক তারামন বিবি ৬২ বছর বয়সে ২০১৮ সালের আজকের দিনে চলে গেছেন লোকচক্ষুর অন্তরালে। আজ তার ১ম মৃত্যুবার্ষিকী। বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবির মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

তারামন বিবি ১৯৫৭ সালে কুড়িগ্রাম জেলার চর রাজিবপুর উপজেলার শংকর মাধবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আবদুস সোহবান এবং মায়ের নাম কুলসুম বিবি। তারামন বিবি ১১ নং সেক্টরে নিজ গ্রাম কুড়িগ্রাম জেলার শংকর মাধবপুরে ছিলেন। তখন ১১ নং সেক্টরের নেতৃত্বে ছিলেন সেক্টর কমান্ডার আবু তাহের। মুহিব হাবিলদার নামে এক মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবিকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন। যিনি তারামনের গ্রামের পাশের একটি ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি তারামনকে ক্যাম্পে রান্নাবান্নার জন্য নিয়ে আসেন। তখন তারামনের বয়স ছিলো মাত্র ১৩ কিংবা ১৪ বছর। কিন্তু পরবর্তিতে তারামনের সাহস ও শক্তির পরিচয় পেয়ে মুহিব হাবিলদার তাকে অস্ত্র চালনা শেখান। পরবর্তীতে সহকর্মীদের কাছ থেকে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের সাথে অনেক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। দুর্ধর্ষ সেই কিশোরীর অসীম সাহসিকতার জন্য বীর প্রতীক খেতাব দেওয়া হয়। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭৩ সালে তৎকালীন সরকার মুক্তিযুদ্ধে তারামন বিবিকে তার সাহসীকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য “বীর প্রতীক” উপাধিতে ভূষিত করেন। কিন্তু ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তাকে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি। ১৯৯৫ সালে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক বিমল কান্তি দে প্রথম তার সন্ধান পান। এ কাজে বিমল কান্তিকে সহায়তা করেন কুড়িগ্রামের রাজীবপুর কলেজের অধ্যাপক আবদুস সবুর ফারুকী। এরপর নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা কয়েকটি সংগঠন তাকে ঢাকায় নিয়ে আসে। সেই সময় তাকে নিয়ে পত্রিকায় প্রচুর লেখালেখি হয়। অবশেষে ১৯৯৫ সালের ১৯শে ডিসেম্বর তৎকালীন সরকার এক অনাড়ম্বর পরিবেশে আনুষ্ঠানিকভাবে তারামন বিবিকে বীরত্বের পুরস্কার তার হাতে তুলে দেন। তারামন বিবিকে নিয়ে আনিসুল হকের লেখা ‘বীর প্রতীকের খোঁজে’ নামক একটি বই রয়েছে। আনিসুল হক রচিত ‘করিমন বেওয়া’ নামক একটি বাংলা নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র ছিলেন তারামন বিবি।

১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের দেশের নারীদের অবদানগুলো যদি সঠিকভাবে তুলে ধরা না হয় তাহলে পরবর্তী প্রজন্ম জানতেও পারবে না সেই মহীয়সী নারীদের নাম যাদের জীবনের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। ব্যক্তিগত জীবনে তারামন বিবি ২০১৮ সালে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত কুড়িগ্রামের রাজিবপুরে স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন। তার স্বামীর নাম আবদুল মজিদ। এই দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তারামন বিবি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থায় ভুগছিলেন। ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তারামন বিবি। তাকে প্রথমে নেওয়া হয় ময়মনসিংহ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)। সেখান থেকে বিকেলে হেলিকপ্টারে ঢাকার সিএমএইচে। কয়েক দিন পর তারামন বিবি বাড়িতে ফিরে যান। এরই ধারাবাহিকতায় ১লা সালের ১ ডিসেম্বর নিজ বাড়িতে চিরবিদায় নেন মহান মুক্তিযুদ্ধের এক বীর যোদ্ধা তারামন বিবি, বীর প্রতীক। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে রাজিবপুর উপজেলার কাচারীপাড়া তালতলা কবরস্থানে সমাধিস্থ করা হয়। আজ তার ১ম মৃত্যুবার্ষিকী। বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবির মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৩৯

রাজীব নুর বলেছেন: দারুন সাহসী নারী।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৫২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
শুভ সন্ধ্যা।
আপনাকে ধন্যবাদ
তারামন বিবিকে নিয়ে
কোন ট্রিপিক্যাল প্রশ্ন না করার জন্য।

২| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:০৯

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ইতিহাসে খুঁজি সাহস
ইতিহাস হতে চাইনা কেউ - - -

আটপৌড়ে জীবনের মোহে, বৃত্তাবদ্ধ জীবন
ক্রীতদাস চেতনায় প্রলম্বিত এক ঢেউ।।

তারামন বিবির প্রতি রইলো শ্রদ্ধা আর পারলৌকিক শুভকামনা

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৫৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ ভৃগু'দা
বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা
তারামন বি্বিকে শ্রদ্ধা
নিবেদনের জন্য।

৩| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১৬

হাবিব বলেছেন: বীর মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবির প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৫৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ হাবিব ভাই
বীর মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবির
প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা
জানানোর জন্য।

৪| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৩৯

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: বীর মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবির ১ম মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।


ধন্যবাদ নূর মোহাম্মদ ভাই।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:২৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আবু হেনাভাই
বীর মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবির
প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানানোর
জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.