নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
ভাষা আন্দোলন সহ বাংলাদেশের সকল গণ-আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের নেপথ্য রূপকার খান সারওয়ার মুরশিদ। তিনি ছিলেন জ্ঞান সন্ধানী ব্যক্তি, একজন সংগঠক, বিভিন্ন আন্দোলনের অগ্রনায়ক, একজন আদর্শ শিক্ষক, একজন দক্ষ কূটনীতিক এবং দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রামী যোদ্ধা। আজীবন তাঁর পেশা ছিল শিক্ষকতা; এবং শিক্ষক হিসাবে তিনি ছিলেন এক কিংবদন্তিতূল্য প্রতিভা। ১৯৪৭-এ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার কিছু পর ইংরেজি ত্রৈমাসিক পত্রিকা নিউ ভ্যালুজ প্রকাশনা করে তিনি দেশের বিদ্যোৎসমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেলন। জীবদ্দশায় তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং পোল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া খান সারওয়ার মুরশিদ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যানেরও দায়িত্বও পালন করেছেন। খান সারওয়ার মুরশিদ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদান রেখেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফার নীতি নির্র্ধারক ও পরিকল্পনাকারীদের অন্যতম ছিলেন তিনি। তৎকালীন মুজিবনগর সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের উপদেষ্টা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর পরিবারের সবাই বিশেষ করে তাঁর স্ত্রী নূরজাহান মুরশিদ, দুই মেয়ে-ছেলে সকলেই জড়িত ছিলেন। ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত তিনি পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন খান সারওয়ার মুরশিদ। এছাড়া তিনি কমনওয়েলথ এর সহকারী মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৫ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত গণ-আদালতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লক্ষ্যে গঠিত গণতদন্ত কমিশনের সদস্য ছিলেন খান সারওয়ার মুরশিদ। ২০১২ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যূর আগ পর্যন্ত তিনি মানবাধিকার ভিত্তিক সংস্থা নাগরিক উদ্যোগের চেয়ারম্যান ছিলেন। খান সারওয়ার মুরশিদের স্ত্রী প্রয়াত নূরজাহান মুরশিদ বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী. শিক্ষাবিদ, রাষ্ট্রদূত খান সারওয়ার মুরশিদের আজ ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১২ সালের আজকের দিনে তিনি অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রামী যোদ্ধা খান সারওয়ার মুরশিদের মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
খান সারওয়ার মুরশিদ ১৯২৪ সালের ১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া উপজেলার নাসিরাবাদ গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর বাবা আলী আহমদ ছিলেন অবিভক্ত বাংলার এবং পূর্ব পাকিস্তানের ব্যাবস্থাপক পরিষদের সদস্য। মাতা মরহুমা বেগম সিদ্দিকা খানম। নিজ বাড়ীতেই শিক্ষানুকূল পরিবেশে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জর্জ হাইস্কুলে আনুষ্ঠানিক অধ্যয়নের শুরু করেন খান সারওয়ার মুরশিদ। এ স্কুলের ছাত্র হিসাবে ১৯৩৯ খ্রীস্টাব্দের প্রবেশিকা (বতর্মান এস.এস.সি) পরীক্ষায় পাস। ফেনী সরকারি কলেজ থেকে এফ. এ (ইন্টারমিডিয়েট)। কিছুদিন কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়াশুনা করেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগে অধ্যয়ন এবং ১৯৪৮-এ ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্যে এম. এ. ডিগ্রী অর্জ্জন করেন। একই বছর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। দুরদৃষ্টি সম্পন্ন প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি খান সারওয়ার মুরশিদ বাংলাদেশের বহুমাত্রিক ক্ষেত্রে কাজ করে গেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী ‘সংস্কৃতি সংসদের’ প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পাকিস্তান পূর্বাঞ্চলের লেখক সংঘের সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন। ১৯৫২ সালে বাংলাভাষা-আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন খান সারওয়ার মুরশিদ। তৎকালীন পাকিস্তান শাসক গোষ্ঠী ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের জন্মশতবার্ষিকী পালনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। তিনি পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর প্রবল বাধা পেরিয়ে বিচারপতি মাহবুব মোর্শেদ, ড: গোবিন্দ চন্দ্র দেব, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীসহ রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী পালন করেন। খান সারওয়ার মুরশিদ রবীন্দ্র জন্মশতবার্র্ষিকী কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। রবীন্দ্র জন্মশতবার্র্ষিকী পালনের পর বনভোজনের আয়োজন করা হয়, আর সেখানেই আজকের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ছায়ানটের সৃষ্টি। ১৯৬৫ খ্রীস্টাব্দ থেকে ১৯৬৭ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ড. মুরশিদ প্রবাসী সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করেন এবং সরকারের গঠিত প্ল্যানিং কমিশনের সদস্য হিসেবে কাজ করেন।বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরি তিনি বাংলাদেশ গঠনের কাজ শুরু করেন। ১৯৭২-৭৪ সাল পর্যন্ত খান সারওয়ার মুরশিদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি উপাচার্য থাকাকালে ‘ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ’গঠন করেন। তিনি ফরাসি বিখ্যাত বুদ্ধিজীবী আঁদ্রে মালরোকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সমর্থন জানানোর সম্মানার্থে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানান এবং সম্মানজনক ডিলিট ডিগ্রি প্রদান করেন।
খান সারওয়ার মুরশিদ তাঁর কর্মজীবনে শিল্প-সংস্কৃতি, শিক্ষা-সাহিত্য সকল ক্ষেত্রে অবদান রেখে গেছেন। বৃদ্ধিজীবি এবং চিন্তাবিদ হিসেবে প্রসিদ্ধি থাকলেও তার লেখালিখির পরিমাণ খুবই কর্ম তাঁর একমাত্র গ্রন্থ কালের কথা ২০০৪ খ্রিস্টাব্দ মাওলা ব্রাদার্স কর্তৃক প্রকাশিত। তবে তাঁর কিছু ইংরেজী প্রবন্ধ-নিবন্ধ অগ্রন্থিত অবস্থায় রয়েছে। শিক্ষা ও গবেষণায় অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন তাকে "আজীবন সম্মাননা" প্রদান করেন। এছাড়াও ২০০৬ সালে তিনি জাহানারা ইমাম স্মৃতি পদক, ২০১৮ সালে কণ্ঠশীলন পুরস্কার, ২০১০ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং ২০১০ তাঁর সম্মানেখান সারওয়ার মুরশিদ সংবর্ধনা গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। দীর্ঘ দিন তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। ২০০৪-এ হৃদপিন্ডের সারাই হয়েছিল সফল। বেলজিয়ামের ব্রাসেলস শহরের হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসা করাতেন। ২০১২-এর মাঝামাঝি শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ধরা পড়লে অক্টোবরে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি একাধিকবার হূদরোগে আক্রান্ত হন। ডিসেম্বরের শুরুতে সম্শ্চেপূর্তণ নিশ্চেতন হয়ে পড়লে তাঁকে কৃত্রিম ব্যবস্থায় শ্বাসপ্রশ্বাস দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়। ২০১২ সালেল ৮ ডিসেম্বর বিকেলে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন খান সারওয়ার মুরশিদ। মৃত্যুকালেতার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। এই মহান শিক্ষাবিদ সংগ্রামী মানুষটি জীবনভর এ দেশের কথা ভেবেছেন, মানুষের কথা ভেবেছেন, বিনিময়ে তিনি কিছুই আশা করেননি। আদর্শ শিক্ষক হতে হলে যে বিষয়গুলো করতে নেই, তিনি সেগুলো কখনো করেননি। একাগ্রতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে তিনি শিক্ষকতা করেছেন। তিনি সমাজের শিক্ষকে উপনীত হয়েছিলেন। পরিতাপের বিষয় বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও সংগ্রামী চেতনার বাহককে জাতীয়ভাবে আজ পর্যন্ত কোন সম্মান জানানো হয়নি। তবুও আগামী প্রজন্মের কাছে অধ্যাপক সারওয়ার মুরশিদ খান একজন আদর্শ শিক্ষক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নবজাগরণের মূর্ততার প্রতীক হয়ে থাকবেন। বরেণ্য শিক্ষাবিদ সারওয়ার মুরশিদ খানের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। খান সারওয়ার মুরশিদ সমাজ উন্নয়নে অনেক কিছুই চিন্তা করতেন। অনেক কাজও হাতে নিয়েছিলেন। তার অসমাপ্ত কাজগুলো এগিয়ে নেয়াই হবে তার প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা। সমাজের দর্পণ খান সারওয়ার মুরশিদের মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:৪৬
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ মন্তব্য প্রদানের জন্য।
আমার ব্লগে স্বাগতম।
২| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৩৪
রাজীব নুর বলেছেন: জ্ঞান গুনীদের শ্তদ্ধা জানাতে কার্পন্য করা ঠিক না।
০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:২৩
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
গুনীদের সম্মা করতে পারলে
গুনী হওয়া যায়। গুনীকে সম্মান
না দিলে দেশে গুনী মানুষ জন্মায় না।
৩| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:১৬
বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: তাঁর অবদান স্বীকার করতেই হবে।
শ্রদ্ধা জানাই।
৪| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:৩১
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্যের উত্তরের দেওয়ার জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:৩৭
সাজ্জাদ রয়েল বলেছেন: শ্রদ্ধা রইলো উনার প্রতি