নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রথাবিরোধী লেখক, দার্শনিক ও চিন্তাবিদ আরজ আলী মাতুব্বরের ১১৯তম জন্মবার্ষিকী আজ

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫৭


প্রথাবিরোধী ধর্মদর্শনের প্রাচীন ধারাবাহিকতার বাংলাদেশী রূপকার হলেন আরজ আলি মাতুব্বর। সক্রেটিস বলেছিলেন, 'An unquestioned life is not worth living.' মানবসভ্যতার অগ্রগতির মূলে কাজ করেছে প্রশ্ন। প্রশ্নের বৈজ্ঞানিক উত্তরের দীর্ঘ ইতিহাস মোটেও কুসুমাস্তীর্ণ নয়। অগণিত প্রতিভাবানকে এ জন্য কঠোর সাধনা ও ত্যাগ করতে হয়েছে, কেউ কেউ জীবন দান করেছেন। প্রায় শতবর্ষ আগে ঢাকা শহরের বুকে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের মুখপত্র 'শিখা' পত্রিকার শীর্ষভাগে লেখা থাকত, 'জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।' কথাটির তাৎপর্য এ যুগে আরও প্রাসঙ্গিক। বুদ্ধির মুক্তির জন্য প্রশ্ন উত্থাপন এবং এর যৌক্তিক সমাধানের কোনো বিকল্প নেই। এদিক থেকে আমাদের সমাজে আপাত উত্তরণের কোনো সম্ভাবনা দৃশ্যমান নয়। কেন এটি সম্ভব হলো না, এর উত্তর লুকিয়ে আছে আরজ আলী মাতুব্বরের জীবনদর্শনে। তিনি মনে করতেন পশু যেমন সামান্য জ্ঞান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকে ধর্মবাদী ব্যক্তিগণও তেমনি সামান্য জ্ঞান নিয়েই জীবন কাটিয়ে দেয়। নিজের প্রান্তিক জীবনের সাধারণ কয়েকটি ঘটনাতেই তিনি বুঝে নিয়েছেন তার ও তার সমাজের আচরিত ধর্মের স্বরূপ। ক্রমাগত গ্রন্থ পাঠে বুঝে নিয়েছেন এর কারণাবলী। এই অন্ধকারাচ্ছন্নতার বিরুদ্ধে তার অবস্থান ছিল সুস্পষ্ট। তাই তিনি অনবরত প্রশ্নবাণে দগ্ধ করেছেন তথাকথিত সমাজপিতা ও তাদের আচরিত-প্রচারিত ধর্ম ও দর্শনকে। স্ব-শিক্ষিত দার্শনিক, চিন্তাবিদ এবং বিজ্ঞানমনস্ক লেখক আরজ আলী মাতুব্বরের লেখায় জগত ও জীবন সম্পর্কে নানামুখী জিজ্ঞাসা উঠে এসেছে যা থেকে তার প্রজ্ঞা, মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায়। তবে শহুরে মধ্যবিত্ত কিংবা গ্রামীণ ক্ষমতাবান কারও কাছেই আরজ আলী মাতুব্বর গ্রহণযোগ্যতা পাননি। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ঘাটতি সত্ত্বেও সাহসীকতার সাথে তিনি কতিপয় বই লেখেন। বিশ্ব ও জীবন সম্পর্কে তাঁর দার্শনিক লেখা বিতর্কিত হয়ে পড়ে এবং তিনি ইসলাম-বিরোধী কর্মী হিসেবে সমালোচিত হন। তাঁর বইগুলো প্রকাশে অনেক বাধা পেরোতে হয়েছিলো কারণ তাঁর বইগুলো সর্বদাই সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধের হুমকিতে থাকত, কারণ তাঁর লেখনী রাষ্ট্রের সংখ্যাগুরু লোকদের মতের বিরুদ্ধাচারিত নির্দিষ্ট দাবিকৃত ধর্মীয় মত বা ভাবাদর্শ ধারণ করত। মাতুব্বরকে তাঁর বই - “সত্যের সন্ধানে”র (Sotyer Shondhaney") জন্য বন্দী করা হয় এবং পুলিশ হাজতে নেয়া হয়। দার্শনিক, চিন্তাবিদ ও লেখক আরজ আলি মাতুব্বরের ১১৯তম জন্ম দিন আজ। ১৯০০ সালের আজকের দিনে তিনি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। প্রবাসে প্রথমবারের মতো এবার দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বরের জন্মদিন পালন করা হবে নিউইয়র্কে। ১৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তাঁর ১১৯তম জন্মোৎসব পালন করা হবে জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশ প্লাজা মিলনায়তনে। জন্মোৎসবে আরজ আলী মাতুব্বরের জীবন ও কর্ম নিয়ে এক মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন প্রফেসর মতলুব আলী, লেখক আহমাদ মাযহার এবং কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট জাকির হোসেন বাচ্চু। এটি আয়োজন করেছে জন্মোৎসব উদযাপন পরিষদ, নিউইয়র্ক। তার জন্মোৎসব উদযাপন অনুষ্ঠাটি হবে সবার অংশগ্রহণমূলক। প্রথমে তিনজন বক্তা আরজ আলী মাতুব্বরের জীবন দর্শন ও সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা বলবেন। তারপর সবাই প্রশ্ন করে বা যে কারো প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। দার্শনিক, চিন্তাবিদ ও প্রথাবিরোধী লেখক আরজ আলী মাতুব্বরের জন্মবার্ষিকীতে আমাদের গভীর শ্রদ্ধা ও ফুলেল শুভেচ্ছা।

ধর্মান্ধ সমাজে কালজয়ী এক মানবঃ আরোজ আলী মাতুব্বর ১৯০০ ইংরেজী সালের ১৭ই ডিসেম্বর মোতাবেক বাংলা ১৩০৭ সালের ৩রা পৌষ বরিশাল শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে চরবাড়িয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত লামছড়ি গ্রামে এক গরীব কৃষক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। স্ব-শিক্ষিত, দার্শনিক এই লেখকের প্রকৃত নাম ছিলো “আরজ আলী”। আঞ্চলিক ভূস্বামী হওয়ার সুবাধে তিনি “মাতুব্বর” নাম ধারণ করেন। তাঁর পিতার নাম এন্তাজ আলী মাতুব্বর। ১২বছর বয়সে তিনি তাঁর বাবাকে হারান। এর পরে দুই একরের (৮১০০ মিটার২) বসতবাড়িটি নিলামে উঠে। জমিজমাহীন বালক আরজ আলী স্থানীয় সুদখোরদের কাছে তখন তাঁদের পরিবারটি দেনার দায়ে পূর্বপুরুষের ভিটামাটি হারিয়ে সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় পড়ে যায়। অন্যের দয়া দাক্ষিণ্যে বহু কষ্টে খেত খামারে কাজ করার কারণে আর দরিদ্র আরজ আলী আর স্কুলে পড়ার সুযোগ পান নি। আরজ আলী নিজ গ্রামের মুন্সি আবদুল করিমের মসজিদ দ্বারা পরিচালিত মক্তবে সীতানাথ বসাকের কাছে 'আদর্শলিপি' পড়তেন। দরিদ্রতার কারণে নিয়মানুবর্তিতার অভাবে তাঁকে মক্তব ছাড়তে হয়। এরপর তিনি কৃষিকাজে নিয়োজিত হন। পরে এক সহৃদয় ব্যক্তির সহায়তায় তিনি প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। সাথে সাথে তিনি নিজের ঐকান্তিক চেষ্টায় লেখাপড়া শিখতে থাকেন। নিজের জ্ঞানের পিপাসা মেটাতে তিনি বরিশাল লাইব্রেরীর সমস্ত বাংলা বই একজন মনোযোগী ছাত্রের ন্যায় পড়েন। দর্শন ছিলো তাঁর প্রিয় বিষয়। কিন্তু পাঠাগারে পর্যাপ্ত বই ছিলো না। পরে বিএম মহাবিদ্যালয়ের দর্শনের এক শিক্ষক – কাজী গোলাম কাদির তাঁর জ্ঞানগর্ভ বিচার দেখে মোহিত হন এবং তিনি মহাবিদ্যালয়ের পাঠাগার থেকে বই ধার দেয়ার ব্যবস্থা করে দেন। এভাবেই তাঁর মানসিক আকৃতি গঠিত হয়। তিনি নিজ চেষ্টায় বিজ্ঞান ও দর্শনসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর জ্ঞান অর্জন করেন। জগত ও জীবন সম্পর্কে নানামুখী জিজ্ঞাসা তাঁর লেখায় উঠে এসেছে যা থেকে তাঁর প্রজ্ঞা, মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায়। আর্থিক সঙ্কটের কারণে, মাতুব্বর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কোর্স বা ডিগ্রী লাভ করতে পারেন নি। কৃষিকাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি জমি জরিপ বা আমিনের কাজ শিখে নেন। এরপর জমি জরিপের কাজকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। কৃষি ক্ষেতের জন্য এভাবে কিছু পুঁজি জমা করেন। একসময় মানুষ ও জীবন সম্পর্কে তাঁর মনে প্রশ্ন জাগলে তিনি এ বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে নিজস্ব ধরনের চিন্তাভাবনা শুরু করেন। আরজ আলী মাতুব্বর সাম্যবাদী ঢঙের, অনেক অজ্ঞতা, কুসংস্কার ও ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে লেখালেখি করেন। তাঁর লেখার জন্য তাঁকে ধর্মীয় ভাবমূর্তির প্রতিমাধ্বংসকারী হিসেবে বিবেচিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, তিনি ইসলামের বংশগতির ধারা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেন এবং স্বকীয় মত-বৈশিষ্ট্য একমতে আনতে ব্যর্থ হন।

অতি ব্যবহার এবং অপব্যবহারে বাংলা ভাষার বহু শব্দ গুরুত্ব হারিয়েছে। এমন একটি শব্দ দার্শনিক। বাংলাদেশে দর্শনের ছাত্র বা শিক্ষকের অভাব নেই। দর্শনশাস্ত্রের অনুবাদকও রয়েছেন। তাদের মধ্যে খুব অল্পসংখ্যকই মৌলিক চিন্তা করেন। যারা মৌলিক চিন্তা করেন, তাদের অনেকেরই একাডেমিক ডিসিপ্লিন 'দর্শন' ছিল না। অথচ নির্বিচারে সবাইকে দার্শনিক অভিধায় ভূষিত করা হয়। আরজ আলী মাতুব্বর ছিলেন যথার্থই দার্শনিক। তিনি সেই নগণ্যসংখ্যক দার্শনিকের অন্যতম, যিনি মৌলিক চিন্তা করেছেন। শুধু বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে মতান্তর নয়। মাতুব্বর লক্ষ করেছেন, একই ধর্মের মধ্যে বিপরীত মতবাদের উপস্থিতি। হিন্দু ধর্মের বেদ ও উপনিষদের অন্তঃসারের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। খ্রিষ্টধর্মে প্রোটেস্ট্যান্ট ও ক্যাথলিকদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। ইসলাম ধর্মের মধ্যে শিয়া, সুন্নি, মুতাজিলা, ওহাবি, খারিজি প্রভৃতি সম্প্রদায়ের মত ভিন্ন। অকপট সত্য উচ্চারণের জন্য মাতুব্বরকে নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তার জীবন নিয়ে হাসনাত আবদুল হাই উপন্যাস লিখেছেন। সেখানে তাকে তুলনা করা হয়েছে গ্যালিলিওর সঙ্গে। তাদের দু'জনেই প্রচলিত রাষ্ট্র ব্যবস্থা দ্বারা নিপীড়িত হয়েছিলেন। ধর্ম, দর্শন, বিজ্ঞান বিষয়ে মাতুব্বরের স্পষ্ট বক্তব্য প্রতিক্রিয়াশীল ক্ষমতাবান গোষ্ঠীকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। ফৌজদারি মামলায় তিনি গ্রেফতার হন। তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে পুলিশ সুপার অকারণ উপদেশ বর্ষণ করেন তার প্রতিঃ
'মানুষের প্রচলিত বিশ্বাস, আচার-অনুষ্ঠান, সংস্কারে আঘাত দিলে সামাজের স্থিতিশীলতা বজায় থাকে না। সুতরাং তুমি যত ইচ্ছা বই পড়ো, জ্ঞান অর্জন করো, ক্ষতি নেই। কিন্তু সেসব বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনা করতে পারবে না। তুমি বইপত্র পড়ে যা জানবে, তা প্রচার করতে পারবে না- এই প্রতিশ্রুতি যদি দাও, তাহলে তোমাকে ছেড়ে দিতে পারি।'লেখনীর কারণে আরজ আলী মাতুব্বর যতবার ধর্মীয় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ততবারই তাঁকে হুমকি ও হয়রানির সম্মুখীন হতে হয়। বাংলাদেশে, তাঁর লেখা যে সব বইয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ (সেন্সর) করা হয় সেগুলো হলঃ
১। সত্যের সন্ধানে, (The Quest for Truth) (১৯৭৩), ২। সৃষ্টির রহস্য, (The Mystery of Creation) (1১৯৭৭), ৩। অনুমান, (Estimation) (১৯৮৩), ৪। মুক্তমন (Free Mind) (১৯৮৮)
১৩৯২ সালে বাংলা একাডেমী আরজ আলী মাতুব্বরকে আজীবন সদস্য পদ প্রদান এবং বাংলা ১৩৯২ সালের ১লা বৈশাখ নববর্ষ সংবর্ধনা জ্ঞাপন করে। ১৩৮৫ বঙ্গাব্দে হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার লাভ করেন, ১৩৯২ বঙ্গাব্দে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী কর্তৃক বরণীয় মনীষী হিসেবে সম্মাননা লাভ করেন। এছাড়াও বিজ্ঞানচেতনা পরিষদ প্রতি বছর তার স্মরনে আরজ আলী মাতুব্বর স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করে থাকে। মৃত্যুর পরে তাঁর কিছু অপ্রকাশিত পান্ডুলিপি আরজ আলী মাতুব্বরের রচনাবলী শিরোনামে প্রকাশিত হয়। তাঁর কিছু লেখা ইংরেজীতে ভাষান্তর করা হয় এবং পাঠক সমাবেশ কর্তৃক সেগুলো খন্ডাকারে আবদ্ধ করা হয়। এছাড়া তার আরো কতিপয় প্রকাশিত গ্রন্থ রয়েছে। সেগুলো হচ্ছেঃ ১। ম্যাকগ্লেসান চুলা (১৯৫০), ২। স্মরণিকা (১৯৮২)

ব্যক্তিগত জীবনে আরজ আলী মাতুব্বর ২৯ অগ্রহায়ণ ১৩২৯ সালে লালমন্নেছাকে বিয়ে করেন। বিয়ের সময় কনের বয়স ছিল ২১ বছর। তাদের তিন মেয়ে :এশারন নেছা, ছলেমান নেছা এবং ফয়জন্নেছা; একছেলে: আব্দুল মালেক। পরে তিনি পাশের গ্রামের আব্দুল করিম মৃধার মেয়ে সুফিয়াকে বিয়ে করেন। এই সংসারে তাদের চারটি মেয়ে : হাজেরা খাতুন, মনোয়ারা খাতুন, নূরজাহান বেগম ও বায়াম্মা বেগম; দুই ছেলে : আবদুল খালেক ও আবদুল বারেক। তিনি দশ সন্তানের জনক ছিলেন।
১৯৮৫ সালের ১৫ মার্চ মোতাবেক বাংলা ১৩৯২ সালের ১লা চৈত্র বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পরলোকগমন করেন দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বর। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮৫ বছর। তিনি তার ৮৫ বছরের জীবনকালে ৭০ বছরই লাইব্রেরিতে কাটিয়েছেন পড়াশোনা করে। জ্ঞান বিতরণের জন্য তিনি তার অর্জিত সম্পদ দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন ‘আরজ মঞ্জিল পাবলিক লাইব্রেরি’। মানবতার সেবায় মরণোত্তর চক্ষুদান এবং মেডিকেলের ছাত্রদের শিক্ষার উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য বরিশালের শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ-এর এনাটমি বিভাগে মরণোত্তর দেহদান করেন আরজ আলি মাতুব্বর। কুসংস্কার ও ধর্মান্ধতার বিপরীতে আরজ আলী মাতুব্বরের জীবনদর্শন ছিল বিজলি তথা যুক্তির কড়া আলোর অনুগামী। একবিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অভাবনীয় অগ্রগতির যুগে যখন ধর্মীয় উগ্রতাও বিস্তার লাভ করেছে, তখন দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বরকে স্মরণ করা আমাদের একান্ত কর্তব্য। দার্শনিক, চিন্তাবিদ ও লেখক আরজ আলি মাতুব্বরের ১১৯তম জন্ম দিন আজ। প্রথাবিরোধী লেখক আরজ আলী মাতুব্বরের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:০৯

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:




আরজ আলী কাহা ফরা লেহা কদ্দুর করছেন? তাইনে বাংলাদেশে ইসলাম ধর্ম নিয়া কিতা না কিতা কইছেন বাংলাদেশে ইসলাম ধর্ম নিয়া এহন আরজ আলী কাহারে টানে সবাই। তাই জানতে চাইতাছি কাহার ফরা লেহার দৌড় কদ্দুর? তিনি কিতা ধর্ম নিয়া ফিএইচপি কইরছেন নি?

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:১০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ঠাকুর ভাই মাতুব্বর সাহেব গ্রামের মক্তবে মাত্র কয়েক মাস লেখাপড়া করেন।
যেখানে শুধু কোরআন ও অন্যান্য ইসলামিক ইতিহাসের ওপর শিক্ষা দেওয়া হতো।
পরে এক সহৃদয় ব্যক্তির সহায়তায় তিনি স্কুলের প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন।
এর পর তিনি নিজের চেষ্টায় নানা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি তার ৮৬ বছরের
জীবনকালে ৭০ বছরই লাইব্রেরিতে কাটিয়েছেন পড়াশোনা করে।

২| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:১০

সাইয়িদ রফিকুল হক বলেছেন: “জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।”

আরজ আলী মাতুব্বর এই মহাদর্শনের সুযোগ্য সন্তান ছিলেন।

শ্রদ্ধা তাঁর প্রতি।

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৩৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আরজ আলি সীমিত সুযোগ সুবিধার মাঝেও যেভাবে নিজের মতাদর্শের পক্ষে তথ্য সংগ্রহ করে তা গুছিয়ে লিখে রেখে গেছেন তার জন্যে অবশ্যই প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। আরজ আলি মাতুব্বর নিজের কাজের মাধ্যমে সন্দেহবাদী, বিভ্রান্তবাদী আর আজ্ঞেয়বাদীসহ নাস্তিক-মুক্তমনারদের উপর একটা কঠিন দায়িত্ব রেখে গেছেন।
যার প্রতিধ্বনি শুনি উনার সত্যের সন্ধানে প্রবন্ধ সংকলনের উপসংহারে – উনি বলছেন –

"আমাদের মনে হয় যে, এমন অনেক সৌভাগ্যশালীও আছেন, যাদের নিকট পুস্তকে লিখিত প্রশ্নগুলো অতিশয় তুচ্ছ। হয়তো তাঁহাদের নিকট প্রশ্নগুলির সমাধান সমাধান অজ্ঞাত নয়। তাঁহাদের নিকট আমাদের একান্ত অনুরোধ এই যে, তাঁহারা যেন এই প্রশ্নগুলির যথাযোগ্য সমাধান ও ব্যাখ্যা সাধারন্যে প্রকাশ করেন। করিলে আমরা তাঁহাদের নিকট চিরকৃতজ্ঞ থাকিব।"

৩| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:২১

চাঁদগাজী বলেছেন:


উনার যেই বইগুলো বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হয়েছে, সেগুলো পড়লে, উনাকে বুঝা সহজ হতো।

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:০৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
বাঙ্গালির দুর্ভাগ্য,আরজের সবচেয়ে
ভাল সময়ে তিনি রাষ্ট্রিয় নিষেধাজ্ঞায় ছিলেন।

৪| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:২২

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:




নূর মোহাম্মদ নূরু ভাই,
আরজ আলী মাতুব্বরের লেখা কোনো বই প্রবন্ধ আমি পড়ি নি। আপনার কাছে জানতে চাচ্ছি তিনি বাংলাদেশে নাস্তিক জগতের গুরু হয়েছেন কিভাবে, তিনি ইসলাম ধর্ম নিয়ে কি কথা বলেছেন?

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:০৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আরজ আলী মাতুব্বরের বই-এর প্রতি, বিদ্যাচর্চার প্রতি ক্রমবর্ধমান আগ্রহের প্রধান কারণই হলো জগত মানুষ সংসার নিয়ে, অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ নিয়ে, অপার কৌতুহল এবং মাথায় অনেক প্রশ্ন। আসলে কৌতূহল আর প্রশ্ন এমনই যে, তার কোন সীমা বলে কিছু নেই। কৌতূহল পূরণ করবার জন্য যত প্রশ্নের জবাব অনুসন্ধান করা যায় ততই নতুন নতুন প্রশ্নের আবির্ভাব ঘটে। কাজেই কেউ যদি প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করতে শুরু করেন সে এক অবিরাম যাত্রা। এই যাত্রা কঠিন কেননা তা প্রচলিত অনেক বোধ-বিশ্বাসকে আঘাত করে, এই যাত্রা ঝুঁকিপূর্ণ কেননা তা বিদ্যমান ক্ষমতার কাঠামোকে ক্ষেপিয়ে তুলতে পারে, এই যাত্রা গভীর আনন্দের কেননা তা ক্রমান্বয়ে সীমানা সম্প্রসারিত করতে থাকে, অসীমের দিকে তাকানোর ক্ষমতা বা আত্মবিশ্বাস দান করে এবং সীমার মধ্যে নিজকেই যেন পূর্ণ করতে থাকে। এই প্রশ্নই আমাদের সামনে আরজ আলী মাতুব্বরকে উপস্থিত করেছে।

৫| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৩০

হাফিজ রাহমান বলেছেন: নূরু সাহেব! আপনি কি মাতুব্বর সাহেবের সকল দর্শন ও বিশ্বাস মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন?

৬| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৪৩

জাহিদ হাসান বলেছেন: বাংলার সক্রেটিস। আমাদের সংশয়বাদী দার্শনিক।

৭| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৫৪

আসোয়াদ লোদি বলেছেন: আরজ আলীর সব বই আমি পড়েছি। তাঁর প্রশ্ন, যুক্তি, ব্যাখ্যা অসাধারণ। সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিস্টটল কোন ইস্কুল-ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া করেছেন আমি জানিনা। আজর আলী একটি বই পড়ার জন্য চৌদ্দ মাইল হেঁটেছেন এইটা জানি। নূর মোহাম্মদ নুরু ভাইকে অনেক ধন্যবাদ।

৮| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৪১

শার্লক_ বলেছেন: বইগুলি একজন মূর্খের প্রলাপ ছাড়া আর কিছুই না।

৯| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৪৬

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
অসাধারণ এক জন মানুষ।

১০| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৪৮

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
অসাধারণ এই মানুষটিকে নিয়ে আপনি পোস্ট দেওয়ায় কেউ আপনার প্রতি আমার শ্রদ্ধা বেড়ে গেল ।
আপনাকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানাই।
উনার মতো মানুষ বাংলাদেশে বিরল ।
উনার মতো চিন্তাভাবনার মানুষ কয়েক হাজার দরকার আমাদের।

১১| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৫৬

রাজীব নুর বলেছেন: দার্শনিক, চিন্তাবিদ ও প্রথাবিরোধী লেখক আরজ আলী মাতুব্বরের ১১৩তম জন্মবার্ষিকী আজঃ স্ব-শিক্ষিত এই লেখকের জন্ম দিনে শুভেচ্ছা ।
তিনি মনে করতেন পশু যেমন সামান্য জ্ঞান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকে ধর্মবাদী ব্যক্তিগণও তেমনি সামান্য জ্ঞান নিয়েই জীবন কাটিয়ে দেয়।

১৩৯২ সালে বাংলা একাডেমী আরজ আলী মাতুব্বরকে আজীবন সদস্য পদ প্রদান করে।

১২| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:১১

নতুন নকিব বলেছেন:


তার সম্মন্ধে সামান্য জেনেছি। জ্ঞানের পেছনে তার সাধনাটাই শুধু অনুকরণযোগ্য। তার বিশ্বাস, তার আদর্শগত চিন্তা ভাবনা সংশয়, এবং সন্দেহে ভরপুর। তার অর্বাচীন টাইপ লেখালেখিগুলোকে মূর্খতাসুলভ বালখিল্যতা ছাড়া আর কিছু মনে হয়নি।

১৩| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:১৩

এমজেডএফ বলেছেন: দার্শনিক ও চিন্তাবিদ আরজ আলী মাতুব্বরের দর্শন নিয়ে এই সামু ব্লগে অনেক বছর আগে ব্যাপক বাহাস হয়েছিল। তখনই এই গুণীজনের দর্শন সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা হয়েছিল। আমার প্রিয় দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বরের১১৯তম জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
জন্মবার্ষিকীতে তাঁকে নিয়ে পোস্ট দেওয়ার জন্য নুরু ভাইকে ধন্যবাদ।

১৪| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:৩৩

সোহানী বলেছেন: একজন আরজ আলী যে প্রশ্ন এবং চিন্তা ভাবনা আমাদের মাঝে করে গেছেন সে প্রশ্নগুলো কখনোই পুরোনো হবে না। যুগের পর যুগ সে উত্তর আমরা খুজেঁ ফিরবো।

একজন আরজ আলী কে বুঝতে হলে শুধু উনার বই পড়লেই হবে না, তারঁ চিন্তা কে ধারন করার জন্য মন মানসিকতা ও থাকতে হবে।

শ্রশদ্ধ চিত্তে স্মরণ করছি উনাকে।

১৫| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:৩৯

টারজান০০০০৭ বলেছেন: গরু ঘাস খায় , মানুষ গরু খায় ! সুতরাং মানুষ ঘাস খায় !
পাঁঠার বিচি আছে, ষ্টালিনেরও বিচি আছে। সুতরাং স্টালিন পাঁঠা !

এই ধরনের যুক্তি দিয়া আরুজ মাতুব্বর যদি দার্শনিক হইয়া থাকে তাহা হইলে বিবর্তনবাদের ধারায় বান্দরেরও এতদিনে দার্শনিক হইয়া যাওয়ার কথা ছিল ! মাগার বান্দর না হইয়া মাতুব্বর দার্শনিক হইয়া গেলু ! কি তামসা !

আমার ধারণা ছিল একমাত্র পাঁঠারাই তাহার ফ্যান হইয়া বাতাস দেয়, অন্যদেরও হাওয়া দিতে দেখিয়া বিস্মিত হইলাম !

নুরু ভাই, মাতুব্বর শুধুই প্রথাবিরোধী হইলে সমস্যা ছিল না ! সে ধর্মবিরোধীও বটে ! ইহাতেই সমস্যা ! ধর্ম আর প্রথা একও হইতে পারে ভিন্নও হইতে পারে ! মাতুব্বর শুধুই প্রথা বিরোধী হইলে প্রশংসার যোগ্য হইতো ! যেমন: যৌতুক মুসলমান সমাজে একটি কুপ্রথা ! সে যদি ইহার বিরোধী হইতো ভালো হইতো !

ধর্ম লইয়া তাহার পড়াশোনা একেবারেই কিঞ্চিত্কর ! একারণে ধর্ম ও ধার্মিক সম্পর্কে তাহার যে অবজারভেশন তাহাকে কেবল অন্ধের হাতি দেখার সাথেই তুলনা করা যাইতে পারে !

১৬| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৪৬

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: প্রথাগত বিদ্যা মানুষকে কতটুকু শিক্ষিত করে তুলে ? স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হয় জানার সাধনা থাকতে হয় তবেই তো সিদ্ধি লাভ আরজ আলীর পান্ডিত্য নিয়ে প্রশ্ন কেউ করতে পারবে না । তিনি তা অর্জন করেছিলেন । প্রচুর পড়া শোনা তিনি করেছিলেন ।

তিনি ইসলাম সম্পর্কে জানেন নি পড়াশুনা করেন নি তিনি মস্ত ভুল করেছিলেন ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.