নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভাষা সৈনিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, সুরকার ও স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদের ৮৬তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:২৪


২১শে ফেব্রুয়ারির শহীদ দিবসে গাওয়া "আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি" গানটির বর্তমান সুরের সুরকার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদ। এই গানের সুরকার হিসেবেই ভাষা সৈনিক আলতাফ মাহমুদ সমধিক পরিচিত হয়ে আছেন। আলতাফ মাহমুদের ডাক নাম ঝিলু। গানের প্রতি ঝিলুর ছিল প্রচন্ড ঝোঁক। পড়ালেখায় মন নেই ঝিলুর, সারাক্ষণ গুনগুন করে গেয়ে চলে গান। ঝিলু যখন পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র তখন উঠোনের কাঁঠাল গাছে খোদাই করে লিখে রাখে 'ঝিলু দি গ্রেট'। ঝিলুর বাবা নাজেম আলী একদিন বললেন- 'বেডার কাণ্ড দেহো। ওরে আবাইগ্যা, গাছডার গায়েতো লেইখা রাখছোস- 'ঝিলু দি গ্রেট'। গান গাইয়া কি আর গ্রেট হইতে পারবি?' ঝিলু বলল, 'দেখ একদিন ঠিকই আমি 'ঝিলু দি গ্রেট' হবো। সঙ্গীতে প্রতিভার পাশাপাশি আলতাফ মাহমুদ ছবিও আঁকতে পারতেন। ' আজ সেই ঝিলু দি গ্রেট এর জন্মদিন। ১৯৩৩ সালের আজকের দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। আজ তাঁর ৮৬তম জন্মবার্ষিকী। স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদের জন্ম বার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছ।

আলতাফ মাহমুদ ১৯৩৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার মুলাদী থানার অন্তর্গত পাতারচর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। আলতাফ মাহমুদের বাবার নাম নাজেম আলী হাওলাদার এবং মা কদ বানুর একমাত্র পুত্র সন্তান আলতাফ মাহমুদ। আলতাফ মাহমুদের বাবা প্রথমে আদালতের পেশকার এবং পরবতীর্তে জেলা বোর্ডের সেক্রেটারি ছিলেন। আলতাফ মাহমুদ ১৯৪৮ সালে বরিশাল জিলা স্কুল থেকে তিনি মেট্রিকুলেশন পরীক্ষা পাশ করে বিএম কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হন কিন্তু বেশি দিন পড়াশোনা করেননি। কলকাতা আর্ট কলেজে কিছুদিন পড়াশোনা করেন। পরে তিনি চিত্রকলা শিখতে ক্যালকাটা আর্টস স্কুলে গমণ করেন কিন্তু এখানেও তিনি কোর্স শেষ করেননি। বিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায়ই মাহমুদ গান গাইতে শুরু করেন। তিনি প্রসিদ্ধ ভায়োলিন বাদক সুরেন রায়ের কাছে প্রথম সঙ্গীতে তালিম নেন। ১৯৪৮ সাল থেকে তিনি গণসঙ্গীতের দিকে ঝুঁকে পড়েন। নিজামুল হকের সাহচর্যে আলতাফ মাহমুদ সত্যিকারের পথ খুঁজে পান গণসঙ্গীতের যা ঐ সময় তাঁকে অসম্ভব জনপ্রিয়তা ও বিপুল খ্যাতি এনে দেয়। বরিশালের এক জনসভায় 'ম্যায় ভূখা হু' গানটি গেয়ে আলতাফ মাহমুদ রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। সারা বাংলায় কীভাবে সঙ্গীতের মাধ্যমে জনগণকে অধিকার সচেতন করে তোলা যায়, তাদের স্বাধিকারের বাণী শোনানো যায়, সে চিন্তায় মগ্ন থাকতেন নিজামুল হক ও আলতাফ মাহমুদ।

(স্ত্রী সারা আরা মাহমুদ ও কন্যা শাওনের পাশে আলতাফ মাহমুদ)
সংসার জীবনে ১৯৬৬ সালের ১৬ অক্টোবর বিল্লাহ পরিবারের বড় মেয়ে সারা আরা, ডাকনাম ঝিনুর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন আলতাফ মাহমুদ। বিল্লাহ পরিবারের সব সদস্যই সংস্কৃতিমনা। আলতাফ মাহমুদের সাথে বিয়ের পর বিল্লাহ পরিবারের সারা আরা হয়ে যান সারা আরা মাহমুদ। আলতাফ মাহমুদের সাথে সারা আরার বয়সের ব্যবধান অনেক। তাঁদের যখন বিয়ে হয় সারা তখন দশম শ্রেণীর ছাত্রী। আলতাফ মাহমুদের বয়স তখন ৩৫-৩৬ বছর। বিয়ের প্রস্তাব এলে সারার পরিবারের সদস্যরা বয়সের বিশাল দূরত্বের জন্য প্রথমে অসম্মতি জানান। কিন্তু বেগম সুফিয়া কামালের মধ্যস্থতায় শেষ পর্যন্ত বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের পর দু'জনের দাম্পত্যজীবনের পরিধি ছিল মাত্র পাঁচ বছর। বয়সের ব্যবধান সত্ত্বেও তাঁদের দাম্পত্য জীবন ছিল সুখের। ঝিলু ও ঝিনুর পাঁচ বছরের বিবাহিত জীবনে তাঁদের ঘরে জন্ম নেয় একমাত্র মেয়ে শাওন।

(চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে আলতাফ মাহমুদ)
১৯৫০ সালে আলতাফ মাহমুদ ঢাকায় আসেন এবং ধুমকেতু শিল্পী সংঘে যোগ দেন। পরবর্তীকালে তিনি এই সংস্থাটির 'সঙ্গীত পরিচালক' পদে আসীন হন। ১৯৫০ সালের দিকে তিনি ভাষা আন্দোলনের পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য বিভিন্ন জায়গায় গণসঙ্গীত গাইতেন। গান গাওয়ার মাধ্যমে মাহমুদ এই আন্দোলনকে সর্বদাই সমর্থন যুগিয়েছেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ সালে আবদুল গাফফার চৌধুরী রচিত আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো শিরোনামের আলোড়ন সৃষ্টিকারী গানটিতে সুর সংযোজন করে খ্যাতির শীর্ষে আরোহণ করেন। ১৯৫৪ সালে "ভিয়েনা শান্তি সম্মেলনে" মাহমুদ আমন্ত্রিত হন, কিন্তু করাচিতে পাকিস্তানী সরকার তাঁর পাসপোর্ট আটকে দেয়ায় তিনি এখানে যোগ দিতে পারেননি। তিনি ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত করাচিতে ছিলেন এবং ওস্তাদ আব্দুল কাদের খাঁ'র কাছে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত বিষয়ক তালিম নিয়েছিলেন। এছাড়া তিনি নৃত্য পরিচালক ঘনশ্যাম এবং সঙ্গীত পরিচালক দেবু ভট্টাচার্য্যের সহকারী হিসেবেও কাজ করেছেন।

করাচি থেকে ঢাকা ফেরার পর আলতাফ মাহমুদ ১৯টি বিভিন্ন চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে বিখ্যাত চলচ্চিত্র জীবন থেকে নেয়া, ক্যায়সে কাহু, কার বউ, তানহা, বেহুলা, আগুন নিয়ে খেলা, দুই ভাই, সংসার, আঁকাবাঁকা, আদর্শ ছাপাখানা, নয়নতারা, শপথ নিলাম, প্রতিশোধ, কখগঘঙ, কুচবরণ কন্যা, সুযোরাণী দুয়োরাণী, আপন দুলাল, সপ্তডিঙ্গা প্রভৃতি। এছাড়া তিনি রাজনীতি এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংস্থার সাথেও জড়িত ছিলেন। ১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট ভোরবেলা আর্মিরা প্রথমে আলতাফ মাহমুদের পুরো বাড়িটি ঘিরে ফেলে। এরপর কয়েকজন ঘরে ঢুকে জিজ্ঞেস করে, 'আলতাফ মাহমুদ কৌন হ্যায়?' আলতাফ মাহমুদ জবাব দিলেন, 'আমি'। এরপর আর্মিরা তাঁকে দিয়ে মাটি খুঁড়ে কাঁঠাল গাছের নিচে লুকিয়ে রাখা গোলাবারুদের ট্রাঙ্ক দুটি বের করে নেওয়ার পর তাঁকে সঙ্গে নিয়ে চলে গেল। প্রথমে তাঁকে ধরে নিয়ে যেয়ে রাখা হয় রমনা থানায়। সেইসময় রমনা থানা থেকে ফিরে আসা একজন বন্দীর কাছ থেকে জানা যায় তাঁকে বন্দী অবস্থায় প্রচণ্ড নির্যাতন করা হয় এবং ৩ সেপ্টেম্বর চোখ বেঁধে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তিনি জানেন না কোথায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং পরিবারের সদস্যসহ কেউ আর তাঁর খোঁজ পাননি। পরবর্তীকালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে তাঁর দেশাত্মবোধক গান প্রচারিত হতে থাকে যা অগণিত মুক্তিযোদ্ধাকে অনুপ্রারিত করেছিল।

(আলতাফ মাহমুদের প্রাপ্ত স্বাধীনতা পদক ও একুশে পদক)
বাংলা সংস্কৃতি ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৭৭ সালে আলতাফ মাহমুদকে একুশে পদক প্রদান করা হয়। এ ছাড়াও সংস্কৃতিক্ষেত্রে আবদান রাখায় শহীদ আলতাফ মাহমুদকে ২০০৪ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) প্রদান করা হয় এবং তাঁকে স্মরণ রাখতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে শহীদ আলতাফ মাহমুদ ফাউন্ডেশন।

ভাষা সৈনিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, সুরকার ও স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদের ৮৬তম জন্মবার্ষিকী আজ। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদের জন্ম দিনে ফুলেল শুভেচ্ছ।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:৪৬

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: হীদ মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদের জন্ম দিনে ফুলেল শুভেচ্ছ।
..........................................................................................
আমার শ্রদ্ধাজ্ঞলী ও ভালোবাসা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদের ৮৬তম জন্মবার্ষিকীতে

২| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ২:৩৮

আকতার আর হোসাইন বলেছেন: ফুলেল শুভেচ্ছ

৩| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধাসহ সালাম জানাই।

৪| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:১০

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ছেলে রুমি এবং আলতাফ মাহমুদ পাক আর্মিদের কাছে একই সময়ে পড়েন যা জাহানারা ইমামের একাওরের দিনগুলি বইয়ে উল্লেখ আছে। এই শহীদ মুক্তিযোদ্ধার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.