নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিংবদন্তি গীতিকার, সুরকার এবং সঙ্গীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলীর ৬৭তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:১৫


অসংখ্য জনপ্রিয় গানের সুরকারের নাম আলাউদ্দিন আলী। একসময় বাংলাদেশের চলচ্চিত্রজগতে একটি কথা প্রচলিত ছিল। সেটি হলো- 'আপনি আলাউদ্দিন আলীর সুরে গান করেননি, তো কিছুই করেননি। আপনার সংগীত জীবনই ব্যর্থ।' সংগীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলী বাংলা গান, বিশেষ করে বাংলা চলচ্চিত্রে বহু শ্রোতাপ্রিয় গানের জন্মদাতা। তিনি শুধু একজন সংগীত পরিচালক নন, একাধারে তিনি তিনি সুরকার, বেহালাবাদক, সঙ্গীতজ্ঞ, গীতিকার এবং সঙ্গীত পরিচালক। আলাউদ্দিন আলী ছোটবেলাতেই বেহালা বাজানোর জন্য ‘অল পাকিস্তান চিলড্রেনস প্রতিযোগিতায়’ পুরস্কার পান। এ ঘটনা স্মরণ করতে গিয়ে বিবিসির সাথে এক সাক্ষাতকারে তিনি জানান, ক্লাস থ্রি-তে পড়ার সময় তার ছোট চাচা একদিন তাকে একটি চায়নিজ বেহালা উপহার দেন। ওই বেহালা দিয়েই তিনি বেহালা শেখা শুরু করেন। ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ূব খানের নিকট থেকে তিনি শ্রেষ্ঠ বেহালাবাদকের পুরস্কার গ্রহণ করেন। তিনি প্রায় তিন শতাধিক চলচ্চিত্রের গানে সুরারোপ করেন। রেডিও, টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্র মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার গানের সুরকার আলাউদ্দিন আলী। চলচ্চিত্রের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি মোট আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে সাতবার এবং গীতিকার হিসেবে একবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন আলাউদ্দিন আলী। ১৯৭৯, ১৯৮০ এবং ১৯৮১ সালে পরপর তিনবছর চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে হ্যাট্রিক করেন। আজ এই গুণী শিল্পীর ৬৭তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৫২ সালের আজকের দিনে তিনি মুন্সীগঞ্জের টংগিবাড়ী থানার বাঁশবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। গীতিকার, সুরকার এবং সঙ্গীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলীর জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

আলাউদ্দিন আলী ১৯৫২ সালের ২৪শে ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জের টংগিবাড়ী থানার বাঁশবাড়ী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত সাংস্কৃতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম জাবেদ আলী ও মাতার নাম জোহরা খাতুন। দেড় বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে ঢাকার মতিঝিলের এজিবি কলোনীতে। তার পিতা ওস্তাদ জাবেদ আলী ও ছোট চাচা সাদেক আলীর কাছে প্রথম সঙ্গীতে শিক্ষা নেন। বেহালা বাজাতে গিয়েই তিনি চলচ্চিত্রের সাথে জড়িয়ে পড়েন আলাউদ্দিন আলী। তিনি বেতারের শিশুদের অনুষ্ঠানে বেহালাবাদক ছিলেন। ১৯৬৮ সালে তিনি যন্ত্রশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্র জগতে আসেন এবং আলতাফ মাহমুদের সহযোগী হিসেবে যোগ দেন। এরপর তিনি প্রখ্যাত সুরকার আনোয়ার পারভেজ সহ বিভিন্ন সুরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। তৎকালীন বড় বড় সঙ্গীত পরিচালকদের সাথে কাজ করার সুবাদে তার দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। ১৯৭৫ সালে ‘সন্ধিক্ষন’ চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনার মাধ্যমে প্রথম সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন এবং বেশ প্রশংসিত হন।পরের দুই বছর তিনি আর কোন চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা না করলেও ১৯৭৭ সালে একই সাথে দুটি চলচ্চিত্রের কাজ শুরু করেন – একটি ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ এবং অন্যটি ‘ফকির মজনু শাহ’। দুটি চলচ্চিত্রের গানই জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং তাকে বিশেষ পরিচিতি এনে দেয়। তিনি গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৯), সুন্দরী (১৯৮০), কসাই এবং যোগাযোগ চলচ্চিত্রের জন্য ১৯৮৮ সালে শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া ১৯৮৫ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও তিনি খ্যাতিমান পরিচালক গৌতম ঘোষ পরিচালিত পদ্মা নদীর মাঝি চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন। লোকজ ও ধ্রুপদি গানের সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা আলাউদ্দীন আলীর সুরের নিজস্ব ধরন বাংলা সংগীতে এক আলাদা ঢং হয়ে উঠেছে বিগত প্রায় চার দশক ধরে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের বহু বিখ্যাত শিল্পী তার সুরে গান বরেছেন।আলাউদ্দিন আলীর জনপ্রিয় কিছু উল্লেখযোগ্য গান হলোঃ
একবার যদি কেউ ভালোবাসতো , যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়, প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ. ভালোবাসা যতো বড়ো জীবন তত বড় নয়, দুঃখ ভালোবেসে প্রেমের খেলা খেলতে হয়, হয় যদি বদনাম হোক আরো, আছেন আমার মোক্তার আছেন আমার ব্যারিস্টার, সুখে থাকো, ও আমার নন্দিনী হয়ে কারও ঘরনি. সূর্যোদয়ে তুমি, সূর্যাস্তেও তুমি ও আমার বাংলাদেশ. বন্ধু তিন দিন তোর বাড়ি গেলাম দেখা পাইলাম না. যেটুকু সময় তুমি থাকো কাছে, মনে হয় এ দেহে প্রাণ আছে. এমনও তো প্রেম হয়, চোখের জলে কথা কয়, সবাই বলে বয়স বাড়ে, আমি বলি কমে রে. আমায় গেঁথে দাওনা মাগো, একটা পলাশ ফুলের মালা, শত জনমের স্বপ্ন তুমি আমার জীবনে এলে,কেউ কোনো দিন আমারে তো কথা দিল না পারি না ভুলে যেতে, স্মৃতিরা মালা গেঁথে, জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো. আমার মনের ভেতর অনেক জ্বালা আগুন হইয়া জ্বলে. হায়রে কপাল মন্দ চোখ থাকিতে অন্ধ। এমন আরও অনেক কালজয়ী গানের রূপকার আলাউদ্দিন আলী।

(আলাউদ্দিন আলী,ফারজানা আলী মিমি এবং তাদের রাজকন্যা)
ব্যক্তিগত জীবনে আলাউদ্দিন আলী নজরুলসঙ্গীত শিল্পী সালমা সুলতানাকে (মৃত্য ২০১৬) বিয়ে করেন। যদিও এ বিয়ে টেকেনি। এ সংসারে রয়েছে তাদের চার সন্তান। তাঁরা হলেন আজমেরী আলী, শওকত আলী রানা, আফরীন আলী এবং আলিফ আলাউদ্দীন। তাঁরা প্রত্যেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ। মেয়ে আলিফ আলাউদ্দিন একজন সঙ্গীশিল্পী।‘ পরে তিনি ফারজানা মিমিকে বিয়ক করেন। ফারজানা আলী মিমিও একজন শ্রোতাপ্রিয় সংগীতশিল্পী। রেডিও, টেলিভিশন, অডিওসহ বাংলা চলচ্চিত্রের বেশ কিছু গানে কণ্ঠ দিলেও প্রথমবারের মতো শ্রোতাপ্রিয় সংগীতশিল্পী ফারজানা আলী মিমি লাহোরের প্রথিতযশা গীতিকার ও সুরকার সালমান আশরাফের কথা ও সুরে 'মেরি সনম মুঝে তেরি কসম' শিরোনামের একটি অন্য ভাষার গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। আদ্রিতা আলাউদ্দীন রাজকন্যা, আলাউদ্দিন আলীর বর্তমান স্ত্রীর একমাত্র মেয়ে। এলসিএস’ নামে একটি সংগঠন করেছেন যেটা শিল্পীদের রয়্যালটি এবং অধিকার রক্ষায় কাজ করে। ‘একতারা মাল্টিমিডিয়া প্রোডাকশন’ নামে তিনি একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন যেখানে সংগীত তৈরির নানান কাজ করা হয়। আজ এই গুণী শিল্পীর ৬৭তম জন্মবার্ষিকী। দেশের বরেণ্য গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক ও বাদ্যযন্ত্রশিল্পী আলাউদ্দিন আলীর জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৩১

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
শ্রদ্ধা রইলো।
পোস্টের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:০৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ স্বপ্নবাজ সৌরভ
আগামী কাল ইনসাআল্লাহ দেখে হবে মিলন মেলায়।
শুভেচ্ছা রইলো।

২| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৩৯

আলমগীর সরকার লিটন বলেছেন: বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই ----------

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:০৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
লিটন ভাই ধন্যবাদ
কিংবদন্তি গীতিকার, সুরকার এবং
সঙ্গীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলীর
জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর
জন্য।

৩| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:১১

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: বিনম্র শ্রদ্ধা জানাইিআর আপনাকে ধন্যবাদ চমৎকার শেয়ারে ।

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আনোয়ার ভাই
সুন্দর মন্তব্য প্রদানের জন্য।

৪| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:০০

রাজীব নুর বলেছেন: একজন দক্ষ সংগীত পরিচালক।

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১৯

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ রাজীব ভাই
গীতিকার, সুরকার এবং
সঙ্গীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলীর
জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.