নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
কাজী কাদের নেওয়াজ একজন বিশিষ্ট কবি ও শিক্ষাবিদ। তিনি শিশুতোষ সাহিত্যেও খ্যাতিমান ছিলেন। কবি কাজী কাদের নওয়াজের কবিতায় মাতৃভক্তি, গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধা, শিশুদের প্রতি অকৃত্রিম স্নেহ, দেশপ্রেম ও প্রকৃতি নিঃসর্গের প্রতি ভালোবাসা সাবলীলভাবে ফুটে উঠেছে। ছাত্রজীবনে ‘শিশুসাথী’ পত্রিকার প্রকাশিত তাঁর ‘মা’ কবিতায় মায়ের প্রতি গভীর ভক্তির পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি ‘মা’ কবিতায় লিখেছেনঃ
মা কথাটি ছোট্ট অতি, কিন্তু জেনো ভাই,
ইহার চেয়ে নাম যে মধুর তিন ভুবনে নাই।
সত্য ন্যায়ের ধর্ম থাকুক, মাথার পরে আজি,
অন্তরে ‘মা’ থাকুক মম, ঝরুক স্নেহরাজি।
কবি কাদের নেওয়াজ একজন আদর্শবান ও অনুকরণীয় শিক্ষক ছিলেন। তিনি শিক্ষাকেই জীবনে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। দিয়েছেন শিক্ষাগুরুর সম্মান। এ কারণে তিনি মুঘল হেরেমের বিভিন্ন চরিত্রাঙ্কনের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন শিক্ষকের সম্মান ও মর্যাদার কথা। ওস্তাদের কদর কবিতায় তারই প্রতিফলন ঘটেছে। তাঁর সমস্ত রচনার মধ্যে ঐ একটি চরণই তাঁকে স্মরণীয় করে রাখবে চিরদিন। শিক্ষক আমি শ্রেষ্ঠ সবার , দিল্লীর পতি সে তো কোন্ ছার
বাদশাহ আলমগীর-
কুমারে তাঁহার পড়াইত এক মৌলভী দিল্লীর।
একদা প্রভাতে গিয়া
দেখেন বাদশাহ- শাহজাদা এক পাত্র হস্তে নিয়া
ঢালিতেছে বারি গুরুর চরণে
-----------------------------------------------
স্পর্ধার কাজ হেন অপরাধ কে করেছে কোন্ কালে!
ভাবিতে ভাবিতে চিন্তার রেখা দেখা দিল তার ভালে।
---------------------------------------------------
শিক্ষক আমি শ্রেষ্ঠ সবার
দিল্লীর পতি সে তো কোন্ ছার,
ভয় করি না'ক, ধারি না'ক ধার, মনে আছে মোর বল,
বাদশাহ্ শুধালে শাস্ত্রের কথা শুনাব অনর্গল।
------------------------------------------------------
উচ্ছ্বাস ভরে শিক্ষকে আজি দাঁড়ায়ে সগৌরবে
কুর্ণিশ করি বাদশাহে তবে কহেন উচ্চরবে-
''আজ হতে চির-উন্নত হল শিক্ষাগুরুর শির,
সত্যই তুমি মহান উদার বাদশাহ্ আলমগীর।''
শিক্ষকের মর্যাদাকবিতায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকের মধ্যে যে সম্পর্ক এবং শিক্ষকের যে মর্যাদা তা নিয়ে এই কবিতাটি লিখেছেন মহৎ এবং আদর্শ শিক্ষক কাজী কাদের নেওয়াজ। নৈতিক মূল্যবোধ, মানবপ্রেম, পল্লী-প্রকৃতি, ধর্মীয় অনুশীলন তাঁর কবিতার প্রধান বিষয়। 'মরাল' তাঁর একটি বহুল সমাদৃত কাব্যগ্রন্থ। শিশু-সাহিত্যিক কাজী কাদের নেওয়াজ গদ্য রচনাতেও কুশলী লেখক ছিলেন। 'দাদুর বৈঠক' শিশুদের জন্য লেখা গদ্য রচনা। 'নীল কুমুদী' কাব্য এবং 'দুটি তীরে' উপন্যাস তাঁর সমাদৃত গ্রন্থ। একজন আদর্শবান শিক্ষক হিসেবে কাজী কাদের সকলের শ্রদ্ধা অর্জন করেন। কাদের নওয়াজ রবীন্দ্র-নজরুল যুগের একজন কবি হয়েও ভাব-ভাষা ও ছন্দের জাদুতে বাংলা কাব্য সাহিত্যে স্বতন্ত্র স্থান অধিকার করতে সক্ষম হয়েছেন। কাব্যসাহিত্যে তাঁর ব্যাপক পদচারণা ত্রিশের দশকে। এ সময় ‘কল্লোল গোষ্ঠী’র লেখকেরা রবীন্দ্রবলয় থেকে বেরিয়ে এসে একটি স্বতন্ত্র সাহিত্যধারা সৃষ্টির মানসে দেদীপ্যমান। তাঁরা ইউরোপীয় ভাবধারার প্রভাব বাংলা সাহিত্যে এনে একটি স্বতন্ত্র সাহিত্য ধারার সৃষ্টি করলেন। জীবনানন্দ দাশ, বুদ্ধদেব বসু, বিষ্ণু দে, অমিয় চক্রবর্তী, প্রেমেন্দ্র মিত্র প্রমুখ কবি সার্থকভাবে বাংলা কবিতায় এক নবতর আবহ সৃষ্টি করলেন। ঠিক এ সময়কালেই কাজী কাদের নওয়াজ সগৌরবে নিজেকে বাংলা কবিতায় সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। কাজী কাদের নওয়াজের ‘হারানো টুপি’ কবিতা প্রকাশের পর সে সময়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও তাঁর এ কবিতা পড়ে ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। তিনি তাঁর ‘হারানো টুপি’ কবিতায় লিখেছেনঃ
“টুপি আমার হারিয়ে গেছে
হারিয়ে গেছে ভাইরে
বিহনে তার এ জীবনে
কতই ব্যথা পাইরে”
আজ কবির ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকীি। ১৯৮৩ সালের আজকের দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আদর্শ শিক্ষক এবং শিশু সাহিত্যিক কাজী কাদের নেওয়াজের ৩৭তম ত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
(শ্রীপুরে কবি কাজী কাদের নেওয়াজের বাসভবন)
কাজী কাদের নেওয়াজ ১৯০৯ এর ১৫ জানুয়ারি পশ্চিম বঙ্গের মুর্শিদাবাদে মুর্শিদাবাদের তালেবপুরে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি যশোর জেলার (বর্তমান মাগুরা) শ্রীপুরের মুজদিয়া গ্রামে। তার বাবা কাজী আল্লাহ নেওয়াজ ও মা ফাতেমুন্নেছা। ১৯১৮ সালে তিনি বর্ধমান জেলার মাখরুন উচ্চ ইংরেজী স্কুলে ভর্তি হন। কবি কাজী নজরুল ইসলামও এক সময় ওই স্কুলের ছাত্র ছিলেন। ১৯২৩ সালে তিনি এখান থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯২৯ সালে বহরমপুর থেকে বিএ পাস করেন। পরে বিটি ও ইংরেজী সাহিত্যে সম্মানসহ বি.এ পাস করেন। কিছুদিন এম.এ ক্লাসে অধ্যয়ন করেন। ১৯৩২ এ বি.টি পাস করে কর্মজীবনের শুরু। কিছুদিন স্কুল সাব-ইন্সপেক্টরের দায়িত্ব পালনের পর তিনি শিক্ষকতায় প্রবেশ করেন। দেশ বিভাগের পর পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন এবং নবাবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় যোগদান করেন। দেশ বিভাগের পর পূর্ববঙ্গের সাহিত্যচর্চার ধারাকে স্বতন্ত্র মর্যাদায় সুসংগঠিত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রেম ও পল্লীর শ্যামল প্রকৃতি তাঁর কবিতায় মনোজ্ঞভাবে প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৫১ সালে তিনি দিনাজপুর জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত হন। ১৯৬৬ তে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর তিনি মাগুরা জেলার মুজদিয়া গ্রামে সপরিবারে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছিলেন।
কাজী কাদের অল্প বয়সেই সাহিত্যের প্রতি আকৃষ্ট হন। বিকাশ, শিশুসাথী, ভারতবর্ষ, বসুমতী, শুকতারা, পাঠশালা, রামধনু, শীশমহল, মৌচাক, প্রবাসী, সওগাত প্রভৃতি পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে। সাহিত্যের সব শাখায়ই তাঁর বিচরণ ছিল, তবে কবিতাই ছিল তাঁর প্রধান চর্চার ক্ষেত্র। তিনি রবীন্দ্রভাববলয়ের কবি হলেও বিষয়ে, বিন্যাসে, আঙ্গিকে ও প্রকাশনৈপুণ্যে তাঁর কাব্য স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। কবিতায় তিনি সত্য, সুন্দর আর সুনীতিকে আহবান করেছেন। ছান্দসিক কবি হিসেবে তিনি অধিক পরিচিত ছিলেন। প্রেম, প্রকৃতি ও স্বদেশ তাঁর কবিতার বিষয়বস্ত্ত। সহজ-সরল ভাবমাধুর্যে রচিত তাঁর কাহিনীধর্মী ও নীতিকথামূলক শিশুতোষ রচনার সংখ্যা অনেক। ১৯৩৪ সালে কাজী কাদের নেওয়াজের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘মরাল’ কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়। ১৯৬০ সালে ‘নীল কুমুদী’ কাব্যগ্রন্থটি দিনাজপুর থেকে প্রকাশিত হয়। ১৯৪৭ সালে ছোটদের জন্যে লেখা ‘দাদুর বৈঠক’ ও ‘দস্যু লাল মোহন’ প্রকাশিত হয়। তার প্রকাশিত উপন্যাস ‘উতলা সন্ধ্যা’ ও ১৯৭৩ সালে ঢাকা থেকে ‘দুটি পাখি দুটি তীরে’ প্রকাশিত হয়। এ ছাড়াও তার অপ্রকাশিত কিছু পাণ্ডুলিপি রয়েছে। তার অনেক কবিতা স্কুল পর্যায়ে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
তার কবিতার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে উৎসাহিত করে শান্তি নিকেতনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। শিশু সাহিত্যে অবদানের জন্যে ১৯৬৩ সালে পেয়েছেন ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কার’। পাকিস্তান সরকার কর্তৃক তিনি ‘প্রেসিডেন্ট পুরস্কার’ প্রাপ্ত হন। পরবর্তীকালে তিনি ‘মাদার বক্স’ সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হন।তাঁর সাহিত্যকর্মের জন্য ১৯৬৩ সালে তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং প্রেসিডেন্ট পুরস্কার লাভ করেন। আত্মপ্রচার বিমুখ কবি কাজী কাদের নেওয়াজ একজন যথার্থই শিক্ষক ছিলেন। ১৯৮৩ সালের ৩ জানুয়ারি যশোর সদর হাসপাতালে এ মহৎ কবি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আজ আদর্শ শিক্ষক কাজী কাদের নেওয়াজের ৩৭তম ত্যুবার্ষিকী। শিশু সাহিত্যিক কাজী কাদের নেওয়াজের মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
০৩ রা জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:০৩
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
পৃথিবীর সব মহামানব ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন আপন চরিত্রবলে।
তাঁরা তাঁদের নৈতিকতা ও মূল্যবোধ কাজে লাগিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব
করে তুলেছেন। একটি দেশ ও জাতির জন্য নৈতিকতা ও মূল্যবোধের
গুরুত্ব অপরিসীম। কোনো দেশ বা জাতির টেকসই উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ।
নৈতিকতা ও মূল্যবোধ চর্চা অত্যাবশ্যকীয়। এ কথা অস্বীকার করার
উপায় নেই যে, বর্তমান সমাজের জন্য নৈতিক শিক্ষা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
২| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:২৭
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ পোষ্টের জন্য।
০৩ রা জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:০৩
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন।
৩| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:১০
সাইয়িদ রফিকুল হক বলেছেন: বেঁচে থাকতে কাদের নেওয়াজের সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। মনে বড় দুঃখ।
মহান আল্লাহ তাঁকে ভালো রাখুন। আমীন।
০৩ রা জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:০৪
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
সাইয়িদ রফিকুল হক আপনার
প্রার্থনা কবুল হোক মহান আল্লাহর
দরবাবে। আমিন।
©somewhere in net ltd.
১| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:১৯
কাজী আবু ইউসুফ (রিফাত) বলেছেন: এখনকার পাঠ্য বইয়ে তাঁর কবিতা স্থান পায় না! নৈতিকতা ও মূল্যবোধের কবি- শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি।